মহুয়া রায়চৌধুরীকে নিয়ে লিখলেন বিপ্লব চট্টোপাধ্যায়।
২২ জুলাই, বিপ্লব চট্টোপাধ্যায়ের কাছে ভীষণ শোকের। ১৯৮৫ সালে এই দিন হারিয়ে গিয়েছিলেন মহুয়া রায়চৌধুরী। মহুয়ার সঙ্গে বিপ্লব বহু ছবি করেছেন। আনন্দবাজার অনলাইন যোগাযোগ করতেই বিষণ্ণ গলায় বললেন, ‘‘মহুয়ার সঙ্গে পরিচিতি কি আজকের? অভিনয়ে আসার আগে থেকে ওর মাকে চিনতাম। মহুয়া তখন শিপ্রা। ওর মা টেলিফোনে চাকরি করতেন। খুব ভাল নাচ জানতেন। নানা জায়গায় মঞ্চানুষ্ঠান করতেন। মহুয়ার বাবাও জনপ্রিয় নৃত্যশিল্পী।’’
মহুয়ারা তখন দমদমের একটি আবাসনের বাসিন্দা। ছোট থেকে অভিনেত্রীও স্বাভাবিক ভাবেই নাচের তালিম নেন। পারদর্শীও হয়ে ওঠেন। তরুণ মজুমদারের ‘শ্রীমান পৃথ্বিরাজ’ তাঁর প্রথম ছবি। পরিচালকই তাঁর নাম বদলে রাখেন মহুয়া। প্রথম ছবিতেই নিজেকে প্রমাণ করেছিলেন অভিনেত্রী। ফলে, আর তাঁকে পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি, এমনই বক্তব্য বর্ষীয়ান অভিনেতার।
ব্যক্তি মহুয়া কেমন ছিলেন? বিপ্লবের কাছে প্রশ্ন ছিল আনন্দবাজার অনলাইনের। অভিনেতার কথায়, ‘‘মহুয়া ফুলের মতোই মিষ্টি ছিল। যেমন রূপ তেমনই প্রতিভা। আজও ওর তুলনা মহুয়া নিজেই। সারা ক্ষণ সবাইকে নিয়ে আনন্দে মেতে থাকত। কোনও ভণিতা ছিল না। শিশুদের ভীষণ ভালবাসত। ইন্ডাস্ট্রির দুঃস্থ কলাকুশলীর কত সন্তান যে মহুয়ার দেওয়া অর্থে পড়াশোনা করে বড় হয়েছে তার ইয়ত্তা নেই। রোজগারের একটা বড় অংশ ও অকাতরে দান করে দিত।’’ এ-ও জানিয়েছিলেন, একই সঙ্গে ভালবাসতেন কুকুর। স্টুডিয়োর সমস্ত কুকুর ওর পোষ্য। মহুয়া নিয়মিত তাদের খেতে দিতেন। যত্ন নিতেন। মহুয়ার দেহ যখন স্টুডিয়োয় নিয়ে আসা হয়েছিল ওরা সবাই এসে সার বেঁধে দাঁড়িয়ে। মাথা নীচু সবার। চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে। উপস্থিত সবাই সে দিন বিস্মিত পথপশুদের শ্রদ্ধাজ্ঞাপন দেখে!
এমন প্রাণবন্ত শিল্পী এ ভাবে অকালে ঝরে গেলেন! বর্ষীয়ান অভিনেতার যুক্তি, মৃত্যু বলে আসে না। কোন রূপ ধরে আসবে কেউ জানে না। এবং মহুয়ার মৃত্যু যেহেতু বিতর্কিত তাই বিষয়টি নিয়ে তিনি কোনও কথাই বলবেন না। ওঁর চোখে মহুয়া এখনও হুল্লোড়ে মেতে ওঠা মিষ্টি একটি মেয়ে। যে নিজের হাতে রান্না করে খাওয়াতে ভালবাসত। প্রায়ই সেটে সবার জন্য রান্না করে নিয়েও আসতেন। আর পরিবারে কোনও অশান্তি হলে? ‘‘তখন একটু চুপচাপ। হালকা বিষণ্ণ। সবার আড়ালে হয়তো চোখও ভিজে উঠত। কিন্তু কিছুতেই সেটা সবার সামনে প্রকাশ করত না মহুয়া’’, দাবি বিপ্লবের। তাই অভিনেত্রীর আকস্মিক প্রয়াণ আজও তাঁকে কষ্ট দেয়। বর্ষীয়ান অভিনেতার মতে, ‘‘অনেক বড় শিল্পী। খুব বড় মনের মেয়ে। আমার ভীষণ ভাল বন্ধু। ওর মৃত্যু আজও মেনে নিতে পারিনি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy