Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪
Bharat Kaul

Bharat Kaul: আমার স্ত্রী জয়শ্রীর সেই খাতা হ্যায়, যাতা হ্যায়, এক বছরেও হিন্দি শেখাতে পারলাম না: ভরত

“টলিউডে এক দল হিন্দিতে কাজ করতে পারছেন না ভাষায় দখল নেই বলে। যাঁরা ভাষাটায় পারদর্শী, তাঁরা হিন্দিতে কাজ করতে চান না।”

ভরত কল।

ভরত কল। —ফাইল চিত্র।

পরমা দাশগুপ্ত
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ নভেম্বর ২০২১ ১০:০১
Share: Save:

পরপর বাংলা ধারাবাহিক হিন্দিতে রিমেক। কেমন অভিনয়ের অভিজ্ঞতা? ইন্ডাস্ট্রির জন্য ভাল না খারাপ এই প্রবণতা? আনন্দবাজার অনলাইনের কাছে অকপট ভরত কল।

প্রশ্ন: ‘দীপ জ্বেলে যাই’-এর হিন্দি রিমেকে অভিনয় করছেন। কতটা অন্য রকম এই অভিজ্ঞতা?

হিন্দি রিমেক হলেও গল্প কিন্তু দাঁড়িয়ে আছে কলকাতাতেই। বাংলা ধারাবাহিকের বাঙালি পরিবারের বদলে এখানে অবাঙালি পরিবারের গল্প। তবে তারা কলকাতাতেই থাকে। কলকাতারই রীতি-রেওয়াজ, বাঙালিয়ানায় তাদের দিনযাপন। বাড়িতে দুর্গাপুজো হয়। আর নায়িকা রিয়া তো বাঙালিই। ফলে গল্পটায় সে অর্থে বাঙালিয়ানা অটুট। শুধু ভাষাটাই হিন্দি। তবে মূল গল্পটা যখনকার, তার বেশ কয়েক বছর পরে রিমেক হচ্ছে। তাই সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে গল্পে অদলবদল আসছে। পরিচালক সুশান্ত দাস খুব যত্ন নিয়ে এই যুগান্তরটাকে বুনে দিয়েছেন গল্পে।

প্রশ্ন: আপনার চরিত্র? সেটা কেমন?

আমার চরিত্রের নাম অমিতাভ আগরওয়াল। অবাঙালি হয়েও প্রায় বাঙালি। ব্যবসা নিয়ে প্রচণ্ড সচেতন। আর তাই নিয়েই ছেলের সঙ্গে যাবতীয় সমস্যা। হিন্দি বলায় তো আমার কোনও রকম সমস্যা নেই। তাই এই চরিত্রে ঢুকে পড়তেও সমস্যা হয়নি কোনও রকম।

প্রশ্ন: আপনার স্ত্রী-ও তো একই পেশায় আছেন। তিনিও কি হিন্দিতে কাজ করছেন বা করতে চান?

আরে, হিন্দিতে কাজ করতে হলে তো হিন্দিটা ভাল করে বলতে হবে। আমার স্ত্রী জয়শ্রী এক বছর মুম্বইতে থেকেও ভাষাটা শিখতে পারল কই! হিন্দির দৌড় এক্কেবারে আর পাঁচ জন সাধারণ বাঙালির মতোই, সেই খাতা হ্যায়, যাতা হ্যায়, সোতা হ্যায়। ব্যস! অন্য ভাষায় কাজ করতে হলে তো সেই ভাষাটায় নিজেকে সড়গড় করতে হবে। নিজেকে তৈরি করতে হবে।

প্রশ্ন: ভাল হিন্দি বলতে পারাটা তা হলে কি বাংলা ধারাবাহিকের হিন্দি রিমেকে কাজের সুযোগ করে দেবে?

টলিউডে যাঁরা ভাল হিন্দি বলতে পারেন, যেমন সব্যসাচী চক্রবর্তী, অর্জুন চক্রবর্তী, পল্লবী চট্টোপাধ্যায়, জুন মালিয়া— এঁদের নিঃসন্দেহে হিন্দি রিমেকে ভাল কোনও চরিত্রে কাজে লাগানো যায়। কিন্তু এঁদেরকে রাজি করানোই মুশকিল। যাঁরা ভাল হিন্দি বলেন, তাঁদের হিন্দি রিমেকে কাজ পাওয়ার বাড়তি সম্ভাবনা থাকেই। আসলে টলিউডে আপাতত দু’রকম অভিনেতাই রয়েছেন। এক দল হিন্দিতে কাজ করতে পারছেন না, কারণ ভাষায় দখল নেই সেরকম। আর যাঁরা ভাষাটায় পারদর্শী, তাঁরা বাংলা ছেড়ে হিন্দিতে কাজ করতে রাজি নন। সব্যসাচী যেমন এই দ্বিতীয় দলটায় পড়েন।

প্রশ্ন: তা হলে বলছেন, রিমেকের কথা মাথায় রেখে হিন্দি শিখে রাখাটা জরুরি?

রিমেক এখন ট্রেন্ড। ক’দিন পরে সেই প্রবণতা পাল্টে যেতেই পারে। তা বলে ভাষার দখলটা কি ফেলা যাবে? ইদানীং বিনোদন জগত যে পথে হাঁটছে, তাতে হিন্দি শিখে রাখা কাজের সুযোগ অনেকটাই বাড়িয়ে দেবে। হিন্দি ধারাবাহিক আছে, ওটিটি প্ল্যাটফর্মে যথেষ্ট ভাল ভাল কাজ হচ্ছে। বলিউড তো আছেই। ধরা যাক, কেউ আমাকে তিন বছরের জন্য মুম্বইতে কাজ দিলেন। তখন তো জয়শ্রীও সঙ্গে যাবে। ওখানে গিয়ে কি কাজ করবে না? হিন্দি জানা থাকলে তো সুবিধাই হবে সেখানে।

প্রশ্ন: আপনি আর জয়শ্রী একই পেশায়। হিন্দি জানায় এক জন বাড়তি কাজ পাচ্ছেন। অন্য জন সেটা পাচ্ছেন না। বাস্তবে ‘অভিমান’ রিমেক হবে না তো?

না না, তার কোনও সুযোগই নেই। আমিই তো ঠেলে ওকে শ্যুটিংয়ে পাঠাই। ও যদি বেশি কাজ করে, বেশি রোজগার করে, আমারই তো লাভ! দিব্যি খেয়েদেয়ে, শুয়ে বসে কাটাব, ভাল ভাল ছবি দেখব। ইচ্ছে হলে না হয় একটুআধটু শ্যুটিং করব ক্ষণ!

স্ত্রী জয়শ্রীর সঙ্গে ভরত কল।

স্ত্রী জয়শ্রীর সঙ্গে ভরত কল।

প্রশ্ন: ধরা যাক, মূল বাংলা ধারাবাহিকে কোনও চরিত্রে এক জন অভিনেতা কাজ করছেন। হিন্দি রিমেকে তাঁর জায়গায় একই চরিত্রে অন্য কেউ কাজ করছেন। অর্থাৎ, হিন্দি জানা-না জানার ফারাকে একই ভূমিকায় দুই অভিনেতা। তাঁদের মধ্যে রেষারেষি বা প্রতিযোগিতার মনোভাব তৈরি হবে না?

আমি ব্যক্তিগত ভাবে এই ধরনের প্রতিযোগিতায় একেবারেই বিশ্বাসী নই। আর সে দিক দিয়ে দেখলে প্রতিযোগিতা হওয়ারও তো কথা নয়। ভাষা আলাদা। দর্শক আলাদা। দুই অভিনেতাই যার যার নিজস্ব জায়গায়, নিজস্ব সফলতায় দাঁড়িয়ে। তুলনা করার দরকারটা কী?

প্রশ্ন: মূল ধারাবাহিক পর্দায় বড়সড় সাফল্য পেয়েছে আগেই। সে ক্ষেত্রে কি রিমেক-এর অভিনেতা বা কলাকুশলীদের জন্য একটা প্রত্যাশার চাপ তৈরি হয়ে যায়? কিংবা হিন্দি রিমেক বেশি সাফল্য পেয়ে গেলে বাংলার ইউনিটের জন্য সেটা প্রেস্টিজ ফাইট?

একেবারেই না! অভিনেতা বা কলাকুশলীদের হাতে কিছু থাকে নাকি? রোজ তাঁরা চিত্রনাট্য, নির্দেশ বা সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কাজ করেন শুধু। বাকি সবটাই গল্পের লেখক এবং চ্যানেল কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত, পরিকল্পনা বা ভাবনা। ফলে এই প্রত্যাশা পূরণ কিংবা প্রেস্টিজ ফাইট কোনওটাই শ্যুটিং ফ্লোরে চাপ হিসেবে পৌঁছয় না।

প্রশ্ন: পরপর বাংলা ধারাবাহিক রিমেক হচ্ছে হিন্দিতে। অন্যান্য ভাষাতেও। কী বলবেন?

বাংলা ধারাবাহিক হিন্দিতে এবং আরও কিছু ভাষায় রিমেক হচ্ছে বেশ কিছু দিন ধরেই। ইদানীং সেই সংখ্যাটা অনেক বেশি। এবং বাংলা থেকে রিমেক হওয়া বেশ কিছু হিন্দি ধারাবাহিক দুর্দান্ত রেটিং দিচ্ছে। ‘শ্রীময়ী’র হিন্দি ‘অনুপমা’ এখন রেটিং তালিকার শীর্ষে। ‘ইষ্টিকুটুম’-এর হিন্দি ‘ইমলি’, ‘কুসুমদোলা’র ‘গুম হ্যায় কিসি কে প্যায়ার মেঁ’-ও তালিকার উপর দিকেই। রিমেকের এই ধারাটার ক্ষেত্রে অন্যতম ভূমিকা লীনাদির, মানে লীনা গঙ্গোপাধ্যায়ের। ক’জন জানেন ওঁর লেখা ধারাবাহিক ২০টা ভারতীয় ভাষায় রিমেক হয়েছে? সুশান্তও দারুণ কাজ করছেন। ওঁর লেখা কিছু ধারাবাহিকও হিন্দিতে বেশ সফল। আসলে গল্পের তো কোনও ভাষা হয় না। ভাল গল্প দর্শক এমনিতেই দেখবে। ইদানীং বাংলা ধারাবাহিকের গল্পে সেই দম, সেই টান রয়েছে বলেই রিমেকের চাহিদা বাড়ছে।

প্রশ্ন: বাংলা ধারাবাহিকের গল্প হিন্দি বা অন্য ভাষায় বলতে গেলে তো বেশ কিছুটা অদলবদলের প্রয়োজন পড়ে। কতটা খাটনি তাতে?

ও বাবা, অনেক। ‘দীপ জ্বেলে যাই’-তে অতটা প্রয়োজন পড়েনি। কারণ গল্পের অবাঙালি পরিবার কলকাতারই বাসিন্দা। কিন্তু অন্য কোনও ধারাবাহিকে ধরা যাক পুরুলিয়ার কোনও এক আদিবাসী গ্রামের বর্ণনা রয়েছে গল্পে। হিন্দিতে সেই গল্প বলতে গেলে সেই চরিত্র হয়তো থাকবে মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র বা উত্তর প্রদেশের কোনও গ্রামে। ফলে সেখানকার রীতিনিয়ম, সংস্কৃতি সব কিছু সঠিক ভাবে তুলে আনতে হবে। সমস্ত খুঁটিনাটি খেয়াল রেখে সেই অদলবদলগুলো করতে হবে গল্পে। তার জন্য যথেষ্ট পড়াশোনা বা পরিশ্রম দরকার। যে ভাষায় তৈরি হচ্ছে ধারাবাহিক, সেখানকার স্থানীয় কারও সাহায্যও দরকার হতে পারে।

প্রশ্ন: এত খাটনি জেনেও সেই পথে হাঁটছেন কেন বাংলার প্রযোজক-পরিচালকেরা? বাড়তি টাকার টানে?

বাংলায় একটা ধারাবাহিকের যে বাজেট থাকে, হিন্দিতে তার ঢের বেশি তো হবেই। গল্পের ক্যানভাস বড় হয়। বিজ্ঞাপনও একটা আঞ্চলিক গণ্ডিতে আটকে না থেকে সারা দেশ থেকেই জুটে যায়। টাকার জোগান বেশি থাকলে ধারাবাহিক থেকে আয়ের পথও খোলে বেশি। তা হলে রিমেকে কেন রাজি হবেন না এখানকার প্রযোজকরা? এটা তো ওঁদের ব্যবসা!

প্রশ্ন: আর অভিনেতারা? রিমেক মানে তো বাড়তি পারিশ্রমিকের হাতছানি!

হ্যাঁ নিশ্চয়ই। যে টাকায় এখানে কাজ করব, সেই একই পারিশ্রমিকে তো হিন্দিতে কাজ করব না!

প্রশ্ন: তা হলে কি বাড়তি পারিশ্রমিকের টানে বাংলা ধারাবাহিকের অভিনেতারা ক্রমশ মুম্বইমুখী হবেন?

এটা বলা মুশকিল। এখানে হাতে অনেক কাজ থাকলে হুট করে মুম্বইয়ের দিকে হাঁটা কি অতই সহজ? অন্য শহরে থাকা-খাওয়ার তো একটা আলাদা খরচ আছে। মুম্বইয়ে তা কলকাতার তুলনায় অনেকটাই বেশি। কেউ টালিগঞ্জের পাট গুটিয়ে পাকাপাকি মুম্বইয়ে চলে যেতে চাইলে আলাদা কথা। তবে হ্যাঁ, অন্য ভাষায় বাংলা ধারাবাহিক রিমেকের এই বাড়বাড়ন্ত এখানকার অভিনেতাদের কাজের সুযোগ করে দিয়েছে অনেকটাই।

প্রশ্ন: মানে বলছেন টলিউডে ছোট পর্দায় কাজের সুযোগ কম?

তা কেন! কাজ তো হচ্ছে যথেষ্টই। রিমেক একটা বাড়তি দরজা খুলে দিল। সেটা বলাই যায়!

অন্য বিষয়গুলি:

Bharat Kaul Bengali Serials
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE