Bhanu Athaiya's success as a designer soon led to her switching career paths dgtl
bollywood
গাইড থেকে লগান, স্বদেশ... বহু কালজয়ী ছবির অংশ ভানু বিশেষ কারণে ফিরিয়ে দেন অস্কারও
হিন্দি ছবি সাদা কালো থেকে রঙিন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভানু পাল্টে ফেলেছিলেন তাঁর কাজের ধরন। চরিত্র বুঝে তিনি জোর দিতে শুরু করেন হ্যান্ডলুমের উপর।
নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০২০ ১২:১৪
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২৭
বাবা যখন মারা যান, সাত সন্তানের মধ্যে তৃতীয় জনেরই বয়স তখন মাত্র ৯। পরবর্তীতে সেই কন্যাই হাতে তুলে নেন অণ্ণাসাহেব রাজোপাধ্যায়ের রেখে যাওয়া রং, তুলি। মা শান্তিবাঈ আদর করে মেয়েকে ডাকতেন ভানুমতী বলে। পুরো নাম ভানুমতী অণ্ণাসাহেব রাজোপাধ্যায়। বলিউড তথা বিশ্ববিনোদন মঞ্চ তাঁকে চিনল ভানু আথাইয়া নামে।
০২২৭
মহারাষ্ট্রের কোলহাপুরে ভানুর জন্ম ১৯২৯ সালের ২৮ এপ্রিল। ছোট থেকেই ছবি আঁকতে ভালবাসতেন তিনি। তাঁর স্কুলের শিক্ষক বলেছিলেন ভানু যেন অঙ্কন নিয়েই উচ্চশিক্ষা করেন। তাঁর কথা শুনেছিলেন শান্তিবাঈ।
০৩২৭
বড় হয়ে মুম্বইয়ের জে জে স্কুল অব আর্ট-এর শিক্ষার্থী হন ভানু। ফাইন আর্টসে স্নাতক হন। শিল্পশৈলির স্বীকৃতিস্বরূপ পেয়েছিলেন স্বর্ণপদক। কোর্স শেষে ‘ইভস উইকলি’-তে তিনি যোগ দেন ফ্যাশন ইলাস্ট্রেটর হিসেবে।
০৪২৭
কয়েক বছর পরে পত্রিকার সম্পাদক বুটিক শুরু করেন। তাঁর অনুরোধে ভানু ড্রেস ডিজাইনিং শুরু করেন। সেখানেই তাঁর কেরিয়ার অন্য দিকে ঘুরে যায়। তিনি পরিচিত হন কস্টিউম ডিজাইনার হিসেবে।
০৫২৭
পত্রিকা এবং বুটিকে কাজ করার সূত্রে বলিউডের সঙ্গে ধীরে ধীরে তাঁর পরিচিত বাড়ে। অভিনেত্রী নার্গিস, কামিনী কৌশল ও পরিচালক গুরু দত্ত তাঁর কাজের গুণগ্রাহী ছিলেন। নার্গিস তাঁকে নিয়ে গিয়েছিলেন রাজ কপূরের কাছে।
০৬২৭
১৯৫৫ সালে ‘শ্রী ৪২০’ ছবিতে কাজ করেন ভানু। ‘মুর মুর কে না দেখ’ গানে ছবির সহনায়িকা নাদিরার পোশাক পরিকল্পনা করেছিলেন তিনি। সময়ের তুলনায় অনেক এগিয়ে থাকা সেই পোশাক ছিল তখন আলোচনার কেন্দ্রে। ‘এক থা রাজা এক থি রানি’ ছবিতে তিনি নার্গিসকে সাজিয়েছিলেন মৎস্যকন্যার সাজে। কিন্তু ছবিটি অর্ধসমাপ্ত থেকে যায়।
০৭২৭
হিন্দি ছবিতে তাঁকে পূর্ণাঙ্গ কস্টিউম ডিজাইনার হিসেবে কাজের সুযোগ প্রথম দিয়েছিলেন গুরু দত্ত-ই। ১৯৫৬ সালে সিআইডি ছবিতে পোশাক পরিকল্পক হিসেবে প্রথম কাজ করেন ভানু। সাদাকালো যুগ হলেও দর্শক ও সমালোচক, দুই মহলেই প্রশংসিত হয়েছিল ভানুর সৃষ্টিশীলতা।
০৮২৭
পরের বছর গুরু দত্তের আরও একটি সুপারহিট ছবি ‘প্যায়াসা’-রও কস্টিউম ডিজাইনার ছিলেন ভানু। ধীরে ধীরে ইন্ডাস্ট্রিতে তিনি নিজের পরিচিতি তৈরি করেন। ‘কাগজ কে ফুল’, ‘দিল দেখে দেখো’, ‘চৌদহবীঁ কা চাঁদ’, ‘গঙ্গা যমুনা’-র মতো ছবিতর জন্য পর পর কাজ করেন ভানু।
০৯২৭
১৯৬২ সালে মুক্তি পায় ‘সাহেব বিবি গোলাম’। ছবির আগে ভানুকে কলকাতায় পাঠিয়েছিলেন গুরু দত্ত। যাতে তিনি বাঙালি সংস্কৃতি ভাল ভাবে বুঝতে পারেন। এর পর ‘সাহেব বিবি গোলাম’-এ অনবদ্য কাজ করেন ভানু। তাঁর তৈরি পোশাকে ধরা পড়ে ইতিহাসের পর্ব।
১০২৭
ষাটের দশকের শুরুতে ‘লিডার’, ‘দুলহা দুলহন’, ‘মেরে সনম’-এ ভানুর কাজ তাক লাগিয়ে দিয়েছিল। ১৯৬৫ সালে মুক্তি পেয়েছিল ‘ওয়ক্ত’। যশরাজ ব্যানারে এই ছবিতে নায়িকা সাধনাকে সেজেছিলেন ভানুর পরিকল্পনায় তৈরি চাপা সালোয়ার কামিজে।
১১২৭
সে সময়ে বিভিন্ন ছবিতে শর্মিলা, মুমতাজ-সহ অন্য নায়িকাদের স্টাইল স্টেটমেন্ট হয়ে গিয়েছিল ঝুলে খাটো এবং আটোসাটো সালোয়ার কামিজ। সঙ্গে বড় খোঁপা এবং চোখে গাঢ় কাজল।
১২২৭
ভানুর কেরিয়ারে উল্লেখযোগ্য ছিল ‘গাইড’। ১৯৬৫ সালের এই ছবিতে তাঁর তৈরি পোশাকে নায়িকা ওয়াহিদা রহমানের সম্পূর্ণ বিবর্তন ঘটেছিল। ছবির প্রথমে তিনি শহুরে ধনী ব্যবসায়ীর স্ত্রী। গাইড রাজুর সাহায্যে ধীরে ধীরে তিনি হয়ে ওঠেন দেশের সেরা নৃত্যশিল্পী। তাঁর চরিত্রের পরিবর্তনে যোগ্য সঙ্গত দিয়েছিল ভানুর পোশাক।
১৩২৭
‘তিসরি মঞ্জিল’ মুক্তি পেয়েছিল ১৯৬৬ সালে। ছবির থ্রিলারের আবহ ধরা পড়েছিল ভানুর পোশাক পরিকল্পনাতেও। শাম্মি কপূর-আশা পারেখ জুটির অনবদ্য রসায়ন আরও জমজমাট হয়েছিল ভানুর সৃষ্টিশীলতায়।
১৪২৭
লেখ টন্ডনের পরিচালনায় ‘আম্রপালী’ মুক্তি পেয়েছিল ১৯৬৬ সালে। ছবিতে রাজনর্তকী আম্রপালীর ভূমিকায় ছিলেন বৈজয়ন্তীমালা। তিনি পরে সব ত্যাগ করে বৌদ্ধ ভিক্ষুণী হয়ে যান। হিন্দি ছবির ইতিহাসে এই ছবির পোশাক স্মরণীয়।
১৫২৭
তবে ভানুর কেরিয়ারে মাইলফলক হয়ে আছে ‘ব্রহ্মচারী’। ১৯৬৮ সালে মুক্তি পেয়েছিল এই ছবি। ছবিতে শাম্মি কপূরের সঙ্গে ‘আজ কাল তেরে মেরে প্যায়ার কে চর্চে’ গানে মুমতাজের পরনের উজ্জ্বল কমলা শাড়ি আজও আইকনিক। ভানুর পরিকল্পনায় অভিনব কায়দায় পরানো হয়েছিল শাড়িটি।
১৬২৭
১৯৭০ সালে ভানুর আর এক বড় কাজ ফ্রেমবন্দি হয়েছিল ‘মেরা নাম জোকার’-এ। রাজ কপূরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন ভানু। বলতেন, ছবির প্রতিটি বিষয়ের খুঁটিনাটি জানতেন রাজ কপূর। তাঁর ‘সঙ্গম’, ‘সত্যম শিব সুন্দরম’, ‘প্রেম রোগ’, ‘রাম তেরি গঙ্গা মৈলী’ ছবিতেও নায়ক নায়িকাদের বর্ণময় করে তুলেছিল ভানুর পোশাক।
১৭২৭
হিন্দি ছবি সাদা কালো থেকে রঙিন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভানু পাল্টে ফেলেছিলেন তাঁর কাজের ধরন। চরিত্র বুঝে তিনি জোর দিতে শুরু করেন হ্যান্ডলুমের উপর। ১৯৬১ সালের ছবি ‘গঙ্গা যমুনা’-য় তিনি তুলে ধরেন ভারতীয় গ্রামীণ শিল্পকে।
১৮২৭
পরে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, তিনি দীর্ঘ সময় কাটাতেন মুম্বইয়ের হ্যান্ডসুম হাউসে। বেছে বেছে তুলে আনতেন গ্রামীণ শিল্পকলা। ১৯৭১ সালে ‘রেশমা অউর শেরা’ ছবির জন্য রাজস্থানের গ্রামে গ্রামে ঘুরে নিজের কাজের উপাদান সংগ্রহ করেছিলেন ভানু।
১৯২৭
ভানুর মুকুটে সেরা পালক যোগ হয় ইন্ডাস্ট্রিতে সিকি দশক কাটিয়ে ফেলার পরে। ১৯৮২ সালে মুক্তি পায় ‘গাঁধী’। ভারত-ব্রিটেন যৌথ উদ্যোগে তৈরি এ ছবির পরিচালক ও প্রযোজক ছিলেন রিচার্ড অ্যাটেনবরো।
২০২৭
এই ছবিতে নিজের কাজের মধ্যে দিয়ে ইতিহাসের এক কালপর্বকে সেলুলয়েডবন্দি করেছিলেন ভানু। ১৯৮৩ সালে প্রথম ভারতীয় হিসেবে ‘গাঁধী’ ছবির জন্য ভানু সম্মানিত হন ‘অস্কার’-এ।
২১২৭
ভারতীয় সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল ভানু অস্কার গ্রহণ করেছিলেন শাড়ি পরে। নিজের কাজেও বার বার তিনি তুলে ধরেছেন দেশজ শিল্পকে। পাশ্চাত্যের অন্ধ অনুকরণ না করে তিনি গুরুত্ব দিতেন প্রয়োজনে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের মেলবন্ধনকে।
২২২৭
১৯৯০ সালে মুক্তি পেয়েছিল গুলজারের পরিচালনায় ‘লেকিন…’। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ক্ষুধিত পাষাণ’ থেকে প্রভাবিত এই ছবির পোশাক পরিকল্পনার ক্ষেত্রে পুরনো সব ধারণা ভেঙে কাজ করেছিলেন ভানু। ১৯৯১ সালে এই ছবির জন্য পেয়েছিলেন জাতীয় পুরস্কার।
২৩২৭
ভারতীয় হ্যান্ডলুম ভানুর আরও এক বার জীবন্ত হয়ে ওঠে ‘লগান’-এ। ২০০১ সালে আশুতোষ গোয়ারিকরের পরিচালনায় এই ছবিতে ভুজের সাদা নোনামাটির সঙ্গে গুজরাতি বাঁধনী পোশাকের যুগলবন্দিতে মায়াময় পরিবেশ তৈরি হয়েছিল। এই ছবিও ভানুকে এনে দিয়েছিল জাতীয় পুরস্কার।
২৪২৭
৫ দশকের বেশি লম্বা কেরিয়ারে ভানু কাজ করেছেন ১০০-র বেশি ছবিতে। তাঁর কাজের মধ্যে উল্লেখযোগ্য অন্যান্য ছবি হল ‘মেরা সায়া’, ‘খিলোনা’, ‘হিম্মত’, ‘মেহবুবা’, ‘সুহাগ’, ‘কর্জ’, ‘দ্য বার্নিং ট্রেন’, ‘হিনা’, ‘১৯৪২: এ লভ স্টোরি’ এবং ‘স্বদেশ’।
২৫২৭
২০০৪ সালে ‘স্বদেশ’-এর পর তিনি কাজ করা প্রায় ছেড়েই দিয়েছিলেন। ২০০৮-এ ‘ফির কভি’ এবং ২০১৫-এ ‘নাগরিক’ ছবিতে তিনি কাজ করেছিলেন। এর পর নিজেকে সরিয়ে নিয়েছিলেন বিনোদনবৃত্ত থেকে বহু দূরে।
২৬২৭
অভিনেতা সত্যেন্দ্র আথাইয়াকে বিয়ে করেছিলেন ভানু। পরে তাঁরা আলাদা হয়ে যান। তাঁদের মেয়ের নাম রাধিকা। ২০১২ সালে ভানু তাঁর অস্কার ট্রফি ফিরিয়ে দিয়েছিলেন ‘দ্য অ্যাকাডেমি অব মোশন পিকচার আর্টস অ্যান্ড সায়েন্সেস’-কে। কারণ তাঁর মনে হয়েছিল তাঁর মৃত্যুর পরে পরিজনরা এই ট্রফির সম্মান করতে পারবে না। আশঙ্কা হয়েছিল, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নোবেল পদকের মতো একদিন তাঁর অস্কার ট্রফিও চুরি হয়ে যেতে পারে।
২৭২৭
মস্তিষ্কের ক্যানসারে শয্যাশায়ী ছিলেন শেষ কয়েক বছর। চিকিৎসকদের সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে তিনি হার মানলেন অসুখের কাছে। ৯১ বছর বয়সে চলে গেলেন না ফেরার দেশে। রয়ে গেল তাঁর কাজের মণিমুক্তো।