মায়ের স্মৃতিতর্পণে তন্বী লাহা রায়। ছবি: ফেসবুক।
গঙ্গায় মায়ের তর্পণ করতে যাননি, কিন্তু সারা দিন তিনি আজ মায়ের স্মৃতিতে বুঁদ। ছোট পর্দার জনপ্রিয় মুখ তন্বী লাহা রায়। চলতি বছরে মে মাসে মাকে হারিয়েছেন তিনি। মহালয়ার সকালে রীতি মেনে মন্ত্র পড়ে নয়, স্মৃতির ভাঁড়ার উপুড় করে মাকে স্মরণ করলেন অভিনেত্রী। মায়ের কথা উঠতেই আনন্দবাজার অনলাইনকে তন্বী বললেন, “মা প্রতি বছর মহালয়ায় দায়িত্ব নিয়ে বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্রের ‘মহিষাসুরমর্দ্দিনী’ চালাতেন। আমাদের ঘুম ভাঙত স্তোত্রপাঠ শুনে। আজ ঘুমোতে ঘুমোতে মনে পড়ল, আরে! আজ তো দেবীপক্ষ।” রেডিয়ো নয়, মোবাইল অ্যাপে ‘মহিষাসুরমর্দ্দিনী’ শুনতে শুনতে প্রথম অনুভূতি তাঁর, মা সত্যিই নেই! তাই সকালে শুরু থেকে স্তোত্রপাঠ শোনা হয়নি।
তিনি এ-ও বুঝেছেন, এ বারের মহালয়ার অনুষ্ঠান তাঁকে এক অন্য উপলব্ধির মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। আগে মহালয়া শুনতে শুনতে ভয় পেতেন তিনি। প্রিয়জনকে হারানোর ভয়। ‘মহিষাসুরমর্দ্দিনী’র গানের সুরে হারিয়ে যাওয়ার আকুতি ধরা দিত তাঁর কানে। এ বছর সেই যন্ত্রণা মর্মে মর্মে উপলব্ধি করেছেন। তন্বীর কথায়, “ভয়টা আমার সত্যি হল। মাকে সত্যি সত্যি হারিয়েই ফেললাম!” সেই অনুভূতি থেকে তাঁর আরও বক্তব্য, “মার্চ মাসে আমরা নতুন বাড়়িতে চলে আসি। মা তখন পা ভেঙে বিছানায়। ওই অবস্থাতেই বাড়ি সাজানোর পরামর্শ দিয়েছিল। আমার মায়ের বুটিকে ঘর সাজানোর রকমারি উপকরণ। সে সব স্মৃতি এই বাড়ির আনাচকানাচে। কিন্তু পুরনো বাড়ির থেকে অনেক কম।” ছোট পর্দার জনপ্রিয় অভিনেত্রীর স্বীকারোক্তি, “লোকে মনখারাপ থেকে দূরে থাকতে পালিয়ে বেড়ায়। কাজে ব্যস্ত রাখে নিজেকে। ভাগ্যিস, পুরনো বাড়িতে নেই। ওখানে আজন্মের স্মৃতি। আমি এ ভাবেই মায়ের স্মৃতি থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছি।”
তার পর নিজেই নিজের যুক্তি খণ্ডন করেছেন। বলেছেন, “এ ভাবে কি পালিয়ে থাকা যায়? না কি মাকে ভোলা সম্ভব?” তন্বী শুনেছেন, পিতৃপক্ষের শেষে দেবীপক্ষের সূচনার ভোরে পিতৃপুরুষ মর্ত্যে আসেন, উত্তরপুরুষের থেকে জল নিতে। তাঁর কল্পনায়, হয়তো তাঁর মা-ও এসেছিলেন। আফসোস, তিনি যদি দেখতে পেতেন! দেখতে পেলে কী বলতেন মাকে? প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে গলা ধরে এল অভিনেত্রীর। নিজেকে সংযত রাখার চেষ্টা করে জবাব দিলেন, “খুব দেখতে ইচ্ছে করে, মা কেমন আছ? কোথায় আছ?” দাবি, “মা ভীষণ সংসারী। আমরাই ওর জগৎ ছিলাম। সারা ক্ষণ সবাইকে নিয়ে ব্যস্ত থাকত। ও পারে মায়ের বুঝি নতুন বাড়ি হয়েছে? আদৌ কি আগের মতো মায়ের ভাবনায় কেবল আমরাই জুড়ে থাকি?”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy