অনুপম রায় ও প্রস্মিতা পাল। ছবি: সংগৃহীত।
পুজো মানেই ছোটবেলা থেকে গান, পাড়ায় অনুষ্ঠান, সেটাই জেনে এসেছি। বালিগঞ্জ এলাকায় বড় হয়ে ওঠা। তাই, কলকাতার পুজোর আমেজ বরাবরই আমার কাছে আলাদা। ছোটবেলায় অবশ্য পাড়াতেই কাটত পুজোর পাঁচ দিন। পরে যখন কলেজে উঠলাম, মণ্ডপে মণ্ডপে ঘুরে বেড়াতাম। রাস্তার ধারে বসা দোকান থেকেই চলত খানাপিনা। তবে, বহু বছর সে সব বন্ধ হয়ে গেছে। এখন তো গোটা পুজোটা রাজ্যের বাইরে অথবা দেশের বাইরে অনুষ্ঠান করে কেটে যায়। এ বারই যেমন মহালয়ার দিন বেরিয়ে যাচ্ছি আমেরিকায়, ফিরব দশমীর পরে। যদিও, এত আনন্দ আলোর উদ্যাপনের মাঝেও আমি মিস্ করব কলকাতার ফুচকা।
এমনিতেই সারা বছর কর্মব্যস্ততা থাকে। চাকরির পাশপাশি গানের অনুষ্ঠান। এখন সংসার।
আমার আর অনুপমের কাছে আমাদের শিল্পীসত্তাই প্রাধান্য পায়। তাই বিয়ের পর প্রথম বছর পুজোয় একসঙ্গে থাকতে পারব না, তবু আক্ষেপ হচ্ছে না তেমন। এ বার পুজোয় আমেরিকার সাতটি জায়গায় অনুষ্ঠান রয়েছে আমার। সেই জন্য ব্যান্ডের সঙ্গে বেরিয়ে যাচ্ছি। দশমী কাটিয়ে ফিরব শহরে। এখন অনুপম রয়েছে অস্ট্রেলিয়ায়। ও দেশে ফিরবে আর আমি বেরিয়ে যাব। পুজোর সময় ওর-ও অনুষ্ঠান রয়েছে, তাই কলকাতায় থাকা হবে না। তবে দেশের বাইরে নয়, অনুপমের পুজো কাটবে রাজ্যের বাইরে।
এটা অবশ্য আমাদের কাছে নতুন কিছু নয়। শুধু আমাদের নয়, সব শিল্পীর কথাই বলছি। এই সময়টা সব শিল্পীরাই অনুষ্ঠান নিয়েই ব্যস্ত থাকেন। কারণ, এই ধরনের অনুষ্ঠান বহু আগে থেকেই স্থির হয়ে থাকে। আয়োজকরা সব বন্দোবস্ত করে রাখেন। তাই হঠাৎ করে জেনেছি তেমনটা নয়। প্রথম বছর যে একসঙ্গে কাটবে না, তা জানাই ছিল। সত্যি বলতে, আজকাল আর আলাদা করে পুজোর সময় শহরে থাকাটা মিস্ করি না। আমি তো বহু বছর ধরে এই কাজটাই করছি। তাই পুজোর সময় পরিবারের থেকে দূরে থাকাটা গা-সওয়া হয়ে গিয়েছে। আর এটাতেই আমি খুশি। শিল্পীর সব থেকে বড় উদ্যাপনের জায়গা তাঁর মঞ্চ। এই সময়টা যখন এই ধরনের অনুষ্ঠানের সুযোগ আসে, আমি আনন্দেই থাকি। তবে হ্যাঁ, বাবা-মাকে মিস্ করি। দর্শকেরা যখন আমার গান শুনতে আসেন, তখন খারাপ লাগাগুলো আর থাকে না।
যে হেতু ঘড়ি কাঁটার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলতে হয় আমাদের, তাই তেমন কিছু পুজো উপলক্ষে কেনাকাটার সুযোগ পাইনি। বলা ভাল কিছুই কেনা হয়নি। সারা বছরই আজকাল কিছু না কিছু কেনা হয়। এমনকি আলাদা করে একের অপরের জন্যও তেমন কিছু কেনা হয়নি।
এমনিতেই এ বছর পরিস্থিতি অন্য বারের তুলনায় আলাদা। যেটা ঘটেছে সেটা তো মোটেও বাঞ্ছনীয় নয়। একই সঙ্গে এটাও ঠিক, প্রতিবাদ তার জায়গায়, অনুষ্ঠান অনুষ্ঠানের জায়গায়। তবে, কোনও মানুষ উৎসবে শামিল হবেন, কি হবেন না, সেটা তাঁর ব্যক্তিগত বিষয়। আমরা একটা গণতান্ত্রিক দেশে বাস করি। ফলে যে যেটা করে আনন্দ পায়, সেটা তাকে করতে দেওয়া উচিত।
অনেকগুলো দিনই দেশে থাকব না। সে ভাবে পুজোর আচার-অনুষ্ঠান পালন করা হবে কি না জানি না। প্রথম বার দেশের বাইরে শো করতে যাচ্ছি। অঞ্জলি দিতে পারব কি না সন্দেহ আছে। যদিও ইচ্ছে আছে সুযোগ হলে প্রবাসেই প্রথম বছর সিঁদুর খেলব। এ বছরের পুজোটা দূরেই কাটবে। কিন্তু, পুজো শেষ হলে আমাদের উপহার দেওয়া-নেওয়া হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy