Advertisement
E-Paper

সৌমিত্রকাকুকে অনুষ্ঠানের মঞ্চ ছেড়ে দিলেন বাবা

১৫ নভেম্বর শুক্রবার প্রয়াত সুরকার ও সঙ্গীতশিল্পী শ্যামল মিত্রের মৃত্যুদিন। বাবার স্মৃতিচারণায় আনন্দবাজার অনলাইনের জন্য কলম ধরলেন পুত্র সৈকত মিত্র।

Bengali Singer Saikat Mitra remembers his father musician Shyamal Mitra on his death anniversary

একটি অনুষ্ঠানে শ্যামল মিত্রের সঙ্গে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। ছবি: আনন্দবাজার আর্কাইভ।

সৈকত মিত্র

সৈকত মিত্র

শেষ আপডেট: ১৫ নভেম্বর ২০২৪ ১৭:১৮
Share
Save

শুক্রবার বাবার ৩৭তম মৃত্যুবার্ষিকী। চোখের পলকে বছরগুলো কেটে গেল। কিন্তু, স্মৃতি মানুষের সঙ্গে রয়ে যায়। গত চার দশকে চারপাশে কত কিছু বদলে গিয়েছে। সঙ্গীতজগৎও তার ব্যতিক্রম নয়। মাঝেমাঝে ভাবি, বাবা আজ জীবিত থাকলে কী ভাবতেন।

১৫ নভেম্বর বাবার আরও কাছের একজন মানুষের মৃত্যুদিন। তিনি সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। দু’জনের সঙ্গেই সময় কাটানোর সৌভাগ্য আমার হয়েছে। তাই আজ এই লেখায় খুব কাছ থেকে দেখা এই দুই মানুষকে নিয়েই খানিক স্মৃতিচারণ করতে চাই। বাবার সঙ্গে শৈশবেই উত্তমজেঠুর (উত্তমকুমার) বন্ধুত্ব। কারণ, চক্রবেড়িয়া রোডে বাবা যখন তাঁর ছোট পিসির বাড়িতে থাকতে এলেন, পাশেই গিরিশ মুখার্জি রোডে থাকতেন উত্তমজেঠু। দু’জনে যখন তথাকথিত তারকা হয়ে ওঠেননি, সেই সময়ে থেকেই তাঁদের বন্ধুত্ব। পরবর্তী সময়ে তো একসঙ্গে বহু কাজ তাঁরা করেছেন।

Bengali Singer Saikat Mitra remembers his father musician Shyamal Mitra on his death anniversary

একটি অনুষ্ঠানে শ্যামল মিত্রের সঙ্গে উত্তমকুমার। ছবি: আনন্দবাজার আর্কাইভ।

বাবার থেকে সৌমিত্রকাকু বয়সে কিছুটা ছোট ছিলেন। বাবা তাঁকে খুবই স্নেহ করতেন, ‘পুলু’ বলে ডাকতেন। আমি যখন ২০১৪-য় ‘দূরবীন’ ছবিটা প্রযোজনা করি, তখনও সৌমিত্রকাকুর অনুরোধ ছিল, আমি যেন রোজ তাঁকে বাড়ি থেকে শুটিংয়ে নিয়ে যাই এবং আবার দিনের শেষে বাড়িতে ছাড়তে যাই। সেই সময় বাবাকে নিয়ে বহু আড্ডা আমাদের হয়েছে। কত স্মৃতি! ১০ বছর আগের কথা। কিন্তু, এখনও সেই দিনগুলো মনে পড়ে।

বয়সের পার্থক্য থাকলেও বাবা এবং সৌমিত্রকাকুর পরস্পরের প্রতি অসম্ভব শ্রদ্ধা ছিল। একটা ঘটনা মনে পড়ছে। ১৯৮৫ নাগাদ মধ্যমগ্রামে একটা অনুষ্ঠানে বাবার সঙ্গে গিয়েছি। সেখানে সৌমিত্রকাকুও ছিলেন। বাবা সিনিয়র বলে সৌমিত্রকাকু আগে তাঁকে মঞ্চ ছেড়ে দিতে চাইলেন। এ দিকে বাবা রাজি নন। বললেন, ‘‘আমার গান করতে সময় লাগবে। পুলু, তুই আগে করে নে।’’ এ দিকে সৌমিত্রকাকু রাজি নন। বললেন, ‘‘আরে শ্যামলদা! আমি তো শুধু কয়েকটা কবিতা বলব। তুমি গেয়ে নাও। আমি অপেক্ষা করছি।’’ বাবা তাতেও রাজি হলেন না। পরিস্থিতি দেখে শেষ পর্যন্ত সৌমিত্রকাকুই আগে মঞ্চে উঠলেন। সহশিল্পীদের মধ্যে এই শ্রদ্ধা প্রকাশ তখনকার একটা রীতি ছিল।

সেই সময়ে বাংলায় তাবড় শিল্পীরা কাজ করছেন। কারও সঙ্গে কারও প্রতিযোগিতা ছিল না। বরং একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন। হেমন্তজেঠু (হেমন্ত মুখোপাধ্যায়) বাবাকে খুব স্নেহ করতেন। দু’জনের দেখা হয়েছে। বাবা সঙ্গে সঙ্গে হেমন্তজেঠুকে প্রণাম করলেন। বয়সে বড় হলেও তিনিও কিন্তু বাবার হাঁটুর কাছে হাত স্পর্শ করলেন। অর্থাৎ পাল্টা একটা সম্মান জানানো। দেখে খুব অবাক হয়েছিলাম। এখনও হয়তো শিল্পীদের মধ্যে এই শ্রদ্ধা বা ভদ্রতাগুলো রয়ে গিয়েছে। কিন্তু চোখে পড়ে কম।

বাবার স্মরণে সারা বছর ধরেই নানা অনুষ্ঠান করা হয়। রাজ্য সরকারের পাশাপাশি আমি নিজেও অনুষ্ঠান করি। আগামী বছর ১৪ জানুয়ারি বাবার ৯৬তম জন্মদিনে একটা অনুষ্ঠান করার ইচ্ছে ছিল। কিন্তু, সেই সময় হল পাওয়া কঠিন হয়। তাই ঠিক করেছি, আগামী ১৩ ডিসেম্বর অনুষ্ঠানটি করব। আপাতত হৈমন্তী শুক্লা, শিবাজী চট্টোপাধ্যায়, শ্রীকান্ত আচার্য, শ্রীরাধা বন্দ্যোপাধ্যায়, মনোময় ভট্টাচার্যের সঙ্গে কথা হয়েছে। চেষ্টা করছি, যদি ঊষা উত্থুপ সেই সময়ে কলকাতায় থাকেন, তা হলে তাঁকেও অনুষ্ঠানে আনার।

বাবার মৃত্যুদিনে আমার একটা স্বপ্নের কথা জানাতে চাই। দীর্ঘ দিন ধরেই ইচ্ছে আছে, বাবার নামে একটি সঙ্গীত অ্যাকাডেমি তৈরির, যেখানে শিক্ষার্থীরা গান শিখবেন, সঙ্গীত নিয়ে চর্চা করবেন। সেখানে বাবার সমকালীন যে সব শিল্পী ছিলেন, তাঁদেরও সম্মান জানানো হবে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত আমি তা বাস্তবায়িত করতে পারিনি। ২০২৯-এ শ্যামল মিত্রের জন্মশতবর্ষ। আশা করছি, তার আগে ঈশ্বর এবং বাবার আশীর্বাদে এই কাজটি আমি শেষ করতে পারব।

Shyamal Mitra Bengali singer soumitra chatterjee Uttam Kumar Death Anniversary Tollywood News Saikat Mitra

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।