মানুষকে বিশ্বাস করতে শেখাল এই বৈশাখ! বলছেন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়।
এ এক অকাল বৈশাখ। পয়লা বৈশাখ বললে কত স্মৃতি ভিড় করে আসে। আজ সে সব কই? আজ আর কিছুই ভাল লাগছে না। ভাবিনি, কোনও দিন এ রকম পয়লা বৈশাখ কাটাতে হবে। শুধু বাঙালি হিসেবে নয়, সারা বিশ্ব এই করোনার ত্রাসে কেঁপে উঠছে। না দেখা, না চেনা ‘বায়োলজিক্যাল ওয়ার’। কী ভয়ানক যুদ্ধ! এই যুদ্ধে আমি আমার শত্রুকে চিনি না। ওই যে লোকে বলে, ‘আই অ্যাম সুপ্রিম! আমার অনেক টাকা আছে!’ এ সব টাকা, ক্ষমতা কিচ্ছু না, বুঝিয়ে দিল এই করোনা, এই নববর্ষ। দু’জন আছেন— এক জন ঈশ্বর, আর এক জন প্রকৃতি। তাঁরাই পারবেন কিছু করতে।
এখন কী করছে সারা বিশ্বের মানুষ? ঈশ্বরকে ডাকছে। অনেক সময় দিতে পারছি আমরা ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করার। আর প্রকৃতির প্রতি শ্রদ্ধা বেড়ে গিয়েছে আমাদের।
কখনও মনে হয়নি সোশ্যাল মিডিয়ায় এসে বলি, ‘এই করুন, এটা মানুন’। সবাই সব জানেন। তবু বলব, অথরিটি যা বলছেন সেগুলো অক্ষরে অক্ষরে মানা উচিত। কয়েক দিন আগে দেখছিলাম অনেকেই করোনায় কী করণীয় তা নিয়ে ফেসবুকে নিজস্ব মতামত দিচ্ছেন। এটা করে কোনও লাভ নেই। মানুষই কিন্তু পারবে এই লড়াইটা লড়ে মানুষকে বাঁচাতে।
কী ভয়ানক যুদ্ধ! এই যুদ্ধে আমি আমার শত্রুকে চিনি না
বাড়িতে আছি। বাবার সঙ্গে মুম্বইতে রোজ কথা হচ্ছে। খোঁজ নিচ্ছি ঠিক আছে কি না। যে যার মতো করে ঠিক থাকার চেষ্টা করছে। আমাদের সঙ্গে মিশুক আছে। মনে হল না তো! আজ নববর্ষ, এই রান্নাটা করতে বলি। এটা খাই সবাই মিলে। সত্যি বলতে কি, মনেই হচ্ছে না আজ পয়লা বৈশাখ! ভেতর থেকেই আসছে না। নতুন জামা পরার তো প্রশ্নই ওঠে না। খুব খারাপ লাগছে। কিন্তু এটাই জীবন। ভাবতে হবে, আমরা যদি ঠিক থাকি তবে নিশ্চয়ই পরের পয়লা বৈশাখ আমরা ধুমধাম করে কাটাতে পারব।
আরও পড়ুন: কঠিন সময়ে নতুন কোনও স্কিল কি শিখলেন টলি সেলেবরা?
আজ সকাল থেকেই মনে হচ্ছে, আমরা সবাই বর্তমান নিয়ে কথা বলছি, কিন্তু আমাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে কথা বলা উচিত এখন। খুব কঠিন লড়াই আসছে। যে যে প্রফেশনেই থাকুক না কেন, কঠিন লড়াই লড়তে হবে সব্বাইকে। আর এই লড়াইয়ের অস্ত্র প্রেম, মানুষের প্রতি ভালবাসা। সামনের মানুষটাকে নিয়ে ভাবতে হবে। প্রত্যেক মানুষ যদি এই ভাবে ভাবতে পারে, লড়াইটা সহজ হবে। এই ভালবাসাটা আমরা ভুলে গিয়েছিলাম। আমরা তো নিজেদের স্বার্থ নিয়ে এত দিন ছুটছিলাম। ছুটেই যাচ্ছিলাম! অন্য কারও কথা ভাবার সময় কোথায় আমাদের? এই ছুটতে গিয়ে অনেক কিছু হারিয়ে ফেলেছিলাম আমরা!
এই অতিমারি আমাদের বোধহয় ভালবাসাটা ফিরিয়ে দিল।
এই অতিমারি আমাদের বোধহয় এই ভালবাসাটা ফিরিয়ে দিল। মানুষকে বিশ্বাস করতে শেখাল এই বৈশাখ! তবে প্রেম মানেই মানুষটার জন্য করতে হবে। দান করতে হবে
তাও নয়। একটু থামা…ভাবা...
আমি কাউকে দোষ দিচ্ছি না কিন্তু। আসলে পৃথিবীটা মেকানিক্যাল হয়ে গিয়েছিল। মানুষও সে রকম ভাবে জীবন কাটাচ্ছিল। এটাই বাস্তব।
আরও পড়ুন: এ বারের মৃত্যুপুরীর মাঝেও বৈশাখ এল
কেমন বাস্তব?
পাশের মানুষটা পাশের ঘরে থাকলে উঠে গিয়ে কথা বলি না আর। হোয়াটসঅ্যাপ করি। আর তো সেই চিঠির গন্ধ পাই না! চিঠি আসার অপেক্ষাও নেই।
লকডাউনের পরবর্তী জীবন হয়তো এইগুলো থেকে আমাদের সরিয়ে আনবে।
আজ নতুন জামার গন্ধ নেই। আনন্দের হাসি নেই। হাসির রোল নেই আমার শহরে। পাঞ্জাবি আর শাড়িরা আজ গৃহবন্দি। আছে তো কেবল বৈশাখের হাওয়া, যা বলে যাচ্ছে পরের বৈশাখে বাঙালি নববর্ষকে বদলে যাওয়া জীবনের আলোয় আবার সাজিয়ে তুলবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy