Advertisement
E-Paper

এই জমানায় সত্যজিৎ রায় আদৌ সত্যজিৎ রায় হতেন? নিষেধাজ্ঞা নিয়ে সরব ‘দ্য কেরালা স্টোরি’র সুরকার

রিয়্যালিটি শো থেকে উত্থান। তার প্রায় এক যুগ পরে স্বীকৃতি পান শ্রোতাদের কাছে। বনগাঁ থেকে মুম্বইয়ে গিয়েছিলেন স্বপ্নপূরণ করতে। কতটা সফল হলেন ‘দ্য কেরালা স্টোরি’র সুরকার বিশাখ জ্যোতি?

Bengali music composer Bishakh Jyoti who has recently worked in The Kerala Story opens up about life post the film’s success.

বাঙালি পরিচালক সুদীপ্ত সেনের ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ ছবিতে সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন বিশাখ জ্যোতি। ছবি: সংগৃহীত।

স্নেহা সামন্ত

শেষ আপডেট: ১৩ জুন ২০২৩ ১৮:৩০
Share
Save

বাংলার ছেলে। বনগাঁ থেকে পাড়ি দিয়েছেন মুম্বইয়ে। ৬৭তম জাতীয় পুরস্কারের মঞ্চে পেয়েছিলেন সেরা সঙ্গীত পরিচালকের সম্মান। প্রায় এক যুগের ঘষামাজার পরে ‘দ্য কেরালা স্টোরি’র মাধ্যমে প্রচারের আলোয় এলেন বিশাখ জ্যোতি। বাঙালি পরিচালক সুদীপ্ত সেন পরিচালিত ছবির সাফল্যের পর বিশাখ এখন মুম্বইয়ের পরিচিত নাম। সাম্প্রতিক সাফল্যের পর কি রাতারাতি বদলে গিয়েছে জীবন? আনন্দবাজার অনলাইনের সঙ্গে আলাপচারিতায় সব প্রশ্নের উত্তর দিলেন বিশাখ।

প্রশ্ন: ‘দ্য কেরালা স্টোরি’র এই বিপুল সাফল্য বোধহয় নির্মাতারাও প্রত্যাশা করেননি। কী ভাবে এই ছবিতে কাজের সুযোগ পান?

বিশাখ: সুদীপ্তদার সঙ্গে এর আগেও কাজ করেছি। তথ্যচিত্র, নন-ফিচার ফিল্ম থেকে শুরু করে দুটো ফিচার ফিল্মেও কাজ করেছি। সেগুলো ততটা প্রচারের আলো পায়নি। এই ছবিতে কিন্তু প্রথমে আমার কাজ করার কথা ছিল না। আমি তখন আমেরিকায় ছিলাম। কিন্তু ওই যে... সংযোগ বলে একটা কথা আছে না! শেষ পর্যন্ত সুদীপ্তদা আমাকেই বলেন একটা গান বানাতে। আমাকে গানের কথা পাঠান, আমি সুর দিই। ছবির নির্মাতাদের পছন্দও হয়। তার পর আমাকেই দায়িত্ব দেওয়া হয় গোটা ছবির।

প্রশ্ন: ‘সারেগামাপা’র পর প্রায় ১২-১৩ বছর লেগে গেল দর্শক ও শ্রোতাদের নজরে পড়তে..।

বিশাখ: ‘দ্য কেরালা স্টোরি’র থেকেও বড় অ্যাওয়ার্ড আমি দু’বছর আগে পেয়েছি। ২০২১ সালে আমি জাতীয় পুরস্কার পাই। তবে এই পথচলাকে আমি ‘স্ট্রাগল’-এর তকমা দিতে চাই না। আমি চাইলেই আরও লেখাপড়া করে, মাস্টার্স-পিএইচডি করে চাকরি করতে পারতাম। আমি এই পথটাই বেছে নিয়েছিলাম। ছোটবেলা থেকে স্বপ্ন দেখেছি বলিউডে কাজ করার। কিশোর কুমার, মহম্মদ রফি, মান্না দে, লতা মঙ্গেশকরকে দেখে অনুপ্রেরণা পেয়েছি। ভাবতাম, আমারও এমন নামডাক হবে। ‘সারেগামাপা’র পর থেকে সেই যাত্রাটা শুরু হয়। তার পর তো আমার মুম্বইয়ে আসা। আগে স্রেফ গায়ক ছিলাম। তার পর আস্তে আস্তে সঙ্গীত পরিচালনায় মন দিই। মুম্বইয়ে এসে আমি সাজিদ-ওয়াজিদের সহকারী হিসাবে কাজ করেছি। আমার এমন দিনও গিয়েছে যখন হাতে কোনও কাজ নেই। আবার এখন, ‘দ্য কেরালা স্টোরি’র পরে আমার হাতে ছ’টা ছবির কাজ। তার মধ্যে বাংলা ছবির কাজও রয়েছে।

image of Bishakh Jyoti.

‘সারেগামাপা’ রিয়্যালিটি শোয়ের মঞ্চ থেকে গায়ক হিসাবে উত্থান বিশাখ জ্যোতির। ছবি: সংগৃহীত।

প্রশ্ন: বাঙালি হয়েও টলিউডে এখনও পর্যন্ত তেমন ভাবে কাজ করার সুযোগ পাননি কেন?

বিশাখ: টলিউডে আমার সে রকম পরিচিতি ছিল না। আমি প্রথম থেকেই মুম্বইয়ের কাজ করেছি বলে কলকাতায় আমাকে কেউই তেমন চিনতেন না।

প্রশ্ন: গায়ক হিসাবে পথচলা শুরু। এখন পুরোদমে সঙ্গীত পরিচালনা করছেন। সচেতন ভাবে পেশা পরিবর্তন করেছিলেন?

বিশাখ: আমার মনে হয়, যে কোনও ভাল গায়কের মধ্যেই এক জন সুরকারের সত্তা থাকে। লতা মঙ্গেশকরের সুরে কিশোর কুমার গান গেয়েছেন, কিশোর কুমারের সুর দেওয়া গানে লতাজি গলা দিয়েছেন। হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, মান্না দে-কেও আমরা সুরকার হিসাবে দেখেছি। এঁরাই তো আমার অনুপ্রেরণা। আমি এক ঘরানার গান গাইতে পছন্দ করি। কিন্তু আমি যখন গানের সুর দিচ্ছি, তখন তো পরিচালকের ভাবনা থেকে সেই কাজটা করছি। গায়ক হিসাবে আমার কোনও সীমাবদ্ধতা থাকতেই পারে। সুরকার হিসাবে তো আমি সব ধরনের গান নিয়ে কাজ করতে পারি। শান বা সোনু নিগম নিশ্চয়ই রাহত ফতেহ আলি খানের মতো গান গাইতে পারবেন না।

প্রশ্ন: ২০২১ সালে জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন। কিন্তু যে ছবির জন্য পেলেন, সেটা সে ভাবে পরিচিতিই পায়নি..।

বিশাখ: কারণ সেটা একটা নন-ফিচার ফিল্ম। আমাদের দেশে তথ্যচিত্র লোকজন দেখেন কোথায়! আজ আপনি, আমি ‘দ্য এলিফ্যান্ট হুইস্পারার্স’-এর নাম শুনেছি। রাস্তায় যে কাউকে ডেকে জিজ্ঞাসা করলে তাঁরা চিনতেও পারবেন না সেটা কোন ছবি। অথচ, ওই ছবি অস্কার পেয়েছে।

প্রশ্ন: আপনার আগের ফিচার ছবিগুলো কি জনপ্রিয় হয়েছিল?

বিশাখ: ‘গন কেশ’ বলিউডের প্রথম ছবি যেটা অ্যালোপেসিয়ার মতো একটা অসুখ নিয়ে গল্প বলেছিল। সমাজের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কোনও গল্প হলে তবেই আমি সেই ছবির সঙ্গীত পরিচালনার ক্ষেত্রে সায় দিই। এত গুরুত্বপূর্ণ একটা ছবি কেন তখন মানুষ পছন্দ করলেন না, কেন ছবিটা চলল না... সেটা আমি জানি না। আমি আরও একটা ছবি করেছিলাম, ‘কৌন কিতনে পানি মেঁ’। জলসঙ্কটের গল্প নিয়ে তৈরি এই ছবি। এই ছবিতে রাধিকা আপ্তে, কুণাল কপূর, সৌরভ শুক্ল, গুলশন গ্রোভারের মতো অভিনেতারা ছিলেন। তার পরেও সেই ছবিটাও তেমন ভাবে চলেনি। এ বার দর্শক কোন ছবিটা পছন্দ করবেন, কোনটা করবেন না— সেটা তো আর আমার হাতে নেই। শাহরুখ খানের ছবিও তো ফ্লপ হয়!

প্রশ্ন: একের পর এক ছবি দর্শকের সাড়া পাচ্ছে না। কখনও অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়েননি?

বিশাখ: ‘ডিপ্রেশন’ বিষয়টা আমার কাছে সাদা হাতির মতো। আমি মনে করি, আপনি যদি ‘ডিপ্রেসড’ হতে না চান, তা হলে আপনি হবেন না। কাজ করলেই আর ডিপ্রেশন আসে না। কোনও কাজ যদি কেউ ভালবেসে করে যান, তা হলে হতাশা আসবে কোথা থেকে! এটা আমি শুধু আমার ক্ষেত্রে নয়, সুদীপ্তদার ক্ষেত্রেও বলছি। সুদীপ্তদাও কিন্তু এই রকমই। ২০ বছর ধরে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে লড়াই করার পরে এখন ‘দ্য কেরালা স্টোরি’র হাত ধরে সাফল্যে পেয়েছেন তিনি। এর আগের ছবিগুলো তো দর্শকের কাছে পৌঁছয়নি। সুদীপ্তদাকে তো কোনও দিন আমি হতাশ হতে দেখিনি।

প্রশ্ন: ভবিষ্যতে সুদীপ্ত সেনের সঙ্গে ফের জুটি বাঁধছেন?

বিশাখ: এর পরে মোট ছ’টা ছবির কাজ হাতে রয়েছে। ‘দ্য কেরালা স্টোরি’র প্রযোজক বিপুল শাহের সঙ্গে একটা প্রজেক্টে কাজ করছি। ওই ছবিতে বিপুল শাহই প্রযোজক ও পরিচালক। বাঙালি পরিচালক শিলাদিত্য মৌলিকের সঙ্গে একটা ছবিতে কাজ করছি। সুদীপ্তদা মাওবাদী আন্দোলন নিয়ে একটা ছবি করছেন। সেটার প্রি-প্রোডাকশনের কাজ চলছে এখন। ওই ছবিতে আমি কাজ করছি।

প্রশ্ন: প্রচার ঝলক মুক্তি পাওয়ার পর থেকে বিতর্কের কেন্দ্রে থেকেছে ‘দ্য কেরালা স্টোরি’। ছবি নিয়ে রাজনৈতিক তরজাও কম হয়নি। কোনও ছবির চুক্তিতে সই করার সময় কি ব্যক্তিগত ভাবনাচিন্তার দ্বারা প্রভাবিত হন?

বিশাখ: সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ও রাজনৈতিক ভাবে প্রভাবিত ছিল। ‘দ্য কেরালা স্টোরি’র ক্ষেত্রে আমি নিজে ওই মেয়েদের টেস্টিমোনিয়াল শুনেছি। যাঁদের সঙ্গে এত বড় দুর্ঘটনা ঘটে গিয়েছে, তাঁরা কি প্রচারের জন্য মিথ্যা কথা বলবেন? আমি নিজে ভিডিয়ো দেখেছি, শুনেছি। তবেই বিশ্বাস করেছি।

প্রশ্ন: প্রচার ঝলকে যে ৩২ হাজার মেয়ের কথা উল্লেখ করা হয়েছিল, আদালতের নির্দেশে তা পরে সরানো হয়।

বিশাখ: সেই পরিসংখ্যানটা আমি জানি না, কারণ আমি এটা নিয়ে গবেষণা করিনি। পরে সানশাইন পিকচার্সের তরফে একটা বিবৃতিও দেওয়া হয়েছে। সে দিক থেকে হিসাব করে দেখতে গেলে তো ওই সংখ্যাটা ৩২ হাজারের থেকেও বেশি। কিন্তু সেটা কে বিশ্বাস করবেন? আমার প্রযোজক, পরিচালক বলছেন বলে কি আমি সেটায় বিশ্বাস করব? না যাঁরা ছবির বিরুদ্ধে কথা বলছেন, আমি তাঁদের বিশ্বাস করব? আমি বিশ্বাস করি ওই তিন মেয়েকে, যাঁদের টেস্টিমোনিয়াল আমি দেখেছি। তাঁদের সাক্ষাৎকার দেখার পরে, তাঁদের সঙ্গে কথা বলে তবে আমি ছবির জন্য সায় দিয়েছি। যদি কোনও রাজনৈতিক দলের মনে হয় যে, এই ছবির মাধ্যমে তাদের পক্ষে কথা বলা হচ্ছে, তা হলে সেটা তাদের দায়। অন্য রাজনৈতিক দলের যদি মনে হয় তাদের বিরুদ্ধে কথা বলা হচ্ছে, তা হলেও সেটা তাদেরই ব্যাপার। যে সব ভারতীয় পরিচালক আমাদের দেশের সিনেমাকে আন্তর্জাতিক স্তরে নিয়ে গিয়েছেন, তাঁদের সবার কাজেই কোনও না কোনও রাজনৈতিক ভাবনা ছিল। সত্যজিৎ রায়, মৃণাল সেনের বেশির ভাগ ছবিই তাই। আমার তো সন্দেহ আছে, সত্যজিৎ রায় আজকের দিনে বেঁচে থাকলে আদৌ সত্যজিৎ রায় হতেন কি না। তাঁর ছবির উপরেই হয়তো নিষেধাজ্ঞা জারি করে দেওয়া হতো।

প্রশ্ন: কোনও ছবির রাজনৈতিক মতাদর্শের সঙ্গে সহমত না হলেও কি সেই ছবিতে কাজ করবেন?

বিশাখ: একশো বার করব। আমি তো শিল্পী।

প্রশ্ন: পশ্চিমবঙ্গে ‘দ্য কেরালা স্টোরি’র উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল। পরে, সুপ্রিম কোর্টের আদেশে তা তোলা হয়...

বিশাখ: আমি মুখ্যমন্ত্রীর পদটাকে সম্মান করি। ওই চেয়ারে জ্যোতি বসু বা বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য থাকলে তাঁকেও আমি এই সম্মানটাই দিতাম। মুখ্যমন্ত্রী আমাকে একটা সরকারি অনুষ্ঠানে ডাকলে কি আমি যাব না? তিনি যদি কাল আমাকে বঙ্গভূষণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন, আমি কি যাব না? ওই সম্মান তো আমাকে সরকার দিচ্ছে, কোনও রাজনৈতিক দল নয়।

Celebrity Interview The Kerala Story Music Director Bishakh Jyoti

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।