Advertisement
১৯ নভেম্বর ২০২৪
প্রোফেসর শঙ্কু ও এল্ ডোরাডো

মুভি রিভিউ প্রোফেসর শঙ্কু ও এল্ ডোরাডো: ফিরে এল বাঙালির নস্টালজিয়া

প্রফেসর ত্রিলোকেশ্বর শঙ্কু নামটা বাঙালির মনে বহু নস্টালজিয়া উস্কে দেয় যা ক্রিসমাসের মরসুমে কেকের সুগন্ধকে ফিরিয়ে আনে। কিন্তু ক্রিসমাস মানেই কেক, মোমবাতি আর ক্যারল নয়, ক্রিসমাস মানে নতুন বাংলা ছবিও।

শঙ্কুর চরিত্রে ধৃতিমান।

শঙ্কুর চরিত্রে ধৃতিমান।

বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ ডিসেম্বর ২০১৯ ১৫:২০
Share: Save:

ছবি: প্রফেসর শঙ্কু ও এল ডোরাডো,

পরিচালনা: সন্দীপ রায়

অভিনয়: ধৃতিমান চট্টোপাধ্যায়, শুভাশিস মুখোপাধ্যায় এবং অন্যান্য

প্রফেসর ত্রিলোকেশ্বর শঙ্কু নামটা বাঙালির মনে বহু নস্টালজিয়া উস্কে দেয় যা ক্রিসমাসের মরসুমে কেকের সুগন্ধকে ফিরিয়ে আনে। কিন্তু ক্রিসমাস মানেই কেক, মোমবাতি আর ক্যারল নয়, ক্রিসমাস মানে নতুন বাংলা ছবিও। আর সেই ছবি যদি সত্যজিৎ রায়ের অবিস্মরণীয় সৃষ্টি বৈজ্ঞানিক শঙ্কুকে নিয়ে হয় তাহলে তো সোনায় সোহাগা। যাঁকে এতদিন বালিশের পাশে রেখে ঘুমিয়েছি বা ট্রেনের জানলার ধারে বসে দূরের দৃশ্য না দেখেচোখ ডুবিয়েছি যাঁর অ্যাডভেঞ্চারে, সেই মানুষটি যদি এই মাঝ ডিসেম্বরে পর্দায় উপস্থিত হন, তাহলে তার চাইতে রোমাঞ্চকর আর কী হতে পারে?

সন্দীপ রায়কে ধন্যবাদ তিনি সত্যজিতের আর একটি দিগন্তকে মলাট থেকে মাল্টিপ্লেক্সে নিয়ে এলেন, মফস্সলের সিঙ্গল স্ক্রিনেও ‘প্রোফেসর শঙ্কু ও এল্ ডোরাডো’ তুমুল জনপ্রিয়তা পাবে বলেই বিশ্বাস।

আসলে এই ছবি এবং তার গল্পটাই দাঁড়িয়ে আছে ‘বিশ্বাস’-এর উপরে। নকুড়চন্দ্র বিশ্বাস (শুভাশিস মুখোপাধ্যায়)। বলের আকার ধরে শূন্যে ভেসে বেড়ানো বিদ্যুৎ যদি কারও খুব কাছাকাছি এক্সপ্লোড করে তাহলে সেই ‘বল লাইটনিং’-এর ফলে মানুষের মধ্যে এক বিরাট পরিবর্তন ঘটে যেতে পারে। প্রফেসর শঙ্কুকে তাঁর বহু পুরনো ডাক নাম ধরে ডেকে ওঠা নকুড়বাবুর মধ্যে এই পরিবর্তন ঘটে গিয়েছে বলে শঙ্কুর মনে হয়।

‘শঙ্কু’ ধৃতিমান, ‘নকুড়’ শুভাশিসের সঙ্গে পরিচালক

আরও পড়ুন-জামিয়া কান্ডের প্রতিবাদ, মেয়েকে জড়িয়ে মহেশ ভট্টকে কদর্য মন্তব্য কঙ্গনার দিদির

সিনেমার ঘটনা মোটামুটি সত্যজিতের গল্পকেই অনুসরণ করে, কেবল সময়টাকে এগিয়ে আনায় মোবাইল ফোন ইত্যাদির ব্যবহার দেখা যায়। ব্যক্তিগতভাবে মনে হয়, সেটা না দেখালেও চলত, প্রোফেসর শঙ্কুকে তাঁর সময়সীমাতেই দিব্যি মানাত। তবে দেখানোতেও মহাভারত অশুদ্ধ হয়নি।

এই ছবি অবশ্য ভারতের সীমা পেরিয়ে ব্রাজিলে গিয়ে পৌঁছেছে। বাংলা ছবির সীমিত বাজারকে তুড়ি মেরে পর্দায় ব্রাজিলকে নিয়ে আসা কম কথা নয়। প্রযোজক এবং পরিচালকের আলাদস একটা অভিনন্দন প্রাপ্য সেই কারণে।

সাও পাওলো-র রাটানটান ইনস্টিটিউটে যাওয়ার সময় নিজের সেক্রেটারি হিসেবে নকুড়চন্দ্র বিশ্বাসকেও নিয়ে যান শঙ্কু। আর সেখান থেকেই খেলা ঘুরতে শুরু করে। শঙ্কুর দীর্ঘদিনের বন্ধু বিজ্ঞানী ক্রোলের সঙ্গে করমর্দনের মুহূর্তে আল্পস পর্বত থেকে কীভাবে তিনি পিছলে পড়ে যাচ্ছিলেননকুড়বাবুসেই ঘটনার কথা বলে দেন। ক্রোলকে বাঁচাতে গিয়ে তাঁর দুই বন্ধু মারা গিয়েছিলেন। সেই ঘটনা মনে পড়ে যাওয়ায় ক্রোল প্রায় সম্মোহিতের মতো তাকিয়ে থাকেন নকুড়বাবুর দিকে। এমনকি, এই ধরনের ব্যাপারস্যাপার সম্বন্ধে অবিশ্বাসী সন্ডার্সও চমকে যায়।

আরও পড়ুন-মেয়ের শেষকৃত্যে আসেননি মৌসুমি, প্রকাশ্যে ক্ষোভ জানালেন জামাই ডিকি সিংহ

ইতিমধ্যে রঙ্গমঞ্চে প্রবেশ করে সলোমন ব্লুমগার্টেন।লোকটি শঙ্কুর সমস্ত আবিষ্কারর পেটেন্ট কিনে নিতে চায় এবং শঙ্কু প্রত্যাখ্যান করায় নানাবিধ কৌশল অবলম্বন করে কাজ হাসিল করতে চায়। কীভাবে নকুড়বাবু সলোমনের বাড়াভাতে ছাই দেন, সেটা জানার জন্য দর্শককে হলে গিয়ে সিনেমাটা দেখতে হবে। আমাজনের নদী জঙ্গল তো বাড়তি পাওনা হিসেবে আছেই।

বাংলা সিনেমায় এরকম স্পেশাল এফেক্টস সত্যিই অভাবনীয়। আর যে কথাটা বলার তা হল এই ছবিতে শুভাশিস মুখোপাধ্যায় ছাপিয়ে গিয়েছেন নিজেকেই। এতবড় একজন অভিনেতাকে বাংলা সিনেমা কেন সেভাবে ব্যবহার করল না, কে জানে!শঙ্কুর চরিত্রে ধৃতিমান চট্টোপাধ্যায় ছাড়া এই মুহূর্তে আর কে-ই বা থাকতে পারতেন? এই সিনেমায় তিনি যেন ধোনির মতো উল্টোদিকে দাঁড়িয়ে বিরাটকে চালিয়ে খেলার সুযোগ করে দিয়েছেন।

ধৃতিমান আর শুভাশিসের যুগলবন্দি এক অন্য উচ্চতায় তুলে নিয়ে গিয়েছে এই সিনেমাকে।

ক্রোল সন্ডার্স, সলোমনের ভূমিকায় ভাল অভিনয় করেছেন ভিনদেশি অভিনেতারা। এর কৃতিত্বও পরিচালক সন্দীপ রায়ের। ক্যামেরার কাজ, সম্পাদনা, সব কিছুই প্রায় নিখুঁত এই ছবিতে। আর এর পুরো কৃতিত্বটাই ক্যামেরাম্যান ও সম্পাদকের পাশাপাশি দিতে হবে সন্দীপ রায়কে। যিনি ব্রাজিল ও বাংলাকে একসূত্রে গাঁথার সাহস দেখিয়েছেন এই ছবিতে।

আরও পড়ুন-চুপ কেন? জামিয়া নিয়ে কড়া প্রশ্নের মুখে শাহরুখ-সলমন-রণবীরেরা

শেষে বলা যায়, এই ছবিতে প্রথমে নকুড়বাবু আর পরে প্রফেসর শঙ্কুর চোখ দিয়ে সেই সোনার সভ্যতা দেখতে দেখতে দর্শক আবিষ্কার করবেন, সোনার বাড়ি বা সোনার শহর ছাপিয়েও বড় হয়ে ওঠে সোনার মানুষ। সেই সোনা যা পুরনো হলেও চিরনতুন থাকে। ‘প্রোফেসর শঙ্কু ও এল্ ডোরাডো’সেই সোনার মানুষকেই খুঁজে পাওয়ার, চিনে নেওয়ার আখ্যান।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy