খরাজ মুখোপাধ্যায়। ছবি: সংগৃহীত।
খরাজদার জন্মদিনে অল্প কিছু লেখা মুশকিল। কারণ, মানুষটার সঙ্গে আমার দীর্ঘ দিনের সম্পর্ক। স্বল্প পরিসরে সব কথা বলে শেষ করতে পারব না। আমি নিশ্চিত, আমাদের দু’জনের গল্প লিখতে গেলে ‘মহাভারত’ বা ‘রামায়ণ’-এর মতো একটা মহাকাব্য তৈরি হতেই পারে!
খরাজদাকে আমি প্রথম স্টুডিয়োয় দেখেছিলাম। কিন্তু, প্রথম দর্শনে আলাপ হয়নি। মনে পড়ছে, তার বেশ কিছু দিন পর একটা বিজ্ঞাপনের অডিশন দিতে যাই। সেখানে ঘটনাচক্রে খরাজদাও এসেছিলেন। সেই আমাদের প্রথম আলাপ। আমার অডিশন তখন শেষ হয়েছে। খরাজদা আমার অডিশন দেখার পর আমার সঙ্গে এসে আলাপ করেন। সেই সময় সেটা আমার কাছে একটা অন্য রকম প্রাপ্তি ছিল। কারণ, আমার স্বপ্নে সব সময়ে চরিত্রাভিনেতারাই এগিয়ে থেকেছেন। তরুণ কুমার থেকে শুরু করে বর্তমান সময়ের খরাজদা... চরিত্রাভিনেতাদের প্রতি আমার আলাদা একটা দুর্বলতা এবং শ্রদ্ধা রয়েছে। সেখানে খরাজদার মতো অভিনেতা আমার সঙ্গে এসে আলাপ করবেন, কল্পনাও করিনি। যাই হোক, সেই আমাদের একসঙ্গে পথ চলা শুরু, যা আজও শেষ হয়নি।
আমার জীবনে খরাজদার একাধিক অবদান রয়েছে। খরাজদার বাড়িতে এক সময় আমি দীর্ঘ দিন থেকেছি। বিহু (খরাজের পুত্র) তখন খুব ছোট। খরাজদার স্ত্রী প্রতিমাদি এবং আমি এক জায়গার মানুষ। বসিরহাটে আমাদের বাড়ি। তাই শুরু থেকেই বৌদির সঙ্গেও আমার সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে। আমাকে তাঁরা খেতে দিয়েছেন, থাকতে দিয়েছেন। সে সব দিনের কথা ভোলা কঠিন।
অনেকেই হয়তো জানেন না, খরাজদার রান্নার হাতটি অসাধারণ। দাদার হাতের রান্নার স্বাদ এখনও ভুলিনি। খরাজদার গানের গলা নিয়ে আলাদা করে কিছু বলার নেই। তবে দাদা আমাকে বহু গান নিজে তুলিয়েছেন। গান গাওয়ার সময় কী ভাবে দম নিতে হয়, ছাড়তে হয়, সেটা খরাজদার কাছ থেকেই শিখেছি। সেই সময় অভিনয় সম্পর্কেও খরাজদা আমার দৃষ্টিভঙ্গি বদলে দিয়েছিলেন। মনে আছে, কাগজে ‘ফিল’ লিখে ঘণ্টা তিনেক বুঝিয়েছিলেন। সেই কথোপকথন ছিল আমার জীবনের অন্যতম প্রাপ্তি, যখন অভিনয় প্রসঙ্গে অন্য ভাবে ভাবতে শুরু করেছিলাম। তার পর ধীরে ধীরে খরাজদার সঙ্গে বাংলা ছবিতে অভিনয় করা শুরু করি।
রবি কিনাগী, সুজিত মণ্ডল থেকে শুরু করে রাজা চন্দের মতো বহু পরিচালকের ছবিতে আমরা একসঙ্গে অভিনয় করেছি। আর এই ছবির সূত্রেই আমি আর খরাজদা একসঙ্গে বহু জায়গায় আউটডোরে গিয়েছি। খুব ভাল সময় কাটিয়েছি। হায়দরাবাদ, ব্যাঙ্কক, গোয়া— কোথায় না গিয়েছি আমরা! কখনও কখনও হোটেলের ঘরে খরাজদার সঙ্গে থেকেছি। সে সব আড্ডা, গল্প আজও আমার মনে আছে। প্রচুর স্মৃতি।
খরাজদার জন্মদিনে আজ দাদাকে আলাদা করে এটাই বলতে চাই যে, দাদা তুমি ভাল থেকো, সুস্থ থেকো। আজকের দিনটা তোমার ইচ্ছে মতো কাটাও। জানি, সকাল থেকেই শুভেচ্ছাবার্তায় তোমার ফোন ভরে উঠছে। সারা বছর আরও অনেক ভালবাসায় তোমার ঝুলি পূর্ণ হোক, সেটাই চাই। বাংলা সিনেমা যেন তোমার কাছ থেকে নতুন নতুন উপহার পেতে পারে। আমার বিশ্বাস, বাংলা ইন্ডাস্ট্রিতে খরাজদার এখনও অনেক ভাল ভাল চরিত্র পাওয়ার আছে। এখনও প্রচুর সময় রয়েছে। আমার বিশ্বাস, বাংলা ইন্ডাস্ট্রি খরাজদাকে আরও জায়গা দেবে,আরও বেশি ব্যবহার করবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy