ভাস্বর চট্টোপাধ্যায়ের জীবনে এখন নারীর সংখ্যা বড় কম! তাঁর মা ছেড়ে গিয়েছেন বেশ কয়েক বছর হল। পাশে থাকা নারীদের সঙ্গেও দূরত্ব বেড়েছে ঢের। তবু তাঁর জন্মদিন আসে প্রতি বছর, নারী দিবসে। সে দিন তাঁর সঙ্গী অশীতিপর বাবা আর ভাই। তাই আলাদা করে নারীদের ভাবতেই রাজি নন অভিনেতা ভাস্বর চট্টোপাধ্যায়।
চলতি বছর ৮ মার্চ ৫০ বছরে পা দিলেন অভিনেতা। আনন্দবাজার ডট কমের সঙ্গে ভাগ করে নিলেন বিশেষ দিনটি উদ্যাপনের পরিকল্পনা। অভিনেতা জানালেন, ছুটি পেয়েছেন আজকের দিনটি, কাটাচ্ছেন পরিবারের সঙ্গে। বাবা আর ভাইকে নিয়ে পৌঁছেছেন এক নিরামিষ রেস্তরাঁয়, কারণ শনিবার তাঁরা সকলে নিরামিষ ভোজন করেন। যদিও সকাল সকাল সমাজমাধ্যমে ভাস্বর ছবি ভাগ করে নিয়েছিলেন কেক আর লুচির থালা হাতে নিয়ে। জন্মদিনের সকালে কে বানিয়ে দিল লুচি, পায়েস? ভাস্বর জানালেন, সেই নারী, যিনি এখন তাঁদের জন্য রান্নাবান্না করে দেন। বিনিময়ে পারিশ্রমিক পান। আত্মীয়তা ছিল না এক দিন। শুধু শ্রমের বিনিময়ে অর্থের জন্যই আসতেন তাঁদের বাড়ি, তবু কী ভাবে যেন আত্মীয় হয়ে গিয়েছেন। ভাস্বর বলেন, “আমাদের বাড়িতে যিনি বাবার দেখাশোনা করেন, তিনিও তো দিন-রাত থাকেন আমাদের সঙ্গেই। তিনিই আমাদের বাড়ির নারী এখন।” শ্রমজীবী নারী।

জন্মদিনে কেক হাতে ভাস্বর, পাতে পড়েছে লুচি-আলিভাজা, পায়েস। ছবি: সংগৃহীত।
ভাস্বরের দাবি, তাঁর জন্মের সময় বা ছোটবেলায় নারী দিবস নিয়ে এত কথা তিনি শোনেননি। আসলে সেই সময় শ্রমজীবী নারী দিবসের এমন বাণিজ্যিকীকরণ ঘটেনি। ১৯০৯ সাল থেকে শ্রমজীবী নারীদের আন্দোলন শুরু। ১৯২২ সাল থেকে নারী দিবস পালিত হতে শুরু করে ৮ মার্চ। কিন্তু গত এক দশকে এই দিনটি যেন তাঁর মাহাত্ম্য ভুলে হয়ে উঠেছে বাণিজ্যের মাধ্যম। উপহার আর ‘বিশেষ ছাড়ে’র হাতছানি। ভাস্বর বলেন, “বরং আমার জন্মদিনের দিন নাকি ক্রিকেট ম্যাচে ভারত জিতেছিল। দারুণ খেলছিলেন গুন্ডাপ্পা বিশ্বনাথ। তাই আমার জ্যাঠা আমার নাম দিয়েছিলেন গুন্ডা।”
অভিনেতাকে অবশ্য প্রায় কোনও চরিত্রে গুন্ডামি করতে দেখা যায়নি। পুরনো সম্পর্কের কথা তুলতেও চান না তিনি। সে সব পুরনো সম্পর্কের তরফে আসে না জন্মদিনের শুভেচ্ছা। ভাস্বর নতুন সম্পর্কেও জড়াতে চান না আর। তাঁর সাফ কথা, “আমি খুব আনন্দে রয়েছি। আমার জন্মদিনটা ভাল করে কাটাচ্ছি, ভাল থাকতে চাই।” তবে ছোটবেলার বন্ধুদের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক অটুট। জন্মদিন উপলক্ষে রবিবার স্কুলের বন্ধুদের সঙ্গে জমিয়ে খাওয়াদাওয়া হবে। ভাস্বর বলেন, “আসলে আমরা সকলে ৫০-এ পা দিচ্ছি। যে, যে দিন ৫০ পেরোচ্ছে, সে-ই খাওয়াচ্ছে ছোটবেলার বন্ধুদের। এ বার আমার পালা।” আর আসছে কাশ্মীরি বন্ধুদের ভিডিয়ো কল। জন্মদিনে সকলে তাঁকে ভূস্বর্গে ডেকে পাঠাচ্ছেন। ভাস্বরের কথায়, “কাশ্মীরি বন্ধুরা বার বার ফোন করে বলছেন, জন্মদিনে তো ওখানে থাকা উচিত ছিল। যেতে পারলাম না, কী আর করা যাবে!”
কারা এই বন্ধু? অনেক বন্ধু? নাকি বিশেষ কোনও ‘কাশ্মীর কি কলি’? অভিনেতার দাবি, এ রকম কেউ নেই। তিনি বলেন, “আমার বেগুন ভর্তার মতো জীবন, কোনও মশলা খুঁজে বের করা যাবে না।”