Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
Anna Salunke

রেস্তোরাঁর ওয়েটার থেকে দেশের প্রথম নায়িকা, ‘মহিলা’ হয়েই কেরিয়ার গড়েন অণ্ণা

অনেক চেষ্টাতেও রাজা হরিশচন্দ্রের রানির ভূমিকায় কাউকে খুঁজে পেলেন না দাদা সাহেব।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০২০ ১২:৪৪
Share: Save:
০১ ২০
১৯১৩ সাল। ভারতের প্রথম পূর্ণ দৈর্ঘ্যের নির্বাক ফিল্ম তৈরি করছেন দাদা সাহেব ফালকে। ফিল্মের নাম ‘রাজা হরিশচন্দ্র’।

১৯১৩ সাল। ভারতের প্রথম পূর্ণ দৈর্ঘ্যের নির্বাক ফিল্ম তৈরি করছেন দাদা সাহেব ফালকে। ফিল্মের নাম ‘রাজা হরিশচন্দ্র’।

০২ ২০
কিন্তু এই ফিল্মের জন্য রানি কে হবেন? অনেক চেষ্টাতেও রাজা হরিশচন্দ্রের রানির ভূমিকায় কাউকে খুঁজে পেলেন না দাদা সাহেব।

কিন্তু এই ফিল্মের জন্য রানি কে হবেন? অনেক চেষ্টাতেও রাজা হরিশচন্দ্রের রানির ভূমিকায় কাউকে খুঁজে পেলেন না দাদা সাহেব।

০৩ ২০
সময়টা ছিল এখনকার থেকে ঠিক উল্টো। ফিল্মে অডিশনের জন্য মহিলাদের লম্বা লাইন পড়ে যায় এখন। তখন তা স্বপ্নেও কল্পনা করা যেত না।

সময়টা ছিল এখনকার থেকে ঠিক উল্টো। ফিল্মে অডিশনের জন্য মহিলাদের লম্বা লাইন পড়ে যায় এখন। তখন তা স্বপ্নেও কল্পনা করা যেত না।

০৪ ২০
ফিল্মে অভিনয় করা নিয়ে বহু ভুল ধারণা এবং ভয় কাজ করত অনেকের মনে। তাই সচরাচর কোনও মহিলাই ফিল্মে আসতে চাইতেন না। ফিল্মের নাম শুনলে বরং কয়েক পা পিছিয়ে দাঁড়াতেন।

ফিল্মে অভিনয় করা নিয়ে বহু ভুল ধারণা এবং ভয় কাজ করত অনেকের মনে। তাই সচরাচর কোনও মহিলাই ফিল্মে আসতে চাইতেন না। ফিল্মের নাম শুনলে বরং কয়েক পা পিছিয়ে দাঁড়াতেন।

০৫ ২০
পরিস্থিতি এমন ছিল যে হোটেলে-রেস্তোরাঁর নর্তকী থেকে যৌনকর্মীদের দরজায় দরজায় ঘুরেও কোনও মহিলাকে এই ফিল্মের জন্য রাজি করাতে পারেননি দাদা সাহেব।

পরিস্থিতি এমন ছিল যে হোটেলে-রেস্তোরাঁর নর্তকী থেকে যৌনকর্মীদের দরজায় দরজায় ঘুরেও কোনও মহিলাকে এই ফিল্মের জন্য রাজি করাতে পারেননি দাদা সাহেব।

০৬ ২০
এ রকম একটা সময় হঠাৎ অণ্ণা সালুঙ্কির দিকে চোখ পড়ে তাঁর। অণ্ণার সুন্দর সরু হাত আর মেয়েদের মতো শরীরের কাঠামো দেখে চোখ জ্বলজ্বল করে উঠেছিল দাদা সাহেবের।

এ রকম একটা সময় হঠাৎ অণ্ণা সালুঙ্কির দিকে চোখ পড়ে তাঁর। অণ্ণার সুন্দর সরু হাত আর মেয়েদের মতো শরীরের কাঠামো দেখে চোখ জ্বলজ্বল করে উঠেছিল দাদা সাহেবের।

০৭ ২০
রাজা হরিশচন্দ্রের রানি তারামতির চরিত্রে অভিনয় করার জন্য তিনি রাজি করে ফেললেন অণ্ণাকে। ভারতের প্রথম পূর্ণ দৈর্ঘ্যের নির্বাক ফিল্ম ‘রাজা হরিশচন্দ্র’-তে এক মহিলার চরিত্রে অভিনয় করে কেরিয়ার শুরু করেছিলেন অণ্ণা।

রাজা হরিশচন্দ্রের রানি তারামতির চরিত্রে অভিনয় করার জন্য তিনি রাজি করে ফেললেন অণ্ণাকে। ভারতের প্রথম পূর্ণ দৈর্ঘ্যের নির্বাক ফিল্ম ‘রাজা হরিশচন্দ্র’-তে এক মহিলার চরিত্রে অভিনয় করে কেরিয়ার শুরু করেছিলেন অণ্ণা।

০৮ ২০
প্রকৃতপক্ষে পুরুষ অণ্ণার সেই থেকেই শুরু ফিল্ম কেরিয়ার। প্রথমে পর পর কয়েকটি ফিল্মে মহিলার চরিত্রে এবং পরে পুরুষের চরিত্রে অভিনয় করেন তিনি। অভিনেতা থেকে পরে তিনি সিনেমাটোগ্রাফার হয়ে উঠেছিলেন।

প্রকৃতপক্ষে পুরুষ অণ্ণার সেই থেকেই শুরু ফিল্ম কেরিয়ার। প্রথমে পর পর কয়েকটি ফিল্মে মহিলার চরিত্রে এবং পরে পুরুষের চরিত্রে অভিনয় করেন তিনি। অভিনেতা থেকে পরে তিনি সিনেমাটোগ্রাফার হয়ে উঠেছিলেন।

০৯ ২০
তৎকালীন বোম্বের (এখন মুম্বই) এক থিয়েটারে ‘দ্য লাইফ অব ক্রাইস্ট’ দেখার পরই ফিল্মের প্রতি আগ্রহ জন্মায় দাদা সাহেবের। এর পর লন্ডনে গিয়ে দুই সপ্তাহের জন্য ফিল্ম প্রশিক্ষণ নিয়ে আসেন। দেশে ফিরেই প্রতিষ্ঠা করে ফেললেন ফালকে ফিল্মস কোম্পানি।

তৎকালীন বোম্বের (এখন মুম্বই) এক থিয়েটারে ‘দ্য লাইফ অব ক্রাইস্ট’ দেখার পরই ফিল্মের প্রতি আগ্রহ জন্মায় দাদা সাহেবের। এর পর লন্ডনে গিয়ে দুই সপ্তাহের জন্য ফিল্ম প্রশিক্ষণ নিয়ে আসেন। দেশে ফিরেই প্রতিষ্ঠা করে ফেললেন ফালকে ফিল্মস কোম্পানি।

১০ ২০
তাঁর ফিল্ম কোম্পানি প্রযোজিত প্রথম ফিল্ম ছিল ‘রাজা হরিশচন্দ্র’। এই ফিল্মে মোট ৯ জন অভিনয় করেছিলেন। তাঁর মধ্যেই এক জন হলেন অণ্ণা।

তাঁর ফিল্ম কোম্পানি প্রযোজিত প্রথম ফিল্ম ছিল ‘রাজা হরিশচন্দ্র’। এই ফিল্মে মোট ৯ জন অভিনয় করেছিলেন। তাঁর মধ্যেই এক জন হলেন অণ্ণা।

১১ ২০
অণ্ণার সঙ্গে দাদা সাহেবের পরিচয়টাও হয়েছিল খুব অদ্ভুত ভাবেই। প্রথম ফিল্মের কাস্টিং নিয়ে মাথার মধ্যে কাটাছেঁড়া চালাচ্ছিলেন দাদা সাহেব। ৯ জন অভিনেতার মধ্যে ৮ জনকে তিনি পেয়ে গিয়েছিলেন। সমস্যা হচ্ছিল শুধু রানি তারামতিকে নিয়ে।

অণ্ণার সঙ্গে দাদা সাহেবের পরিচয়টাও হয়েছিল খুব অদ্ভুত ভাবেই। প্রথম ফিল্মের কাস্টিং নিয়ে মাথার মধ্যে কাটাছেঁড়া চালাচ্ছিলেন দাদা সাহেব। ৯ জন অভিনেতার মধ্যে ৮ জনকে তিনি পেয়ে গিয়েছিলেন। সমস্যা হচ্ছিল শুধু রানি তারামতিকে নিয়ে।

১২ ২০
এই সময়ই অণ্ণার সঙ্গে দাদা সাহেবের আলাপ মুম্বইয়ের এক রেস্তোরাঁতে। মু্ম্বইয়ের গ্র্যান্ট রোডের এক রেস্তোরাঁয় ওয়েটারের কাজ করতেন অণ্ণা। সেই রেস্তোরাঁয় প্রায়ই যেতেন দাদা সাহেব।

এই সময়ই অণ্ণার সঙ্গে দাদা সাহেবের আলাপ মুম্বইয়ের এক রেস্তোরাঁতে। মু্ম্বইয়ের গ্র্যান্ট রোডের এক রেস্তোরাঁয় ওয়েটারের কাজ করতেন অণ্ণা। সেই রেস্তোরাঁয় প্রায়ই যেতেন দাদা সাহেব।

১৩ ২০
অণ্ণাই তাঁকে খাবার পরিবেশন করতেন। অণ্ণা যখন নিজে হাতে খাবারগুলো দাদা সাহেবের সামনে সাজিয়ে দিচ্ছিলেন তখনই তাঁর হাতে চোখ আটকে যায় দাদা সাহেবের।

অণ্ণাই তাঁকে খাবার পরিবেশন করতেন। অণ্ণা যখন নিজে হাতে খাবারগুলো দাদা সাহেবের সামনে সাজিয়ে দিচ্ছিলেন তখনই তাঁর হাতে চোখ আটকে যায় দাদা সাহেবের।

১৪ ২০
তারামতির চরিত্রের জন্য অণ্ণাকেই প্রস্তাব দিয়ে বসেন তিনি। ওই রেস্তোরাঁয় কাজ করে অণ্ণা ১০ টাকা মাইনে পেতেন। বদলে দাদা সাহেব তাঁকে ১৫ টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।

তারামতির চরিত্রের জন্য অণ্ণাকেই প্রস্তাব দিয়ে বসেন তিনি। ওই রেস্তোরাঁয় কাজ করে অণ্ণা ১০ টাকা মাইনে পেতেন। বদলে দাদা সাহেব তাঁকে ১৫ টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।

১৫ ২০
অভিনয় জগতে আসার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা ছিল না অণ্ণার। মূলত টাকার জন্যই তিনি এই প্রস্তাবে রাজি হয়ে গিয়েছিলেন। ৯ জন অভিনেতা নিয়ে শ্যুটিং শুরু হল ‘রাজা হরিশচন্দ্র’-এর।

অভিনয় জগতে আসার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা ছিল না অণ্ণার। মূলত টাকার জন্যই তিনি এই প্রস্তাবে রাজি হয়ে গিয়েছিলেন। ৯ জন অভিনেতা নিয়ে শ্যুটিং শুরু হল ‘রাজা হরিশচন্দ্র’-এর।

১৬ ২০
ফিল্মটি করতে দাদা সাহেবের সময় লেগেছিল ৬ মাস এবং ২৭ দিন। ১৯১৩ সালে তৎকালীন বোম্বের অলিম্পিয়া থিয়েটারে প্রথম এই ফিল্মের প্রদর্শন হয়। বাণিজ্যিক ভাবে অত্যন্ত সফল এই ফিল্মই ভারতে চলচ্চিত্র জগতের ভিত্তি স্থাপন করে দেয়।

ফিল্মটি করতে দাদা সাহেবের সময় লেগেছিল ৬ মাস এবং ২৭ দিন। ১৯১৩ সালে তৎকালীন বোম্বের অলিম্পিয়া থিয়েটারে প্রথম এই ফিল্মের প্রদর্শন হয়। বাণিজ্যিক ভাবে অত্যন্ত সফল এই ফিল্মই ভারতে চলচ্চিত্র জগতের ভিত্তি স্থাপন করে দেয়।

১৭ ২০
তবে দুর্ভাগ্যজনক ভাবে এই ফিল্ম সংরক্ষণ করা যায়নি কারণ এর বেশির ভাগ অংশই নষ্ট হয়ে গিয়েছে। ন্যাশনাল ফিল্ম আর্কাইভ অব ইন্ডিয়ার কাছে এর শুধুমাত্র প্রথম এবং শেষ রিল সংরক্ষিত রয়েছে।

তবে দুর্ভাগ্যজনক ভাবে এই ফিল্ম সংরক্ষণ করা যায়নি কারণ এর বেশির ভাগ অংশই নষ্ট হয়ে গিয়েছে। ন্যাশনাল ফিল্ম আর্কাইভ অব ইন্ডিয়ার কাছে এর শুধুমাত্র প্রথম এবং শেষ রিল সংরক্ষিত রয়েছে।

১৮ ২০
এই ফিল্মে অভিনয়ের পর অণ্ণা আর রেস্তোরাঁর কাজে ফেরেননি। তিনি গুরুত্বপূর্ণ অভিনেতা হয়ে ওঠেন। মূলত সে সময় ফিল্মে কোনও মহিলার চরিত্রের জন্য অবিকল্প ছিলেন তিনিই।

এই ফিল্মে অভিনয়ের পর অণ্ণা আর রেস্তোরাঁর কাজে ফেরেননি। তিনি গুরুত্বপূর্ণ অভিনেতা হয়ে ওঠেন। মূলত সে সময় ফিল্মে কোনও মহিলার চরিত্রের জন্য অবিকল্প ছিলেন তিনিই।

১৯ ২০
অণ্ণা পর পর ৫টি ফিল্মে মহিলার চরিত্রে অভিনয় করেন। ‘রাজা হরিশচন্দ্র’ ছাড়া ‘লঙ্কা দহন’, ‘সত্যবাদী রাজা হরিশচন্দ্র’, ‘সত্য নারায়ণ’ এবং ‘বুদ্ধদেব’ ছিল তাঁর অভিনীত সেই ৫ ফিল্ম।

অণ্ণা পর পর ৫টি ফিল্মে মহিলার চরিত্রে অভিনয় করেন। ‘রাজা হরিশচন্দ্র’ ছাড়া ‘লঙ্কা দহন’, ‘সত্যবাদী রাজা হরিশচন্দ্র’, ‘সত্য নারায়ণ’ এবং ‘বুদ্ধদেব’ ছিল তাঁর অভিনীত সেই ৫ ফিল্ম।

২০ ২০
এ ছাড়াও ১৯৩১ সাল পর্যন্ত তাঁর ১৮ বছরের কেরিয়ারে প্রচুর ফিল্মে অভিনয় করেছেন তিনি। ১৯৩১-এ তাঁর শেষ ফিল্ম ছিল ‘আমির খান’। এই ফিল্মের সিনেমাটোগ্রাফারও ছিলেন তিনি।

এ ছাড়াও ১৯৩১ সাল পর্যন্ত তাঁর ১৮ বছরের কেরিয়ারে প্রচুর ফিল্মে অভিনয় করেছেন তিনি। ১৯৩১-এ তাঁর শেষ ফিল্ম ছিল ‘আমির খান’। এই ফিল্মের সিনেমাটোগ্রাফারও ছিলেন তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy