বাপ্পিদা পাশ্চাত্য সঙ্গীতকে আমাদের কাছে নিয়ে এসেছেন। কখনও কখনও তিনি গোটা সুর অন্য কোনও গান থেকে নিয়ে নিতেন। ছোটবেলায় তো বুঝতাম না সেই সুরের উৎস আছে সাগর পেরিয়ে। তাও ভাল লাগত! স্কুলে টেবিল বাজিয়ে গান গাইতাম। ছোট থেকেই বাপ্পিদাকে খুব মজার মানুষ মনে হত।
বাপ্পিকে নিয়ে কলম ধরলেন মীর
গাছ না থাকলে যেমন ফল হয় না, আমার বিনোদনী পেশার জীবনে সেই গাছটি হলেন বাপ্পি লাহিড়ি। রেডিয়ো বা কমেডি শো করার সময়ে কত বার ওঁকে নিয়ে মজা করেছি আমি! তিনি না থাকলে তো এই শিল্পে বাড়তি মাত্রা যোগ হত না। মানুষকে হাসিয়েছি। আনন্দ দিয়েছি। মানুষকে আনন্দ দেওয়ার থেকে বড় কিছু হতে পারে না। সেই কাজটি করতে সাহায্য করেছেন বাপ্পি লাহিড়ি।
ছোট থেকেই বাপ্পিদাকে খুব মজার মানুষ মনে হত। কয়েক জন মানুষ থাকেন, যাঁদের দেখে নির্মল আনন্দ হয়। মন উৎফুল্ল হয়ে যায়। উনি সে রকমই। স্কুলে টেবিল বাজিয়ে গান গাইতাম আমরা।
বাপ্পিদা পাশ্চাত্য সঙ্গীতকে আমাদের কাছে নিয়ে এসেছেন। কখনও কখনও তিনি গোটা সুর অন্য কোনও গান থেকে নিয়ে নিতেন। ছোটবেলায় তো বুঝতাম না সেই সুরের উৎস আছে সাগর পেরিয়ে। তাও কী যে ভাল লাগত! বড় হওয়ার পরে বন্ধুদের বাড়িতে গ্রামোফোনে বিলিতি গান শুনতে শুনতে মনে হত, আরে এই সুর তো শুনেছি বাপ্পিদার গানে।
পরবর্তী কালে কাজের সূত্রে আলাপ হয় বাপ্পিদার সঙ্গে। আমি সরাসরি জিজ্ঞাসা করেছিলাম, ‘‘আপনি তো সুর চুরি করেন। এ ভাবে সুর তুলে আনেন কেন?’’ উনি উত্তর দিয়েছিলেন, ‘‘আমি ইনিস্পায়ার হই।’’ বুঝতে পারিনি প্রথম বার। আবারও জিজ্ঞাসা করি। উত্তর পেলাম, ‘‘ইনিস্পায়ার।’’ আমি বললাম, ‘‘আচ্ছা! আপনি ইনস্পায়ার্ড হন। উদ্বুদ্ধ হন।’’
আর এক বার প্রশ্ন করেছিলাম, ‘‘মীর আফসার আলি যে আপনাকে এত নকল করে, আপনার রাগ হয় নিশ্চয়ই?’’ বাপ্পিদার উত্তর দিয়েছিলেন, ‘‘হাতি চলে বাজার, কুত্তা ভকে হাজার।’’ পর মুহূর্তে তিনি ব্যাখ্যা করলেন, ‘‘আমি কিন্তু নিজের শরীরের ওজনের জন্য নিজেকে হাতি বলিনি। হাতির আক্ষরিক অর্থে যেও না। হাতি বলতে বুঝিয়েছি, আমার মতো এত বড় মাপের সুরকার!’’ বাপ্পিদার এই উত্তরে হেসে হেসে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, ‘‘আপনি আমাকে কুকুর বললেন?’’
এ সব কারণেই আমার কাছে তিনি সেই মজার মানুষটি, যাঁকে দেখলেই জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করে।
কিন্তু আজ একটিই আফসোস হচ্ছে। ২০০৮ সালের জন্মদিনে বাপ্পিদাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাইনি আমি। সেই ঘটনাটি মনে পড়ছে। প্রতি বছর ২৭ নভেম্বর ওঁকে রেডিয়োর তরফে ফোন করে শুভেচ্ছা জানিয়েছি আমি। প্রতি বছর। ২০০৮ সালে ২৬ নভেম্বর রাতেও ফোনে কথা হয় ওঁর সঙ্গে। জানাই যে পরের দিন সকালে ফোন করব। কিন্তু ২৭ তারিখ আর ফোন করে উত্তর পাইনি। রেডিয়োতে বাপ্পিদাকে শুভেচ্ছা জানাতে পারিনি। পরে কারণ জানতে পারি। ২৬ নভেম্বর রাতে মুম্বইয়ের তাজ হোটেলের দিকে যাচ্ছিলেন বাপ্পি। মধ্যরাতে পরিবারের সঙ্গে জন্মদিন পালন করার পরিকল্পনা ছিল। মাঝ রাস্তাতেই খবর পান, তাজে জঙ্গী হামলা হয়েছে। মানসিক ভাবে বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছিলেন তিনি।
ওই একটা বছর রেডিয়োতে সকল অনুরাগীর সামনে আমার প্রতি বছরের রীতি পালন করা হয়নি। বাপ্পিদাকে শুভেচ্ছা জানাতে পারিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy