Advertisement
২৩ জানুয়ারি ২০২৫
Jaya Ahsan on Samaresh Majumdar

সমরেশ মজুমদারের প্রয়াণে ভারাক্রান্ত দুই বাংলা, আনন্দবাজার অনলাইনে লিখলেন জয়া আহসান

সাহিত্যিক সমরেশ মজুমদারের প্রয়াণে বাংলা সাহিত্যের শূন্যতাকে পশ্চিমবঙ্গের মতোই অনুভব করছে বাংলাদেশ। প্রয়াত লেখকের স্মৃতিচারণায় কলম ধরলেন বাংলাদেশের অভিনেত্রী জয়া আহসান।

Bangladeshi actress Jaya Ahsan recollects her memories about Samaresh Majumdar

সাহিত্যিক সমরেশ মজুমদারের স্মৃতিচারণায় অভিনেত্রী জয়া আহসান। ছবি: সংগৃহীত।

জয়া আহসান
জয়া আহসান
শেষ আপডেট: ১০ মে ২০২৩ ১৪:৩০
Share: Save:

সমরেশ মজুমদার আর নেই! এখনও খবরটা বিশ্বাস করতে পারছি না। উঠতি বয়সে আমাদের যখন পৃথিবীকে দেখার চোখ তৈরি হচ্ছে, নিজেরা ছোট গণ্ডি থেকে বড় গণ্ডিতে পা বাড়াতে শুরু করেছি, সেই সময় আমরা যাঁদের লেখা পড়েছি— তাঁদের মধ্যে সমরেশ মজুমদার অন্যতম। তাঁর লেখায় ওই বয়সি যে চরিত্রগুলো ছিল, তাদের মধ্যে দিয়ে বড়দের জগৎকে উপলব্ধি করেছি। তাঁদের প্রেমকে আমরা বুঝতে পেরেছি। বুঝতে পেরেছি তাঁদের বিপ্লব এবং মূল্যবোধকে। তাই বলা যায়, সেই সময়ে আমাদের মনকে আরও পরিণত দিক থেকে গড়ে তুলতে সাহায্য করেছিল তাঁর লেখনী।

ওঁর লেখনীর ভাষা ছিল খুবই ঝরঝরে। অল্প বয়সে রোম্যান্টিকতার প্রতি আমাদের যে সাধারণ আকর্ষণ তৈরি হয় সেটা আমি ওঁর উপন্যাসে পেয়েছি। এখনও মনে আছে যখন ওঁর ‘কালপুরুষ’, ‘কালবেলা’ বা ‘গর্ভধারিণী’ পড়া শেষ করেছি, তার পর দীর্ঘ দিন সেই কাহিনির একটা রেশ আমাকে আবিষ্ট করে রাখত। সেই চরিত্রগুলো মাথার মধ্যে ঘুরপাক খেত, দৈনন্দিন জীবনেও চরিত্রগুলোকে নিয়েই যেন এগিয়ে চলতাম। ওদের সাফল্যে আমার আনন্দ হত, বা তাদের দুঃখে সমব্যথী হতাম। ফলে আগামী জীবনে যে সম্ভাব্য সঙ্কট বা জীবনযাত্রার কঠিন লড়াইতে প্রবেশ করতে চলেছি, তার একটা পূর্বশিক্ষা ওঁর লেখার মধ্যে দিয়ে পেয়ে যেতাম।

আমি বাংলাদেশের মেয়ে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ আমার দ্বিতীয় বাড়ি। কারণ আমার কর্মজীবনের একটা গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে কলকাতা। দুই বাংলাকে আমি ‘এক’ হিসেবেই দেখি। এই দুই বাংলাকে মিলিয়ে একটা যোগসূত্রের কথা কল্পনা করা— সেটা আমরা খুব কম সংখ্যক শিল্পীর মধ্যে দেখেছি। তা সেটা সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের লেখা হতে পারে বা শঙ্খ ঘোষের কবিতা। কিংবা পরিচালক ঋত্বিক ঘটক এবং গৌতম ঘোষের সিনেমা। দুই বাংলাকে মিলিয়ে দেওয়ার এই নিরলস প্রচেষ্টার অন্যতম কাণ্ডারি কিন্তু ছিলেন সমরেশ মজুমদার।

বাংলাদেশের সঙ্গে সমরেশ মজুমদারের যোগাযোগ অত্যন্ত নিবিড় ছিল। সময় পেলেই মাঝেমাঝে বাংলাদেশে আসতেন। ঢাকার বইমেলাতেও বিভিন্ন স্টলে নেহাত এক জন সাধারণ মানুষের মতোই তাঁকে ঘুরতে দেখেছি। সকলের সঙ্গে সময় নিয়ে কথা বলতেন। বিশেষ করে আমাদের দেশের তরুণ লেখকদের মতামত শুনতেন। দুই বাংলার ঐতিহাসিক এবং সাংস্কৃতিক ঐক্যের উপর উনি সব সময়েই জোর দিতেন। এই ভাবেই বাংলাদেশকে নিজের মনের মধ্যে জায়গা করে দিয়েছিলেন তিনি। আমি নিজেও যে হেতু দুই বাংলা মিলিয়ে কাজ করি, তাই এই ঐক্যের বীজ ওঁর সূত্রেই হয়তো আমার মধ্যেও শুরু থেকে রয়ে গিয়েছিল।

আজ উনি আর আমাদের মধ্যে নেই। এটা আমার কাছে গভীর বেদনার কারণ। শুনেছি, অল্প বয়সের ভালবাসা সব সময়েই চিরস্থায়ী হয়। হয়তো এখন আর সেই মানুষটার সঙ্গে সেই ভাবে যোগাযোগ নেই। কিন্তু তাঁর অনুপস্থিতির গভীর বেদনাটা একই ভাবে আমাদের মধ্যে মধ্যেও এসে পড়েছে। আজকে বাংলাদেশের মানুষের মনও ওঁর প্রয়াণে ভারাক্রান্ত। আজকে আমি যে পেশায় রয়েছি, যে জীবন, যে মন নিয়ে রয়েছি, সেখানে তাঁর ঋণ আমি কোনও দিন পরিশোধ করতে পারব না।

(সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে অনুলিখিত)

অন্য বিষয়গুলি:

Jaya Ahsan Samaresh Majumdar Bangladeshi Actress
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy