Balika Vadhu Actress Pratyusha Banerjee's parents are still waiting for the justice dgtl
bollywood
গর্ভপাত ও টানাপড়েনে বিধ্বস্ত প্রেম, ‘বালিকা বধূ’-র প্রেমিক আজ বিবাহিত, ‘সুবিচার’ চান বাবা মা
অভিনয়ের পাশাপাশি সম্পর্কের কারণেও খবরে ছিলেন প্রত্যুষা। ব্যবসায়ী মকরন্দ মলহোত্রর সঙ্গে তাঁর প্রেমের গুঞ্জন শোনা গিয়েছিল। তবে অভিনেতা রাহুল রাজ সিংহের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ছিল অনেক বেশি চর্চিত ও বিতর্কিত।
নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২২ ডিসেম্বর ২০২০ ১৩:২৫
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২৬
খুব ছোট থেকেই টিভিতে মডেলদের দেখতে ভালবাসত। একটু বড় হতে আকৃষ্ট হল রূপচর্চার প্রতি। বাড়িতে নিজেই নিজেকে সাজাত। ছোটবেলায় ইচ্ছে ছিল, মডেল হওয়ার। বড় হয়ে হয়েছিলেন অভিনেত্রী। কিন্তু বিনোদন দুনিয়ার আকাশে নিজেকে মেলে ধরার আগেই রহস্যজনক ভাবে ঝরে গেলেন প্রত্যুষা বন্দ্যোপাধ্যায়।
০২২৬
প্রত্যুষার জন্ম ১৯৯১ সালের ১০ অগস্ট, জামশেদপুরে। তখন জামশেদপুর ছিল বিহারের অন্তর্গত। এখন এই ইস্পাতনগরী ঝাড়খণ্ডের অংশ। তাঁর বাবা শঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় সমাজসেবী। তাঁর একটি এনজিও-ও আছে। মা সোমা গৃহবধূ। শঙ্কর ও সোমার একমাত্র মেয়ে প্রত্যুষা।
০৩২৬
অভিনয়ে কেরিয়ার করবেন বলে তার অনেক আগেই জামশেদপুর থেকে চলে এসেছিলেন মুম্বই। টেলিভিশনে প্রত্যুষার প্রথম কাজ ‘রক্ত সম্বন্ধ’ ধারাবাহিকে।
০৪২৬
একমাত্র মেয়েকে মুম্বইয়ে পাঠানো নিয়ে পরিজনদের কাছে অনেক তির্যক মন্তব্য শুনতে হয়েছিল তাঁর বাবা মাকে। কিন্তু তাঁরা মেয়ের পাশে ছিলেন। তবে প্রত্যুষাকে তাঁর মা বলে দিয়েছিলেন যত দিন না সাফল্য আসছে, তিনি মেয়ের মুখ দেখবেন না।
০৫২৬
সত্যি সেরকমই হয়েছিল। এক সাক্ষাৎকারে জানান প্রত্যুষা। মুম্বইয়ে থাকার প্রথম ছ-সাত মাস তাঁর সঙ্গে দেখা করেননি সোমা। তিনি মেয়েকে স্বনির্ভর দেখতে চেয়েছিলেন। মায়ের ইচ্ছে পূর্ণ করেছিলেন মেয়ে। তবে মুম্বইয়ে স্ট্রাগল করার দিনগুলো খুব সুখকর ছিল না।
০৬২৬
প্রোডাকশন হাউসের কাছে বারবার প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পরে এসেছিল প্রথম সুযোগ। ‘রক্ত সম্বন্ধ’-র পরে তিনি অভিনয় করেছিলেন ‘ইয়ে রিশতা ক্যায়া কহেলতা হ্যায়’ ধারাবাহিকে। তার পর কঠোর প্রতিযোগিতার মধ্যে দিয়ে সুযোগ পান ‘বালিকা বধূ’ ধারাবাহিকে।
০৭২৬
ধারাবাহিকের মুখ্য চরিত্র ‘আনন্দী’-র বড় বেলায় অভিনয় করেছিলেন তিনি। তাঁর আগে আনন্দীর শৈশবের ভূমিকায় রূপদান করেছিলেন অবিকা গোর। এই চরিত্রে সুযোগ পাওয়ার ক্ষেত্রে প্রত্যুষার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন লখনউয়ের নিবেদিতা তিওয়ারি এবং মুম্বইয়ের কেতকী চিতালে।
০৮২৬
২০১০ থেকে ২০১৩ অবধি প্রত্যুষা অভিনয় করেছিলেন আনন্দীর চরিত্রে। তিনি এই ধারাবাহিক এবং ‘আনন্দী’ চরিত্রের জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে পেরেছিলেন। তাঁর বিপরীতে জগদীশের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন শশাঙ্ক ব্যাস।
০৯২৬
‘বালিকা বধূ’-তে অভিনয় করবেন বলে অন্য একটি ধারাবাহিকে সই করেও পরে সরে আসেন প্রত্যুষা। আবার, ৩ বছর অভিনয় করার পর তিনি নিজেই ‘বালিকা বধূ’ ছেড়ে দেন। প্রত্যুষা অভিনীত বাকি ধারাবাহিকের মধ্যে অন্যতম হল ‘সসুরাল সিমর কা’, ‘কুমকুম ভাগ্য’, ‘আহট’ এবং ‘অধুরি কহানি হমারি’। বিভিন্ন ধারাবাহিকে তাঁর অভিনয় পুরস্কৃতও হয়েছে।
১০২৬
‘আনন্দী’ চরিত্রের জনপ্রিয়তা তাঁকে কাজ পেতে সাহায্য করেছিল। তিনি অংশ নিয়েছিলেন ‘ঝলক দিখলা যা’ এবং ‘বিগ বস’, ‘কৌন বনেগা ক্রোড়পতি’-র মতো শো-এ। সঞ্চালনা করেন ‘সাবধান ইন্ডিয়া’।
১১২৬
শোনা যায়, বিক্রম ভট্টের কাছ থেকে ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাবও এসেছিল তাঁর কাছে। কিন্তু তিনি সে সময় চেয়েছিলেন শুধুমাত্র টেলিভিশনেই কাজ করতে।
১২২৬
অভিনয়ের পাশাপাশি সম্পর্কের কারণেও খবরে ছিলেন প্রত্যুষা। ব্যবসায়ী মকরন্দ মলহোত্রর সঙ্গে তাঁর প্রেমের গুঞ্জন শোনা গিয়েছিল। তবে অভিনেতা রাহুল রাজ সিংহের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ছিল অনেক বেশি চর্চিত ও বিতর্কিত।
১৩২৬
মুম্বইয়ে লিভ ইন করতেন প্রত্যুষা ও রাহুল। সেই ফ্ল্যাটেই ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয় প্রত্যুষাকে। ২০১৬ সালের ১ এপ্রিল। বয়ফ্রেন্ড রাহুলই প্রথম ওই অবস্থায় দেখেছিলেন তাঁকে।
১৪২৬
আবাসনের অন্য বাসিন্দাদের সাহায্যে প্রত্যুষাকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলেন রাহুল। সেখানে তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। ২৪ বছর বয়সি অভিনেত্রীর রহস্যমৃত্যুতে সন্দেহের তির উঠেছিল রাহুলের দিকে।
১৫২৬
প্রত্যুষার বাবা মায়ের অভিযোগ ছিল, রাহুলই তাঁদের মেয়েকে খুন করেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে তদন্তে উঠে এসেছিল প্রত্যুষার সঙ্গে তাঁর শেষ ফোনকল। অভিযোগ, বিতর্কিত সেই কথোপকথনে প্রত্যুষা বারবার অভিযোগ করেছিলেন, তাঁর টাকাপয়সা নিয়ে নেওয়া হয়েছে।
১৬২৬
রাহুলের অভিযোগ ছিল, আরও অর্থের জন্য প্রত্যুষাকে নিয়মিত চাপ দিতেন তাঁর বাবা মা। সংসারের সব ব্যয়ভার বহন করতে হত তাঁকেই। তবে তাঁর এই দাবি উড়িয়ে দিয়েছেন বন্দ্যোপাধ্যায় দম্পতি।
১৭২৬
শুধু তাঁরাই নন। রাহুলের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ উঠেছিল। পরিচারিকার অভিযোগ ছিল, রাহুলের হাতে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হতেন প্রত্যুষা। রাহুলের সঙ্গে সম্পর্কের পরে প্রত্যুষা পাল্টে গিয়েছিলেন। দাবি, ‘বালিকা বধূ’-তে তাঁর সহ অভিনেতা শশাঙ্কের।
১৮২৬
প্রকাশ্যেও রাহুলের হাতে নিগৃহীত হয়েছেন প্রত্যুষা। মৃত্যুর কয়েক ঘণ্টা আগে রাহুলের সঙ্গেই নাকি শপিং মলে গিয়েছিলেন নায়িকা। সেখানে তাঁদের মধ্যে তুমুল বাকবিতণ্ডা হয়। এমনকি প্রত্যুষাকে রাগের মাথায় হঠাত্ই চড় মারেন রাহুল! প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, রাহুলের আঘাতে মেঝেতে পড়ে যান প্রত্যুষা। এই ঘটনার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই গোরেগাঁওয়ের ফ্ল্যাটে প্রত্যুষার রহস্যজনক মৃত্যু হয়।
১৯২৬
মৃত্যুর আগে তিনি শেষ বার কথা বলেছিলেন রাহুলের সঙ্গেই। রাহুলের দাবি, তিনি সে সময় একটি কাজে বাইরে যাচ্ছিলেন। ফোনে কথা বলার সময় বান্ধবীকে আশ্বাস দিয়েছিলেন তাঁর কাছে যাওয়ার। সত্যি তিনি গিয়েছিলেন প্রত্যুষার ফ্ল্যাটে। সঙ্গে খাবারও কিনে নিয়েছিলেন। কারণ তিনি জানতেন প্রত্যুষা তখনও রাতের খাবার খাননি। ডুপ্লিকেট চাবি দিয়ে ফ্ল্যাটের দরজা খুলে তিনি প্রত্যুষাকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পান। দাবি রাহুলের।
২০২৬
তদন্তে আরও জানা যায়, প্রত্যুষার দেহে অপরিণত ভ্রূণের অংশ পাওয়া গিয়েছে। পরে রাহুল জানান, গর্ভপাত তাঁদের যৌথ সিদ্ধান্ত ছিল। কারণ বিয়ের আগে তাঁরা সন্তান চাননি। এমনকি, গর্ভপাতের দিন তিনি প্রত্যুষার সঙ্গেই ছিলেন। কিন্তু অনেকক্ষণ অপেক্ষা করতে হচ্ছিল বলে তাঁকে চলে যেতে বলেন প্রত্যুষা।
২১২৬
তবে ইন্ডাস্ট্রিতে রাহুলের সুনাম বিশেষ নেই। বলিউডের একাধিক সূত্র বলছে, মেয়েদের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করে তাঁদের ঠকানোই ছিল রাহুলের কাজ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইন্ডাস্ট্রির এমন অনেক মহিলার সঙ্গেই রাহুলের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। সম্পর্ক তৈরি করে তাঁদের টাকাপয়সা হাতিয়ে নিতেন রাহুল।
২২২৬
পরিচালক বিকাশ গুপ্তর দাবি, ২০১১ সালে রাঁচিতে সৌগতা মুখোপাধ্যায় নামে এক বাঙালি মেয়েকে বিয়ে করেছিলেন রাহুল। তাঁদের এক ছেলেও হয়। কিন্তু পেশায় বিমানসেবিকা সৌগতার সঙ্গে বেশিদিন বিয়ে টেকেনি রাহুলের। জানা গিয়েছে, সৌগতার প্রতি রাহুলের ব্যবহার ক্রমশ বদলাতে থাকে। এর পর তাঁরা ডিভোর্সের সিদ্ধান্ত নেন।
২৩২৬
এর পর মুম্বইতে সালোনির সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে ওঠে রাহুলের। কিন্তু সেই সম্পর্কে কিছু দিনের মধ্যেই ভাঙন ধরে। তার পরই রাহুলের জীবনে আসেন প্রত্যুষা। কিন্তু অভিযোগ, সৌগতার বিষয়ে প্রত্যুষাকে কিছুই জানাননি রাহুল। প্রত্যুষার বাবা-মাও রাহুলের আগের বিয়ের বিষয়ে কিছুই জানতেন না
২৪২৬
এই সব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে রাহুলের দাবি ছিল, প্রত্যুষার সঙ্গে তিনি যখন সম্পর্কে ছিলেন তখন সালোনি ছিলেন শুধুই তাঁর ভাল বন্ধু। ঘনিষ্ঠজনেরা জানতেন, আর কয়েক দিনের মধ্যেই বিয়ে করবেন রাহুল-প্রত্যুষা। বিয়ের লেহঙ্গাও পেয়ে গিয়েছিলেন প্রত্যুষা। সেটা পরেই শেষযাত্রায় চলে যান তিনি। পরে প্রত্যুষাকাণ্ডে জামিন পেয়ে অবশ্য সেই সালোনিকেই বিয়ে করেন রাহুল।
২৫২৬
মেয়ের মৃত্যুরহস্যকে এখনও আত্মহত্যা বলে মেনে নিতে পারেন না প্রত্যুষার বাবা মা। তাঁদের চোখে রাহুলই এখনও দোষী। ‘সুবিচারের’ আশায় দিন গুনছেন তাঁরা।
২৬২৬
তাঁর বাবা শশাঙ্ক সম্প্রতি সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছেন, তিনি এ বছর লকডাউনের জন্য মেয়ের মৃত্যুবার্ষিকীতে ফুলের মালা যোগাড় করতে পারেননি। তাই নিজের হাতে মালা গেঁথে পরিয়ে দিয়েছেন মেয়ের ছবিতে। যে ছবিতে এখনও হাসছেন প্রত্যুষা।