Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
Babul Supriyo

রবীন্দ্রসঙ্গীতকে যারা প্যানপেনে বলে তারা অশিক্ষিত: বাবুল সুপ্রিয়

আনন্দবাজার ডিজিটালের সঙ্গে আড্ডায় বাবুল সুপ্রিয়।

বাবুল সুপ্রিয়।

বাবুল সুপ্রিয়।

স্রবন্তী বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ১৯:৪১
Share: Save:

প্রশ্ন: ফাল্গুনে ‘আষাঢ় এল আমার মনে’ আপনিই গাইতে পারেন...

বাবুল: আমি মনে করি, রবীন্দ্রনাথের গান সবের চেয়ে আলাদা। তাঁর গানের কথাগুলো জীবনের সঙ্গে মিলে যায়। যে কোনও সময় যে কোনও পর্যায়ের গান গাওয়া যায়। আমাদের মনেরও প্রকৃতি আছে কিন্তু
কখনও সেখানে বর্ষা নামে, কখনও মনে ভালবাসা হয়। 'বহু যুগের ও পার হতে আষাঢ় এল আমার মনে, কোন সে কবির ছন্দ বাজে ঝরো ঝরো বরিষনে'। বরিষনে মানে যে সব সময়ে বৃষ্টি হতে হবে, তার কী মানে আছে? মন কাঁদলেও তো বৃষ্টি হয়। আবার মনের ভিতরেও বৃষ্টি হয়। এই গানটা ছোটবেলা থেকেই করার খুব ইচ্ছে ছিল। তখন দেবব্রত বিশ্বাসের গলায় শুনেছি। তার পরে মনে হল, নতুন করে কী ভাবে আবার এই গানটা সকলের সামনে নিয়ে আসা যায়...

প্রশ্ন: নতুন ভাবে ভাবতে গিয়েই কি উস্তাদ রাশিদ খানকে মনে পড়ল?

উত্তর: আমার মনে হয়েছিল, এই গানটার সঙ্গে যদি উচ্চাঙ্গ এবং সমকালীন সুর মেশানো যায়, তা হলে আজকের প্রজন্মের কাছেও গানটা অন্য ভাবে পৌঁছবে। তখনই রাশিদ ভাইয়ের কথা মাথায় আসে। ওঁর সঙ্গে অনলাইনে একটা অনুষ্ঠান করেছিলাম। তখন থেকেই আমাদের একসঙ্গে কিছু একটা করার ইচ্ছে ছিল। এর পরে আমি ওঁকে বন্দিশটা গাইতে বললাম। উনি এক কথায় রাজি হয়ে গেলেন। ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্তও খুব সাহায্য করেন। সুর মেশানোর কাজ করেছেন তিনি। আমার ভয়েস ডাব করে নিয়ে যান। কলকাতায় রাশিদ ভাইয়ের বাড়িতে গিয়েও ভয়েস ডাব করেন।

প্রশ্ন: এখন কী সিনেমার গানের চেয়ে শিল্পীর নিজস্ব গানের সময়?

উত্তর: সময় ফিরছে। আগে তো আধুনিক গান বা সিনেমার গান নয় এমন গানের চল উঠে গিয়েছিল। রেডিয়োয় এ ধরনের গান না বাজানো আমার অপরাধ বলে মনে হত। এসভিএফ মিউজিককে এ সময়ে ফিল্মের বাইরের গান প্রচার করার জন্য ধন্যবাদ জানাব। সরস্বতীর পুজোর সময়ে গানটা মুক্তি পেল। তার দু’দিন আগেই আবার ভ্যালেন্টাইন্স ডে, মানে ভালবাসার দিবস ছিল। এই গানের জন্য এর থেকে ভাল সময় আর কী-ই বা হতে পারে!

একসঙ্গে গান গাইলেন বাবুল সুপ্রিয় এবং উস্তাদ রাশিদ খান।

একসঙ্গে গান গাইলেন বাবুল সুপ্রিয় এবং উস্তাদ রাশিদ খান।

প্রশ্ন: এই গানের ‘মালবিকা অনিমিখে চেয়েছিল পথের দিকে’ এই পংক্তি যখন গাইলেন কার মুখ মনে এল?

উত্তর: (কিছুটা ভেবে) কারও মালবিকা থাকে, কারও অনামিকা থাকে, কারও পূজা থাকে। পলিটিক্যালি কারেক্ট থাকার জন্য শেষে বউয়ের নামটাও বলতে হবে। তাই বলব, কারও রচনাও থাকে। মালবিকা তো শুধু একটা নাম। মালবিকার নানা চেহারা আছে। রবীন্দ্রনাথ তো তার মুখ এঁকে যাননি। আমরা মনের মতো করে একটা মুখ বসিয়ে নিতে পারি। এখানেই রবীন্দ্রনাথের গান আরও বেশি সুন্দর হয়ে ওঠে। নিজের মতো করে সবাই সেই গানের সঙ্গে নিজেকে জুড়ে দিতে পারে।

প্রশ্ন: নিজের মতো করে ভাবতে গিয়েই তো ইদানীং ড্রাম বাজিয়ে অনেক রবীন্দ্রসঙ্গীত গেয়ে ফেলছে...

উত্তর: আমার মনে হয়, রবীন্দ্রনাথের গান নিয়ে খুব বাড়াবাড়ি বা অতিরিক্ত কোনও চেষ্টা না করাই ভাল। কিছু বছর আগে ‘মায়াবনবিহারিণী’ গানটা বেশ রক ধাঁচে গাওয়া হয়েছিল। সেটা কিন্তু শুনতে মন্দ লাগেনি। কিন্তু সেই ধরনটাই যদি জনপ্রিয়তার খাতিরে অন্য কেউ বারবার করেন তা হলে বোধ হয় আর ভাল লাগবে না। নিজেদের শিল্পের প্রতি আমাদের সৎ থাকতে হবে। বিশেষ করে যখন আমরা রবীন্দ্রসঙ্গীত গাইছি। আমি কিন্তু নিজে মুম্বই গিয়ে এই গানের সাউন্ড মিক্স করিয়েছি। খুব নামী এক জন সাউন্ড মিক্সার কাজটি করেছেন। গানটি শুধু শুনতে না, দেখতেও যেন মানুষের ভাল লাগে সেটা নিয়েও ভেবেছি।

প্রশ্ন: রবীন্দ্রসঙ্গীত নাকি প্যানপেনে গান?

উত্তর: (কিছুক্ষণ থেমে গিয়ে) এটা যাঁরা বলেন, তাঁরা অশিক্ষিত। অনেকেই আছেন, যাঁরা দু’বছর বিদেশে থেকে বাংলা বলতে পারে না। আবার অনেকে আছেন, বছরের পর বছর বিদেশে থেকেও বাংলা নিয়ে চর্চা করেন, রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে চর্চা করেন। যাঁরা এ ধরনের কথা বলেন, তাঁরা হয়তো নিজেকে আধুনিক দেখাতে গিয়েই এ ধরনের কাজগুলো করে বসেন। এগুলোতে বেশি পাত্তা না দিয়ে, এড়িয়ে যাওয়া ভাল।

প্রশ্ন: গায়ক বাবুল সুপ্রিয় না নেতা বাবুল সুপ্রিয় আপনার প্রিয় কে?

উত্তর: এই দুটো দিক এখন মিলেমিশে গিয়েছে। মাথায় সুইচ আছে। অন-অফ করতে হয়। সরস্বতী পুজোয় আমার গান মুক্তি পাচ্ছে। ফাল্গুনে আষাঢ় নিয়ে আসছি। আশা করি, অনভিজ্ঞ প্রেম থেকে অভিজ্ঞ প্রেম, সকলেরই পছন্দ হবে এই গান।

অন্য বিষয়গুলি:

Rashid Khan Babul Supriyo Rabindrasangeet
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE