উত্তেজনা ছিল। আশঙ্কা ছিল। ভয় ছিল। প্রত্যাশাও ছিল। সব পাওনা মিটিয়ে দিল মার্ভেল। কড়ায়-গণ্ডায়। ‘অ্যাভেঞ্জার্স: এন্ডগেম’ শুধু একটা মুভি সিরিজ়ের শেষ নয়। একটা যুগের সমাপ্তি। একটা প্রজন্মের বেড়ে ওঠার উপলব্ধি। প্রিয় সুপারহিরোদের ‘ফুল সার্কল’-এ আসতে দেখার প্রাপ্তি। এতটা চাপ অন্য কোনও ছবির ফ্র্যাঞ্চাইজ়ি এর আগে নিয়েছে কি না, জানা নেই। এই প্রজন্মই হ্যারি পটার সিরিজ় দেখেছে। ‘লর্ড অব দ্য রিংস’ দেখেছে। বাস্তবে এই দুটো সিরিজ়ও তাদের বেড়ে ওঠার অংশ হিসেবে কম জরুরি নয়। যে কোনও ‘মিলেনিয়াল’কে কুইজ় করুন। প্রশ্ন শেষ হওয়ার আগেই ঠোঁটের গোড়ায় উত্তর হাজির! কিন্তু অ্যাভেঞ্জার্স শুধু পছন্দের কাল্পনিক চরিত্রসমষ্টি নয়। একটা ইমোশন। ‘এন্ডগেম’ সেই ইমোশনটাকে বাড়িয়ে দিল কয়েক গুণ। তাই সিরিজ় শেষ হলেও ফুরোবে না তার সঙ্গে জড়িয়ে থাকা আবেগ, লেপ্টে থাকা ছেলেবেলা।
তা না হলে মাল্টিপ্লেক্সে পা রেখেই ক্যাপ্টেন আমেরিকা, হকআই, উলভারিন, স্পাইডারম্যান সেজে কয়েক ডজন কলেজপড়ুয়াকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ঠোঁটের কোণায় প্রশ্রয়ের হাসি চলে আসে না! তাদের অল্প বয়সকে বেশ কয়েক বছর আগে ফেলে চলে এলেও, অ্যাভেঞ্জারদের জন্য বরাদ্দ ভালবাসায় তাদের শামিল করে নিতে মনটা দ্বিধাও করল না। মার্ভেল ঠিক বোঝে তার ফ্যানদের মন। তাই ‘এন্ডগেম’ মানেই শুধু ধাঁই ধাঁই অ্যাকশন ভাবলে ভুল করবেন। মানবিক অনুভূতিগুলোও অনেকটা জায়গা করে নিয়েছে অতিমানবদের এই গল্পে। পরিবার, বন্ধুত্ব, ভরসা, ভালবাসার গুরুত্ব এই ক্ষয়িষ্ণু পৃথিবীতে কতটা গুরুত্বপূর্ণ, সেটা বোঝারও একটা পাঠ ‘এন্ডগেম’।
‘ইনফিনিটি ওয়ার’ যাঁরা দেখেছেন, তাঁরা অ্যাভেঞ্জারদের নিয়ে অন্য যে কোনও ছবির ব্যাপারে নেহাত অজ্ঞ হলেও ‘এন্ডগেম’ তাদের খালি হাতে ফেরাবে না। তবে ‘ইনফিনিটি ওয়ার’ যে জায়গায় শেষ হয়েছিল, তাতে ভক্তদের মধ্যে জেগেছিল বহু প্রশ্ন, বহু সম্ভাবনা। ফ্যান থিয়োরিতে ছেয়ে গিয়েছিল ইন্টারনেট। ছ’খানা ইনফিনিটি স্টোন ছিনিয়ে নিয়েছে থানোস। তুড়ি মেরে গোটা পৃথিবীর অর্ধেক জনসংখ্যাকে স্রেফ ছাই করে দিয়েছে সে। অদৃষ্টে বিলীন হয়েছে স্পাইডারম্যান, ব্ল্যাক প্যান্থারের মতো দুর্ধর্ষ অ্যাভেঞ্জাররা। কী করবে এ বার বাকিরা? প্রিয়তম বন্ধু, টিমমেম্বারদের চলে যাওয়াকে মেনে নেবে? নিজেদের ক্ষয়ক্ষতিকে মনে না রেখে এগিয়ে যাবে জীবনে? নাকি খুঁজে পাবে পুরনো সময়কে ফেরানোর রাস্তা?
অ্যাভেঞ্জার্স: এন্ডগেম
পরিচালনা: অ্যান্থনি রুসো, জো রুসো
অভিনয়: রবার্ট ডাউনি জুনিয়র, ক্রিস ইভান্স, ক্রিস হেমসওয়ার্থ, স্কারলেট ইয়োহানসন
৮/১০
এই প্রশ্নগুলোই তৈরি করে দিয়েছে ‘এন্ডগেম’-এর প্রেক্ষাপট। বহু ফ্যান থিয়োরির মধ্যে উল্লেখ ছিল, থানোসকে হারিয়ে পৃথিবীকে বাঁচাতে গেলে অ্যাভেঞ্জারদের বলিদান দিতে হবে অনেক। কিন্তু গল্পের পরিধি সেটুকুই হলে মার্ভেল এই দানবিক সাফল্য পেত না! তাই প্লটে এমন কিছু টুইস্ট রয়েছে, যা দেখে অতি বড় ভক্তেরও চোখ কপালে উঠবে।
আর সেখানেই জমিয়ে দিয়েছে মার্ভেল সুলভ হিউমর, সিট আঁকড়ে বসা অ্যাকশন, আবেগ-ঠাসা বেশ কিছু দৃশ্য। রুসো ভাইদের (পরিচালক জুটি) পক্ষে খুব কম সময়ে গল্পটা বলে দেওয়া সহজ হতো না। প্রথম কারণ, অতিকায় প্লট। তার সঙ্গে জুড়েছে ‘ইনফিনিটি ওয়ার’-এর ক্লিফহ্যাঙারে টাঙিয়ে রাখা প্রশ্নগুলোর উত্তর দেওয়ার দায়ও। কিন্তু এত যত্ন করে প্রতিটা দিক আলাদা করে দেখানো হয়েছে যে, খুব কম দর্শকই ত্রুটিগুলো ধরতে পারবেন। ত্রুটি বলতে অবশ্য এটুকুই বলা যায় যে, গ্র্যান্ড ন্যারেটিভের কারণে অনেক চরিত্রই তেমন গুরুত্ব পায়নি। কিন্তু মার্ভেল কবেই বা ত্রুটিকে মানবিকতার চেয়ে গুরুত্ব দিয়েছে! না হলে তাদের সুপারহিরোদের মধ্যে আমার-আপনার মতো এত ভুলচুক করে ফেলার প্রবণতা থাকে?
ছবিতে হিউমরের অনেকখানি রয়েছে থরের (ক্রিস হেমসওয়ার্থ) চরিত্র ঘিরে। হকআই (জেরেমি রেনার) এবং ব্ল্যাক উইডোকে (স্কারলেট ইয়োহানসন) নিয়ে একটি দৃশ্য হৃদয়নিংড়ে লেখা! বরাবরের মতো এই ছবিতেও আয়রনম্যান (রবার্ট ডাউনি জুনিয়র) এবং ক্যাপ্টেন মার্ভেলকে (ক্রিস ইভান্স) আলাদা করে ভালবাসতে ইচ্ছে করবে। বদলে যাওয়া হাল্ক (মার্ক রাফালো) গলিয়ে দেবে মনটাকে। তবে সবচেয়ে বেশি মনে লেগে থাকবে, ক্লাইম্যাক্সে মহাযুদ্ধের ওই দুর্দান্ত স্পেক্ট্যাক্ল! ওটুকুই তো সম্বল। স্ট্যান লির শেষ ক্যামিয়োর মতোই...
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy