Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
Celeb Birthday

দুই ছেলে বাবাকে যা সংলাপ বলছেন, শুনে আমরা অস্বস্তিতে পড়ে যাচ্ছি: অতনু ঘোষ

ভীষণ মজার মানুষ। পরিচালকের সঙ্গে তাঁর বন্ধুত্বও খুব গাঢ়। একসঙ্গে হলেই নাকি তাঁদের হুল্লোড়-হাসিতে চারপাশ সচকিত! বন্ধু সুজনের ৫০ তম জন্মদিনে জানালেন অতনু।

Image Of Sujan Neel Mukherjee

সুজন নীল মুখোপাধ্যায়। ছবি: ফেসবুক।

অতনু ঘোষ
অতনু ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ জুলাই ২০২৪ ১৮:০৭
Share: Save:

“হাসছি মোরা হাসছি দেখো, হাসছি মোরা আহ্লাদী...” সুকুমার রায় কি আমাকে আর সুজন মুখোপাধ্যায়ের কথা ভেবেই আগাম কবিতাটি লিখে গিয়েছিলেন? না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন, বন্ধুত্বের প্রথম দিন থেকে আমি আর নীল (সুজনের ডাক নাম) কারণে-অকারণে এ ভাবেই হেসে গড়াতাম। এত তুচ্ছ কারণে মানুষ যে কত হাসতে পারে, সেটের বাকিরা সেটা চেয়ে চেয়ে দেখতেন। কাজ করতে গিয়ে আমার দু’জন অভিনেতার সঙ্গে খুব বন্ধুত্ব হয়েছিল। পীযূষ গঙ্গোপাধ্যায় আর নীল। হাহা-হিহিটা নীলের সঙ্গেই যেন বেশি জমত। কারণ, ওর রসবোধ। খুব সামান্য জিনিস থেকে ও মজা নিঙড়ে নিতে জানত।

সময়টা নব্বইয়ের শেষ। নীলের সঙ্গে মিউজ়িক ভিডিয়ো, টেলিফিল্ম-সহ বেশ কিছু ছোট ছোট কাজ করেছি। মনে রাখার মতো কাজ শিবরাম চক্রবর্তীকে নিয়ে তৈরি ‘সাহিত্যের সেরা সময়’। আমি যদিও চিত্রনাট্য লেখার কাজ থেকে হাত সরিয়ে নিয়েছিলাম। কবি জয়দেব বসু চিত্রনাট্য লেখার দায়িত্ব নিতেই পুনরায় কাজ শুরু। এমনিতেই শিবরাম চক্রবর্তীর লেখা জলবৎ তরলং। ক্যামেরার সামনে ততটাই সহজ অভিনয়ে নিজের চরিত্র ফুটিয়ে তুলেছিল নীল। সব মিলিয়ে আমাদের কাজ জমে গিয়েছিল। ‘সুমিতাকে সামলানো’ পর্ব সেই সময় দর্শক-সমালোচকদের থেকে অনেক প্রশংসা কুড়িয়েছিল। নীলের কৌতুকাভিনয়ের এই সহজাত প্রতিভাকে আরও একবার কাজে লাগিয়েছিলাম ‘অধরা মাধুরী’তে। এক ছেলের বিয়ের ইচ্ছে নেই। তার বন্ধু সেই জায়গায় প্রক্সি দেবে। প্রক্সি দিতে গিয়ে বন্ধুটি প্রেমে পড়ে যায় সেই ছেলের হবু পাত্রীর। এই চরিত্রে অভিনয় করেছিল নীল। তার পর বড় ছবি ‘তখন তেইশ’। সেখানে নীল যিশু সেনগুপ্তের বন্ধু। ‘অ্যাবি সেন’ ছবিতে নীল আবীর চট্টোপাধ্যায়ের বন্ধু। এ ভাবেই ও এক একটি চরিত্র নিজগুণে জীবন্ত করেছে।

Image Of Sujan Neel Mukherjee

সেই গিটার হাতে সুজন নীল মুখোপাধ্যায়। ছবি: সংগৃহীত।

কেরোসিন তেলে গিটার তাজা!

নীলের রসবোধের গল্প শুনবেন? বরাবর আমার ছবি বা টেলিফিল্মে অভিনেতাদের দিয়ে গাওয়াতে ভালবাসি। তেমনই একটি কাজে শেষ মুহূর্তে ঠিক হল, নীল গাইবে। ও রাজিও হল। আমরা আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিলাম, গিটার বাজিয়ে গান গাওয়া হবে। গিটার এল। এ দিকে তার দুটো চাবিতে জং ধরে গিয়েছে! কিছুতেই ঘোরানো যাচ্ছে না। নীল এ বার সুর তুলবে কী করে? পরামর্শ দিলাম, যে দুটো চাবি কাজ করছে না সে দুটো ছেড়ে় বাকিগুলো দিয়ে বাজাও। ও খানিক ক্ষণ অবাক হয়ে তাকিয়ে থেকে বলল, “সে আবার হয় নাকি?” তার পর জানাল, তেল দিলেই মরচে ছেড়ে যাবে। তড়িঘড়ি ছোট্ট একটা পাত্রে তেলও নিয়ে এল। দেখে ভাবলাম, বুঝি কোনও যন্ত্রে দেওয়ার জন্য তেল এনেছে। একটু পরে বুঝলাম কেরোসিন তেল! নীলের তাতে হেলদোল নেই। হাসতে হাসতে বলল, “চাবি ঘুরলেই হল। হোক না কেরোসিন।”

Image Of Sujan Neel Mukherjee And Abir Chatterjee

অতনু ঘোষের ‘অ্যাবি সেন’ ছবিতে (বাঁ দিকে) সুজন নীল মুখোপাধ্য়ায়, আবীর চট্টোপাধ্যায় (ডান দিকে)। ছবি: সংগৃহীত

মঞ্চ বনাম পর্দা

নীল যে মঞ্চেও সমান সাবলীল এ কথা সকলে জানেন। আমার ওঁর দুটো নাটক খুব পছন্দ। একটি, দেবেশ চট্টোপাধ্যায় পরিচালিত ‘ব্রেন’। নীলের সহ-অভিনেতা পীযূষ গঙ্গোপাধ্যায়। মঞ্চে এ বলে আমায় দেখ ও বলে আমায়। দ্বিতীয়টি, ‘মহাত্মা বনাম গান্ধী’। যেমন নীল তেমনি ওর বৌ নিবেদিতা মুখোপাধ্যায়, সমান দাপট অনির্বাণ চক্রবর্তীরও। নাটকটি দেখে সমৃদ্ধ হয়েছি। মঞ্চের নীল পর্দার নীলের থেকে অনেক আলাদা। ওর চেহারায়, আচরণে ব্যক্তিত্ব লুকিয়ে থাকে। সেটা মঞ্চে নীল সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তোলে। যেটা দেখতেও ভাল লাগে। আর একটা বড় ব্যাপার অরুণ মুখোপাধ্যায়ের পর দাদা সুমন মুখোপাধ্যায়ের সহযোগিতায় নীল তাঁদের নাট্যদল ‘চেতনা’কে খুব সুন্দর করে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।

Image Of Bhaswar Chatterjee And Sujan Neel Mukherjee

(বাঁ দিকে) ভাস্বর চট্টোপাধ্যায়, সুজন নীল মুখোপাধ্যায় (ডান দিকে)। ছবি: সংগৃহীত।

লাল আর নীল...

নাট্যকার অরুণ মুখোপাধ্যায়ের দুই ছেলে। ভাল নাম সুমন আর সুজন মুখোপাধ্যায়। দুই ভাইয়ের ডাকনাম শুনে অনেকেই হাসেন। আমারও যে মজা লাগে না তা নয়। তবে একটি নাটক দেখার পর এই নাম দুটোর তাৎপর্য আলাদা করে আবিষ্কার করেছিলাম। একটি নাটকে বাবা দুই ছেলেকে নিয়ে অভিনয় করছেন। অভিনয়ের খাতিরে দুই ছেলে বাবাকে যা সংলাপ বলছেন শুনে আমরা অস্বস্তিতে পড়ে যাচ্ছি। প্রয়াত কবি অমিতাভ চৌধুরীও নাটকটি দেখতে গিয়েছিলেন। অভিনয় শেষ হতেই তাঁর মন্তব্য, “বেশ লেগেছে। সংলাপগুলোও বেশ। যে বাবার ছেলেদের নাম লাল আর নীল, তারা তো এই সংলাপই বলবে।” সে দিন বুঝেছিলাম, নিছক নাম নয়, নামের মাধ্যমে কৃতী বাবার দুই কৃতী সন্তান আদতে জীবনের দুই উজ্জ্বল রঙকেই ধারণ করেছেন। যে রঙের ছটায় তাঁদের প্রতিভা আরও ঝলমলে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy