মাথার উপর থেকে মহীরুহ সরে যাওয়ার পর যেন এক ধাক্কায় বড় হয়ে গিয়েছেন অর্পিতা। ছবি: সংগৃহীত।
১০ বছর আগের কথা। পঞ্চক-এর চরিত্রে প্রথম বার অভিনয় করেছিলেন অর্পিতা ঘোষ। তখনও তাঁর বয়সের তুলনায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-সৃষ্ট চরিত্রের বয়স ঢের কম ছিল। আর এখন, অর্পিতার মতে, এই চরিত্রে তাঁকে একেবারেই মানাচ্ছে না। তাই সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলেছেন, পুরনো পঞ্চক বিদায় নেবে এ বার।
আগামী ১৪ ডিসেম্বর, সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় অ্যাকাডেমি মঞ্চে নিজের পরিচালিত নাটক ‘অচলায়তন’-এ শেষ বার পঞ্চক হবেন তিনি। তার পর আর নয়! জানালেন, দলেরই এক যুবককে তৈরি করে ফেলেছেন। এর পর থেকে তিনিই হবেন নতুন পঞ্চক। অর্পিতার কথায়,‘‘আমি বড় হয়ে গিয়েছি। আগের পঞ্চককে বয়স্ক দেখাচ্ছে এ বার।’’
ছক তো কতই ভেঙেছেন অর্পিতা। কিন্তু কিছু বিষয়ে তিনি বিশেষ। এই যেমন, নারী হয়েও দিনের পর দিন পঞ্চকের মতো এক কিশোর চরিত্রে জনপ্রিয় মুখ হয়ে উঠেছেন, এ কী কম কথা! এটি তবু অর্পিতার কাছে তুচ্ছ বিষয়। তাঁর দাবি, ‘‘গোড়া থেকেই আমি নাটকটাকে ওই ভাবে দেখিইনি। এই যে আমরা প্রতিনিয়ত বাইরে এবং ভিতরে অচলায়তন তৈরি করে রাখি, সে সব ভাঙতে হলে এ রকম পঞ্চকদের দরকার হয়।’’
অর্পিতার মনে পড়ে যায় শুরুর দিকের কথা। যখন ‘অচলায়তন’ প্রথম প্রযোজনা করছেন, শাঁওলী মিত্র তাঁকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ‘‘কাকে পঞ্চক করবি ভাবছিস?’’ অর্পিতা দলের এক ছেলেকেই এই চরিত্রে ভেবেছিলেন। তার তখন ১৮-১৯ বছর বয়স। সে কথা জানাতেই শাঁওলীর তৎক্ষণাৎ জবাব, ‘‘ও পারবে না।’’
কিন্তু কেন? শাঁওলী বুঝিয়ে বলেন, পঞ্চক করতে গেলে একটা পরিণতি দরকার। বোধের জায়গাটা স্পষ্ট হওয়া দরকার। অর্পিতার কথায়, ‘‘পঞ্চক একই সঙ্গে যেমন ছেলেমানুষ, অচলায়তন ভাঙে, তেমনই অনেক বড় বড় দার্শনিক ভাবনা ওর ভিতরে কাজ করে।’’ শাঁওলী সেই চরিত্র অর্পিতাকেই করার পরামর্শ দেন। সেই থেকে করছেন অর্পিতা। কিন্তু ইদানীং আর মন সায় দিচ্ছিল না।
চলতি বছর জানুয়ারি মাসে পঞ্চম বৈদিক-এর আসন শূন্য করে চলে গিয়েছেন শাঁওলী মিত্র। রক্তের সম্পর্ক না থাকলেও অর্পিতা তাঁকেই মা বলতেন। মাথার উপর থেকে মহীরুহ সরে যাওয়ার পর যেন এক ধাক্কায় বড় হয়ে গিয়েছেন অর্পিতা। তাঁর মাথায় এখন গুরুদায়িত্ব। নিজেই বললেন, ‘‘এত দিন আমার ভিতরের শৈশবকে লালন করেছেন শাঁওলীদিই, কিন্তু তিনি চলে যাওয়ায় এখন সেই শিশু আর নেই। পঞ্চকের বয়স বেড়ে যাক, আমি চাই না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy