অনির্বাণ ভট্টাচার্য এবং অর্ণ মুখোপাধ্যায় ফাইল চিত্র
প্রশ্ন: করোনার মরসুমে লড়াইটা এখন কোন পর্যায়ে?
অর্ণ: (একটু হেসে) লকডাউনের সময় যা ছিল, তার চেয়ে ভাল। ভাল লাগার মতো কিছু না ঘটলেও কাজটা হচ্ছে। চাই-চাই মন, অহরহ নাটকের শো হচ্ছে।
প্রশ্ন: কিন্তু নতুন স্ক্রিপ্ট কোথায়? ভাল নাটক বলতে সেই তো পুরাণ, ইতিহাস, রবীন্দ্রনাথ কিংবা শেক্সপিয়র থেকে ধার...
অর্ণ: সেটা তো ইতিবাচক দিক! ৫০-১০০ বছর অন্তর ইতিহাসে যেমন ঘটনাপ্রবাহ, থিয়েটারেও তেমনই ইতিহাস, পুরাণ, শেক্সপিয়র, রবীন্দ্রনাথ, জর্জ অরওয়েল ফিরে ফিরে আসে। এ যুগে দেবেশদার ‘১৯৮৪’-এর মতো নাটকের মঞ্চে আসা জরুরি। ডিস্টোপিয়ান সমাজের ছবিগুলো জর্জ অরওয়েলের গল্প যে ভাবে বলতে পারে, তা ভীষণ ভাবে প্রাসঙ্গিক। শেক্সপিয়র কী বলেছিলেন, তা-ও বোঝা গিয়েছে সময় যত এগিয়েছে। আসলে সম্পর্কের গল্প নয় রোমিও জুলিয়েট, শুধু নারী আগ্রাসন বা ক্ষমতালোভের গল্প নয় ম্যাকবেথ, বাবার কষ্টে পাগল হয়ে যাওয়া উদ্ভ্রান্ত যুবকের গল্প নয় হ্যামলেট। এখনও ইতিহাস কেউ লিখছেন। সেটা পরে গিয়ে ডিকোড করা যাবে।
প্রশ্ন: সময়টা কি বদলায়নি? শ্রমিক শ্রেণির উত্থান চেয়ে গলা ফাটালে এখন কি মানুষ সংযোগস্থাপন করতে পারবেন?
অর্ণ: নিশ্চয়ই পারবেন! তবে সত্তরের দশকে যে শ্রমিক শ্রেণিকে নিয়ে কথা হত, তার চেহারা বদলেছে। তাই নাটকের ফর্মও বদলাতে বাধ্য। সে রকম থিয়েটার কলকাতায় হচ্ছেও।
প্রশ্ন: কিন্তু যদি কেউ সেই প্রসঙ্গ নাটকে আনার তাগিদ বোধ না করেন?
অর্ণ: যদি শ্রমিক শ্রেণির কথা নাটকে স্বাভাবিক ভাবে উঠে না আসে, তবে বুঝতে হবে সময়ের প্রত্যাশা অন্য। সময় হয়তো জাতির অবক্ষয় নিয়ে কিছু প্রত্যাশা করছে। সেটা কেবল শ্রমিক, কৃষক মধ্যবিত্ত এই পরিসরে আটকে নেই। সেটা হয়তো আরও আন্তর্জাতিক। আরও বেশি মানবিক। সমাজ একটা অন্ধকারের দিকে যাচ্ছে। কৃষক, শ্রমিক, শিল্পী হোক বা খেলোয়াড়— সকলেই তার মধ্যে পড়েন।
প্রশ্ন: ছবির শ্যুটিং কি থিয়েটারের থেকে নিশ্চিন্তির জীবন দিচ্ছে?
অর্ণ: অর্থ উপার্জনের দিক দিয়ে তো বটেই। তবে যাঁরা শিল্পের জগতে আছেন, আমার মনে হয়, তাঁরা সকলেই নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন। আগামী দিনে কাজ পাব কি পাব না, সেটা বড় কথা নয়, আমি কাজ পাওয়ার যোগ্য কি? আমার অবস্থান কী? আমার কাজ সম্পর্কে আমি সন্দিহান নই তো? আমি তো প্রতি মুহূর্তে আমার সৃষ্টিকে সন্দেহ করি। সেইটা তাড়াতাড়ি চুল পাকিয়ে দেয়, মুখের চামড়া কুঁচকে দেয়। কখনও বেশি কথা বলায়, এই যেমন এখন বলছি। কেউ প্রশ্ন করলে পরে হয়তো কম বলব।
প্রশ্ন: শুধু থিয়েটার নিয়েই থাকবেন ভেবেছিলেন বোধহয়...
অর্ণ: একেবারেই না। ধুতি-পাঞ্জাবি পরে বিপ্লব করব বলে থিয়েটার করতে আসিনি। দিনে অভিনয় করব, রাতে পেট কিল মেরে শুয়ে থাকব— এমন আদর্শ আমার ছিল না। প্যাশন থেকে করি। খিদে ঘুম বা যৌনতার মতো আমার থিয়েটার পায়! তবে আন্তর্জাতিক সিনেমা দেখার অভ্যাস বাড়ি থেকে তৈরি হয়েছিল। সিনেমা,থিয়েটার দু'য়ের প্রতি আকর্ষণ ছিল এবং আমি বরাবর অভিনেতা ও পরিচালক দুই-ই হতে চেয়েছি।
প্রশ্ন: শেষ ৫ বছর তো ছবি করছেন, তার আগে প্রস্তাব আসেনি?
অর্ণ: বহু প্রস্তাব এসেছে। কিন্তু তখন আমি থিয়েটার নিয়ে ব্যস্ত। প্রস্তুতিপর্বে ছিলাম। সময়টা নিজেকে দেওয়ার প্রয়োজন ছিল, তাই দিয়েছি। যখন মনে হল কিছুটা প্রস্তুত, জনমানসে কিছুটা গ্রহণযোগ্য হয়েছি, তবে থেকেই সিনেমায় কাজ করছি।
প্রশ্ন: অনির্বাণের সঙ্গে মঞ্চ ভাগ করেছেন এত বছর। তিনি কোথায় আর আপনি কোথায়, ঈর্ষা হয় না?
অর্ণ: দু’টি মানুষের জীবন আলাদা, চেহারা আলাদা, মনের গঠন আলাদা, কণ্ঠ আলাদা। কাজেই দু’জনের লক্ষ্য এক ছিল সেটা তো বলা যায় না। আমরা আজও খুব ভাল বন্ধু, আজও খুব ভাল শত্রু, আমরা আজও খুব ভাল তার্কিক। তার আজকের সিনেমাজগতের অবস্থান আর আমার অবস্থান একেবারেই আলাদা। ওর যে অবস্থান, সে নিয়ে আমার ঈর্ষা নেই, ভালবাসা আছে। ওর যা প্রাপ্য, পেয়েছে। আমার যা পাওয়ার, তা আমি নিশ্চয়ই এক দিন পাব। কারণ শুধু সিনেমার অভিনেতা হওয়ার জন্য আমি তো নিজেকে প্রস্তুত করিনি, আমার আরও অনেক লক্ষ্য আছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy