কখনও ‘কৃষ্ণকলি’, কখনও ‘খড়কুটো’— নীল ভট্টাচার্য-তৃণা সাহার ঝুলিতে এ রকম আরও জনপ্রিয় ধারাবাহিক রয়েছে। ধারাবাহিক বদলেছে। বদলেছে তাঁদের নাম। দর্শকমনে নীল কখনও ‘নিখিল চৌধুরী’, আবার তৃণা ‘গুনগুন’। অভিনীত চরিত্রের নাম ধরেই দর্শক তাঁদের চেনেন, ভালবাসেন। অভিনেতাদের কাছে এটাই পরম পাওয়া।
কিন্তু পর্দার বাইরে নায়ক-নায়িকাদের জীবন রয়েছে। তাঁরাও আর পাঁচজনের মতোই রেগে যান, হাসেন, কথা বলেন, প্রেমে পড়েন। বিচ্ছেদে ভেঙেও পড়েন। কখনও তাঁরা সেটা প্রকাশ করেন, কখনও রূপটানের আড়ালে লুকিয়ে রাখেন চোখের তলার কালি। নীল-তৃণাও এ সবের বাইরে নন। চার বছর আগে ২০২১-এর ৫ ফেব্রুয়ারি চার হাত এক হয়েছিল ছাঁদনাতলায়। প্রায় গোটা টলিউড জড়ো হয়েছিল সেই বিয়েতে। বিয়ের অনুষ্ঠানে ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কারণ, নীল-তৃণা শাসকদলের ঘনিষ্ঠ।

বিয়ের সে দিন নীল-তৃণা। ছবি: সংগৃহীত।
সাত পাক ঘুরে তৃণা সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছিলেন, তাঁর আর নীলের সম্পর্কের বয়স এক যুগ। এই ১২ বছরে তিনি অভিনেতা স্বামীর নামে প্রচুর নিন্দা শুনেছেন। কোনও কথা কানে তোলেননি। এই বিশ্বাস, এই ভরসার সূত্রপাত কবে থেকে? এক সাক্ষাৎকারে নীল-তৃণা জানিয়েছিলেন, দক্ষিণ কলকাতার এক কোচিং সেন্টারে পড়তেন তাঁরা। সেখানেই আলাপ, বন্ধুত্ব। তার পর প্রেম। পড়াশোনার ফাঁকেই প্রেমের পাঠ চলত তাঁদের। কিন্তু কখনও মুখে বলেননি, ‘ভালবাসি’! পড়াশোনা শেষের পর দু’জনে দুই দিকে। দিল্লি চলে যান তৃণা। নীল পা রাখেন অভিনয় দুনিয়ায়। উভয়েই ভেবেছিলেন, প্রেম মুছে গেল বুঝি। ‘ঠিক যেন লাভ স্টোরি’ ধারাবাহিকের হাত ধরে ছোট পর্দার সফর শুরু। নায়কের চরিত্রে তিনি। বিপরীতে স্বৈরিতী বন্দ্যোপাধ্যায়। এই ধারাবাহিকের মাধ্যমেই নাকি তাঁদের মনে প্রেমের কড়া নাড়া, এক সময় এমনই গুঞ্জন শোনা গিয়েছিল টেলিপাড়ায়।

ভালবাসারয় ভেসেছিলেন নীল-তৃণা। ছবি: সংগৃহীত।
কয়েক বছর পরে কলকাতায় ফিরে আসেন তৃণা। আবারও মুখোমুখি নীলের। তখনই টের পান, প্রেম ফুরোয়নি। ফের তাঁরা কাছাকাছি, ঘনিষ্ঠ। তৃণাও পা রাখেন অভিনয় দুনিয়ায়। তাঁর প্রথম ধারাবাহিক ‘খোকাবাবু’। দু’জনেরই প্রথম ধারাবাহিক সফল। তার পর থেকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁদের। অভিনয়ের দৌলতে জনপ্রিয়তার জোয়ারে ভেসেছেন। ধারাবাহিকের ময়দানে তাঁদের জনপ্রিয়তার জেরে শাসকদলের ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠেছিলেন তাঁরা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্বাচনী প্রচারে সক্রিয় অংশ নিতে দেখা গিয়েছে তাঁদের। টেলিপাড়া বলছে, তখনও গাঢ় রসায়ন তাঁদের।
টেলিপাড়ার গুঞ্জন, বিয়ের ছ’মাসের মধ্যেই নাকি সেই ভালবাসায় গ্রহণ! প্রথম বিচ্ছেদের গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়তেই হতবাক সমাজমাধ্যম। বিস্মিত টেলিপাড়া। কারণ, তৃণা নিজে জানিয়েছিলেন, শাশুড়ির তিনি খুব আদরের বৌমা। তিনি নায়িকাকে জলও নিজে নিয়ে খেতে দেন না! তা হলে? কখনও শোনা গিয়েছে, তৃণা নাকি মন দিয়েছেন অন্যত্র। যার জেরে অসন্তোষ দানা বেঁধেছে। এ সবের মধ্যেই তখনও তাঁরা যুগলে বিজ্ঞাপনী ছবিতে অংশ নিয়েছেন। নীল-তৃণা যৌথ ভাবে নিজেদের পোশাকের বুটিক খুলেছেন। নিন্দকদের তড়িঘড়ি দাবি, বিচ্ছেদের গুঞ্জন রুখতেই নাকি তাঁরা সেই পুজোয় একসঙ্গে সময় কাটিয়েছিলেন। বিয়ে টিকে আছে— সমাজমাধ্যমে ছবি দিয়ে ঘোষণা করেছিলেন তাঁরা। কিন্তু ভবি কি এত সহজে ভোলে?

ভালবাসা জারি থাক নীল-তৃণার। ছবি: সংগৃহীত।
বিয়ের একটা করে বছর ঘুরেছে, বিচ্ছেদের গুঞ্জন তীব্র হয়েছে। সম্প্রতি সেই গুঞ্জন আছড়ে পড়েছে সুনামি হয়ে। রটনা, চার বছরের চুক্তির বিয়ে ছিল নীল-তৃণার। সেই চুক্তি শেষ হয়েছে গত ৫ ফেব্রুয়ারি। গুঞ্জন, উভয়েই নাকি আইনি বিচ্ছেদের পথে। বাড়তি ইন্ধন, অভিনেতা নাকি শাসকদলের কোনও এক নেতার মেয়ের প্রেমে আচ্ছন্ন। না, এই নিয়ে আনন্দবাজার ডট কমের সঙ্গে কোনও কথা বলেননি তাঁরা। নীলের ফোন বেজে গিয়েছে। তিনি ব্যস্ত তাঁর ধারাবাহিক ‘অমর সঙ্গী’র সেটে। তৃণারও সামনেই মুক্তি পাবে নতুন ধারাবাহিক ‘পরশুরাম’। তিনি কেবল ব্যস্ততার ফাঁকে ছোট্ট জবাব পাঠিয়েছেন, “সব মিথ্যে। সব ভুয়ো।”