দিব্যজ্যোতি দত্ত। ছবি: সংগৃহীত।
এই মুহূর্তে ‘অনুরাগের ছোঁয়া’ ধারাবাহিকে নায়কের চরিত্রে দেখা যাচ্ছে তাঁকে। ইচ্ছে রয়েছে বড় পর্দায় মিথ ভাঙার। সে ক্ষেত্রে অনুপ্রেরণা শাহরুখ খান, যশ দাশগুপ্তেরা। আনন্দবাজার অনলাইনের কাছে নিজের স্বপ্নের কথা জানালেন দিব্যজ্যোতি দত্ত।
প্রশ্ন: ১৭ বছর থেকে ধারাবাহিকে অভিনয় শুরু, এখন ২৫। অভিনেতা হিসেবে কতটা উন্নতি হল?
দিব্যজ্যোতি: জানি না। তবে মানুষের ভালবাসা, দোয়া প্রচুর পেয়েছি। ‘জয়ী’ ধারাবাহিকের সময় থেকেই সকলের ভালবাসা পয়েছি। এখন দিনে দিনে সেটা আরও বাড়ছে। আমার চোখে সেটাই উন্নতি।
প্রশ্ন: ভাল অভিনেতা হতে প্রয়োজন পড়াশোনার, সেই দিকে কি নজর দেওয়া হয়?
দিব্যজ্যোতি: হ্যাঁ, সেটা মানি। পড়াশোনার প্রয়োজন। আমি নিজে শরীরচর্চা করি ভীষণ ভাবে। তাই এখন পুষ্টিবিদ্যা নিয়ে ডিপ্লোমা একটা কোর্স করছি। তবে কলেজের পড়াশোনার সঙ্গে অভিনয় চালিয়ে যাওয়া আমার পক্ষে সম্ভব হয়নি। তাই সেটা আমি মাঝপথেই ছেড়ে দিই। জীবনে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, তাতে বাবা-মাকে পাশে পেয়েছি। তবে ওঁদের একটা ইচ্ছে ছিল, যা-ই করি না কেন, পড়াশোনা যাতে শেষ করি। এটা কোনও অজুহাত দিচ্ছি না। তা-ও মনে হল, বলি। যখন ‘জয়ী’ শুরু করি তখন উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করি। তার পর চার দিন মোটে কলেজ যেতে পেরেছি। তার পর ধারাবাহিকের সেটে এত ক্ষণ শিফ্টে কাজ। আমি আর পড়াশোনাটা সামলে উঠতে পারিনি।
প্রশ্ন: পুষ্টিবিদ্যা নিয়ে পড়াশোনা শুরু করলেন, বিকল্প পেশার পরিকল্পনা রয়েছে কি?
দিব্যজ্যোতি: না না, তেমন নয়। আসলে আমার শরীরচর্চা করতে ভাল লাগে। বিষয়টা নিয়ে আগ্রহ আছে। তাই আর একটু বেশি করে জানতে চাই। বিকল্প পেশার পরিকল্পনা নেই।
প্রশ্ন: মাঝপথে পড়া থামাতে হয়েছে, সিরিয়ালের অর্থনৈতিক সাচ্ছল্যই কি প্রাধান্য পেয়েছে?
দিব্যজ্যোতি: আমার মনে হয়, এর অনেকটাই ভাগ্যের উপর নির্ভর করে। অনেকেই একটা গতে বাঁধা কাজ করেই যান, কিন্তু সাফল্য পান না। আমি এমন অনেক লোককে চিনি, যাঁরা ব্যাঙ্কের মোটা টাকার চাকরি ছেড়ে অভিনয়ে এসেছেন। কারণ, ওটাই তাঁদের প্যাশন। আসল কথা, কোন কাজটা করে মন থেকে খুশি থাকা যাচ্ছে। আর হ্যাঁ, এটা তো মানতেই হবে যে, অর্থনৈতিক নিরাপত্তা একটা বড় ফ্যাক্টর। সেই দিক থেকে আমি নিজেকে ভাগ্যবান বলে মনে করি। পছন্দের কাজ করতে পারছি। আবার অর্থনৈতিক স্বাধীনতাও রয়েছে।
প্রশ্ন: অল্প বয়সেই টাকা এবং সাফল্য দুটোই পেয়ে গেলে নিজেকে সামলানো যায় কী ভাবে?
দিব্যজ্যোতি: আমি নিজের জীবনের সব সিদ্ধান্ত নিজেই নিই। এটাই আমার বাবা-মা শিখিয়েছেন। আমার প্রথম ধারাবাহিকের পারিশ্রমিকের জন্য ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট খুলতে হয়। সেই তখন থেকে বাবাই দেখেন ওই দিকটা। হালে বাবার সঙ্গে আমার নামটা যুক্ত হয়েছে। তবে আমি এখন সক্ষম বলে এমন নয়, বাবার দায়িত্ব কমিয়ে দেব। আমার মনে হয়, লাগামছাড়া ঘোড়া খুব সহজেই লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। তাঁর কোনও জকি থাকে না। আমি যে কোনও বড় সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে বাবা-মা ও বোনের সঙ্গে আলোচনা করে নিই। আমার জীবনে পরিবারের ওই লাগামটা প্রয়োজন।
প্রশ্ন: নিজেকে প্রচারের আলোয় রাখতে ‘পিআর’ থেকে ফ্যাশন উপদেষ্টা রাখতে হয় নাকি অভিনেতাদের?
দিব্যজ্যোতি: না, আমার নিজস্ব বলতে একটা গাড়ি আছে শুধু। যেটা চড়ে শুটিংয়ে যাই ও জিমে যাই। আর কোনও অনুষ্ঠানে গেলে বোনই জামাকাপড় ঠিক করে দেয়। আমি মাথা ঘামাই না এ সব দিকে।
প্রশ্ন: ছোট পর্দায় বেশ অনেকগুলো বছর হল। বড় পর্দায় নিজেকে দেখতে ইচ্ছে হয় না?
দিব্যজ্যোতি: আমি যখন যে কাজটা করি, সেটা মন দিয়ে করার চেষ্টাই করেছি। আমার অতটা প্রতিভা নেই যে, সিনেমা ও সিরিয়াল একসঙ্গে করতে পারব। সিনেমা করার ইচ্ছে তো রয়েছে। সে ভাবেই নিজেকে তৈরি করছি প্রতিদিন।
প্রশ্ন: এই যুগের অভিনেতাদের জন্য ইনস্টাগ্রাম প্রোফাইল কতটা গুরুত্বপূর্ণ?
দিব্যজ্যোতি: আজ থেকে কুড়ি বছর পিছিয়ে গিয়ে দেখলে, সে সময় পোর্টফোলিয়ো করতে হত। কারণ, অডিশনে বিভিন্ন প্রোফাইলের ছবি দেখতে চাওয়া হয়। ডিজিটাল মিডিয়ার যুগে সুবিধে এটাই যে, ইনস্টাগ্রাম প্রোফাইলের আইডি দিয়ে দিলেই সেখান থেকে দেখে নেওয়া যায়, তোমার সেরা ছবি কোনগুলি। সাধারণত সমাজমাধ্যমের পাতায় নিজেদের সেরা ছবিগুলিই দিয়ে থাকি আমরা। এখন কাস্টিং এজেন্সিই চেয়ে নেয় ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট আইডি। তবে তার মানে এই নয় যে, সেখানে অনুরাগীর সংখ্যা কিংবা সেখানকার ছবি দেখেই কাজের প্রস্তাব চলে আসবে। সেই নিশ্চয়তা নেই।
প্রশ্ন: বাংলা ধারাবাহিক থেকে এখন অনেক অভিনেতা হিন্দি ধারাবাহিকে কাজ করছেন। নিজে কখনও সেখানে অডিশন দিয়েছেন?
দিব্যজ্যোতি: স্বপ্নের কোনও শেষ নেই, ইচ্ছারও কোনও শেষ নেই। আমি আমার জীবনে যে স্বপ্নগুলো দেখি, সেগুলোকে প্রকল্প হিসেবে দেখি। আমি গোটা দেশের বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রিতেই কাজ করতে চাই।
প্রশ্ন: দিব্যজ্যোতির স্বপ্ন কী?
দিব্যজ্যোতি: আমার স্বপ্ন আকাশ ছোঁয়ার। আমি মনে করি, চেষ্টা করলে হয়তো যতটা ভাবছি, তার থেকেও বেশি কিছু পেতে পারি। আমি নিজেকে কিছুতে বেঁধে রাখতে চাই না। মানুষ মেপে হুইস্কি খায়, কিন্তু মেপে স্বপ্ন দেখতে নেই।
প্রশ্ন: স্বপ্ন সফল করতে সঙ্গীর প্রয়োজন কতটা?
দিব্যজ্যোতি: আপাতত কোনও সঙ্গী নেই আমার। জিমে যাই, বাড়ি ফিরি। শুটিংয়ে যাই, বাড়ি ফিরি। মাঝেমধ্যে নাচটাও করছি, লেখালিখি করছি। প্রতিদিন তিন ধরনের শরীরচর্চা করি। শারীরিক, মানসিক ও আধ্যাত্মিক। ধ্যান করি। আমার মনে হয়, ধ্যান করলে মানসিক দৃঢ়তা আসে। আসলে ভাল সঙ্গ, ভাল বন্ধু, ভাল বই, ভাল পরিবেশ খুঁজে নিতে হয়।
প্রশ্ন: ইন্ডাস্ট্রিতে কাছের বন্ধু কারা?
দিব্যজ্যোতি: আমার ইন্ডাস্ট্রিতে কোনও বন্ধু নেই। যারা আছে, সব ভাই।
প্রশ্ন: আর বান্ধবী…
দিব্যজ্যোতি: যারা বান্ধবী, তাদেরকেও ‘ভাই’ বানিয়ে নিয়েছি।
প্রশ্ন: গুঞ্জন, ‘অনুরাগের ছোঁয়া’ ধারাবাহিকের নায়িকা স্বস্তিকা ঘোষের সঙ্গে নাকি প্রেম ভেঙেছে, ঠান্ডা লড়াই চলছে নাকি আপনাদের?
দিব্যজ্যোতি: যাদের কোনও দিনই প্রেমই হয়নি, তাদের আবার ‘ব্রেক আপ’! না, ঠান্ডা লড়াই কেন চলবে? আমি জার্মানি নই, সে-ও রাশিয়া নয়। এ সব তো শত্রুদের মধ্যে হয়।
প্রশ্ন: আজকাল তো স্বস্তিকার সঙ্গে রিলেও দেখা যায় না?
দিব্যজ্যোতি: না, স্বস্তিকার সঙ্গে বলে নয়, আমি রিল করাই ছেড়ে দিয়েছি। আজকাল কাজের চাপ বেড়েছে। আজকাল মুড হয় না।
প্রশ্ন: সমাজমাধ্যমে অনুপস্থিতি মানেই তো ফলোয়ার কমে যাওয়া! আশঙ্কা হয়?
দিব্যজ্যোতি: আসলে ফলোয়ার কমে যাওয়ার উপরে কোনও হাত নেই। আমার লক্ষ্য, মানুষ আমাকে তাদের মনে ফলো করছে কি না। ফলো তো একটা বাটন টিপলেই হয়ে যায়, কিন্তু মনে ক’জন রাখে!
প্রশ্ন: এই প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের কোন অভ্যাসটি বদলে ফেলা উচিত?
দিব্যজ্যোতি: এখন জীবন এগিয়ে গিয়েছে। আগে রেডিয়ো শুনত লোকে। এখন ইউটিউব সেই জায়গা নিয়েছে। আমাদের চারপাশটাই তো বদলে গিয়েছে। তাই এই প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা সেই অনুযায়ী নিজেদের বদলে নিয়েছে।
প্রশ্ন: সিরিয়ালে কাজ করলে রাতারাতি পরিচিতি মেলে। আবার বাড়তি পরিচিতি কি বড় পর্দায় কাজ পাওয়ার অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়?
দিব্যজ্যোতি: আসলে আমাকে কখনও এই সমস্যার মুখে পড়তে হয়নি। ভবিষ্যতেও তেমন কিছুর সম্মুখীন হব না। কারণ শাহরুখ সিনেমায় কাজ করার আগে তিনটে ধারাবাহিকে কাজ করেছে। আমাদের এখানকার যশ দাশগুপ্তও ছোট পর্দার হিট নায়ক ছিল। কেজিএফ খ্যাত তারকা যশও সিনেমায় আসার আগে চারটে ধারাবাহিক করেছে। আমার মনে হয়, এ সব মিথ।
প্রশ্ন: দিব্যজ্যোতি সেই মিথই ভাঙতে চায়?
দিব্যজ্যোতি: মিথ ভাঙার জন্যই। শাহরুখ খান, যশ এঁরাই আমার অনুপ্রেরণা।
প্রশ্ন: আগামীর পরিকল্পনা কী?
দিব্যজ্যোতি: ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে জানি না। তবে কর্মজীবনের ক্ষেত্রে পরিকল্পনা রয়েছে। আসলে তারামণ্ডল ছোঁয়ার লক্ষ্যে নেমেছি, আকাশ পর্যন্ত পৌঁছই অন্তত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy