Advertisement
১৮ নভেম্বর ২০২৪

এ দেখাই শেষ দেখা নয় তো

ওঁদের ইনবক্সে মুহুর্মুহু এসএমএস-স্মাইলি। উপচে পড়ছে ‘প্রাক্তন’য়ের টিকিট কাউন্টারে ভিড়। কিন্তু নায়ক-নায়িকা কি সুখী? নাকি রিক্ত? নাকি বিচ্ছেদের যন্ত্রণাগ্রস্ত? মন উজাড় করে সব বললেন প্রসেনজিৎ-ঋতুপর্ণা। গৌতম ভট্টাচার্য-এর কাছে দুপুরের অবিশ্বাস্য-অকপট আড্ডায়প্রাক্তন’ সে দিনই প্রথম দেখলাম। কাঁদছিলাম ওই মুহূর্তটা দেখে যখন ট্রেনে ও চিরকুটটা আমার জন্য রেখে গেল — ‘ভাল থেকো দীপ’। তার পরে যখন ট্রেন থেকে নেমে শেষ বারের মতো ঘুরে তাকাল... হঠাৎ করে চোখে জল এসে গেল। আর তো দেখা হবে না।

শেষ আপডেট: ০৩ জুন ২০১৬ ০০:০৪
Share: Save:

ঋতুপর্ণা আপনি তো জানেন যে, প্রিয়ার প্রিমিয়ারে ইন্টারভ্যালেই প্রসেনজিৎ বেরিয়ে যান। পুরো ছবি না দেখে। কিন্তু আপনি শেষ হওয়ার পরেও চেয়ারে বসে কাঁদছিলেন। কীসের কান্না? কার জন্য কান্না?

ঋতুপর্ণা: ‘প্রাক্তন’ সে দিনই প্রথম দেখলাম। কাঁদছিলাম ওই মুহূর্তটা দেখে যখন ট্রেনে ও চিরকুটটা আমার জন্য রেখে গেল — ‘ভাল থেকো দীপ’। তার পরে যখন ট্রেন থেকে নেমে শেষ বারের মতো ঘুরে তাকাল... হঠাৎ করে চোখে জল এসে গেল। আর তো দেখা হবে না।

চোদ্দো বছর পর আপনারা একসঙ্গে। আর তার বারো বছর আবার কথা বন্ধ ছিল। কী করতেন আপনি প্রতিবছর ৩০ সেপ্টেম্বর প্রসেনজিতের জন্মদিনে?

ঋতুপর্ণা: সব সময় মনে পড়ত এটা ওর জন্মদিন। মনে মনে ভেতর থেকে উইশ করতাম, ভাল থেকো। আরও সাকসেসফুল হও। কাজগুলো খুব ভাল ভাবে উতরোক।

প্রসেনজিৎ আপনি কী করতেন ৭ নভেম্বর ঋতুর জন্মদিনে?

প্রসেনজিৎ: অনেক সময় মনে হয়েছে একটা এসএমএস করি। একটা করেই দেখি না। তারপর নিজেকে চেক করেছি। এক এক সময়ে খুব অকোয়ার্ড হয়ে যেতাম, যখন শ্যুটিংয়ের ফাঁকে সেটে অনেকে বলাবলি করত, আজ রাতে যাচ্ছি ঋতুদির পার্টিতে। আমি শুনতাম আর চুপচাপ বসে থাকতাম।

একে অন্যের নম্বর জানতেন?

প্রসেনজিৎ: জানতাম, কিন্তু পুরনো নম্বরটা চেক করিনি বহু বছর। চাইলে পাওয়া যেত। কিন্তু আমি চাইনি। শুধু ফিকি-র যখন কলকাতায় বাংলা ফিল্ম নিয়ে মিটিংটা হল, তখন নম্বর জোগাড় করে দুই ঋতুকে আমি এসএমএস করি। ঋতুপর্ণ ঘোষের সঙ্গেও তখন আমার কথা বন্ধ।

অদ্ভুত ব্যাপার! এসএমএসটা পেয়ে দুই ঋতুই আমায় পাঁচ মিনিটের মধ্যে ফোন করেছিল।

পুরনো দিন কি ফেরে? পুরনো মন কি ফেরে? পুরনো প্রেম কি ফেরে?

প্রসেনজিৎ: প্রেম ফেরে কি না জানি না। তবে অনেক বছর পর ঋতুর সঙ্গে কাজ করে, সেটে ওর জন্মদিন পালন করতে পেরে খুব ভাল লাগল। আমি ওকে শুধু সাঙ্ঘাতিক পছন্দই করতাম না, খুব স্নেহ করতাম।

কাম অন... স্নেহ আবার কীসের?

ঋতুপর্ণা: হ্যাঁ, স্নেহ-টেহ আবার কোথা থেকে এল।

প্রসেনজিৎ: স্নেহ বলতে আমি বোঝাতে চাইছি, ওকে আমি অনেক কিছু হাতে ধরে শিখিয়েছি। রেগে গেলে চকোলেট কিনে দিয়েছি।

ঋতুপর্ণা: হ্যাঁ, এগুলো ঠিক বলছে। এই তো এ বারের জন্মদিনে আমার খুব পছন্দের নাল্লি-র শাড়ি কিনে দিয়েছে।

প্রসেনজিৎ, কোথাও কি মনে হয় এই ছবির গল্প যত না আপনার আর ঋতুর। তার চেয়ে বেশি আপনার আর দেবশ্রীর দাম্পত্যের? যে সম্পর্কটা স্রেফ ইগোতে ভেঙে গিয়েছিল?

(ঋতুপর্ণা পিছিয়ে হেলান দিলেন)

প্রসেনজিৎ: (কিছুক্ষণ নীরব)

অভিনয় করতে এসে কতগুলো ডায়ালগ কি খুব নস্টালজিক লাগেনি?

প্রসেনজিৎ: ছোটবেলায় কী হয়েছে মনে নেই। যে সম্পর্কের কথা বলছেন, সেটা অনেক কম বয়সে। অনেক ইমম্যাচিওর্ড ছিলাম তখন। আমি বলতে চাই এই ফিল্মে আমার আর ঋতুর ঝগড়াগুলোও মানুষের এত জীবন্ত লেগেছে যে, তারা অবাক হয়ে গেছে। সে দিন একজন জার্নালিস্ট আমায় বলছিলেন, প্রেমের দৃশ্য আপনারা ভাল করবেন সেটা না হয় বোঝা গেল। কিন্তু ঝগড়া এত বিশ্বাস্য হয় কী করে?

এই যে মাঝখানের চোদ্দো বছরে আপনাদের দু’জনের জীবনে এত টানাপড়েন সেটা কি কোথাও অভিনয়কে পরিণতি দিয়েছে?

প্রসেনজিৎ: সে তো হবেই। টানাপড়েন আর ব্যক্তিগত জীবনের ঘাত-প্রতিঘাত তো অভিনয়কে সমৃদ্ধ করেই। কী জানেন, আজ রিয়েলাইজ করি, আমরা দু’জন এক ট্রেনে চলতে চলতে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলেও একেবারে ভেতর থেকে কি কেউ প্রাক্তন হয়? আমার তো মনে হয় না। আমরা মুখেই জাস্ট প্রাক্তন বলি।

প্রকাশ্যটা মেনে নেওয়া সম্ভব নয় বলে। ইচ্ছে তো মানুষের অনেক থাকে। সব ইচ্ছে কি পূর্ণ হয়? আজ আমি এই বয়সে এসে রিয়েলাইজ করি, ঝগড়াটা সম্পর্কের বন্ডিংকে বাড়ায়। তাকে ভেঙে দেয় না। কিছু না কিছু ভেতরে থেকেই যায়।

প্রেমের টুকরো টুকরো ফুলকি?

প্রসেনজিৎ: ফুলকি কি না জানি না। যেগুলো থাকে তাকে ডিনাই করতে হয় সমাজের কথা ভেবে, নিজস্ব সার্কেলের কথা ভেবে। ভেতরে ভেতরে ফুলটা সেই ফুটেই থাকে। জীবন এ রকমই। এই দুঃখগুলো মেনে নিয়েই জীবনে থাকতে হয়।

ঋতুপর্ণা: আমি এগ্রি করি। জীবন জীবনের মতো চলে। মন মনের গতিতেই চলে। ভেতরে ভেতরে অবশিষ্ট থেকেই যায়। যদি জেনুইন হয় তা হলে পুরোটা ভেতর থেকে বেরোয় না। এই প্রেম সমৃদ্ধ করতে পারে। নীরবতা দিতে পারে। ইন্সপায়ার করতে পারে। হতাশ করতে পারে। ইট রিমেইন্স উইথ ইউ। আপনার সঙ্গেই জিনিসটা থাকে। আমি এমনিতেই ইমোশনাল। এটা বলতে বলতে আরও ইমোশনাল হয়ে যাচ্ছি।

এই মধ্য ২০১৬-তে এসে এটা কি বাস্তব যে পুরনো ভাসিয়ে দেওয়া প্রেমে সাড়া না দিয়ে দু’টো লোক বাস্তবের রান্নাঘরে ঢুকে গেল?

ঋতুপর্ণা: খুব সম্ভব। আমাদের লাইফে যেমন একটা জিনিস আর একটা জিনিসের ওপর ওভারল্যাপ করে থাকে, তাতে সব কিছুকে মুক্ত সম্মান দেওয়া সম্ভব হয় না। এটাই লাইফের রিয়্যালিটি। জীবনে অনেক কিছু থাকে যা একান্তই নিজের। সেগুলো অব্যক্ত থাকে। তোমার মনেই থাকে। তোমার সঙ্গেই বাস করে। আবার তোমার সঙ্গেই শেষ হয়ে যায়। তোমার সঙ্গেই মিলিয়ে যায় চিতার আগুনে।

আচ্ছা, অপরাজিতা আঢ্যের রোলটা অর্পিতা করলে কি আরও রিয়েল হত?

ঋতুপর্ণা: আই ডোন্ট থিঙ্ক সো। অর্পিতা ‘উৎসব’‌য়ে খুব ভাল করেছিল। কিন্তু এই ক্যারেক্টারটার জন্য এমন কাউকে দরকার ছিল, যার আমার সঙ্গে তীব্র কনট্রাস্ট থাকে। অর্পিতা অনেক প্রপার। অপরাজিতা যে উস্কোখুস্কো, কিছুটা অমার্জিত, লাউড শেডটা এনেছে, সেটা ওকে দিয়েই হয়তো সম্ভব ছিল। আর ও দারুণ করেছে।

প্রসেনজিৎকে এই ছবিতে দশে কত দেবেন?

ঋতুপর্ণা: আমি দশে নয় দেব। খুব ভাল করেছে ও। বিশেষ করে ওই যে লাস্ট তাকানোটা।

এ বার প্রসেনজিৎ, আপনি?

প্রসেনজিৎ: আমি অর্ধেক পয়েন্ট কাটব। দশে সাড়ে আট দেব।

ঋতুপর্ণা: এটা আবার কী হল?

প্রসেনজিৎ: কাটব এ জন্য যে, ‘প্রাক্তন’ করতে করতে ও আবার অগ্নিদেবের ছবি করছিল। রাতে ওটা শ্যুটিং করত। সেটে এসে তাই ঘুমোত। সেট রেডি হওয়ার পর আমি আর শিবু ডেকে তুলতাম।

ঋতুপর্ণা: উফ্, যত সব অপপ্রচার।

প্রসেনজিৎ: এক্ষুনি কেউ শিবুকে ফোনে ধরবে?

‘প্রাক্তন’ মানুষের মনে ধরে গেছে। কী হত যদি ছবিটা চূড়ান্ত ফ্লপ হত?

প্রসেনজিৎ: ভেতর থেকে বলছি আমার সত্যি খুব ভয় ছিল। চোদ্দো বছর গ্যাপে দু’টো জেনারেশন বদলে গেছে। যারা তখন জন্মেছিল আজ তারা ক্লাস এইট-নাইনে পড়ে। ভয় ছিল তারা কি আমাদের জুটিকে এই সময়ে নেবে? না নিলে সমাজে মাথা তুলে ঘুরে বেড়াতে পারতাম না।

কেন? ভাল ছবিও তো ফ্লপ হতে পারে!

ঋতুপর্ণা: আমার মনে হয় না আমাদের কোনও চয়েস ছিল বলে। ইট ওয়াজ ডু অর ডাই। এটা না চললে আমাদের পুরনো কেমিস্ট্রিটা ভেঙে যেত। পুরনো ইমেজারিটাই আক্রান্ত হত।

প্রসেনজিৎ: আজ যে ছবিটা এত চলছে, তার একটা কারণ যদি ‘বেলাশেষে’র পর শিবুদের প্রথম ছবি হয়। মিউজিক যদি একটা কারণ হয়। একটা বড় কারণ অবশ্যই আমাদের এত বছর পর একসঙ্গে ফেরত আসা। কী কী সব মেসেজ আসছে টুইটারে, ফেসবুকে, ভাবাই যায় না। আজকে সকালে ঊষা উত্থুপ ফোন করেছিলেন। ওঁদের সিসিএফসি-র পনেরো কুড়িজনের গ্যাং সাউথ সিটিতে ছবিটা দেখতে যাচ্ছে। এরা তো যথেষ্ট অভিজাত সমাজের মানুষজন। ফোনে তারা চিৎকার করছে আর বলছে, আপনি আর ঋতু যে এত দিন বাদে একসঙ্গে হলেন, উই আর রিয়েলি এক্সাইটেড। এর ব্যাখ্যা কী করবেন?

আপনি কী ব্যাখ্যা করেছেন?

প্রসেনজিৎ: আমার ব্যাখ্যা ডিম্যান্ড অ্যান্ড সাপ্লাই। ডিম্যান্ড ছিল অথচ এত বছর সাপ্লাই ছিল না।

ঋতুপর্ণা: আই এগ্রি। এখনও দেখবেন লোকে পাগল হয়ে থাকে, অমিতাভ-রেখা আবার একসঙ্গে ছবি করবেন কি না? শাহরুখ-কাজল একসঙ্গে হলে এক্সাইটেড হয়ে পড়ে। এটা এক একটা জুটির ম্যাজিক। অনিল কপূর-শ্রীদেবী যেমন।

আপনারা একজন ইন্ডাস্ট্রিতে ৩৩ বছর কাজ করছেন। অন্যজনের ২৫ বছর হতে যাচ্ছে। মধ্যবয়সি বলা যায়। এই স্টেজে এসে পুরনো জুটির এ রকম কামব্যাক দেখাই যায় না!

ঋতুপর্ণা: এর থেকে আমাদের ওপরে মানুষের বিশ্বাস ফুটে উঠছে। কোথাও একটা নিশ্চয়ই আমাদের জুটির ওপরে ওদের আস্থা রয়েছে।

প্রসেনজিৎ: আজও আমরা টিকে আছি কারণ আমরা দু’জনেই অসম্ভব হার্ড ওয়ার্কিং। আমাদের শত্রুরাও স্বীকার করে এই দু’টো মানুষ কাজের বাইরে কিছু জানে না। আমি, ঋতু দু’জনেই। উই আর বোথ অ্যাবসোলিউটলি কমিটেড টু সিনেমা। এটা তো অস্বীকার করার উপায় নেই যে আমাদের বয়স বেড়েছে। অথচ দর্শক অবাক হয়ে যাচ্ছে দেখে যে, এত বছর পরেও আমাদের এনার্জি লেভেল বা বডি ল্যাঙ্গোয়েজ বদলায়নি। আমরা কারণটা জানি। আমরা কখনও সাধনা থেকে সরে যাইনি। আমাদের পেশায় আমরা নিজেদের নিংড়ে দিয়েছি। কোথাও শর্ট কাট খুঁজিনি।

ঋতুপর্ণা, আপনি মাঝের বছরগুলোয় বোধহয় বাংলার কোনও হিরোকে বাদ রাখেননি। ফিরদৌস থেকে ইন্দ্রজিৎ — সবাই। এই ফিরদৌসদের সঙ্গে কাজ করার সময় কখনও প্রসেনজিৎকে মিস করতেন?

ঋতুপর্ণা: সবাই ইনডিভিজুয়ালি তাদের মতো করে ভাল। প্রত্যেকে পরিশ্রম করে। কিন্তু একটা জায়গা তো মানতেই হবে যে, দিনের শেষে রেজাল্টটা আসল। সেই রেজাল্ট দেখাচ্ছে কোথাও না কোথাও ঘাটতি ছিল। কোথাও গ্যাপ ছিল।

আরে সরাসরি বলুন না, প্রসেনজিৎকে মিস করেছেন কি না?

ঋতুপর্ণা: মিস করেছি তো নিশ্চয়ই। ওই কমিটমেন্টের জায়গাটা পাইনি। ওই যে স্টারের একটা আলাদা মায়াবী আলো। তার যে একটা দূরদর্শিতা। সেগুলো মিস করেছি।

প্রসেনজিৎ, আপনি এই চোদ্দো বছরের ডিভোর্সের সময় এত হিরোইনের সঙ্গে কাজ করেছেন। ঋতুকে কখনও মিস করেছেন?

প্রসেনজিৎ: যারা এখন কাজ করছে তারা খুব সেন্সিবেল। পরিশ্রম করে। এক একজনের এক এক জায়গায় স্ট্রেংথ। কোয়েল যেমন খুব ভাল। পাওলি চমৎকার অভিনেত্রী। মাঝখানে রচনার সঙ্গে আমি অনেকগুলো ছবিতে কাজ করেছি। সেগুলো বেশির ভাগই হিট হয়েছে।

আপনি তো উত্তর দিচ্ছেন মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের মতো। আমি প্রশ্ন করেছি প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়কে।

ঋতুপর্ণা: একদম ঠিক বলেছেন। আমি কীরকম মন থেকে বললাম, আর ও কেমন উত্তর দিচ্ছে দেখছেন?

প্রসেনজিৎ: আরে, চ্যাটার্জিরা সব সময় আলাদা। সে পার্থ হোক কী প্রসেনজিৎ।

ঋতুপর্ণা: আবার শুরু করে দিল!

প্রসেনজিৎ: জোকস অ্যাপার্ট। আমি বলব, ঋতুর মধ্যে একটা কমপ্লিট প্যাকেজ আছে। যেটা আমি আর কারও মধ্যে দেখিনি। ও ‘স্বামী কেন আসামী’ করে দিতে পারে। ‘বাবা কেন চাকর’ করতে পারে। আবার ‘উৎসব’ও। পুরো থ্রি সিক্সটি দিতে পারে। পাওলি সিরিয়াস, খুব ভাল। কিন্তু পাওলিকে আমি ‘স্বামী কেন আসামী’ করতে দেখিনি। কোয়েল ভাল কিন্তু রিয়্যালিস্টিক ছবিতে কাজ করতে দেখিনি।

তা হলে মাঝখানে কাজ করেননি কেন?

প্রসেনজিৎ: আমরা তো চেয়েছিলাম ওকে ‘দোসর’‌য়ে। ও করেনি। আজ ওপরে বসে একটা লোক বোধহয় সবচেয়ে বেশি হাসছে, তার নাম ঋতুপর্ণ ঘোষ। ঋতুপর্ণ খুব চেয়েছিল আমরা একসঙ্গে কাজ করি। ‘সব চরিত্র কাল্পনিক’য়েও বিপাশার আগে ঋতুপর্ণার কাজ করার কথা ছিল। আমি ঋতুকে বারবার মিস করেছি।

(ঋতুপর্ণা এগিয়ে বসলেন)

শেষ মিস করেছি টোনি-র ছবিতে। ‘অপরাজিতা তুমি’তে চেয়েছিলাম ঋতু করুক। ওই ছবিটা আমি-ঋতু-পাওলি করলে ফিল্মটার ভাগ্য অন্যরকম হত। কিন্তু টোনির দোষ নেই। ঋতু করতে চায়নি।

সল্টলেকের একটা বাড়িতে আপনাদের বছর দুই আগে আবার একান্তে দেখা আর কথা বলা মনে পড়ে?

ঋতুপর্ণা: খুব মনে পড়ে। ওটা কী করে ভুলি? শিবুকে ডাকা হয়েছিল খানিকক্ষণ বাদে। প্রথমে আমরা নিজেরা কথা বলি।

প্রসেনজিৎ: মাঝের বছরগুলোতে আমরা এক হয়েছি শুধু আপনাদের ফোটোশ্যুটগুলোর জন্য। শনিবারের পত্রিকা, আনন্দplus আর বায়োস্কোপে বাজিমাত। এ ছাড়া কোথাও এক হইনি।

ঋতুপর্ণা: ঠিক কথা। চোদ্দো বছর বাদে তো ভুল বলছে। এবিপি-র জন্য প্রতিবছর আমরা দু’জন একটা করে শ্যুট করেছি (হাসি)।

সেই শ্যুটগুলো তো অদ্ভুত হত। আপনারা একসঙ্গে পোজ দিতেন কিন্তু কোনও কথা বলতেন না।

প্রসেনজিৎ: ঠিক তাই।

কিন্তু এটা কি অদ্ভুত না? এটা তো নির্বাক ছবির মতো হত?

প্রসেনজিৎ: আমরা কথা বলতাম ফিজিকাল টাচ-এ। আপনাদের ফোটোগ্রাফার, যারা ছবিগুলো তুলেছে তাদের জিজ্ঞেস করবেন। তারা বলে দেবে দু’টো মানুষ কথা না বলে শুধু ফিজিকাল টাচে কী করে কথা বলতে পারে।

আর একটু বলুন।

প্রসেনজিৎ: হাউ টু হোল্ড আ লেডি — সেটাও খুব ইম্পর্ট্যান্ট। আমি এমন ভাবে ধরব যে, বডিটা আমার হাতে ছেড়ে দেবে।

ঋতুপর্ণা, আপনাকে ফিল্মে যখন জিৎ ধরেছেন বা অন্য কেউ, তখন কি সেই ডেলিকেট টাচটা ছিল না?

ঋতুপর্ণা: এই রে কোথায় চলে গেল।

সঞ্জয় কি ‘প্রাক্তন’ দেখেছেন?

ঋতুপর্ণা: সঞ্জয় দেখেনি। তবে সিঙ্গাপুরে শিগগিরি নাকি দেখবে। এসএমএস-এ শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেছে, অল দ্য ভেরি বেস্ট।

চোদ্দো বছর ডিভোর্সের পর নতুন ছবি এসে দাঁড়িয়ে গেল। জুটিতে পরের ছবি কবে?

প্রসেনজিৎ: জানি না পরের ছবি কবে। এখনই কোনও ইচ্ছে নেই। ৬০-৬৫ বছর বয়সে দেখা যাবে। এই ইমেজারিগুলো বাঁচিয়ে রাখতে হলে কী জানেন, ছাড়ার ভাগটা ৯০। ধরার ভাগটা ১০। এ ভাবে এগোতে হয়। স্যাক্রিফাইস হল আসল কথা। স্যাক্রিফাইস করতে হবে, যাতে তখনও লোকের মনে ম্যাজিকটা থাকে।

ঋতুপর্ণা: আমার মনে হয় না অত দেরি করা উচিত বলে। ‘গওহরজান’ করা গেলে খুব ভাল হয়। প্রেমের ছবি হিসেবে মাইলস্টোন হতে পারে। আমি তো কথাবার্তা কিছুটা এগিয়েও ছিলাম। আবার দেখব।

প্রসেনজিৎ: আমি শিওর নই। আগে স্ক্রিপ্ট দেখব। ভাবব। তারপর।

ঋতুপর্ণা: এই যে সারাক্ষণ নেগেটিভ বলে চলেছে।

ঋতু, আপনি তো লেখালেখি করেন। ফিল্মের শেষটা যে ভাবে হল সেটা কি আদৌ বাস্তব?

ঋতুপর্ণা: ভীষণ বাস্তব। ভেরি ভেরি রিয়্যাল। আমরা একে অপরের জীবন থেকে যে ভাবে চলে গেলাম সেটাই তো রিয়্যালিটি। সেই প্রেম কোনও লক্ষ্যে হয়তো পৌঁছয় না। কিন্তু সেটাকে সঙ্গে নিয়েই গোটা জীবন কেটে যায়।

একটা কথা আছে, প্রেমের বিনাশ নেই। তা থেকেই যায় কোথাও না কোথাও। কোনও না কোনও ফর্ম-য়ে। ‘প্রাক্তন’ করে উঠে কি তাই মনে হচ্ছে?

ঋতুপর্ণা: (কিছুক্ষণ চুপ) আমার খুব ভাল একটা ফিলিংস হচ্ছে। একটা খুব হার্মোনিয়াস এক্সিসটেন্স হল। সবাই হ্যাপিলি যার যার নিজের জায়গায় চলে এল।

প্রসেনজিৎ, আপনার কী মনে হয়? এটা তো ঠিক প্রেমের উইশ ফুলফিলমেন্ট হল না। বৃহত্তর চাহিদার কাছে হেরে গেল জুটির প্যাশন।

প্রসেনজিৎ: পৃথিবীতে সব ইচ্ছের উত্তর পাওয়া যাবে না, এটাই তো নিয়ম। এটাই তো হয়। আপনি নিজের মধ্যে এটা ক্যারি করছেন অথচ সর্বসমক্ষে ডিনাই করছেন।

কিন্তু যাকে ক্যারি করছেন সেটা তো জ্বলেই চলেছে?

প্রসেনজিৎ: ওটা জ্বলবেই। জ্বলতেই থাকে ভেতরে। সে জন্যই ফিল্মে আমার সবচেয়ে সেনসিটিভ লেগেছে ওই দৃশ্যটা যেখানে ট্রেনের দরজার ধারে দাঁড়িয়ে আমরা দু’জন কথা বলছি। এত বছর পর আবার দেখা হচ্ছে আমাদের। অসম্ভব অনুভূতি ফের তৈরি হচ্ছে কিন্তু যাবতীয় উ‌থাল পাথাল যে ভেতরেই রেখে দিতে হবে।

তা বলে এই যে আপনাদের চোদ্দো বছর নষ্ট হল তার কি আদৌ কোনও দরকার ছিল?

প্রসেনজিৎ: আমার তো মনে হয় আশীর্বাদ। মানুষের মনে আমাদের ঘিরে ভালবাসাটা অক্ষত থেকে গিয়েছে।

ঋতুপর্ণা: মাঝের বছরগুলোয় তো কত বড় বড় বাংলা ছবি হিট হয়েছে। ব্যবসা দিয়েছে। কিন্তু মনে ঢুকেছে কোথায়? অঙ্ক মিলতে পারে আবেগ মেলেনি। ওটাই আমাদের রোম্যান্সের ম্যাজিক।

প্রসেনজিৎ: আমাদের এই জার্নিটাই অসাধারণ। এমন তো নয় যে, আমি ঋতুর সঙ্গে কাজ করতে চাইনি। অর্পিতারও কোনও আপত্তি ছিল না। ইনফ্যাক্ট যখন আমরা কথা বলতাম না, তখনও অর্পিতার সঙ্গে ও কথা বলত। এই জার্নিটা যে এত লোকের ভাল লাগছে সেটাই স্যাটিসফাইং।

একটা গানের লাইন বলুন, যা আপনাদের পুরো জার্নি, পাওয়া-না পাওয়া, যন্ত্রণা-দীর্ঘশ্বাস, ভাঙাভাঙি — সব কিছুকে ব্যাখ্যা করতে পারে।

প্রসেনজিৎ: একটা গানের লাইন?

যে কোনও গানের লাইন। যেমন আমরা একবার আপনাদের নিয়ে হেডিং করেছিলাম, ‘সেই তো আবার কাছে এলে’।

প্রসেনজিৎ: একটু ভাবি...

ঠিক আছে তাড়া নেই। আপনি রাত্তিরের মধ্যে হোয়াটসঅ্যাপ করে দেবেন।

প্রসেনজিৎ: এখনই বলছি... ‘এই পথ যদি না শেষ হয়, তবে কেমন হত তুমি বলো তো’।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy