কবি লিখেছিলেন ‘মুখ ঢেকে যায় বিজ্ঞাপনে’। মে শেষের কলকাতায় বদলে দাঁড়িয়েছে, ‘মুখ ঢেকে যায় প্রাক্তনে’। ট্রাম রাস্তার ডাইনে ‘প্রাক্তন’, বাঁয়ে ‘প্রাক্তন’। আকাশের দিকে তাকালেও...
এটাই তো হওয়ার ছিল। পনেরো বছর পর বাংলা সিনেমার দু’টো আইকন ফেরত আসছে। তাকে তো যোগ্য মর্যাদা দিতেই হবে। এ ছবিটা আমরা না করে অন্য কেউ করলেও চাইতাম, ঠিক এমনই হোক। যাতে বোঝানো যায়, এ ভাবেও ফিরে আসা যায়।
বিজ্ঞাপন জগতের লোক না হয়েও একটা আনুমানিক হিসেব করতে পারছি গোটা শহর বিজ্ঞাপনে ছেয়ে দিতে মিনিমাম কত টাকা খরচা হতে পারে। মিনিমাম ৭০-৮০ লাখ তো হবেই। সুদীপ্ত সেন তো জেলে। এত টাকা কোন গৌরী সেন দিল?
(হাসি) কী যে বলেন। সতেরোটা ব্র্যান্ড আছে আমাদের ছবির সঙ্গে। অ্যাপোলো হসপিটাল, সেনকো জুয়েলার্স, প্রিয়গোপাল বিষয়ী, গুডরিকস... এ ভাবে সতেরোটা ব্র্যান্ড। তারাই যাবতীয় হোর্ডিং করেছে। এরা অনেকে ‘বেলাশেষে’তে ছিল। সেখানে যথেষ্ট মাইলেজ পেয়েছে বলে এ ছবিতে আবার ফেরত এল।
বাংলা ছবিতে প্রথমত সতেরোটা ব্র্যান্ড অবিশ্বাস্য। দুই, স্পনসররা ভিড় একেবারে পছন্দ করে না। সতেরোজনের মধ্যে গুঁতোগুঁতি করে তারা এল কী ভাবে?
সবাই সমান ভাবে তাদের জায়গাটা পেয়েছিল বলেই এল। একটা বড় সিনেমায় সেটা হতেই পারে। প্যান্টালুন্স যেমন টিশার্ট এনডোর্স করছে। গুডরিকস হোয়াটসঅ্যাপে সৌমিত্রদার কবিতাটা সবাইকে পোস্ট করছে। অ্যাপোলো কলকাতা হেরিটেজ ওয়াককে স্পনসর করেছে। প্রত্যেকে আলাদা আলাদা স্লট পেয়ে যাওয়ায় সবাই খুশি।
কিন্তু এটা তো শিল্পের সঙ্গে চূড়ান্ত আপস। সৃষ্টিকে বাণিজ্যের হাতে সমর্পণ করে ফেলা।
দেখুন, সতেরোটা ব্র্যান্ড পাওয়াটাও কিন্তু ভাগ্যের ব্যাপার। বিজ্ঞাপনদাতারা মনে করছে আমাদের সিনেমাটা যোগ্য। তাই তারা যুক্ত হয়েছে। আমার তো মনে হয় বাংলা সিনেমার এটা খুব গর্বের দিন। কনটেন্টের সঙ্গে কমপ্রোমাইজ কিন্তু করিনি। গোটা ছবিতে একটাও ইনফিল্ম বিজ্ঞাপন নেই। কোথাও প্রসেনজিতের মুখ থেকে বলানো হয়নি, চলো তোমায় সেনকোর গয়না কিনে দিচ্ছি। চিত্রনাট্য যা তাই থেকেছে। এক ইঞ্চি কোথাও সরাইনি। প্রচুর চাপ ছিল এর আগেও। ‘মুক্তধারা’ করার সময়
একটা সাবানের প্রোমোশনে যুক্ত বিজ্ঞাপন এজেন্সি থেকে বলেছিল, কয়েদিদের সংশোধনাগারে যদি ওই নির্দিষ্ট সাবান ইউজ করানো হয়, তা হলে ওরা শহরে একশোটা
হোর্ডিং দেবে। আমরা রাজি হইনি, হোর্ডিংও পাইনি।
লোকে একটা সময়ে বলত, শিবু হল সৃজিতের কম্পিটিশন। ‘প্রাক্তন’য়ের প্রিমিয়ার দেখার পর মনে হচ্ছে আপনি মনে হয় শ্রীকান্ত মোহতার প্রতিদ্বন্দ্বী। কোনটা ঠিক?
আমি নির্দিষ্ট কাউকে লড়ছি না। নিজেকে বেটার করার চেষ্টা করছি। ইনফ্যাক্ট আমি কেন বলছি, বলা উচিত ছিল আমরা। আমরা একটা টিম। আমি, নন্দিতা রায় আর অতনু রায় চৌধুরী। আমাদের প্রতিবাদটা হল রিমেক ছবির বিরুদ্ধে। আমরা মনে করি, বাংলা ছবিতে পয়সা লাগালে ফেরত আসে না, এটা একটা মিথ। আমাদের লড়াই রিমেক ছবির বিরুদ্ধে। আমাদের টিম মনে করে, ঠিকঠাক ছবি বানানো গেলে পয়সা ইনভেস্ট করার জন্য লোক দাঁড়িয়ে আছে।
শিবু, এটা বিশ্বাস করতে হবে যে আপনি নির্দিষ্ট কারওকে হারাতে খেলছেন না? বা কারও বিরুদ্ধে আপনার মর্যাদার লড়াই নেই?
কাম অন...
আমরা নিজেরাই নিজেদের কম্পিটিশন বলে মনে করি। এ বার ‘প্রাক্তন’ রিলিজ করেছে একশোরও বেশি হল-এ। পরের বছর এই সংখ্যাটা বাড়াতে হবে। আমেরিকা ও কানাডার ন’টা সেন্টারে এ বার আমরা রিলিজ করিয়েছি। পরের বার চাইব, ওটা আরও বাড়ুক। লন্ডনে একই সঙ্গে রিলিজ হোক আমাদের ছবি, যেখানে অনেক বাঙালি আছে।
নিউ এজ বাংলা ছবির ডিরেক্টরদের র্যাঙ্ক করুন তো এক, দুই, তিন করে।
মানে বুঝলাম না। কী চাইছেন?
না বোঝার কী আছে! সৃজিত, কৌশিক, কমলেশ্বর, অরিন্দম — এঁদের আপনার পছন্দ অনুযায়ী এক, দুই, তিন করে র্যাঙ্ক করুন।
ধ্যাত, এ ভাবে হয় নাকি!
কেন হবে না? মনে করুন, আপনার জীবন নির্ভর করে রয়েছে একটা ছবি করে ব্যবসা দেওয়ার উপর। এ বার সেই ছবিটার জন্য যোগ্য হিসেবে কাকে বাছবেন?
(তীব্র অস্বস্তি) উঁ উঁ উঁ... অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়কে বাছব।
বলছেন কী? ছবি বাণিজ্য করে পয়সা আনার জন্য অনিন্দ্যকে বাছবেন?
হ্যাঁ।
কৌতূহল হচ্ছে, বাংলা বাজারে পরিচালক হিসেবে সবাই মুখিয়ে থাকে ভেঙ্কটেশ ফিল্মসের কাছে যাবে বলে। আপনি সেই শর্টকাটটা নেননি কেন?
নিতে চেয়েছিলাম তো। শ্রীকান্তের কাছে গিয়েওছিলাম। ‘ইচ্ছে’ ছবিটা প্রোডিউস করার জন্য ওকে রিকোয়েস্ট করি। শ্রীকান্ত স্ক্রিপ্টে কতগুলো পরিবর্তন চেয়েছিল। বলেছিল, মা আর ছেলে আলাদা হয়ে গেলে ছবি চলবে না। ছবির শেষে ওদেরকে মিলিয়ে দিতে হবে। আরও কতগুলো কথা বলেছিল। সেই অবজার্ভেশনগুলো শুনেও পরিবর্তন করতে চাইনি। ‘ইচ্ছে’ সাকসেসফুল হওয়ার পর অবশ্য আর প্রোডিউসরের অভাব ঘটেনি।
শিবপ্রসাদ মডেল তা হলে কী?
মডেল হল, নিজের কাজটা নিজে মন দিয়ে করে যাও। কে কী বলল ভ্রুক্ষেপ কোরো না। আমার বারবার এমন হয়েছে। ‘বেলাশেষে’র ইনিশিয়াল স্ক্রিনিং দেখে আমার কলাকুশলীদের মধ্যে কেউ কেউ মুখের উপর বলেছিল, এ ছবি চলবে না। ছবিটা সেকেন্ড হাফে একদম দাঁড়িয়ে গেছে।
তারা কারা?
আজ নামগুলো থাক। আমরা ইতস্তত করেও তারপর ঠিক করি যা আছে থাক। ছবি রিলিজের আগে যেমন আমাদের মনে হচ্ছিল, অপরাজিতার রোলে অর্পিতা নন কেন? তাহলে তো পুরো ‘সিলসিলা’ কাস্টিং।
আমরা অর্পিতাকে ধরে প্রথমটা এগিয়েও ছিলাম। স্ক্রিপ্টটা কমপ্লিট করার পর আমার আর নন্দিতাদির মনে হল, এটাতে অপরাজিতাকে অনেক বেশি সুট করবে। এখন রিঅ্যাকশন দেখছেন তো।
আপনার কি নিজেকে ইন্ডাস্ট্রিতে খানিকটা প্রান্তিক লাগে যে, আপনি সবসময় তথাকথিত লেস গ্ল্যামারাস, প্রান্তিক মানুষদের আপনার ছবিতে সুযোগ দেন? তাঁদের নাম কখনও হয় সোহিনী। কখনও দেবশঙ্কর। কখনও স্বাতীলেখা। কখনও খরাজ। কখনও অপরাজিতা।
আমি মনে করি না ওরা প্রান্তিক। ওদের প্রান্তিক করে রাখা হয়েছে। আমি সেই অবস্থানটা বদলাতে চাই। আমার কাছে যে কোনও ছবিতে প্রথম বিচার্য হল ভাল অভিনয়। এই যাদের নামগুলো করলেন, এরা সব এক একজন অসামান্য অভিনেতা। অথচ এদের কেউ সুযোগ দিতে চায় না। ‘অলীক সুখ’য়ে যখন দেবশঙ্করের নাম নায়ক হিসেবে রেখেছিলাম রিলায়্যান্স স্পনসরশিপ তুলে নিয়েছিল। বলেছিল, কে দেবশঙ্কর। আমরা আপনার অফিসে আসছি, ওর কাজ দেখান। আমার ভীষণ অপমানজনক লেগেছিল সেটা।
ইন্ডাস্ট্রিতে শুরু থেকে আপনাকেও কেমন একটা আন্ডারডগ করে রাখা হয়েছে। প্রাক্-‘বেলাশেষে’ আপনি কখনও ফেভারিট ছিলেন না। চ্যাল়েঞ্জারও না। সেই সব অপমানের দিনগুলো মনে পড়ে?
অবশ্যই মনে পড়ে সাঙ্ঘাতিক সব অপমান। অনেক খারাপ স্মৃতি, অনেক তাচ্ছিল্যের মুহূর্তের মধ্যে দিয়ে গিয়েছি। তবে আজ শুভ দিনে আর সেগুলো মনে করতে চাই না। মনে করতে চান না কেন? ভাল দিনে নেগেটিভ না হওয়াই ভাল। তা ছাড়া এটাই জগতের নিয়ম। শুরুতে কেউ রেড কার্পেট দেয় না।
ছবি: কৌশিক সরকার
তবু শোনা যায়, গডফাদারহীন আপনি একটু বেশি র্যাগিংয়ের মধ্যে দিয়ে গেছেন। একা একা কেঁদেছেন কখনও?
কাঁদিনি হয়তো, তবে কাঁদার মতো অবস্থায় চলে গিয়েছিলাম। সবচেয়ে ভয় হত নিজের মাকে কী করে ফেস করব। আমার মা ঠিক বোঝেন কখন আমি সমস্যার মধ্যে আছি। আর সেটা বুঝে ওঁর নিজের শরীর খারাপ করে ফেলেন। ‘ইচ্ছে’ রিলিজ করানোর জন্য যখন কোনও প্রোডিউসর পাচ্ছি না, তখন মা রোজ জিজ্ঞেস করতেন, কী রে প্রবলেম হচ্ছে? আর আমি অভিনয় করতাম, না, না এই তো রিলিজ করবে। কত প্রোডিউসর প্রথমেই আমায় নাকচ করে দিয়েছেন।
নিজের সম্পর্কে সবচেয়ে খারাপ সমালোচনা কী শুনেছেন?
শুনেছি অপয়া ডিরেক্টর। জীবনে কিছু করতে পারবে না। কেউ বলেছে, কাজটাই জানে না। শুভদিনে প্লিজ এগুলো আর মনে করাবেন না।
শুভদিন আপনি বারবার করে বলছেন। ছবি তো রিলিজ হয়েছে সবে গতকাল!
আমার ইনভেস্টমেন্ট প্রথম সপ্তাহে উঠে যাবে। এরপর যা পাব, স্যাটেলাইট যা বিক্রি হবে, সব প্রফিট।
বাজেট কত ছিল?
দু’কোটি টাকা। সবটাই প্রথম সপ্তাহেই উঠে যাবে।
আপনি যতই বলুন প্রিমিয়ারের দিন হল ফুলশয্যা। সংসার শুরু সোমবার থেকে। এখনই এত নিশ্চিত?
ছবির প্রথম টেস্ট হয় কোথায় জানেন? সেন্সর অফিসে। সেখানেও রিঅ্যাকশনে হের ফের আছে। প্রথমদিনই দেখে নিয়েছি সবার ভাল লেগেছে। আমার আর একটা টেকনিক আছে। প্রিয়ার সিঁড়িতে প্রিমিয়ারের পর দাঁড়িয়ে থাকি। সেখানে হাতে নাতে দর্শকের রিঅ্যাকশন টের পাওয়া যায়। বেরোনোর সময় লোকে হাত মেলায়। তিন রকমের হ্যান্ডশেক আছে। একটা জাস্ট আলগোছে। বলে ভাল। একটা আর একটু জোর। বলে বেশ ভাল। আর তিন নম্বরটা হল, হাত চেপে ধরে রাখে। এটা জেনুইন। কাল রাত্তিরে যেটা অনেকগুলো পেয়েছি।
যতই ভুলতে চান, কখনও কি মনে হচ্ছে না মাত্র কয়েক বছর আগে কেউ দশ লাখ টাকা ঢালতে চায়নি?
কী জানেন, আমাকে বাঁচিয়ে নিয়ে গেছেন আমার চারপাশের মানুষেরা। ওঁরা আমার উপর বিশ্বাস রেখেছিলেন। নন্দিতা রায় আমাকে প্রথম দিন থেকে বলেছিলেন, শিবু, সব সময় আমার বিশ্বাস আছে। আমরা কমপ্রোমাইজ করব না। সেটা কী ভয়ঙ্কর সময় যখন ‘ইচ্ছে’ রিলিজ হচ্ছে না। কী খাব জানি না। রিমেকের ডিভিডি হাতে তুলে দিয়ে প্রযোজক বলছে, যাও ছবি বানাও। সেই সময়ে অতনু রায় চৌধুরীকেও পাশে পেয়েছিলাম। একমাত্র প্রোডিউসর বোধ হয়, যে ছবি রিলিজের পর ছবি দেখে। একটা প্রশ্নও কখনও করে না। আর ছিল ঋতুপর্ণা। ইন্ডাস্ট্রিতে যখন আর কেউ সাপোর্ট করেনি ঋতু আমায় নিয়ে প্রোডিউসরদের কাছে যেত। সেই সময় কিছু প্রোডিউসর আমাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য ঋতুকে ছোট করত। এটা আমার নিজের খুব খারাপ লাগত যে, আমার জন্য ঋতু ছোট হবে কেন? সে দিন এক ঘরোয়া অনুষ্ঠানে একজন প্রোডিউসর নিজে থেকে এসে বললেন, আপনার মনে পড়ে ঋতু আপনাকে একটা প্রোজেক্টের জন্য নিয়ে এসেছিল? আপনি যদি নতুন কিছু করেন তো বলবেন, আমরা আছি। শুনে ভাল লেগেছিল, যাক সময় তা হলে ফিরে আসে।
এর থেকে শিক্ষা কী?
শিক্ষা হল, ইন্ডাস্ট্রির নতুনদের একটু ভাল চোখে দেখা উচিত। প্রথমেই ধুরছাই করে তাড়িয়ে দিতে নেই। আর একটা শিক্ষা, আজ তোমার পাশে অনেকে থাকতে পারে। কিন্তু বিপদের দিনে কারা তোমার রিয়েল বন্ধু সেটা জানা খুব দরকার। ভেরি ভেরি ইম্পর্ট্যান্ট। আজ আমি জানি আমার পাশে কারা আছে। আমার এডিটর মলয় লাহা। আমার বন্ধু সোহিনী সেনগুপ্ত। বরানগর থানার এক আইসি যাঁর আমার কাছে কিছুই পাওয়ার নেই। অথচ আমার প্রতিটি রিলিজে উনি নিজে থেকে পুজো দেন। আর একটা কথা নতুনদের মনে রাখা উচিত, উইল পাওয়ার অদ্ভুত জিনিস। অসম্ভবকে সম্ভব করে দিতে পারে।
কোথাও কি মনে হয় টালিগঞ্জের অভিজাত সমাজ আপনাকে ‘মাস’ ধরে নিয়ে ব্রাত্য করে রেখেছে? কোনও পার্টি-টার্টিতে আপনাকে দেখা যায় না। এবিপি আনন্দের রাজনৈতিক বিতর্কে নয়। কোথাও দেখিনি হলিউডের ছবি নিয়ে-গদার নিয়ে আপনি কাগজে কিছু বলছেন।
গদার তো ছোটবেলায় দেখেছি। ওয়ার্ল্ড ক্লাসিকস তো মাঝে মধ্যে দেখি। হঠাৎ বৃষ্টির দিনে মাজিদ মাজিদির ‘বারান’ দেখতে যেমন ইচ্ছে করে। তেমনি এই তো সে দিন আমি আমার স্ত্রী মিলে মিলোজ ফোরম্যান-এর ‘ওয়ান ফ্লিউ ওভার দ্য কুক্কুস নেস্ট’ দেখলাম। এটা নিয়ে বিজ্ঞাপনের কী আছে? টিভিতে যাওয়ার মতো সময় কোথায়? সারাদিনই তো ছবি নিয়ে পড়ে থাকি। স্ক্রিপ্টের কনটেন্ট খুঁজতেই তো কত সময় চলে যায়।
আপনি নিশ্চয়ই জানেন, ‘বেলাশেষে’র পরও কেউ কেউ বলেছে, ফিল্ম হয়নি, টিভি সিরিয়াল।
সবিনয়ে একটা কথা বলি। ফিল্ম শুধু দু’রকমের হয়। সফল অথবা ব্যর্থ। হিট অথবা ফ্লপ।
এই যে আপনি ছবির জুতো সেলাই থেকে চণ্ডীপাঠ। প্রচার থেকে ডায়ালগ থেকে পরিচালনা — এই গোটা অ্যাসেমব্লি লাইনটা নিজের হাতে করেন, তাতে কী বাড়তি সুবিধে?
নিশ্চয়ই সুবিধে। গোটা ব্যাপারটা ৩৬০ ডিগ্রি আমি জানি।
সে দিন ‘সিলসিলা’ সম্পর্কে একটা লেখায় বলা হয়েছে, সালটা যেহেতু ১৯৮১ ছিল। ডিরেক্টর পরকীয়া প্রেমের অন্তে জয় ঘোষণা করতে পারেননি। শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের দীর্ঘ ৩৫ বছর পরেও সেই সাহসে কুলোল না কেন?
গল্প অনুযায়ী যেটা স্বাভাবিক, সেটাই হওয়া উচিত। এটা তো সাহসের ব্যাপার নয়, গল্প অনুযায়ী। গল্পটা হচ্ছে বহু বছর পর প্রেমিক-প্রেমিকার হঠাৎ দেখা। বলতে চাওয়া হয়েছে একটা সময়ে তুমি একভাবে জীবনকে দেখেছিলে। আরেক জন একই পরিস্থিতিতে জীবনকে আরেক ভাবে দেখেছে। ওই যে জায়গাটায় অপরাজিতা বলছে, অ্যাডজাস্টমেন্ট মানে হেরে যাওয়া নয়। অ্যাডজাস্টমেন্ট মানে সুন্দর করে বাঁচা। তুমি কিছু দাও। জীবন তোমায় দু’গুণ ফেরত দেবে।
এটা তো সিনেমা। বাস্তবে তো কত ঘর ভাঙছে।
আমরা ঘর ভাঙতে চাই না। ঘর জুড়তে চাই। আপনি কী জানেন, ‘বেলাশেষে’ এখন ম্যারেজ কাউন্সেলিং কোর্সের সিলেবাসে রয়েছে? যাঁরা ডিভোর্স করতে আসেন, তাঁদের ‘বেলাশেষে’র সিডি দিয়ে বলা হয়, এটা একবার দেখে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিন।
প্রসেনজিৎ-ঋতুপর্ণাকে একসঙ্গে হ্যান্ডল করে কেমন লাগল?
দারুণ। কোনও সমস্যা হয়নি। কী অসাধারণ কেমিস্ট্রি ওদের। আমরা জাস্ট এক একটা সময়ে হা হয়ে দেখছিলাম।
একজন ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করছেন ৩৩ বছর। আরেকজনের ২৫ বছর হবে। বাংলা বাজারে ভেটারেনদের নিয়ে দু’কোটি টাকার ছবি তৈরিতে কি ঝুঁকি ছিল?
স্টারদের কোনও বয়স হয় না। কতগুলো জায়গায় ওরা যা করেছে! শব্দ নেই, কথা নেই... জাস্ট সেলুলয়ড ম্যাজিক। অ্যাকচুয়্যালি সিনটা ওদের দিয়ে জাস্ট ক্যামেরা অন করে দিলেই হত। প্রসেনজিৎ-ঋতুপর্ণা হল চিরন্তন প্রেমের ম্যাজিক।
ছবিটা করতে এসে ওঁদের কি আবার প্রেম হল?
চাউমিনটা খান খান। ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।
তা হলে এটাই লিখব তো যে ওঁদের আবার প্রেম হল কি না জানতে চাওয়ায় শিবপ্রসাদ বললেন, চাউমিনটা খান?
(হাসি) হুঁ।
(খাওয়া শেষ করতে করতে একটা ফোন এল। শিবপ্রসাদ বললেন, এটা নিচ্ছি। বোম্বে থেকে মুকেশ ভট্ট। এ প্রান্তে বলতে শোনা গেল, ‘‘থ্যাঙ্ক ইউ স্যর। ইয়েস স্যর।’’ ফোন ছাড়ার পর জানা গেল, রিলিজের দু’দিনের মধ্যে ‘প্রাক্তন’য়ের হিন্দি স্বত্ব বিক্রি হয়ে যাচ্ছে বলিউডে।)
আনাচে কানাচে
টেক অফ: পার্পেল মুভি টাউনে প্লেন-এর সেটে ‘দাদাগিরি’ শ্যুটিংয়ের ফাঁকে। সৌরভ গাঙ্গুলি-জয়া এহসান
ছবি: সুব্রত কুমার মণ্ডল
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy