• তো গুলাব, পার্চড-এর সাফল্য বার্তা পৌঁছচ্ছে?
প্রিমিয়ার এক বছর আগে হলেও, কমার্শিয়াল রিলিজ সবে করেছে। মুম্বইতে তো পিভিআর জুহু প্রি-হাউসফুল, মালাডেও তাই। আর কলকাতায় বড় বাজেটের সিনেমা না হলে সচরাচর সিনেমা হাউসফুল হয় না। আমার ‘চৌরঙ্গ’ও রিলিজ করেছিল। তবে পার্চড-এ আমি যা রেসপন্স পেয়েছি তা চমকে দিয়েছে! এত ফোন কল, অভিনন্দন! অনেকেই আছেন ইন্ডি-ফিল্ম, আর্ট ফিল্ম, এ সব ভেবে সিনেমা দেখতে যায় না। তবে এ ক্ষেত্রে সেটা হয়নি। প্রায় ১৮টি আওয়ার্ড পেয়েছে। আশা করি আরও অনেকে সিনেমাটি দেখবেন।
• বাবা (কৌশিক সেন) কী বললেন?
বাবা জাস্ট মুভড। পার্চড কলকাতাতেও স্ক্রিনিং হয়েছিল। মা-বাবা দু’জনেই গিয়েছিল। বাবার ভীষণ ভাল লেগেছে।
• বলেননি আস্তে আস্তে বড় হয়ে উঠছ তুমি?
না না, আমি তো বাবারই স্টুডেন্ট। একই সঙ্গে থিয়েটার করি। বকতে হলে সবার সামনেই বকে দেয়। মনে আছে পার্চড-এর শুটিং-এ বাবাকে কল করে বলি, আমি এই চরিত্রটাকে এই ভাবে ভাবছি। শোনামাত্রই বাবা বলেছিল, ‘আমার এক্ষুনি দেখতে ইচ্ছে করছে ছবিটা।’ ছবিটা দেখার পর বলল, ‘তুই কিন্তু ম্যাচিওর হয়ে উঠছিস।’
• পার্চড-কে হ্যাঁ বলার তিনটে কারণ?
প্রথমটা স্ক্রিপ্ট। ওপেন টি-র পরে প্রচুর ছবির অফার এসেছিল। আমি না করে দিয়েছিলাম সব। সত্যি বলতে, রোজগার করার কোনও তাগিদ বা প্রয়োজন নেই এই মুহূর্তে। পরিবারের চাপও নেই। বাবা-মা দু’জনেই অবাধ স্বাধীনতা দিয়েছেন, যেন নিজের পছন্দ মতো সিনেমা করি। আর আমিও এমন ছবিতেই কাজ করছি বা ভবিষ্যতে করব, যে গল্প আমায় কানেক্ট করে। অবশ্যই যত দিন না আমি সিনেমাকে ফুলটাইম কেরিয়ার হিসেবে নিচ্ছি। কারণ তার পরে আমাকেও চারটে বাজে ছবি করতে হবে।
• বাকি কারণগুলো...
সবচেয়ে যেটা ভাল লেগেছে, পার্চড শুধু নারীর গল্প নয়, মানুষের গল্প। পুরুষ ভার্সেস নারীর সিনেমাও নয়। মনুষত্ব ভার্সেস সমাজের। এই সমাজেই কিছু চিরাচরিত আদবকায়দা আছে। যা হয়তো কোনওদিন ভাঙা সম্ভব হয় না। ধরুন রানির (তনিষ্ঠা চট্টোপাধ্যায়) যে চরিত্র, সে নিজে বাল্যবিবাহের শিকার। আবার সে-ই তাঁর ছেলের বিয়ে দিচ্ছে এক নাবালিকার সঙ্গে। একটা জায়গায় তন্নিষ্ঠা ম্যামের একটা ডায়ালগ আছে, ‘মরদ বননা ছোড়, পহলে ইনসান বননা শিখ।’ আর তৃতীয় কারণ হল, গোটা পরিবেশটা ভাল লেগেছে। যে ইউনিটে আমি কাজ করছি, সেই মানুষগুলো খুব গুরুত্বপূর্ণ। লিনা ম্যাম, অসীমজি আমাদের প্রোডিউসর, পুরো টিমটা খুব পজিটিভ।
•তন্নিষ্ঠা ম্যাম কারণ নয়? চৌরঙ্গর পর আবার একসঙ্গে যে...
ওঁর ব্যাপারে যা বলব, তাই কম হয়ে যাবে। আমার কাছে এখনও অবধি সবচেয়ে কমফর্টেবল অভিনেতা তন্নিষ্ঠা ম্যাম। আর অভিনয় তো আমরা শিখেই থাকি। তবে কী করে এক জন ভাল সহ-অভিনেতা হতে হয়, তা শিখিয়েছেন ম্যাম। আমি ওঁর সঙ্গে পর পর দুটো ছবিতে কাজ করেছি। ‘চৌরঙ্গ’ এবং ‘পার্চড’। দুটো আলাদা রকমের ছবি হলেও দু’জায়গাতেই উনি মা আর আমি ছেলে। এতটা কমফর্টেবল আমি বাবার সঙ্গেও হইনি।
• পরিচালক কেমন?
লীনা ম্যাম প্রচণ্ড পারফেকশনিস্ট। প্রথম দিকে একটু ভয় লেগেছিল। কিন্তু, পরের দিকে সেটা কাটিয়ে উঠি অবশ্যই লীনা ম্যামের জন্য। প্রত্যেকটা সিন-এর আগে বোঝানো থেকে শুরু করে সিন পারফেক্ট অবধি, পর্যবেক্ষণ করা। প্রচণ্ড ধৈর্য ওঁর। মুম্বইতে ‘পার্চড’-এর স্ক্রিনিং হয়। আমি যেতে পারিনি। কাজল, অজয় দেবগণ দু’জনেই এসেছিলেন। ওঁরা বেরিয়েই নাকি লীনা ম্যামকে ফোন করে বলেন, ‘ফাড় দিয়া তুনে!’ এটা খুব ভাল লেগেছিল।
• রাসেল কারপেন্টার কী উপরি পাওনা?
উনি খুব বড় মাপের মানুষ। টাইটানিক হোক বা অস্কার, সব বাদই দিলাম। শটের আগে আমাদের জিজ্ঞেস করছেন, ‘তোমরা বল, কেমন ভাবে সিনটা চাইছ? তার পরে আমি ফ্রেম করছি!’ খাটতেও পারেন ভদ্রলোক! ইংরেজিতে মাস্টার্স। গল্পও জানেন প্রচুর। শট নেওয়ার সময় যখন হঠাৎ করে বলে উঠতেন, ‘ঠিক এ রকম একটি শট নিয়েছিলাম কেটের বেলাতেও (কেট উইন্সলেট)!’ তখন তো গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠত। (হাসি)
• ‘পিঙ্ক’ দেখেছ?
হ্যাঁ, দেখেছি।
• ‘পিঙ্ক’ থেকে ‘পার্চড’। গল্পটা কী একই?
দুটো সিনেমাই এমন যে, আপনাকে বসে ভাবতে হবে না। বিরাট মেধারও দরকার নেই। দুটোই খুব কমার্শিয়াল। কমার্শিয়াল মানে এটাও নয়, নাচ, গান অ্যাকশন, ঢিশুমঢাশুম। যে সিনেমার সঙ্গে মানুষ কানেক্ট হতে পারছে সেটাই কমার্শিয়াল। ‘পিঙ্ক’ এবং ‘পার্চড’ দুটোতেই এটা খুব ডমিনেন্ট। মাথার উপর দিয়ে বেরিয়ে যাবে সেটা নয়। কখনও মনে হবে না, ওহ্ বাবা আবার ক্লাস নিচ্ছে! আর সমাজ...(হেসে) সিনেমা মুক্তির আগেই একটা দৃশ্য ভাইরাল হয়ে গেল। এবং আবার প্রমাণ হল পুরুষেরা মানুষ হতে পারেনি। রাধিকা আপ্তের হট সিন ছড়িয়ে পড়ার পরে অসীম স্যর অসাধারণ প্রশ্ন তোলে, ‘কেন রাধিকা আপ্তের হট সিন, কেন আদিল হুসেন হট সিন নয়?’ (একটু থেমে) একটি মেয়ের ক্লিভেজ দেখা গেলে আমরা টিপ্পুনি কাটতে পারি। আর একটি ছেলে বুক দেখিয়ে জামা পরলে কখনও শুনেছেন ‘এই তোর ক্লিভেজ দেখা যাচ্ছে!’ পুরোটাই না আমাদের এই সিস্টেমে রুটেড। একটা ‘পার্চড’ বা একটা ‘পিঙ্ক’ দিয়ে বোঝানো যাবে না। যৌন নিগ্রহ বা ধর্ষণ দুটোতেই আমরা সবাই সয়ে গিয়েছি। শাস্তির ভয়ও পাচ্ছি না। অভ্যেস হয়ে গিয়েছে। আর এটা যে কী ভয়ঙ্কর। সেটা কেউ বুঝছে না। ‘পার্চড’-এ অভিনয় করে আমি বুঝেছি। নারী স্বাধীনতা নারীদের হাতেই, এ সমাজে তাঁদের স্বাধীনতাটা ছিনিয়েই নিতে হবে।
•ওপেন টি বায়োস্কোপ’-এর পর ঋদ্ধি বলেছিল, ‘বাবার ছেলেবেলার সময়টা এমন ছিল। জানতে পারলাম।’ ‘পার্চড’ এর পর কী বলবে?
‘রানি’র চরিত্রটি এগ্জিস্ট করে। আমি রেইকি করতে গিয়েছিলাম ‘পার্চড’ টিমের সঙ্গে। সে সব গ্রামে গিয়েও দেখেছি, তাঁদের জীবনে সেই গ্লোবালাইসেশন এখনও পৌঁছয়নি। তাই তারা বোধ হয় ভালই আছে। এটা নয় যে সেটা ঠিক। আমি বলছি এডুকেশনটাও সমান গুরুত্বপূর্ণ। তুমি বিশ্বায়নের ঢাক পেটাবে, আর অশিক্ষিত হয়ে থাকবে একটা বড় সংখ্যক মানুষ! সেটা কি হক কথা?
• র্যাপিড ফায়ার?
হোক
•এখন পর্যন্ত তোমার অভিনীত সেরা তিনটি সিনেমা...
চারটে বলি?
• আচ্ছা...
আমার পারফর্ম্যান্স অনুযায়ী বলছি, ‘পার্চড’ আর ‘চৌরঙ্গ’ একসঙ্গে রাখব। এর পরে ‘ওপেন টি’ এবং তার পরে ‘চিলড্রেন অব ওয়ার’।
• ওপেন টি-তে ফোয়ারা একটু প্রেমিক গোছের। আর পার্চড-এ প্রচণ্ড আগ্রাসী। আসল জীবনে ঋদ্ধি কেমন?
আমি একটু ড্রেসটাকটিভ। মা-বাবা দু’জনের কাছেই এই অভিযোগ পাবেন। রাগটাকে সংযত করার চেষ্টায় আছি। এটাই সত্যি।
• নেক্সট প্রোজেক্ট।
বলব না।
হঠাৎই কফিশপের দরজাটি ঠেলে এক কিশোরী ঢুকে এল আর ঋদ্ধির দিকে তাকিয়ে এক গাল হাসল। ঋদ্ধি বলল, ‘বোস।’
ওপেন টি বায়োস্কোপের ‘তিতির’ মানে সুরঙ্গনা বন্দোপ্যাধ্যায়।
• ঋদ্ধি প্রেম করছে?
হ্যাঁ করছি। তবে প্রেম মানে তো এটা নয়, যে আজ থেকে চল প্রেম করি, আর শুরু করে ফেললাম। টিনেজারে সবাই এটা কখন না কখনও করেছে। এটা একটা অদ্ভুত ভাল লাগা। ক্লাস টেনে প্রথম প্রেম। তার পরে ব্রেকআপও হয়। ঋতব্রতর সবে ব্রেক আপ হয়েছে। সে আবার কষ্ট পেয়ে আবার ফোন করে আমায়। আমি আবার জ্ঞান দিলাম। বললাম, ‘প্রথম প্রেম ভাঙাটা খুব জরুরি তুই পরে বুঝবি।’ (অট্টহাসি)।
• প্রেমিকা কি সুরঙ্গনা?
এর আগেও অনেক বার আমি অনেক সাক্ষাৎকারে বলেছি। এমনকী, একটা সংবাদপত্রে এই প্রশ্ন করা হয়েছিল। কতটা এগিয়েছে। কতটা পিছিয়েছে এ রকম আর কি! তবে আপনাদের আশাহত আবারও করছি। ও নয়। সুরঙ্গনা আমার বেস্টি। অনেক দিন হয়ে গেল এ বন্ধুত্বের। এর বেশি কিছুই নেই।
• খুব বেশি প্রেমিক হয়ে উঠলে বাবার কাছে কি বকুনি খেতে হবে?
এই সময় বাবার সঙ্গে বন্ধুত্বটা বেড়েছে। আগে ছিল না। আমি জানি, আমার মহিলা ফ্যানেরা রয়েছে। আমি এনজয় করি। বাবা রীতিমতো টিটিকিরি করে। ‘ও! আজকে ওর সঙ্গে বেরনো হচ্ছে! কাল যার সঙ্গে বেরিয়েছিলে, তাকে ভাল লাগেনি?’
সুরঙ্গনা আগেই বসে পড়েছে পাশের চেয়ারে। ওর দিকে তাকাতেই ঋদ্ধি বলল, ‘একসঙ্গে ব্রিটিশ কাউন্সিল যাব।’
• শেষ দুটো প্রশ্ন সুরঙ্গনাকে করা যাক?
সুরঙ্গনা: ‘পার্চড’ নিয়ে হলে অসুবিধে নেই।
• ‘পার্চড’ কেমন লাগল।
ঋদ্ধির সঙ্গে আগেও কথা হয়েছে ‘পার্চড’ নিয়ে। আমি ওর সঙ্গে এক মত। এটা মানুষের সিনেমা। এ সিনেমা প্রত্যেকের দেখা উচিত। কারণ একটাই, তাঁর পাশের মানুষটি যে নারী নয় এক জন মানুষ এটা বোঝা দরকার। শারীরিক, মানসিক ভাবে এবং সেক্সুয়ালি রোজ মলেস্ট হচ্ছে। সবাই তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করছে। ‘পার্চড’ বা ‘পিঙ্ক’ কোথাও মিলে গিয়েছে। তাঁরা সমাজের কথা বলছে। ‘পার্চড’ দেখে মানুষ নিজেদেরকে রিলেট করতে পারবে। মনে হবে আমি না হয় এ রকম নই, আমার আশপাশের মানুষদের সঙ্গে কোনও চরিত্র ঠিক মিলে যাচ্ছে।
• তোমার ‘বন্ধু’ ঋদ্ধির অভিনয় কেমন লাগল পার্চড-এ?
পার্চড-এ ঋদ্ধিকে দেখে মনে হয়েছিল একটা ঠাস করে চড় মারি। ওর নেগেটিভ চরিত্র ছিল। তবে কোথাও দেখে মনে হয়নি ও বাজে। এটাই একটা কৃতিত্ব।
নিজস্ব চিত্র।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy