কর্মী-গ্রাহক কেজো সম্পর্ক থেকে ক্রমে আলাপ গড়াল প্রণয় পর্যন্ত। কিন্তু পরিণয়ের পথে বড় বাধা।
নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১১ মে ২০২০ ১৬:১৮
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২০
তাঁর উপস্থিতি মানেই পর্দার এ পারে ত্রস্ত দর্শক। কেদারার হাতলে আঙুল নাচিয়ে মোগ্যাম্বোকে খুশি হতে দেখা বলিউডের আইকনিক দৃশ্যপটের অন্যতম। দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে ভয় পাইয়ে দেওয়ার দায়িত্ব নেওয়া অমরীশ পুরী পর্দার বাইরে ছিলেন আদ্যন্ত ঘরোয়া। ব্যক্তিগত জীবনে তাঁর প্রেমিক সত্তা হার মানাবে পর্দার অতি বড় রোমান্টিক নায়ককেও।
০২২০
পঞ্জাবে ১৯৩২ সালের ২২ জুন তাঁর জন্ম। দুই দাদা, এক দিদি এবং ছোট ভাইয়ের সঙ্গে তাঁর বেড়ে ওঠা। অভিনয়ের ধারা আগে থেকেই ছিল পরিবারে। কে এল সায়গল ছিলেন তাঁদের আত্মীয়।
০৩২০
অমরীশের দুই দাদা চমন এবং মদন পুরী বলিউডে কেরিয়ার শুরু করেন খলনায়ক হিসেবে। দুই দাদার দেখাদেখি অমরীশও পঞ্চাশের দশকের গোড়ায় পঞ্জাব থেকে এসে পৌঁছলেন মুম্বই। ইচ্ছে ছিল, তিনিও হিন্দি ছবিতে অভিনয় করবেন।
০৪২০
কিন্তু ভাগ্যে শিকে ছিঁড়ল না। প্রথম স্ক্রিন টেস্টে অনুত্তীর্ণ রয়ে গেলেন অমরীশ। বসে না থেকে চাকরির চেষ্টা করতে লাগলেন তিনি। পেয়েও গেলেন সরকারি চাকরি। শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রকের অধীনে চাকরি পেলেন এমপ্লয়িজ স্টেট ইনসিওরেন্স কর্পোরেশনে।
০৫২০
চাকরি করতে গিয়ে দেখা হল হবু জীবনসঙ্গিনীর সঙ্গে। বিমার অফিসে এসেছিলেন ঊর্মিলা দিবেকের। কর্মী-গ্রাহক কেজো সম্পর্ক থেকে ক্রমে আলাপ গড়াল প্রণয় পর্যন্ত। কিন্তু পরিণয়ের পথে বড় বাধা। অমরীশ ছিলেন পঞ্জাবি। অন্য দিকে ঊর্মিলা দক্ষিণ ভারতীয়।
০৬২০
সম্পর্কের কথা জানাজানি হতেই দুই পরিবারে আপত্তি উঠল। বিয়েতে সম্মতি নেই। কিন্তু অমরীশ বা ঊর্মিলা, দু’জনেই একরোখা। তাঁদের আটকানো গেল না। দু’জনেই পরিজনদের সম্মতি আদায় করেই ছাড়লেন। অবশেষে ১৯৫৭ সালে বিয়ে হল অমরীশ-ঊর্মিলার।
০৭২০
সংসার তো শুরু হল। কিন্তু আর্থিক সুরাহা নেই। অমরীশের সামান্য বেতনে সুরাহা অধরা-ই থাকত। হাল ধরতে চাকরি শুরু করলেন ঊর্মিলাও। এ দিকে অমরীশের অভিনয়ের ইচ্ছেও রয়ে গিয়েছে। স্ত্রীর উৎসাহ আরও বেশি উস্কে দিত অমরীশের স্বপ্নকে। সংসারের প্রয়োজনে ওভারটাইমে কঠোর পরিশ্রম করতেন ঊর্মিলা।
০৮২০
অমরীশ অভিনয় শুরু করলেন পৃথ্বী থিয়েটারে। ক্রমে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনি মঞ্চ জগতে পরিচিত হয়ে উঠলেন। স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৭৯ সালে এল সঙ্গীত নাটক অ্যাকাডেমি পুরস্কার। সত্তরের দশকেই বিজ্ঞাপনের ছবি হয়ে অবশেষে সিনেমায় অভিনয়।
০৯২০
জীবনের চল্লিশটা বসন্ত পেরিয়ে প্রথম ছবিতে অভিনয় করেছিলেন অমরীশ। সত্তরের দশকে তিনি মূল খলনায়কের সহকারীর ভূমিকায় অভিনয় করতেন। তার পর থেকে ক্রমে তিনি-ই হয়ে ওঠেন এক ও অদ্বিতীয় খলনায়ক।
১০২০
মূল খলনায়ক হিসেবে তিনি প্রথম নজর কাড়েন ১৯৮০ সালের ছবি ‘হম পাঁচ’-এ। আশি ও নব্বইয়ের দশকে অমরীশ-ই ছিলেন বলিউডের কার্যত এক ও অদ্বিতীয় খলনায়ক। অভিনয়ের পাশাপাশি তাঁর ব্যারিটোন কণ্ঠস্বর শুষে নিত দর্শকদের নজর।
১১২০
‘মিস্টার ইন্ডিয়া’-র ‘মোগ্যাম্বো’, ‘বিধাতা’-র জগভর, ‘মেরি জঙ্গ’-এর ‘ঠকরাল’, ‘ত্রিদেব’-এর ‘ভুজঙ্গ’, ‘ঘায়েল’-এর ‘ভুজঙ্গ রাই’, ‘দামিনী’-র ব্যারিস্টার চড্ডা, ‘করণ অর্জুন’-এর ‘ঠাকুর দুর্জন সিংহ’-এর মতো খলনায়ক চরিত্রগুলি আইকনিক হয়েছে তাঁর হাত ধরেই।
১২২০
খলনায়কের পাশাপাশি সমান সফল চরিত্রাভিনেতার রূপদানেও। ‘দিলওয়ালে দুলহনিয়া লে যায়েঙ্গে’, ‘ফুল অউর কাঁটে’, ‘গরদিশ’, ‘পরদেশ’, ‘বীরাসত’, ‘ঘাতক’, ‘মুঝে কুছ কহেনা হ্যায়’, ‘চায়না গেট’-এর মতো ছবিতে নায়ক-নায়িকার জুটির পাশাপাশি অমরীশ নিজেই যেন একটা সাবপ্লট।
১৩২০
কে ভুলতে পারে ‘চাচি ৪২০’ ছবিতে অমরীশের অনবদ্য অভিনয়! দেখিয়ে দিয়েছিলেন অভিনয়কে ভালবাসলে অভিনেতাকে কোনও নির্দিষ্ট পরিধিতে বেঁধে ফেলা দুষ্কর।
১৪২০
হলিউডকেও মুগ্ধ করেছিলেন তিনি। রিচার্ড অ্যাটেনবোর-র ‘গাঁধী’ এবং স্টিভেন স্পিলবার্গের ‘ইন্ডিয়ানা জোনস অ্যান্ড দ্য টেম্পল অব ডুম’ অমরীশের মুকুটে নতুন পালক যোগ করে। স্পিলবার্গ বলেন, অমরীশ তাঁর দেখা বিশ্বের প্রিয় খলনায়ক চরিত্রের অভিনেতা।
১৫২০
‘ইন্ডিয়ানা জোনস অ্যান্ড দ্য টেম্পল অব ডুম’-এর জন্য ন্যাড়া হতে হয়েছিল অমরীশকে। পরে সেটাই হয়ে দাঁড়ায় তাঁর স্টাইল স্টেটমেন্ট। পরে চুলবিহীন মাথায় নিজের লুক নিয়ে অনেক পরীক্ষানিরীক্ষা করেছেন তিনি।
১৬২০
১৯৭০ থেকে ২০০৫ অবধি, মোট ৩৫ বছরে ৪০০-র বেশি ছবিতে অভিনয় করেছেন অমরীশ পুরী। পর্দায় বহু রূপে ধরা দেওয়া এই অভিনেতা ব্যক্তিগত জীবনে ছিলেন পরিবার-অন্ত-প্রাণ। দিনে হয়তো ১৮-২০ ঘণ্টা কাজ করলেন। কিন্তু এক বার বাড়ি ফিরলে তাঁর কাছে পরিজনরাই শেষ কথা।
১৭২০
পর্দায় দুর্ধর্ষ খলনায়ক এই লোক-ই ব্যক্তিগত জীবনে ছিলেন স্ত্রীর উপর নির্ভরশীল। তাঁর ইচ্ছে ছিল, হিন্দি ছবির নায়ক হওয়ার। কিন্তু হতে হয়েছিল ঠিক বিপরীত। যাতে তিনি হতাশ না হয়ে পড়েন, পাশে থাকতেন স্ত্রী ঊর্মিলা। তাঁর উৎসাহে খলনায়কের চরিত্রেই মনপ্রাণ ছেলে দেন অমরীশ।
১৮২০
অমরীশ বলতেন, তিনি বাইরে যতই তারকা হোন না কেন, ঘরের একমাত্র তারকা তাঁর স্ত্রী ঊর্মিলা। নাতি-নাতনিরা ছিলেন অমরীশের প্রাণ। ছুটির দিনে বাড়ির খুদে সদস্যদের সঙ্গে উপভোগ করতেন টম অ্যান্ড জেরির-র মতো কার্টুন শো। ভয় পাওয়া তো দূরের কথা। অমরীশের সান্নিধ্য তাঁর নাতিনাতনিদের কাছে ছিল একান্ত প্রিয়।
১৯২০
২০০৪ সালে দুরারোগ্য ব্লাড ক্যানসারে আক্রান্ত হন অমরীশ পুরী। এক বছর পরে তিনি প্রয়াত হন ২০০৫-এর ১২ জানুয়ারি। মৃত্যুর আগে চলে গিয়েছিলেন কোমা-য়।
২০২০
তাঁর নাতি বর্ধন পুরীও অভিনেতা। থিয়েটারের পরিচিত মুখ বর্ধন ২০১৯ সালে প্রথম অভিনয় করেন ‘পাগল’ ছবিতে। ঠাকুরদার রেখে যাওয়া ব্যাটন তুলে নিতে চান তিনি।