বাঙালি বিজ্ঞানীরাই জগদীশচন্দ্রকে ফিরিয়ে এনেছেন যুগের বাস্তবতায়। ছবি: কৌশিক ভাওয়াল।
প্রথম বিজ্ঞানী, যিনি টের পেয়েছিলেন গাছের প্রাণ আছে? না কি উনিশ শতকের এক বিশ্ববরেণ্য বাঙালি? আচার্য জগদীশচন্দ্র বসুকে নিয়ে ঝাপসা ধারণা বাঙালির। তার উপর এই জগদীশের জন্ম আবার নিউ জার্সিতে। বাঙালি বিজ্ঞানীরাই তাঁকে ফিরিয়ে এনেছেন যুগের বাস্তবতায়। না, প্ল্যানচেটে নয়। নাটকে।
লিখেছেন সুদীপ্ত ভৌমিক, পরিচালনায় সৌমেন্দু ভট্টাচার্য। নাটকের নাম ‘আমি জগদীশ’। যা দেখে ইতিমধ্যেই বাংলার জেলায় জেলায় উচ্ছ্বাস। বিজ্ঞানীর জীবন নয়, সমসাময়িক বিভিন্ন সমস্যার সমাধান হিসাবে বিজ্ঞানকে সহজ-সরল করে পৌঁছে দিয়েছেন তাঁরা বহরমপুর, শান্তিপুর, গোবরডাঙায়। নাটকটি মঞ্চস্থ হয়েছে কলকাতার অ্যাকাডেমি আর রবীন্দ্র তীর্থেও। সহযোগিতায় ছিল সায়ক নাট্যগোষ্ঠী। শনিবার, বছরের শেষ দিনে শেষ শো ছিল উত্তরপাড়ায়। সন্ধ্যায় শোয়ের আগে আনন্দবাজার অনলাইনের সঙ্গে আড্ডায় মাতলেন প্রবাসী নাট্যব্যক্তিত্বরা।
সুদীপ্ত পেশায় ইঞ্জিনিয়ার, আমেরিকায় কর্মরত। তবে নিয়মিত নাটক লিখে চলেছেন সেই ২০১২ সাল থেকে। বললেন, “জগদীশ বসু সম্পর্কে অনেক দিন ধরেই আমার কৌতূহল ছিল। তাঁকে নিয়ে লেখার ইচ্ছে ছিল। উদ্ভিদবিজ্ঞান নিয়ে তাঁর ভাবনা আজকের দিনেও প্রাসঙ্গিক।”নাট্যকারের মতে, বিশ্ব উষ্ণায়ন, জলবায়ুগত নানা পরিবর্তন পৃথিবীকে যে ঘোর দুঃসময়ের মুখে ঠেলছে , তা ঠেকাতে গেলে উদ্ভিদের সঙ্গে সংযোগস্থাপন করতে হবে। ফিরতে হবে সেই প্রকৃতিতেই।
‘আমি জগদীশ’ নাটকে কি জগদীশ নিজে এসে বলবেন সে কথা? পথ দেখাবেন মানুষকে? একেবারেই না। তবে ‘জগদীশ’ চরিত্রটির উপস্থিতি নিয়ে রহস্য জিইয়ে রাখলেন নাট্যকার নিজেও। জানালেন, বোস ইনস্টিটিউটের কিছু অধ্যাপক ইতিমধ্যেই নাটক দেখে মুগ্ধ হয়ে বিজ্ঞানীর স্মৃতিবিজড়িত প্রতিষ্ঠান ঘুরিয়ে দেখিয়েছেন। ২০২২-এর অগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহে নাটকটির প্রথম শো হয় নিউ জার্সিতে। তার পর সেখানে আরও কয়েকটি শো করে সুদীপ্ত, সৌমেন্দুরা পশ্চিমবঙ্গে চলে আসেন প্রযোজনাটি নিয়ে। এই নাটকের সঙ্গে জড়িয়ে-থাকা প্রত্যেকেই নিউ জার্সির বাসিন্দা, এবং নিজের নিজের পেশায় অসম্ভব ব্যস্ত।
পেশাগত ব্যস্ততা সামলে কী ভাবে বজায় রাখেন থিয়েটারের চর্চা? নাট্যপরিচালক তথা পেশায় বৈজ্ঞানিক সৌম্যেন্দু বললেন, “সময় বার করাটাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। কাজের চাপ সামলে আমাদের সবারই লক্ষ্য থাকে কখন রিহার্সাল দেব! এই তো আজ সকালেও লগ ইন করেছি। বাইরে থাকলেও অফিসের কাজের দেখভাল করতেই হয়।” সৌম্যেন্দুর দাবি, বছর বছর ছবি টাঙিয়ে ধূপ-ধুনো দিয়ে জগদীশজয়ন্তী পালন করলেই হয় না। বিজ্ঞানীর দেখানো পথ ব্যবহার করতেও তো জানতে হয়! ‘আমি জগদীশ’-এ মূল চরিত্র ‘ডঃ নিরূপ বিশ্বাস’-এর ভুমিকায় অভিনয় করছেন সৌমেন্দু । জানালেন, জগদীশচন্দ্র সেই নিরূপের সঙ্গে কথা বলেন। আর কেউ দেখতে পায় না তাঁকে। লোকে পাগল বলে নিরূপকেই। জগদীশ কি নিরূপেরই অন্তর্গত আর একটি সত্তা? জানতে গেলে দেখতে হবে নাটকটি।
সৌমেন্দু ছাড়াও অভিনয়ে রয়েছেন— তুষারমৌলি মুখোপাধ্যায়, অন্তরা মুখোপাধ্যায়, অপর্ণা ভট্টাচার্য, অনির্বাণ বিশ্বাস, রানা রায় প্রমুখ। প্রত্যয়ী পরিচালক জানালেন, পশ্চিমবঙ্গে ৫টি শো করে মনে হয়েছে, তাঁদের উদ্দেশ্য অনেকটাই সফল। বছরশেষে তাঁদের পাওনার ঝুলি কানায় কানায় পূর্ণ। দর্শকের হাসি-কান্নায় ভরা মুখই সুখস্মৃতি করে আমেরিকায় ফিরে যাবেন তাঁরা, বাঁধবেন আবার নতুন নাটক। প্রতি বছরই নতুন নতুন নাটক নিয়ে বাংলায় আসে এই দল। তবে করোনার কারণে দু’বছর তাঁরা আসতে পারেননি। এ বছর উসুল করে যাবেন। সুদীপ্ত রচিত আরও এক নাটক ‘শিখণ্ডী’র শো রয়েছে জানুয়ারি মাসে। সুমন মুখোপাধ্যায়ের পরিচালনায় সে নাটকের মঞ্চায়নে উপস্থিত থেকে তবেই ফিরবেন সুদীপ্ত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy