Advertisement
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪
Nepotism

সুশান্তের মৃত্যু বলিউডের অন্ধকার দিকগুলোকে সামনে নিয়ে এল

সোমবারে প্রথম মুখ খুলেছিলেন কঙ্গনা রানাওয়াত, শেখর কপূর, শেখর সুমন। মঙ্গলবারে সেই রেশ রবিনা ট্যান্ডন, অনুরাগ কাশ্যপ, অভিনব কাশ্যপ, বিবেক ওবেরয়ের কথায়।

—ফাইল চিত্র।

—ফাইল চিত্র।

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ জুন ২০২০ ১৯:৩৯
Share: Save:

বিতর্ক বাড়ছে বই কমছে না। সুশান্ত সিংহ রাজপুতের অপমৃত্যু নিয়েরোজই ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেবলিউড।স্বজনপোষণ, গুন্ডাগিরি, ‘দাদাতন্ত্র’র মতো মারাত্মক সব অভিযোগকে কেন্দ্র করে সেখানকার সেলেব মহল এখন কার্যত দুই শিবিরে বিভক্ত।

সোমবারে প্রথম মুখ খুলেছিলেন কঙ্গনা রানাওয়াত, শেখর কপূর, শেখর সুমন। মঙ্গলবারে সেই রেশ রবিনা ট্যান্ডন, অনুরাগ কাশ্যপ, অভিনব কাশ্যপ, বিবেক ওবেরয়ের কথায়। আর বুধবারের সংযোজন ফারহান আখতার, প্রকাশ রাজ। এই স্বজনপোষণের জেরেইছ’মাসের মধ্যে সাতটি ছবি হাত থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল সদ্যপ্রয়াত অভিনেতার। এবং ভট্ট, জোহর, যশরাজ, খান— কোনও প্রযোজনা সংস্থাই পাত্তা দিচ্ছিল না সুশান্তকে।

ফারহান আখতারের ইনস্টার ভাষা ভীষণ তাৎপর্যপূর্ণ। কারও নাম না করেই তিনি সুশান্তের উদ্দেশে লিখেছেন, ‘ভাই, তুমি শান্তিতে ঘুমোও। এখন অনেক শকুন উড়বে। অনেক কুম্ভীরাশ্রু বিসর্জন হবে। সার্কাস পার্টিরা একে একে তাদের সমস্ত খেল দেখাবে। তোমায় নিয়ে আরও অনেক নাড়াচাড়া হবে। তুমি শান্তিতে সবার মনের গভীরে ঘুমিয়ে পড়।’ প্রতিটি শব্দচয়ন বলার অপেক্ষা রাখে না, কার বা কাদের বিরুদ্ধে আক্রমণ শাণিয়েছেন ফারহান আখতার।

আরও পড়ুন: দু'বছর আগেও রিয়ার সঙ্গে উঠে এসেছিল মহেশ ভট্টর নাম, কেন?

চুপ থাকতে পারেননি দক্ষিণী ছবির জবরদস্ত ভিলেন প্রকাশ রাজও। এই মুহূর্তে সোশ্যালে ভাইরাল সুশান্তের একটি ভিডিও ক্লিপিংস। আইফা পুরস্কার মঞ্চে তিনি বলিউডের স্বজনপোষণের কথা স্বীকার করেছিলেন। নবীন তারকার সেই স্বীকারোক্তিকে মান্যতা দিয়ে ‘দাবাং’, ‘সিংহম’ ছবির অভিনেতার দাবি, ‘‘আমি ভুক্তভোগী। দিনের পর দিন এই অন্যায় সহ্য করেছি। তাই ক্ষত চামড়া-মাংস ভেদ করে মজ্জায় ঢুকে গিয়েছে। তারপরেও টিঁকে গিয়েছি। আজও আছি। বেচারা সুশান্ত পারলেন না। তাই চলে যেতে হল। সবাইকেই এক দিন না একদিন শিখে নিতে হয় এই বিশেষ ব্যবস্থার সঙ্গে আপোষ করে চলা। তবে যেভাবে সুশান্ত মুছে গেলেন তাতে সময় এসেছে এর বিরুদ্ধে মুখ খোলার।’’

কবে থেকে বলিউডে এই ‘নেপোটিজম’ বা স্বজনপোষণ শব্দের রমরমা?

ইন্ডাস্ট্রি সূত্রে বলা হচ্ছে,২০১৮-র আশপাশে। ‘কফি উইথ কর্ণ’-র সিজন-৬ মারাত্মক তুফান তুলেছিল কফির কাপে। বলিউডের এই ‘গডফাদার’ এবং তাঁর এই শো এমনিতেই বিতর্কের আখড়া। সেই শোয়ের হট সিটে বসে সঞ্চালকের মুখের উপর অভিযোগ ছুড়ে মারার ‘ধৃষ্টতা’ দেখিয়েছিলেন বলিউডের ‘লৌহমানবী’ কঙ্গনা রানাওয়াত। ভীষণ চাঁছাছোলা ভাষায় তিনি বলেছিলেন, বলিউড নেপোটিজমের আখড়া। আর কিছু প্রযোজক-পরিচালক স্বজনপোষণের ধ্বজাধারী। তালিকায় অন্যতম কর্ণ স্বয়ং।

‘অতিথি দেবায় ভব’। তাই সেদিন হাসিমুখে পুরো অপমান গিলেছিলেন কর্ণ। উত্তর দিয়েছিলেন পরের বছরের আইফা অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানে। জোর বাড়াতে মঞ্চে ডেকে নিয়েছিলেন বরুণ ধবন, সেফ আলি খানকে। এঁরাও ফিল্মি পরিবারের সন্তান। তারপর তিনমাথা মিলে মঞ্চে তুলে ধরেছিলেন ‘নেপোটিজম রকস’! সোজা বাংলায়, ভরা হাটে জুতো মেরেছিলেন কঙ্গনাকে।

তাতে অবশ্য লাভের লাভ কিছুই হয়নি। কারণ, ততদিনে কঙ্গনার এই অভিযোগের উত্তরে অনেক লাভা উগরে দিয়েছেন বলিপাড়ার বাইরে থেকে আসা অভিনেতা-অভিনেত্রীর দল। যাঁদের বছরে একটা ছবিতে কাজ পেতে গেলেসাত জোড়া জুতোর শুকতলা ক্ষইয়ে ফেলতে হয়!

কালে কালে আরব সাগরের ঢেউয়ের তোড়েকিছুটা পিছনে পড়ে গিয়েছিল ‘স্বজনপোষণ’ শব্দটা। কিন্তু ভবি যে এত সহজে ভোলার নয় তার প্রমাণ সুশান্ত সিংহ রাজপুতের অপমৃত্যু এবং নেপোটিজমের পুনর্জন্ম! সোমবার যখনপঞ্চভূতে মিশে যাচ্ছে অভিনেতার ‘ওয়ার্ক আউট’ করে গড়া সুন্দর শরীর, তখন বলিউড ফুঁসছে স্বজন হারানোর ব্যথায়। তাঁদের টার্গেটে আবারও ‘নেপোটিজম’।

যদিও খাল কেটে কুমির এনেছেন কর্ণ নিজে। সুশান্তের মৃত্যুতে শোক জানাতে গিয়ে তাঁর কৈফিয়ত, তিনি একবছর খবর নেননি সুশান্ত কেমন আছেন। এটা তাঁর মস্ত ভুল। যার জেরে মঙ্গলবার প্রশ্ন তুলেছেন কোয়েনা, কর্ণ জোহর নামক এই ব্যক্তি বলিউড ইন্ডাস্ট্রির এমন কোন হর্তা-কর্তা-বিধাতা যে তাঁর হাতের মুঠোয় পোরা বলিউড তারকাদের ভাল থাকা না থাকা? কর্ণ খোঁজ নিলেই সুশান্ত ভাল থাকার রসদ পেতেন, এটাই কি বলতে চেয়েছেন প্রযোজক-পরিচালক?

এটাই হয়তো পরোক্ষে বলতে চেয়েছেন কর্ণ। সঙ্গে পাপস্খলনের চেষ্টাও। কেননা, তাঁর শোয়ের আর একটি সিজনে ‘প্রিয় ছাত্রী’ আলিয়া ভট্টকে দিয়ে তিনি অপমান করেছিলেন সুশান্তকে। সেরা তিন নায়ক হিসেবে সুশান্ত সিংহ রাজপুত, রণবীর সিংহ এবং বরুণ ধবনের নাম বলতেই হেসে ফেলে আলিয়া পাল্টা প্রশ্ন করেছিলেন, কেসুশান্ত সিংহ রাজপুত?

কর্ণের এই অপরাধবোধ তাঁকে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে কাঠগড়ায়।

এই প্রসঙ্গে কোয়েনার আরও দাবি, ‘স্বজনপোষণ, গুন্ডাগিরি বলিউডে নতুন নাকি? এ তো অভ্যেসে দাঁড়িয়ে গিয়েছে! ক’জন সুশান্তকে বাঁচাবেন এর হাত থেকে?’ একটুও দ্বিধা না করে তিনি জানাতে ভুললেন না, “বলিউড তাঁকেই আপন করবে যদি তিনি তারকা সন্তান হন অথবা কোনও বিশেষ ক্যাম্পে নিজের নাম লেখান। সুশান্ত তো বাইরের লোক ছিলেন বলিউডের! কারণ, উনি কোনও ক্যাম্পের নন। তারকা সন্তানও নন।’’

সেকথা মনে করে গর্জে উঠেছেন নেটাগরিকেরা। সুশান্তের অকালমৃত্যুর জন্য বলিউডের স্বজনপোষণ নীতিকেই দায়ী করেছেন কঙ্গনা। নিজের ভেরিফায়েড ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে প্রায় দু’মিনিটের একটি ভিডিয়ো পোস্ট করে কঙ্গনা বলেন, ‘‘সুশান্ত সিংহ রাজপুতের মৃত্যু আমাদের নাড়িয়ে দিয়েছে। এর মধ্যেও কেউ কেউ অন্য যুক্তি দেওয়ার চেষ্টা করছেন। বলা হচ্ছে মানসিক ভাবে দুর্বল ব্যক্তিরাই অবসাদে ভোগেন এবং আত্মহত্যা করেন। কিন্তু যে ছেলে স্ট্যানফোর্ডের স্কলারশিপ পায়, ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ট্রান্স পরীক্ষায় যে র‌্যাঙ্ক করে, সেই ছেলের মাথা দুর্বল হয় কী করে?’’

মৃত্যুর আগে পর্যন্ত বলিউডে টিকে থাকতে সুশান্ত মানুষের কাছে রীতিমতো হাতজোড় করছিলেন বলেও দাবি করেন কঙ্গনা। সুশান্তের বেশ কিছু সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টকে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘‘সোশ্যাল মিডিয়ায় সুশান্তের শেষ কিছু পোস্ট দেখুন, ছেলেটা হাতজোড় করে লোকজনকে বলছিলেন, দয়া করে আমার ছবি দেখুন। আমার কোনও গডফাদার নেই। ছবি না চললে ইন্ডাস্ট্রি থেকে বার করে দেওয়া হবে আমাকে। ইন্ডাস্ট্রি কেন আমাকে আপন করে নিচ্ছে না, বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে এমন আক্ষেপও করেছেন সুশান্ত। বলেছেন, নিজেকে উচ্ছিষ্ট বলে মনে হয়। ওঁর মৃত্যুর সঙ্গে এই ঘটনার কি কোনও যোগ নেই?’’

পরিচালক শেখর কপূরের করা একটি টুইট ওই প্রশ্নচিহ্নকে আরও জোরালো করেছে। সুশান্তের উদ্দেশে শেখর টুইটে লিখেছেন, ‘‘আমি জানি, কাদের জন্য তোমার এই হতাশা... গত ছ’মাসে যদি তোমার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারতাম... যা হয়েছে সেটা ওদের কর্মফল, তোমার নয়...’,নাম উহ্য থাকলেও, শেখরের পোস্ট ইশারা করছিল বলিউডের অন্দরের কোনও গোপন সত্যির দিকে।

এবং এই গোপন সত্যের সঙ্গে একা কর্ণের নয়, জড়িয়েছে আর এক প্রযোজক-পরিচালক আদিত্য চোপড়ার নামও। আদিত্য বুদ্ধিমান। তিনি সুশান্তকে নিয়ে টুঁ শব্দ করেননি। কিন্তু অভিনেতার অপমৃত্যু ঘিরে জড়িয়ে থাকা বলিউডের ইতিহাসের পাতা ওল্টাতে গিয়ে বেরিয়ে পড়েছে তাঁর নামও।

খবর, কেরিয়ারের শুরুর দিকে যশরাজ ফিল্মসের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ থাকায় তাঁর হাতছাড়া হয়েছিল সঞ্জয় লীলা ভন্সালীর ‘রামলীলা’। সঞ্জয় নিজেই নাকি যশরাজের কাছে অভিনেতাকে নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কিন্তু সুশান্তকে ছাড়া না হলেও, তখন যশ রাজের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ রণবীর সিংহকে ছবিটি করার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। এর পরে আদিত্য চোপড়ার পরিচালনায় ‘বেফিকরে’ ছবিটি করার কথা ছিল সুশান্তের। কিন্তু তা চলে যায় রণবীরের (সিংহ) কাছে। যশ রাজ ফিল্মসের তরফে সুশান্তকে দেওয়া হয় ‘পানি’ নামে একটি ছবি, যার পরিচালনা করার কথা ছিল শেখর কপূরের। রবিবারের পোস্টে এই ছবির কথা উল্লেখ করেছেন শেখর। কিন্তু বছর দু’য়েক পরে প্রজেক্টটি স্থগিত করে দেয় যশ রাজ। পর্যায়ক্রমিক ভাবে এই ঘটনাগুলি ঘটার পরে আদিত্যের সঙ্গে সুশান্তের মনোমালিন্য বাড়তে থাকে বলে শোনা যায়। যার জেরে সুশান্তকে বড় রকমের মাসুল দিতে হয় বলে ইন্ডাস্ট্রির একাংশের ধারণা।

গত দেড় বছর তাঁকে কোনও ফিল্মি পার্টিতে আমন্ত্রণ না জানানো সেই ধারণাকে আরও বদ্ধমূল করেছে।

অভিযোগকারীদের মধ্যে রয়েছেন অভিনেতা মনোজ বাজপেয়ীও। সরাসরি কাউকে নিশানা করেননি তিনি। তবে তাঁর বক্তব্য, বাকি কাজের জায়গার মতো বলিউডও নিরপেক্ষ নয়। সহকর্মীকে বিষনজরে দেখা এ বার বন্ধ করতে হবে।‘সোনচিড়িয়া’ ছবিতে অভিনয় করার সময় সুশান্তের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে তাঁর। একটি টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মনোজ বলেন, ‘‘আমাদের বন্ধু চলে গিয়েছে। এ বার অন্তত আত্মসমীক্ষা করে দেখুক ইন্ডাস্ট্রি। এটা শুধুমাত্র কারও চলে যাওয়া নয়। বরং একটা মানুষ যে কি না খুব ভাল কাজ করছিল, আচমকা তার নিজেকে শেষ করে দেওয়া।’’তাঁর সাফল্যে সকলের সামিল হওয়া উচিত ছিল বলেও মন্তব্য করেন মনোজ। তিনি বলেন, ‘‘সমসাময়িক সকলের থেকে বেশি প্রতিভাবান ছিল সুশান্ত। রূপে-গুণে কারও চেয়ে কম ছিল না। তা সত্ত্বেও নিজেকে এ ভাবে শেষ করে দিল। আচমকাই আমাদের ছেড়ে চলে গেল। বিষয়টি নিয়ে ভাবার সময় এসেছে।’’

নেটবিশ্বে নেপোটিজম সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেও একটি বড় অংশ অভিনেতার মানসিক অবসাদকে প্রাধান্য এবং প্রতিষ্ঠা দিতে উঠেপড়ে লেগেছেন। তাঁদের জোরালো দাবি, মনখারাপের অতল অন্ধকারেই শেষপর্যন্ত আত্মসমপর্ণ করতে বাধ্য হয়েছেন সুশান্ত। কারণ, তিনি গত কয়েকদিন ধরে ওষুধ খাওয়া একদম ছেড়ে দিয়েছিলেন।

তাঁদের যুক্তির উত্তরে পাল্টা যুক্তি, ভাল থাকার রসদ মাত্র ১০ বছরেই কীভাবে ফুরিয়ে ফেললেন সুশান্ত? কেন তাঁর হাত থেকে সাতটি ছবির কাজ চলে গেল? কেন কোনও নামী প্রযোজক তাঁকে আর পাত্তা দিচ্ছিলেন না? কেন এভাবে বলিউডের অন্দরে থেকেও বার মহলে জায়গা হল অভিনেতার? কেনই বা সোচ্চারে আফশোস করে উঠলেন কর্ণ?

এই প্রশ্নগুলির উত্তর খুঁজতে ইতিমধ্যেই অভিযোগ দায়ের হয়েছে সলমন খান, কর্ণ জোহর, সঞ্জয় লীলা ভন্সালী, একতা কপূরের বিরুদ্ধে।

সুশান্ত জানতেন, অনেক টাকা, প্রচুর নাম থাকলেই সুখী হওয়া যায় না। প্রচুর অর্থ, খ্যাতি, ঝাঁ চকচকে জীবনের আড়ালে জন্ম নেয় এক নিরাপত্তাহীন জীবন। যেখানে শুরু হয় ইঁদুর দৌড়, পেশাগত শত্রুতা, নিজের সুনাম, প্রতিষ্ঠা ধরে রাখার চাপ এবং আচমকা পিছন থেকে ছুরিবিদ্ধ হওয়ার ভয়!

সবকিছু ঠিক রাখতে গেলেসবার আগে থাকতে হবে মাথার ওপর গডফাদারের হাত। বলি-ইতিহাসের দাবি, কর্ণ জোহরের প্রযোজনায় সুশান্ত অভিনীত ‘ড্রাইভ’ নেটফ্লিক্সে মুক্তি পেয়েছিল অভিনেতাকে না জানিয়েই। যা নিয়ে অসন্তোষ জন্মেছিল তাঁর মনে। আদিত্যের সঙ্গে ঝামেলার সময়েই কর্ণের সঙ্গেও নাকি দূরত্ব তৈরি হয়েছিল সুশান্তের। অর্থাৎ, নিজের লড়াই একাই লড়ে যেতে হচ্ছিল তাঁকে।

ছবি পাওয়া, ছবির হস্তান্তর, বড় ব্যানারের চোখের মণি হওয়া... ইন্ডাস্ট্রির এই চেনা ছক সরিয়ে প্রতিভার জোরে জায়গা করেছিলেন সুশান্ত। নামী প্রযোজনা সংস্থার সঙ্গে আপস করতে চাননি বলেই তাঁর চোখে আসল গডফাদার জনতা জনার্দন। তাই ভক্তদের উদ্দেশে তিনি বলেছিলেন, ‘‘আমার ছবি না দেখলে ওরা আমাকে তাড়িয়ে দেবে। আপনারাই তো আমার গডফাদার...’।

অতি সম্প্রতি, সুশান্তের তুতো ভাই এবং বিজেপি বিধায়ক নীরজ বাবলু টিনসেল টাউনের অন্দরের এই‘ঘোটালা’র পক্ষেই নাকি মুখ খুলেছেন! তিনি জানিয়েছেন, বলিউডের অন্দরমহল থেকে ইদানীং প্রায়ই হুমকি ফোন পাচ্ছিলেন সুশান্ত। সেদিকে ছানবিন করলে হয়তো উঠে আসবে অনেক রাঘব-বোয়ালের নাম। যাঁদের কলকাঠির জোরে ক্রমশ কোণঠাসা হয়ে পড়েছিলেন অভিনেতা, ১০ বছরে চড়চড়িয়ে উন্নতি করার পরেও।

এই অভিযোগের পেছনে নীরজের যুক্তি, অনেকেই সহ্য করতে পারছিলেন না সুশান্তের এই উন্নতি। তাই তাঁকে টেনে নামাতে তাঁর মনে একের পর এক চাপ দেওয়া হচ্ছিল। যার জেরে এই আত্মহনন। তিনি রীতিমতো হুমকি দিয়ে বলেছেন, সময়মতো সবার কীর্তি ফাঁস করবেন। আপাতত তিনি সুবিচার চেয়ে আবেদন করেছেন মহারাষ্ট্র প্রশাসনের কাছে। কিছুদিনের মধ্যেই দুধ আর জল আলাদা হয়ে যাবে।

সুশান্তের এক ভগ্নিপতি হরিয়ানা প্রশাসনের কর্তাব্যক্তি। তাঁরও সন্দেহ, সুশান্তের এই মৃত্যু নিয়ে। ইতিমধ্যে রাজ্যের গৃহমন্ত্রী অনিল দেশমুখ টুইটে আত্মহত্যার পাশাপাশি পেশাগত শত্রুতার দিকটিও খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছেন।

যদিও সদ্য যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়েছে, সেই সলমন, কর্ণ, একতা, সঞ্জয়ের ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছেন আর এক প্রযোজক-পরিচালক রামগোপাল বর্মা। টুইটে তাঁর ব্যঙ্গ, সুশান্ত সিংহ রাজপুতের জন্য স্বজনপোষণকে কাঠগড়ায় তুলছেন সবাই। সবাই বলছেন, তিনি কোনও দিন বলিউডের ‘আপন’না হয়ে ‘আউটসাইডার’ছিলেন। সেই অবসাদেই তাঁর এই পরিণতি। তাঁদের তাহলে মনে রাখা উচিত, পরিযায়ী শ্রমিকদের বড় অংশ করোনার কারণে কাজ হারিয়ে বাড়ির পথে। এঁরাও ভিন রাজ্য থেকে এসেছেন। যেখানে কাজ করতেন সেখানকার তথাকথিত ‘আপনজন’ নন। তাহলে তো এঁদের রোজ মরা উচিত!

তাঁর আরও অভিযোগ, যাঁদের কাজ নেই তাঁরাই এসব রসালো মন্তব্য করেনামীদামি পরিচালকদের বিরুদ্ধে খেপিয়ে তুলছেন সবাইকে। যাঁরা রোজ মাথার ঘাম পায়ে ফেলে বহুজনের মুখে অন্ন তুলে দেন।

আরও পড়ুন: সুশান্তকে নিয়ে স্বজনপোষণের অভিযোগে মামলা সলমন, সঞ্জয়, একতা, কর্ণের বিরুদ্ধে

বলিউডে কি তা হলেস্বজনপোষণের অস্তিত্ব নেই? এই উত্তুঙ্গ ক্ষোভ আদতে ভিত্তিহীন? নিজের জীবন দিয়ে সুশান্ত গ্ল্যামার দুনিয়ার যে অন্ধকারের দিকে আঙুল তুললেন, সে অন্ধকারে আলো ফেলবেন কে? সে প্রশ্নের উত্তর এখনওঅন্ধকারে!

অন্য বিষয়গুলি:

Nepotism Sushant Singh Rajput Sushant Singh Rajput Suicide Bollywood
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy