২৮তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের জন্য বন্ধ টলিপাড়ার শুটিং। প্রতীকী ছবি।
বৃহস্পতিবার বন্ধ রাখা হোক সমস্ত শুটিং। কারণ, বৃহস্পতিবার বিকেলে নেতাজি ইন্ডোরে উদ্বোধন হবে কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের। সকলকে সেখানে যেতে হবে। বুধবার এই মর্মে একটি বিবৃতি (মতান্তরে, নির্দেশ) পৌঁছেছে টলিপাড়ায়। প্রেরক ‘ফেডারেশন’। আর্থাৎ, ‘ফেডারেশন অব সিনে টেকনিশিয়ানস অ্যান্ড ওয়ার্কাস অব ইস্টার্ন ইন্ডিয়া’। সংগঠনের তরফে জারি-করা ওই বিবৃতিতে বলা হয়েছে যাতে বৃহস্পতিবার ‘সিনেমা ও ভিডিয়ো শিল্পের’ যাবতীয় শুটিং বন্ধ রাখা হয়।
বিগত দু’বছরের অতিমারীর কোপ কাটিয়ে এ বার ‘স্বমহিমা’য় ফিরছে কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব (কিফ)। বৃহস্পতিবার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আসছেন অমিতাভ বচ্চন, জয়া বচ্চন, শাহরুখ খানেরা। থাকবেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। যাঁর স্ত্রী ডোনা গঙ্গোপাধ্যায় তাঁর নাচের ট্রুপ নিয়ে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে নৃত্য পরিবেশন করবেন। নেতাজি ইন্ডোরে অনুষ্ঠান শুরু বিকেল ৪টেয়। সাড়ে ৩টের মধ্যে আমন্ত্রিতদের আসন গ্রহণ করতে অনুরোধ করা হয়েছে। ফেডারেশনের এই বিবৃতি বলছে, সেই আমন্ত্রিতদের মধ্যে টলিপাড়ার বড় অংশকেও রাখতে চাওয়া হচ্ছে। তার জেরেই শুটিং বন্ধের বিবৃতি। যা নিয়ে টলিপাড়ার একাংশ সরগরম।
১৩ ডিসেম্বর তারিখ দেওয়া ওই ‘জরুরি বিজ্ঞপ্তি’-তে লেখা আছে, ‘এতদ্বারা ফেডারেশনের অন্তর্গত সমস্ত গিল্ড, ইউনিয়ন ও অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও সম্পাদকদের উদ্দেশ্যে জানানো হচ্ছে যে, আগামী ১৫ ডিসেম্বর ২০২২, বৃহস্পতিবার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে পশ্চিমবঙ্গ সরকার আয়োজিত ২৮তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের শুভ সূচনা হবে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠআনের জন্য আগামী ১৫ ডিসেম্বর ২০২২ সিনেমা ও ভিডিয়ো শিল্পের সমস্ত শুটিং এবং এই সংক্রান্ত কোনও কাজকর্ম না করার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে সমস্ত কলাকুশলীকে অবশ্যই আপনারা অবহিত করবেন’। বিজ্ঞপ্তিটি দেওয়া হয়েছে ফেডারেশনের সভাপতি স্বরূপ বিশ্বাস এবং সাধারণ সম্পাদক অপর্ণা ঘটকের তরফে।
টলিপাড়ার একাংশের দাবি, বুধবার ইন্ডাস্ট্রির কলাকুশলীদের কাছে ফেডারেশনের তরফে হঠাৎ ওই বিবৃতি বা বিজ্ঞপ্তি পৌঁছয়। ফলে অনেকেই পূর্ব নির্ধারিত শুটিং শিডিউল বাতিল করতে বাধ্য হন। ফেডারেশনের তরফে ‘আচমকা’ এ হেন সিদ্ধান্ত প্রসঙ্গে অভিনেত্রী সুদীপ্তা চক্রবর্তী ফেসবুকে একটি দীর্ঘ পোস্ট করেছেন। তিনি লিখেছেন, ‘‘আমারও আজ (বৃহস্পতিবার) সিনেমার শুটিং ছিল। গত কাল ক্যানসেল হয়ে গেল। শুনলাম মেসেজ এসেছে, শুটিং রাখা যাবে না।’’ সেই প্রসঙ্গেই ওই পোস্টে সুদীপ্তার শ্লেষ, ‘সিনেমার স্বার্থে সিনেমাকর্মীদের এই স্বার্থত্যাগ সিনেমার ইতিহাস নিশ্চয়ই মনে রাখবে।’ বস্তুত, জাতীয় পুরস্কারবিজয়ী অভিনেত্রী সুদীপ্তা ভবিষ্যতে এমন পরিস্থিতি এড়ানোর জন্য নাম না করে উৎসব কর্তাদের কাছে ‘প্রস্তাব’ও দিয়েছেন। বলেছেন, বছরের শুরুতেই এই ‘ছুটি’ ঘোষণা করে দিলে শেষ মুহূর্তে শুটিং বাতিল করার প্রয়োজন হবে না। সুদীপ্তার কথায়, ‘‘প্রযোজক বা পরিচালকদের টাকাপয়সা লস করতে হয় না, চোখের সামনে সব প্ল্যানিং ঘেঁটে ঘ হতে দেখতে হয় না। সিরিয়ালগুলোর নন-টেলিকাস্ট হয়ে যাওয়ার ভয় থাকে না।’’ সঙ্গে যোগ করেছsন, ‘‘শুধু আর্টিস্ট দেখা এবং উদ্বোধনী ছবি দেখায় থেমে না থেকে আমরা যাতে একটু ভাল সিনেমা দেখারও সুযোগ পাই, তার জন্য ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের ১০ দিন সমস্ত শুটিং বন্ধ রাখা হোক। আমরা ফিল্ম, টিভি, ওয়েব সিরিজ ইন্ডাস্ট্রির সমস্ত অভিনেতা ও কলাকুশলী ১০ দিন ধরে চুটিয়ে সিনেমা দেখি। তার পরে উত্তেজনায় টগবগ করতে করতে আবার যাই সবে নিজ নিজ শুটিংয়ে।’’
এই প্রসঙ্গে অভিনেতা তথা শাসক তৃণমূলের বিধায়ক কাঞ্চন মল্লিকের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল আনন্দবাজার অনলাইন। তিনি অবশ্য বলেন, ‘‘আমি এখনও বিষয়টা জানি না। আর শুটিং বন্ধ হলেও এর মধ্যে তো কোনও ক্ষতি নেই! কারণ, উৎসবটা সিনেমার।’’ বস্তুত, কাঞ্চনের পাল্টা প্রশ্ন, ‘‘দেশবিদেশের অতিথিদের সামনে বাংলাকে তুলে ধরা হচ্ছে। সেই অনুষ্ঠানে সিনেমার সঙ্গে যুক্ত প্রত্যেকে যাতে যোগ দিতে পারেন, সেই ব্যবস্থা হলে ক্ষতি কী?
কিন্তু এর পাশাপাশিই পরিচালক অনীক দত্ত বলেছেন, ‘‘নতুন করে কিছু বলার নেই। বছরের পর বছর ধরেই এটা চলছে। অতীতে আমিও এ রকম অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছি। উৎসবের জন্য ফেডারেশনের তরফে দু’দিন আগে ফোন করে আমার ছবির শুটিংও বন্ধ রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। এর ফলে কার লাভ হবে, কে ভোট দেবে আমি জানি না। এটুকু জানি ইন্ডাস্ট্রির কোনও লাভ হবে না।’’ অনীক অবশ্য বার বারই তৃণমূলের আমলে প্রতিষ্ঠান-বিরোধী মন্তব্য করে আসছেন। তিনি নিজেকে ‘বামপন্থী’ বলেও প্রকাশ্যেই পরিচয় দিয়ে থাকেন। তবে শুটিং বন্ধ রাখা নিয়ে অভিনেতা ঋত্বিক চক্রবর্তীরও প্রতিক্রিয়া, ‘‘আমি কোনও দিনই শুটিং বন্ধের সমর্থক নই। আসলে এটা তো পেশাদার জায়গা। তাই শুটিং বন্ধ না রাখলেই মনে হয় ভাল হত।’’ তবে ঋত্বিক জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার তাঁর কোনও শুটিং ছিল না।
সপ্তাহের মাঝখানে ‘হঠাৎ’ বিজ্ঞপ্তি জারি করে শুটিং বন্ধের নির্দেশ কেন? জানতে চাওয়ায় ফেডারেশনের সভাপতি স্বরূপ বলেন, ‘‘সারা দিনের জন্য শুটিং তো বন্ধ করা হয়নি! উদ্বোধনী অনুষ্ঠান যাতে সুষ্ঠু ভাবে হয়, তাই প্রতি বারই তো কিছু ক্ষণের জন্য শুটিং বন্ধ রাখতে অনুরোধ করা হয়। বৃহস্পতিবার সন্ধে সাড়ে ৭টা-৮টা থেকেই আবার শুটিং শুরু হয়ে যাওয়ার কথা।’’
তবে ঘটনাচক্রে, লিখিত বিবৃতিতে ওই কথা বলা হয়নি যে, সন্ধ্যা থেকে আবার শুটিং করা যাবে। তা ছাড়া, টলিপাড়ার একাংশের বক্তব্য, দিনভর শুটিং তো আগে থেকেই ঠিক করে রাখা থাকে। স্টু়ডিয়োও ভাড়া নেওয়া থাকে। দিনভর শুটিং না হলে সেই অর্থেরও অপচয় হয়।
অভিনেতা তথা অধুনা বিজেপির শিবিরভুক্ত রুদ্রনীল ঘোষ প্রত্যাশিত ভাবেই বিষয়টিকে ‘তালিবানি মনোভাব’ হিসাবে দেখতে চাইছেন! তাঁর কথায়, ‘‘রাজ্যের আর্থিক অবস্থা সকলেরই জানা। উৎসব দু’এক মাস পিছিয়ে গেলে মানুষের জীবনের কোনও ক্ষতি হবে না। সেখানে এক দিন শুটিং বন্ধ করে ইন্ডাস্ট্রির হাজার হাজার টেকনিশিয়ানদের উপার্জন এবং শুটিং শিডিউলকে বিপদের মুখে ঠেলে দেওয়া হল।’’
কিন্তু পরিচালক তথা শাসক শিবিরের ‘ঘনিষ্ঠ’ বলে পরিচিত অরিন্দম শীল আবার বলছেন, ‘‘এটা তো শুধু আজকে হয়নি। দীর্ঘ দিনের অভ্যাস। বুঝতে হবে, এই উৎসবটা সিনেমার। তাই এই শিল্পের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা মানুষদের প্রত্যেকেরই উৎসবে যোগ দেওয়ার ইচ্ছে থাকে। বিশেষত, ছোট পর্দার অভিনেতারা তো তাঁদের মারাত্মক ব্যস্ত শুটিং শিডিউলের জন্য ইচ্ছে থাকলেও অনেক সময়ে যোগ দিতে পারেন না। তাই সকলের কথা ভেবে একটা দিন উদ্যাপনের সুযোগ করে দেওয়া হলে আমার মনে হয় না তাতে কোনও সমস্যা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy