Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪

অক্ষয়লিফ্ট

খানদের ঘুম ছুটিয়ে দিয়েছেন তিনি। সমালোচক থেকে বক্সঅফিস — দু’টোই এখন অক্ষয়কুমার-এর পক্ষে। এমন তাক লাগিয়ে দেওয়া উত্তরণের ফর্মুলা কী? অনুসন্ধান করলেন ভারতী দুবেচার বছর পর পর দেখবেন কথা ওঠে, অক্ষয়ের দিন শেষ! কিন্তু শত্রুর মুখে ছাই ফেলে প্রতিবার সবাইকে চমকে দিয়ে ফেরত আসে।

শেষ আপডেট: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০০:০৮
Share: Save:

সিক্স প্যাক আউট।

ভাইজান আউট।

ইন বলতে ‘খিলাড়ি’।

সরি, ভুল বললাম। অক্ষয়কুমারকে তো এখন আর শুধু ‘খিলাড়ি’‌তে আটকে রাখা যাবে না।

ছবি রিলিজের প্রথম সপ্তাহেই একশো কোটির বক্স অফিস। আর শুধু বক্স অফিসে বাজিমাতই তো নয়। ‘এয়ারলিফ্ট’র প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়নি, এমন সমালোচক খুঁজে পাওয়া শক্ত।

অনেকের মতে তাই, ‘এয়ারলিফ্ট’‌ করে খানদের রাতের ঘুম ছোটানোর ব্যবস্থা পাকা করে ফেলেছেন আক্কি।

বলিউডের একাংশ তো ইতিমধ্যে ‘এয়ারলিফ্ট’কে মজা করে বলছে ‘অক্ষয়-লিফ্ট’। হিসেব এতটাই পাল্টে দিয়েছেন অক্ষয়কুমার। আজকে তিনি হয়ে উঠেছেন খানদের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী।

খানদের টেক্কা দেওয়ার প্রধান ব্যক্তি হিসেবে অক্ষয়ের নাম আগেও উঠছে। তবে এ বার তাতে পাকাপাকি সিলমোহর পড়ে গেল।

আর বিশেষজ্ঞদের মতে, নিজের সাফল্যের রাস্তা অক্ষয় কিন্তু নিজেই বানিয়েছেন। বলাই বাহুল্য, স্রোতের বিপরীতে গিয়ে। বলিউডের অন্য তারকারা যখন ঈদ কী দেওয়ালিতে নিজেদের ছবি রিলিজ করানো নিয়ে চুলোচুলি করতে দ্বিধা করেন না, সেখানে অক্ষয়ের রিলিজ ডেট নিয়ে কোনও মাথাব্যথাই নেই।

মাসখানেক আগে মুম্বইয়ে আনন্দplus-কে অক্ষয় নিজেই বলেছিলেন, ‘‘রিলিজের দিন নিয়ে আমার কোনও খুঁতখুঁতানি নেই। মানছি ঈদ-দিওয়ালির সময় রিলিজ করলে বক্স অফিসে ভাল কাটার সুযোগ বেশি থাকে। কিন্তু সে ভেবে আর কী হবে! ওই দিনগুলো তো দু’-তিন বছর আগে থেকে বুক করা থাকে।’’

এয়ারলিফ্ট’‌য়ের ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। যদিও একটা ছুটির উইকএন্ড পেয়েছে তাঁর ছবি। প্রজাতন্ত্র দিবসের ছুটির উইকএন্ড। তবে সে কথা বলে অক্ষয়ের কৃতিত্বকে খাটো করা যাবে না। কারণ, শুধু তো বক্সঅফিস সাফল্যই নয়। কুয়েত-ইরাক যুদ্ধের সময় আটকে পড়া ভারতীয়দের উদ্ধারের ঘটনা থেকে অনুপ্রাণিত ছবিটির ভূয়সী প্রশংসা করেননি, এমন সমালোচক খুঁজে পাওয়া শক্ত।

ফিল্ম বাণিজ্য-বিশেষজ্ঞ তরণ আদর্শ যেমন বলছিলেন, ‘‘অভিনেতা হিসেবে অক্ষয় নিজেকে অনেকটা উঁচুতে তুলে ধরেছেন। আগে লোকে মনে করত, অক্ষয় মানেই মারপিট করা বা টিপিকাল বলিউড নাচাগানা করা এক নায়ক। কিন্তু শেষ কয়েক বছরে অভিনেতা হিসেবেও ওঁর উত্তরণ ঘটেছে বেশ। সব থেকে বড় কথা মশালা মুভি আর সেনসেটিভ সিনেমার মধ্যে বেশ ব্যালান্স করেই চলছেন। তাই স্বাভাবিক ভাবেই তাঁর ফ্যানদের বাইরেও এক বৃহত্তর দর্শককে খুশি করতে পারছেন। সঙ্গে বক্স অফিস তো আছেই।’’

একই সঙ্গে পুরনো ফ্যানবেস আর সমালোচকই নয়, অক্ষয়কুমার নিজের জন্য একটা নতুন দরজাও খুলে নিয়েছেন। এত দিন পর্যন্ত অক্ষয়কুমার মানেই ছিল ‘মিস্টার খিলাড়ি’। যেমন, মাস কয়েক আগেই রিলিজ করেছিল ‘সিংহ ইজ ব্লিং’। পুরোপুরি বলিউড মশালায় মাখানো। কিন্তু তখনও কেউ ভাবতেই পারেনি আক্কি-র পকেটে টেক্কা এখনও বাকি আছে। আর সেটা ‘এয়ারলিফ্ট’। সম্পূর্ণ ভিন্ন স্বাদের। বলিউড মশালা ছাড়াই দুর্দান্ত বিরিয়ানি।

অনেক ফিল্ম সমালোচকেরই মনে হয়েছে এখনও পর্যন্ত এটাই অক্ষয়ের সেরা অভিনয়। বৌয়ের কথা অগ্রাহ্য করে বেলি ডান্সারদের সঙ্গে নাচায় যেমন বেরিয়ে এসেছে পুরনো অক্ষয়, তেমনই উদ্বাস্তুশিবিরে লোকেদের গালাগালির সামনে তাঁর সংযত অভিনয়। লোকে বলছে অক্ষয় ভার্সন ২.০।

টুইঙ্কল

ফলে পুরনো ফ্যানবেস আর ফিল্ম সমালোচক — দু’নৌকায় পা রেখে চলতে কোনও অসুবিধা হয়নি আক্কির। যদিও এটাকে রাতারাতি ঘটনা হিসেবে দেখছেন না অর্ম্যাক্স মিডিয়ার শৈলেশ কুমার। বলছিলেন, ‘‘অক্ষয়ের ফ্যানবেস বিশাল। সংখ্যার দিক থেকে সলমন খানের ঠিক পর। শাহরুখ বা আমিরের ফ্যানবেস থেকে তো নিঃসন্দেহে অনেক বেশি। তবে ওঁর ফ্যানদের অধিকাংশই ছিল ছোট শহর আর সিঙ্গল স্ক্রিনের দর্শক। কিন্তু ২০১৩ থেকে সেই ছবিটা বদলেছে। ‘স্পেশাল ২৬’, ‘বেবি’ আর এখন ‘এয়ারলিফ্ট’ করে মাল্টিপ্লেক্সের দর্শককেও নিজের ফ্যানবেসে নিয়ে আসতে পারছেন নায়ক। স্বাভাবিক ভাবে স্টাররা নিজের ঘরানার বাইরে বেরিয়ে ছবি করতে চান না। অক্ষয় এ ব্যাপারে একদম আলাদা। ‘রাউডি রাঠোর’ করছেন, আবার ‘এয়ারলিফ্ট’ও।’’

অক্ষয় এ রকমই। প্রায় ২৫ বছর হয়ে গেল ইন্ডাস্ট্রিতে। ছবির সংখ্যা ১১৮। পরিচিতরা অক্ষয়ের এ দিকটা ভালই জানেন। অনেক দিনের বন্ধু প্রযোজক সাজিদ নাদিয়াদওয়ালা যেমন বলছিলেন, ‘‘প্রত্যেক চার বছর পর পর দেখবেন কথা ওঠে, অক্ষয়ের দিন শেষ! কিন্তু শত্রুর মুখে ছাই দিয়ে প্রতিবার সবাইকে চমকে দিয়ে ফিরে আসে। নিঃসন্দেহে অক্ষয় সবথেকে ‘আন্ডাররেটেড’ অভিনেতা। আর যে প্রোডিউসররাই অক্ষয়ের সঙ্গে কাজ করেছে, তারাই ওর ইউনিকনেসের কথা বলবে। আমার তো ডজনখানেকর সিনেমা হয়ে গেল ওর সঙ্গে। অন্য নায়কদের সঙ্গে প্রযোজকদের ঝামেলা শুরু হয়ে যায় প্রথম দিন থেকে। কিন্তু অক্ষয়ের সঙ্গে কারও কখনও ঝামেলা হয় না। ও প্রোডিউসরের দিকটা সব সময় দেখে।’’

নিখিল আডবাণীর বক্তব্যও প্রায় এক। ‘‘অক্ষয় ওর সমালোচক আর ‘ডাই হার্ড’ ফ্যান— সবাইকেই চমকে দেয়। যখনই ভাববেন অক্ষয় ওর সেরাটা দিয়েছে, পরের ছবিতে দেখবেন তার থেকেও ভাল কিছু করে ফেলল। ডেডিকেটেড, টিম প্লেয়ার আর সব সময় চ্যালেঞ্জের খোঁজ— এটাই অক্ষয়ের ইউনিকনেস। এটা ওর সঙ্গে ২০০৭য়ে প্রথম কাজ করা থেকেই বুঝতে পেরেছিলাম। ২০১৬য় ‘এয়ারলিফ্ট’‌য়ের পর আর একটা বিষয় যোগ করতে চাই। অক্ষয় অনেস্ট পারফর্মার,’’ বলছিলেন নিখিল।

অক্ষয়ের সঙ্গে তুলনা করার মতো স্টার সত্যিই বলিউডে পাওয়া শক্ত। তরণ আদর্শও সে কথাই বলছিলেন, ‘‘আমার মনে হয় না খানদের সঙ্গে অক্ষয়ের তুলনা চলতে পারে। কারণ অক্ষয় ওঁর নিজের পথ নিজে বানিয়েছে।
ওঁর সিনেমাগুলো দেখলেই বোঝা যায়, ওঁর স্ট্র্যাটেজি খানদের মতো না। খানরা স্বাভাবিক ভাবে বছরে একটা সিনেমা করে। কিন্তু অক্ষয়ের বছরে চারটে রিলিজ থাকবেই। এ ছাড়া কমার্শিয়াল আর সেন্সিবল সিনেমার যে ব্যালান্স অক্ষয় করছেন, সেটাই ওঁকে অন্যদের থেকে আলাদা করে দেয়।’’

কথা হচ্ছিল টুইঙ্কলের সঙ্গে। অক্ষয় সম্বন্ধে ওঁর থেকে ভাল আর কে বলতে পারে! ‘‘জীবনে যত ঝড়ই বয়ে যাক না কেন, অক্ষয় ভীষণ শান্ত থাকতে পারে। এটা অন্যদের মধ্যে দেখা যায় না,’’ বলছিলেন অক্ষয়ের ‘বেটার হাফ’।

সত্যিই। তিরিশ কোটির ‘এয়ারলিফ্ট’ যে ভাবে বক্সঅফিসে ঝড় তুলে দিয়েছে, প্রথম সপ্তাহেই ছাড়িয়ে গিয়েছে একশো কোটি— তাতে ‘খান’‌দের রাতের ঘুম ছুটে যেতেই পারে। বলছিলাম না প্রথমে।

শাহরুখ-সলমনরা শুনছেন কি!

অন্য বিষয়গুলি:

Khan AkshayKumar film airlift
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE