যৌবনের নস্টালজিয়াকে ফানুশ করে উড়িয়ে দেবেন দেবেশ
ফ্যাঁৎ ফ্যাঁৎ সাঁই সাঁই… ফ্যাঁৎ ফ্যাঁৎ সাঁই সাঁই। ডানার শব্দ প্রকট হচ্ছে। এ দিকে সে দিকে ধুপধাপ ইট, পাটকেল, জুতো। বিষ্ঠা। টাকার পাহাড়ে চড়া নিশ্চিন্তির জীবনে এ বার কি অস্বস্তির দোলাচল? অস্বাভাবিক নয়। বইয়ের পৃষ্ঠা, মঞ্চ ছেড়ে ফ্যাতাড়ুদের পর্দায় উড়িয়ে আনছেন দেবেশ চট্টোপাধ্যায়। ছবির চিত্রনাট্য তৈরি। এখন শুধু ফ্লোরে ওঠার অপেক্ষা। হঠাৎ এখন ফ্যাতাড়ু? দেবেশের জবাব, “এখন-তখন নেই। ফ্যাতাড়ুরা সব সময়েই নিজেদের মতো করে জ্যান্ত। তারাই উড়তে চাইছে!”
স্রষ্টা নবারুণ ভট্টাচার্য যে প্রান্তিকের স্বর, সমষ্টির প্রতিবাদকে ফ্যাতাড়ু মারফত বিস্ফোরণের মতো ছড়িয়ে দিয়েছিলেন, তার সবটা কি বাস্তবেও হয়? দেবেশ বলেন, ‘‘দিব্যি ফ্যাতাড়ুদের দেখা মেলে। তাদের প্রতিক্রিয়া কেউ গ্রাহ্য করবে বা করবে না সেটা অন্য বিষয়। কিন্তু তারা প্রতিক্রিয়া দেখাতেই থাকে। এই যেমন মঙ্গলবার দেখাল।’’ জোকা ইএসআই হাসপাতালে রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের উদ্দেশ্যে জুতো ছুড়েছিলেন শুভ্রা ঘড়ুই নামে এক বধূ। সেই ঘটনার ইঙ্গিতই করলেন দেবেশ। তাঁর কথায়, ‘‘অতএব, কে বলে তারা নেই? তারা অনেকখানি সময় জুড়ে আছে, থাকবে। ফ্যাতাড়ুরা এমন এক মুখ যারা নবারুণদার প্রজন্ম ছাড়িয়ে আমাদের প্রজন্ম, তার পরেও দৌড়ে চলেছে। মশালটা হাতবদল হচ্ছে কেবল, রিলে রেসের মতো”।
ফ্যাতাড়ু ছবিতে সময়ের পরিসর, রাজনৈতিক পট কী থাকছে? দেবেশের কথায়, “একটা ইউনিভার্সাল টাইম ফ্রেম এতে থাকবে। আমরা রাজনীতি বলতে যে দলীয় রাজনীতি বুঝি ফ্যাতাড়ুরা তার ঊর্ধ্বে। এটা ফ্যাতাড়ুর রাজনীতি। অন্ত্যজ মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি, নবারুণদার ফ্যাতাড়ুর যে দর্শন, তা-ই থাকবে”। মদন, ডিএস, পুরন্দর ভাট— এই সব চরিত্রে কারা অভিনয় করবেন? দেবেশের জবাব, ‘‘এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। তবে, শান্তিলাল মুখোপাধ্যায়, সৌরভ পালধি, অমিত সাহাকেই ভাবছি। আবার দেবরঞ্জন নাগ, যিনি ফ্যাতাড়ু নাটকে প্রথম ডিএস হয়েছিলেন তাঁকেও ভাবছেন। কে কোনটা করবেন সেটা পরে দেখা যাবে।’’ পরিচালক কেবল নিশ্চিত ভাবে জানালেন, ‘‘যাঁরা অভিনয় করবেন সকলেই থিয়েটারের মানুষ। আমাদের নাট্যদলের সঙ্গে তাঁরা দীর্ঘ দিন ধরে যুক্ত। রয়েছেন নতুন কলাকুশলীরাও। নির্মাণ শুরু হলে জুড়ে যাবেন আরও কেউ কেউ।’’
কিন্তু ছবি হলে, এত দিনের জনপ্রিয় নাটকটা আবার হারিয়ে যাবে না তো? দেবেশ বললেন, “একেবারেই না। দুটো আলাদা মাধ্যম। সব কিছু আলাদা থাকবে। ফ্যাতাড়ুকে ডকুমেন্টেড করে রাখতে চাইছি বলেই ছবি করব। এই ভাবনা অনেক দিনের”।
ছবি বিক্রি নিয়ে একেবারেই চিন্তিত নন দেবেশ। জানালেন, ‘ইয়ে’ যেমন নাটক থেকে ছবি হওয়ার পর মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন, ফ্যাতাড়ুকেও সঙ্গে নিয়ে ঘুরবেন। প্রযোজক ধরে ছবি করে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তির বাজেট তাঁর নেই। স্বাধীন ভাবে ছবিটি তৈরি করছেন। যাঁরা অভিনয় করবেন তাঁরাও পারিশ্রমিক নেবেন না। সিনেম্যাটগ্রাফাররাও কাজ করবেন ভালবেসে। একেবারেই নিজেদের উদ্যোগ। উন্মুক্ত প্রকল্প। যাতে সবার আমন্ত্রণ। আর সঙ্গীতের দায়িত্বে ‘চন্দ্রবিন্দু’। এক কথায়, যৌবনের নস্টালজিয়াকে ফানুশ করে উড়িয়ে দেবেন দেবেশ।
এই কাজে সবাইকে চাইছেন তিনি। আর্থিক সাহায্য নয়, ভালবাসার বিনিয়োগ। দেবেশ বললেন, “কেউ যদি ভালবেসে এক দিন ক্যামেরাটা করে দিতে চান, অথবা এডিটের সময় এক দিনের স্টুডিয়োর খরচ দিতে চান তবে আমাদের ভাল লাগবে। আরও যে কোনও ভাবে পাশে থাকতে পারেন, যাঁর যা ইচ্ছে।’’
প্রি-প্রোডাকশনের কাজ সেপ্টেম্বরে। শ্যুটিং ২০২৩-এর ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু। ছবি মুক্তিও সে বছরই।
(এই লেখাটি প্রথম প্রকাশের সময় শান্তিলালের পদবি ‘গঙ্গোপাধ্যায়’ লেখা হয়েছিল। ওঁর পদবি ‘মুখোপাধ্যায়’। অনিচ্ছাকৃত এই ত্রুটির জন্য আমরা আন্তরিক দুঃখিত ও ক্ষমাপ্রার্থী।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy