Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Maya Ghosh

পুরুষদের সঙ্গে টক্কর দিতেন মায়া, তাঁর প্রয়াণে স্মৃতিমেদুর রুদ্রপ্রসাদ

মঞ্চাভিনেতার ভাগ্য ফুলঝুরির আগুনের মতো। লেখক, চিত্রকর বা ভাস্করের মতো ভাবীকাল তাকে স্বীকৃতি দেয় না। মায়া ঘোষের মৃত্যুতে অনেকেই নাম জানলেন তাঁর।

কেমন ছিলেন যুবতী মায়া? তাঁর স্মৃতি কি ধরা থাকবে থিয়েটারের ইতিহাসে? জানালেন রুদ্রপ্রসাদ। স্মৃতি ভাগ করলেন সুরজিৎও।

কেমন ছিলেন যুবতী মায়া? তাঁর স্মৃতি কি ধরা থাকবে থিয়েটারের ইতিহাসে? জানালেন রুদ্রপ্রসাদ। স্মৃতি ভাগ করলেন সুরজিৎও। গ্রাফিক্স- সনৎ সিংহ

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ ডিসেম্বর ২০২২ ১৪:৪০
Share: Save:

বয়স হয়েছিল। একাই থাকতেন ষাটের দশকের সেই ডাকাবুকো মেয়েটি। তবে মায়ায় জড়িয়েছিলেন থিয়েটারের বন্ধুরা। শনিবার সন্ধ্যা ৭টা ৪৫ মিনিটে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন অভিনেত্রী মায়া ঘোষ। মৃত্যুর খবর না পেলে এ প্রজন্মের মানুষ হয়তো তাঁর অস্তিত্বই টের পেতেন না।

কেমন ছিলেন যুবতী মায়া? তাঁর স্মৃতি কি ধরা থাকবে থিয়েটারের ইতিহাসে? আনন্দবাজার অনলাইন জানতে চেয়েছিল অগ্রজ নাট্যব্যক্তিত্ব রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্তের কাছে। যে নান্দীকারকে এতটা পথ নিয়ে এসেছেন ‘লিটল বুদ্ধ’(১৯৯৩)র অভিনেতা, নাট্যজীবনের শুরুতে সেই নান্দীকারেই যোগ দিয়েছিলেন মায়া। দলস্রষ্টা অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের অন্যতম সহকারী সদস্য ছিলেন তিনি। রুদ্রপ্রসাদ কাছ থেকে দেখেছিলেন মায়ার জাদু। বললেন, “মায়ার মধ্যে একটি গুণ খুব উল্লেখযোগ্য বলে মনে হয়। কাজের ক্ষেত্রে প্রচলিত লিঙ্গবৈষম্যের ধারণা ভেঙে দিয়েছিল ও সে সময়। সহজেই পুরুষদের সঙ্গে টক্কর দিতে পারত। তাতে যে ওর পুরুষভাব প্রকাশ পেত এমন নয়, নারীত্ব বজায় রেখেই কেমন সুন্দর সমান তালে চলতে পারত। তা ছাড়া ও ছিল টিম পার্সন। দলের জন্য যে কোনও কাজ হাসিমুখে করত। মাল বওয়া থেকে শুরু করে জিনিস গোছানো, সব কিছুই ও সহজ ভাবে করত। মায়া দীর্ঘজীবী হোক। ভাল থাকুক।”

কিন্তু কী ভাবে দীর্ঘজীবী হবেন? থিয়েটার স্টাডিজের পাতাতেও মায়ার নাম খুঁজে পাওয়া যায় কি না সন্দেহ। জিজ্ঞাসা করতে রুদ্রপ্রসাদ মৃদু হেসে বললেন, “শম্ভু মিত্রের সেই কথা মনে পড়ে যায়। ভাবীকালের কাছে অভিনেতার কোনও অধিকার নেই। সে আজ আছে, কাল নেই। এখনই সে জ্বলে আকাশ প্রজ্জ্বলিত করে কোনও কাণ্ড করে বসবে, তার পর আবার হারিয়ে যাবে। কেউ কেউ তা-ও পারে না। এই হল মঞ্চাভিনেতার ভাগ্য। তার দশা। লেখকের মতো বা চিত্রকরের মতো বা ভাস্করের মতো ভাবীকাল তাকে স্বীকৃতি দেয় না।”

গত বছর করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর থেকে মায়া কাবু হয়ে পড়েছিলেন। শনিবার পর পর দু’বার হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে সন্ধ্যা ৭টা ৪৫ মিনিটে প্রয়াত হন।

গত বছর করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর থেকে মায়া কাবু হয়ে পড়েছিলেন। শনিবার পর পর দু’বার হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে সন্ধ্যা ৭টা ৪৫ মিনিটে প্রয়াত হন। ফাইল চিত্র

রবিবার বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ মায়ার মরদেহ নিয়ে আসা হয় অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টস চত্বরে। সেখানে জড়ো হয়েছিলেন বহু নাট্যব্যক্তিত্ব। মায়াকে শেষ সময়ে শ্রদ্ধা জানাতে। নিথর মায়ার সামনে দাঁড়িয়েই নাট্যকার, অভিনেতা তথা পরিচালক সুরজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের আক্ষেপ, “আজ আমি ছুটে চলে এসেছি, কিন্তু যখন বেঁচেছিলেন কোনও দিন ছুটে যাইনি তো! সে ভাবে খোঁজও নেওয়া হয়নি, যে মায়াদি কেমন আছেন...। টুকরো টুকরো অনেক স্মৃতি ভাসছে। তাঁর উদার হৃদয়ের কথা মনে পড়ে। ‘নির্ভয়া’ বলে স্বপ্নসন্ধানীর এক প্রযোজনা, দেখতে গিয়েছি। সেখানে এসেছিলেন স্বাতীলেখা সেনগুপ্ত আর মায়াদি। কৌশিক সেনের পরিচালনায় রেশমি সেন এত সুন্দর অভিনয় করত, তা আমরাও মুগ্ধ হয়ে দেখতাম। কিন্তু মায়াদি ভিতরে ঢুকে রেশমিকে জড়িয়ে বললেন, ‘চমৎকার! এই অভিনয় আমিও পারতাম না।’ নিঃসঙ্কোচে বলে দিলেন কথাটা!” সুরজিৎ স্মৃতিতে আচ্ছন্ন হয়ে মায়ার কথা বলে চলেন। জানান, শেষ জীবনে নাট্যকর্মী তথা পরিচালক অদ্রিজা দাশগুপ্তের কাছে ছিলেন মায়া। তিনিই যত্ন নিয়েছেন।

তবে চিকিৎসার খরচ বহন করা তাঁর একার পক্ষে সম্ভব ছিল না। এগিয়ে আসেন আরও অনেকেই। নান্দীপট-এর পরিচালক প্রকাশ ভট্টাচার্য তাঁদের এক জন। প্রকাশ জানালেন, গত বছর করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর থেকে মায়া কাবু হয়ে পড়েছিলেন। অ্যাকাডেমি চত্বরে মায়ার শেষযাত্রার আগে কথা বললেন আনন্দবাজার অনলাইনের সঙ্গে। প্রকাশের কথায়, “পুজোর আগে থেকে মায়াদি ভর্তি ছিলেন শ্রীরামপুরের ‘কেয়ার অ্যান্ড কনসাল্ট’ হাসপাতালে, যা আমাদের এক থিয়েটার বন্ধুরই তৈরি। বয়সজনিত কারণে ভুগছিলেন। কথা বলতে পারতেন না বিশেষ। কাউকে তেমন চিনতেও পারতেন না। মাঝে একটু ভাল বোধ করছিলেন। তবে শনিবার পর পর দু’বার হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হন তিনি। সন্ধে ৭টা ৪৫ মিনিটে প্রয়াত হন।”

রবিবার দুপুরে কেওড়াতলা শ্মশানে শেষকৃত্য হয় মায়ার।

অন্য বিষয়গুলি:

Maya Ghosh Rudraprasad Sengupta
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy