সুস্মিতা চট্টোপাধ্যায়।
ইতিমধ্যেই প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের প্রশংসা পেয়ে গিয়েছেন। দেবের সঙ্গে শ্যুট সারা। বাংলার বড় প্রযোজনা সংস্থার হাত ধরে বড় পর্দায় আত্মপ্রকাশ। তিনি সুস্মিতা চট্টোপাধ্যায় । অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়ের ‘প্রেম টেম’–এর রাজি। প্রথম প্রেম থেকে মন ভাঙা। প্রিয় খাবার থেকে ভাল লাগার ওয়েব সিরিজ নিয়ে অকপট আনন্দবাজার ডিজিটালের কাছে।
ফোন রিং হতেই কিছুটা ব্যস্ত গলায়, “আমি এই জাস্ট বাড়ি ঢুকছি। একটু ফ্রেশ হয়ে ১০ মিনিটে কল করি?” ঘড়ির কাঁটা ধরেই মিনিট দশেক পরে শুরু হল আড্ডা।
আপনার ইনস্টাগ্রামের বায়োতে লেখা ইঞ্জিনিয়ার…
হ্যাঁ। আসলে আমি তো এখানকার নই। আসানসোলের কুলটিতে বড় হই। উচ্চ মাধ্যমিক দিয়ে কলকাতার একটি বেসরকারি কলেজে ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়ার সুযোগ পেয়ে এখানে চলে আসি।
আপনার চুল নিয়ে কিন্তু বেশ চর্চা চলছে। এটা কি ছবির জন্যই?
আমার চুল আসলে স্ট্রেট। কিন্তু অনিন্দ্য স্যর বলেছিলেন ছবির জন্য কোঁকড়া চুল চাই। তাই আমি ১ বছরের জন্য চুলটা পার্মানেন্ট কার্ল করে নিয়েছিলাম। কারণ ভোর ৪টে থেকে শ্যুট হলে, রাত ৩টে থেকে চুল সেট করতে বসাটা খুব মুশকিল হয়ে যেত।
নতুন ছবির জন্য আপনার ইমেজ তো অন্যরকম হয়ে গেছে…
মানে?
ছবিতে আপনি পোশাক থেকে সম্পর্ক সব নিয়েই খোলামেলা
হ্যাঁ। ছবিতে নায়কের সঙ্গে অনেক ঘনিষ্ঠ দৃশ্য আছে। সেটা আমাকে ‘অনিন্দ্য স্যর’ আগেই বলেছিলেন এবং সেটা ছবির জন্য প্রয়োজন ছিল। অনিন্দ্য স্যর দৃশ্যগুলো এত সুন্দর ভাবে শ্যুট করেছেন, একটুও অসুবিধে হয়নি।
অথচ খোলামেলা ছবি পোস্ট করতে অসুবিধে?
যেমন?
এখন রাইমা থেকে ঋতাভরী, খোলামেলা পোশাকে ছবি পোস্ট করেন। আপনাকে সে ভাবে দেখা যায় না কেন?
দেখুন আমি মনে করি এটা সম্পূর্ণ সকলের ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দের উপর নির্ভর করে। আমি খোলামেলা পোশাকে ছবি পোস্ট করতে খুব একটা স্বচ্ছন্দ বোধ করি না। এটা করলে হয় তো খুব কম সময়ে আমার অনেক ফলোয়ার হবে। কিন্তু এ ভাবে জনপ্রিয়তা পেতে চাই না আমি। আমার এতে আপত্তি আছে।আর ছবি করার আগে ইনস্টাগ্রামেও আমি সে ভাবে ছিলাম না।
তা হলে ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ এল কী করে?
ছোটবেলা থেকেই ইচ্ছে ছিল অভিনেত্রী হওয়ার। কিন্তু সব মধ্যবিত্ত পরিবারের মতোই আমার মা বাবাও শর্ত রেখেছিলেন। বলেছিলেন গ্র্যাজুয়েশন করার পর নিজের ইচ্ছে মতো কেরিয়ার বেছে নিতে পারি। ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে ক্যাম্পাসিং থেকে চাকরিও পেয়েছিলাম। কিন্তু সেটা ছেড়ে মডেলিং শুরু করি। একটি সর্বভারতীয় ব্র্যান্ডের হয়ে মডেলিং করেছিলাম। সেটি দেখার পরেই এক দিক থেকে শ্রী ভেঙ্কটেশ ফিল্মস এবং অন্য দিক থেকে অনিন্দ্য স্যর (চট্টোপাধ্যায়) অডিশনের জন্য ডেকে পাঠান। সেখান থেকে আমাকে বেছে নেওয়া হয়।
অনেক নবাগতরাই ‘কাস্টিং কাউচ’এর অভিযোগ আনেন। আপনার সে রকম কোনও অভিজ্ঞতা হয়েছে?
হয়নি বলাটা ভুল হবে। এ রকম অভিজ্ঞতা আমারও হয়েছে। অনেকেই ভেবেছে মফস্সল থেকে উঠে আসা মেয়ে। কাজের পরিবর্তে সুযোগ নেওয়া যায়। ইন্ডাস্ট্রির অনেক বড় নামও আছে তাঁদের মধ্যে। একটু এক সাথে সময় কাটানো, কফি খাওয়ার কথাও শুনেছি। কিন্তু নিজেকে সামলে নিয়েছি।
এ সব দেখে সাহস হারায়নি?
না। সাময়িক খারাপ লেগেছে। কষ্ট হয়েছে। ভেবেছি ভাল মানুষের এত অভাব! কিন্তু খারাপ মানুষ যেমন দেখেছি, সে রকম প্রচুর ভাল মানুষও দেখেছি। তাঁরা আমাকে ঠিক পথ দেখিয়েছেন। কাজের ক্ষেত্রেও সাহায্য করেছেন। আর ভাল-খারাপ তো সব জায়গাতেই থাকে। দুটোকে নিয়েই চলতে হয়।
প্রথম ছবিই বড় প্রযোজনা সংস্থা সঙ্গে এমন পরিচালক। কেমন লাগছে?
নিজেকে খুব লাকি মনে হচ্ছে। এ রকম সুযোগ তো সবাই পায় না। এটা আমার কাছে কিছুটা স্বপ্নপূরণের মতো। খুব কম মানুষ নতুনদের সুযোগ দেয়। চেষ্টা করেছি নিজের সবটা দিয়ে কাজ করে অনিন্দ্য স্যর এবং বাকি সকলের মুখ রাখার।
দর্শকদের থেকে কেমন সাড়া পাবেন? চিন্তা হচ্ছে…
একটু টেনশন তো আছেই। তবে আশা করি দর্শকদের এই ছবি ভাল লাগবে। এতদিন সিনেমা হলে মাত্র ৫০ শতাংশ দর্শক নিয়েও কিছু ছবি বেশ ভাল চলেছে। এ বার থেকে তো ১০০ শতাংশ দর্শক আসন নিয়ে চলবে হলগুলো। সুতরাং আরও অনেক বেশি মানুষ ছবি দেখতে আসবেন।
ইন্ডাস্ট্রিতে কারও উপদেশ মেনে চলেন?
না। আমি পেশাগত এবং ব্যক্তিগত জীবন একদম আলাদা রাখি। তাই নিজে যা ভাল বুঝি করি। ফল খারাপ হলেও আমিই ভোগ করব। তবে মা-বাবার থেকে উপদেশ নিই। ওঁরা তো এই জগতের এত কিছু বোঝেন না। যদিও ঠিক বুদ্ধিটা দিতে পারেন। আর কাজের ক্ষেত্রে অনিন্দ্য স্যর এবং ছবির সঙ্গে জড়িত বাকিরা খুব সাহায্য করেছেন। ওঁদের দেখেই বুঝেছি, ইন্ডাস্ট্রিতে এখনও কিছু ভাল মানুষ আছেন।
এখন তো সংবাদমাধ্যমের সঙ্গেও অনেক কথা বলতে হচ্ছে, কেউ কি শিখিয়ে দিচ্ছে সেটা?
একদম না। অনেকেই বলেছেন ডিপ্লোম্যাটিক হতে। আমার সহকর্মীরাও। কিন্তু আমি ওটা একদম পারব না। একদিন সোজা অনিন্দ্য স্যরের কাছে গিয়ে জানতে চেয়েছিলেম আমার কী করা উচিত। উনি বলেছিলেন, মানুষ অরিজিনালিটি পছন্দ করে। তাই আমি যেমন, আমার ঠিক তেমনই থাকা উচিত। ওই কথাটা শোনার পর থেকে আমি একদম নিজের মতো করে চলি, কথা বলি।
রাজি চরিত্রটা কেমন?
ও খুব ফ্রি স্পিরিটেড। নিজের মনের মতো কাজ করে, যেটা মনে আছে সেটাই মুখে বলে। রাজি স্বাধীনচেতা। আর ভীষণ ডগ লাভার।
আর সুস্মিতা?
(হেসে উঠে) রাজির মতোই। কাউকে পরোয়া না করেই নিজের মনের কথা বলি, ইচ্ছে মতো কাজ করি। আর আমিও খুব কুকুর ভালবাসি। ইচ্ছে আছে দু’টো কুকুর পোষার। কলকাতায় আমি একা থাকি। একটু সব কিছু গুছিয়ে নিই। ওদের দেখাশোনার জন্য কাউকে ঠিক করি। তারপর নিয়ে আসব। আমি না থাকলে তো, ওদের সঙ্গে কাউকে রাখতে হবে।
কুকুরের প্রতি ভালবাসার জন্যই কাঁধের ট্যাটুটা আসল?
হ্যাঁ। কিন্তু ওটা জানুয়ারি পর্যন্ত স্টিকার ছিল। কিন্তু আমি কুকুর ভালবাসি বলে আসল ট্যাটু করিয়ে নিই। এ ছাড়াও প্রথম ছবির একটা স্থায়ী স্মৃতি রাখতে চাই।
অনেকে বলেন এই প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা ভালবাসতে জানেনা, সবটাই লোক দেখানো?
আমি এই প্রজন্মের হলেও, আমার মানসিকতা একটু আগেকার মতো মানে ওল্ড স্কুল। আমি মনে করি ভালবাসলে নিজের সবটা দিয়ে একজনকেই বাসতে হয়। সেখানে সততা প্রয়োজন। কিন্তু আমাদের প্রজন্মের কাছে এই বিষয়গুলো হয় তো সত্যিই খুব একটা গুরুত্ব পায় না। কারণ আমাদের কাছে অপশন অনেক বেশি। আমাদের মা-বাবাদের সময় এ রকম ছিল না। তাই ওঁরা সম্পর্কের দাম দিতে জানে।
সুস্মিতার জীবনে ‘প্রেম টেম’ নেই?
না। আমি সিঙ্গল।
কখনওই ছিল না?
কলেজে পড়াকালীন এক সিনিয়রের সঙ্গে অনেকদিনের সম্পর্ক ছিল। কিন্তু সে বিশ্বাস ভাঙে। সেই সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসার পর আর সে ভাবে ইচ্ছে বা সাহস, কোনওটাই হয়নি। এখন নিজেকে সময় দিচ্ছি। ভালবাসা যে কখন কী ভাবে হয় সেটা তো কেউ বলতে পারে না। একটা সময় হয় তো মনকে আটকাতে পারব না। সে দিন বসন্ত আসবে।
ইন্ডাস্ট্রিতে কোনও ভাল লাগা বা ক্রাশ?
না। হলে আমি সোজাসুজি বলে দিতাম, শোনো তোমাকে আমার ভাল লাগে। এখনও সে রকম বলার মতো কাউকে দেখিনি। তবে একজনের সঙ্গে কাজ করার আমার খুব ইচ্ছে। তিনি আবীরদা (চট্টোপাধ্যায়)। কখনও ওঁর সঙ্গে দেখা হয়নি। তবে ওঁকে আমার খুব ভাল লাগে। ওঁকে খুব ভাল মানুষ হয় আমার।
প্রিয় অভিনেতা?
অমিতাভ বচ্চনের প্রচুর ছবি দেখেছি। টলিউডে অতি অবশ্যই বুম্বাদা (প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়)। ছোটবেলা থেকে ওঁর ছবি দেখেছি। কিছুদিন আগেই ওঁর সঙ্গে একটা বিজ্ঞাপনের শ্যুট করলাম। বুম্বাদার সঙ্গে শ্যুটিংয়ের দিনই আমার ছবির ট্রেলর মুক্তি পেল। বুম্বাদা নিজে এসে আমাকে বলেছিলেন, আমাকে খুব ভাল লাগছে। ছবিটাও খুব ভাল হবে। ছোট বেলা থেকে যে মানুষটাকে দেখে এসেছি, তাঁর থেকে এই কথাটা বিশাল বড় পাওয়া।
আর পরিচালক?
সকলের কাজই খুব ভাল লাগে। কিন্তু কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে কাজ করার খুব ইচ্ছে। শুনেছি উনি নতুনদের নিয়ে কাজ করেন না। হয় তো সময় লাগবে আমার। এ ছাড়াও মৈনাক ভৌমিকের ‘মারাদোনার জুতো’-তে অভিনয় করছি। টোনিদার (অনিরুদ্ধ রায় চৌধুরী) পরিচালনায় দেবের সঙ্গেও একটা বিজ্ঞাপন করলাম।
এই তো গেল কাজের কথা। নতুন করে আর প্রেমে পড়েননি?
এত কথা বলে এ বার চুপ সুস্মিতা। শুধু ভেসে এল হালকা হাসি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy