শ্রীমা ভট্টাচার্য। ছবি: সংগৃহীত।
মানুষ চেনা কতটা কঠিন? মুখের সামনে হয়তো সেই ব্যক্তি খুব বন্ধুত্বপূর্ণ, কিন্তু পিছন ফিরতেই তিনি রং বদলে ফেলেন মুহূর্তে। শুধু প্রয়োজনে তাঁর মনে পড়ে, প্রয়োজন ফুরোলেই, জীবন থেকে দ্রুত মুছে ফেলেন সেই ‘বন্ধু’কে! চার দিকে এমন সম্পর্কের মুখোমুখি অনেকেই হন। ছোট পর্দার অভিনেত্রী শ্রীমা ভট্টাচার্য কথা বললেন এ বিষয়ে।
শ্রীমা মনে করেন, জীবনে এগিয়ে যেতে এই ধরনের অভিজ্ঞতা অনেকেরই হয়ে থাকে। অভিনেত্রীর কথায়, “সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বড় হয়ে ওঠার এটা একটা অঙ্গ। অনেককেই বদলে যেতে দেখি। ইন্ডাস্ট্রিতে বা কোচিং-এ পড়তে গিয়ে এমন অনেক বন্ধু দেখেছি যারা হঠাৎ বদলে গিয়েছে।” ইন্ডাস্ট্রির বন্ধুত্ব নিয়ে শ্রীমা বলেছেন, “ইন্ডাস্ট্রিতে এমন বহু বন্ধুত্ব দেখেছি। কাজ শেষ হয়ে গেলেই বন্ধুত্বগুলো নষ্ট হয়ে যায়। আবার কাজ করতে করতেও বন্ধুত্ব নষ্ট হয়ে যেতে দেখেছি। কে কোন কাজ পাবে তা নিয়ে ঈর্ষার বিষয় তো রয়েছেই। হয়তো, কাউকে বন্ধু ভেবে বিশ্বাস করে অনেক কথা বলে ফেলেছি। পরে সেই কথাগুলিই অন্য কারও মুখ থেকে শুনেছি। বন্ধু থাকার সময় তো এমন আশা করিনি! তবে সৌভাগ্যবশত, এ সব নিয়ে সামনাসামনি কথা কাটাকাটির মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি, এখনও। যদিও ইন্ডাস্ট্রিরই কয়েক জনের সঙ্গে শুরু থেকে এখন পর্যন্ত একই রকম বন্ধুত্ব রয়ে গিয়েছে।”
আসন্ন ধারাবাহিক ‘বসু পরিবার’-এও শ্রীমার চরিত্রটি কিছুটা এমনই। ‘নীলা’ নামে একটি চরিত্রে অভিনয় করছেন তিনি। নীলাও ক্রমশ দেখতে পায়, পরিবারের সদস্যেরা কী ভাবে মুখোশ পরে রয়েছে। বাস্তব জীবনেও তাই ‘দু’মুখো’ বন্ধুদের এড়িয়ে চলতে চান শ্রীমা। অভিনেত্রীর এমন বন্ধুত্ব পছন্দ, যেখানে কাউকেই কোনও ভান করতে হয় না। এমন তাঁর কথায়, “যাঁরা একদম প্রথম থেকে বন্ধু ছিলেন, তখন আমি হয়তো কিছুই হয়ে উঠতে পারিনি, সেই বন্ধুদের আমি এগিয়ে রাখি। এ ছাড়া, আমার অগ্রাধিকার আমার পরিবার।”
ইন্ডাস্ট্রিতে সৌজন্যের সম্পর্ক তৈরি হলেও খুব আবেগে জড়াতে চান না শ্রীমা। অভিনেত্রী বলেন, “সকলের সঙ্গে হইহই করে কাজ করি আমি। কিন্তু কারও সঙ্গে খুব জড়িয়ে পড়তে চাই না। চারপাশে একটা অদৃশ্য বর্ম থাকে আমার। একটু সাবধানি হয়েই চলি।”
শ্রীমা জানান, নীলার চরিত্রটি নাকি খুবই দায়িত্বশীল। বাস্তবেও কি দায়িত্ব নিতে ভালবাসেন শ্রীমা? অভিনেত্রী বলেন, “স্কুল জীবন থেকে এখনও একটা বিষয় চলছে, গোটা দিনের ঘটনা বাড়ি ফিরে মাকে আমি বলি। এই মানুষগুলোর জীবন আমি কী ভাবে সুরক্ষিত করতে পারি, তা নিয়ে আমি ভাবি। বিশেষ করে, একটা সময়ের পর বাবা-মায়ের বয়স হচ্ছে, এই নিয়ে চিন্তা হতে শুরু করে। এটা একটা অদ্ভুত অনুভূতি। তাই পরিবারের দায়িত্ব নিতে হয়, আমি এটা ভালবাসি।”
প্রেমের ক্ষেত্রে, যত্নে থাকতে ভালবাসেন শ্রীমা। তাঁর কথায়, “আমি নিজে খুবই দায়িত্বশীল, এটাই আমার স্বভাব। তবে আমার মধ্যেও একটা দুরন্ত শিশু রয়েছে আজও। এত দিন আমার বাবা-মা সেটা সামলে রেখেছিলেন। আমি চাই আমার সঙ্গীও যেন আমার এই শিশুসুলভ আচরণ সামলে নিতে পারেন। ঘুরতে যাব, পার্কে যাব— এ সব বায়না আমি প্রায়ই করি। আমি চাই এই নিরীহ আচরণগুলো যেন ভবিষ্যতে আমার সঙ্গী আগলে রাখে। আমায় যেন তার সামনে ভান না করতে হয়, মুখোশ পরতে না হয়।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy