Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪
Sauraseni Maitra

সবাই ভাবছে আমি প্রেম করি তাই এই করোনার সময় আমার একটাও প্রেম হল না: সৌরসেনী

কেরিয়ার থেকে স্বজনপোষণ, কাস্টিং কাউচ, প্রেম,  নিয়ে অকপট সৌরসেনী।

সৌরসেণী মৈত্র।

সৌরসেণী মৈত্র।

সঞ্চারী কর
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ নভেম্বর ২০২০ ১৪:২৯
Share: Save:

দিনটা শনিবার। ঘড়ির কাঁটা ১১টা ছুঁইছুঁই। ফোনের রিং কিছুক্ষণ বেজে যাওয়ার পর ও পার থেকে ভাঙা গলার ‘হ্যালো’। শুরু হল কথোপকথন। বক্তা সৌরসেনী মৈত্র। কেরিয়ার থেকে স্বজনপোষণ, কাস্টিং কাউচ, প্রেম নিয়ে অকপট তিনি।

‘জেনারেশন আমি’ পর তোমাকে তো সবাই ‘দুগ্গা’ বলেই চিনছে…

সৌরসেনী: (কিছুটা হেসে) লোকে মনে হয় ভুলেই গিয়েছে যে আমি অন্য চরিত্রও করেছি। তবে ছবিটা আমার কাছে সত্যিই খুব স্পেশ্যাল। এই ছবির পর থেকে লোকজন আমার মধ্যেই তাঁদের ‘দুর্গাদি’কে দেখতে পান। অভিনেত্রী সৌরসেনী মৈত্রকে এখন আর কেউ দেখেন না। অনেকেই এখন ব্যক্তিগত ভাবে আমাকে তাঁদের সমস্যার কথা বলেন। এই ছবিটার সঙ্গে তাঁদের জীবন মিলে যাওয়ার গল্পও করেছেন অনেকে। অভিনেতা হিসাবে এর থেকে বড় পাওনা আর কী হয় বলুন তো!

একই ভাবে ইন্ডাস্ট্রিতেও কি আপনাকে খানিক এগিয়ে দিয়েছে ‘জেনারেশন আমি’?

সৌরসেনী: ইন্ডাস্ট্রিকে আমি আজ অবধি বুঝতে পারিনি। কে এগোচ্ছে, কে এগোচ্ছে না বোঝা সম্ভব নয়। অনেক পরিচালকই ‘জেনারেশন আমি’ পছন্দ করেননি অথচ ব্যোমকেশে আমার অভিনয়ের খুব প্রশংসা করেছেন। তা ছাড়া একটা ছবি দিয়ে ইন্ডাস্ট্রিতে এগিয়ে বা পিছয়ে থাকা যায় না। কিন্তু এই ছবির পর থেকে আমি আরও বেশি করে সবার নজরে আসি। লোকে ভাবতে শুরু করেন ‘একে তা হলে বড় চরিত্রটা দেওয়া যায়’।

‘অপু’ মানে ঋতব্রতর সঙ্গে ভাইফোঁটা পালন করলেন। কী উপহার দিলেন তিনি?

সৌরসেনী: (হাসতে হাসতে) কিচ্ছু দেয় নি! উল্টে আমিই ওকে গিফট দিয়েছি। আর আমি যখন চাইলাম সটান বলে দিল ‘আমিই তো গিফট’! শুধু ঋতব্রতই নয়, ওই ছবির পুরো টিমটাই এখন পরিবারের মতো হয়ে গিয়ছে। শান্তি জ্যেঠু, অপা পিপি, লিলি দিদু, এঁরা সব্বাই খুব কাছের মানুষ।

পর্দার মতো বাস্তবেও চলতে থাকে ‘অপু’ আর ‘দুগ্গা’র খুনসুটি।

ইন্ডাস্ট্রিতে যেমন বন্ধুত্ব আছে, প্রতিযোগিতাও আছে।তুহিনা, ইশা...

সৌরসেনী: আমি বিষয়টাকে সে ভাবে দেখি না। সবাই ভাল কাজ করার চেষ্টা করছে। আমিও তাই করছি। আমি সব সময়ই নিজের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় বিশ্বাসী। আমি মনে করি আজ আমি ভাল কাজ করলে, কাল তার থেকেও ভাল কাজ করব। ইশা বা তুহিনা ভাল কাজ করলে, আমি ওঁদের থেকে শেখার চেষ্টা করব। হিংসে করার প্রশ্নই নেই। তা ছাড়া এখন ওটিটি এসে যাওয়ায় কাজ করার সুযোগও অনেক বেশি।

আপনি তো সিনেমার সঙ্গে ওটিটিতেও চুটিয়ে কাজ করছেন। ওয়েব সিরিজে সাহসী দৃশ্য ছুৎমার্গ ছাড়াই দেখানো হয়। আপনার কাছে সে রকম প্রস্তাব এলে রাজি হবেন?

সৌরসেনী: অভিনেতা হিসাবে আমি সব ধরনের কাজ করতে চাই। চিত্রনাট্যের প্রয়োজনে আমি সাহসী দৃশ্য করতেও রাজি। কিন্তু শুধুমাত্র দর্শক টানার জন্য যদি এ ধরনের দৃশ্যের কথা ভাবা হয়, তা হলে সেই দৃশ্য করব না। দ্বিতীয়ত, দৃশ্যটি কী ভাবে শ্যুট করা হচ্ছে তার উপরেও কিছুটা নির্ভর করছে। কোনও ঘনিষ্ঠ দৃশ্য যদি রুচিপূর্ণ ভাবে পর্দায় তুলে ধরা হয়ে, সে ক্ষেত্রে আপত্তি করার কারণ দেখি না। তবে এই করোনার বাজারে কোনও রকম ভাবেই এ ধরনের দৃশ্যে অভিনয় করব না।

ওয়েব সিরিজের পর ফের আপনাকে বড় পর্দায় দেখা যাবে সাহেব ভট্টাচার্যের সঙ্গে। ছবির নাম কী?

সৌরসেনী: ছবির নাম এখনও বলা বারণ। তবে আমি এক সাংবাদিকের চরিত্রে অভিনয় করছি। সে খুবই সাহসী এবং প্রাণোচ্ছ্বল।

তার মানে কিছুটা সৌরসেনীর মতোই?

সৌরসেনী: (হেসে ফেলে) হ্যাঁ একদমই তাই। অনেকেই বলছেন, আমি নাকি নিজের চরিত্রেই অভিনয় করছি। আর লোকজন ভাবছে আমি খুব ভাল অভিনেতা। লালবাজারে পুলিশের চরিত্র করেছিলাম। এ বার সাংবাদিকের চরিত্রে এক্সপেরিমেন্ট করতে পেরে বেশ ভাল লাগছে। তবে ডাবিংয়ের কাজ এখনও শেষ হয়নি। সে সব হলে হয় তো হলে মুক্তি পাবে ছবিটা।

কাজকে ভালবেসে এগিয়ে যেতে চান সৌরসেনী।

কেরিয়ারের শুরুতেই অঞ্জন দত্ত, প্রতীম ডি গুপ্ত, মৈনাক ভৌমিকের মতো পরিচালকদের সঙ্গে কাজ। এর পর উইশ লিস্টে কে আছেন?

সৌরসেনী: কেরিয়ারের শুরুতেই এত বড় পরিচালকদের সঙ্গে কাজ করা আমার কাছে বিশাল বড় পাওনা। একে একে ইন্ডাস্ট্রির প্রত্যেকের সঙ্গেই কাজ করতে চাই। তবে সৃজিত মুখোপাধ্যায়, কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় এবং অপর্ণা সেনের সঙ্গে কাজ করার ইচ্ছে অনেক দিনের। কিছুদিন আগে সুজিত সরকারের সঙ্গে বিজ্ঞাপনে কাজ করলাম। আরও বেশি কাজ করার ইচ্ছে রয়েছে তাঁর সঙ্গেও।

পরবর্তী নায়ক হিসাবে কাকে চান?

সৌরসেনী: (কিছুটা ভেবে) যিশু দা, অনির্বাণদা এবং অতি অবশ্যই প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় ! ওঁদের সঙ্গে এখনও কাজ করা হয়ে ওঠেনি। বাকি প্রত্যেকের সঙ্গেই কম বেশি কাজ করেছি। স্ক্রিন শেয়ার করেছি। ব্যোমকেশের সুবাদে আবীরদার সঙ্গেও অভিনয় করেছি। সুযোগ পেলে সবার সঙ্গেই কাজ করব।

একজন অভিনেত্রী হিসাবে আপনার জীবন কতটা সহজ বা কঠিন?

সৌরসেনী: আমি শুরু থেকেই কাজের অনেক সুযোগ পেয়েছি। একই সঙ্গে মানুষও আমাকে পছন্দ করেন। অনেকেই ভাবেন এই জগতে খুব সহজেই সাফল্য পাওয়া যায়। কিন্তু তার পিছনে স্ট্রাগলের কথাটা খুব কম লোকেই জানেন। স্ট্রাগল বলতে কিন্তু শুধু কাস্টিং কাউচ বা নেপোটিজম নয়। অন্যান্য আরও দিক রয়েছে। পরিশ্রম করলে ফল পাওয়া যায় বলে আমি বিশ্বাস করি। কাজ নিয়ে সমস্যা আমারও হয়, চিন্তাও হয়। কিন্তু আমি আমার কাজকে ভালবেসে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করি।

আরও পড়ুন: তারার হাট জমজমাট, অনির্বাণ-মধুরিমার রিসেপশনে

টলিউডে কাস্টিং কাউচ বা স্বজনপোষণ নেই?

সৌরসেনী: আমি এখনও পর্যন্ত সে রকম কিছুর মুখোমুখি হইনি। কাজ করতে গিয়ে মনমালিন্য হয়েই থাকে। কিন্তু এর বেশি কিছু হয় কি না সেটা আমার জানা নেই। আসলে আমাদের টলিউড ইন্ডাস্ট্রিটা এতই ছোট যে প্রত্যেকে একে অপরকে চেনে। হয় তো সেই জন্যই এই সমস্যাগুলো এখনও সে ভাবে প্রকট হয়ে ওঠেনি। আমি আমার প্রথম ছবিটা অডিশন দিয়ে পাই। তারপর পরিচালকরা আমার উপর ভরসা রেখে কাজ দিয়েছেন। আমি মনে করি না ইন্ডাস্ট্রিতে ‘গডফাদার’ না থাকায় আমার কাজ পেতে কোনও রকম অসুবিধা হয়েছে।

আরও পড়ুন: মেকআপ রুমে অঙ্কের ক্লাস! অবসরে অঙ্ক নিয়ে মুখোমুখি দ্বারকানাথ, সতীশচন্দ্র

সৌরসেনীর জীবনে কোনও বিশেষ মানুষ আছেন?

সৌরসেনী: (উদাস কণ্ঠে) কেউ জুটছে না করোনার বাজারে বিশ্বাস করুন। ভাল লাগছে না! আমার অবস্থা এ বিষয়ে সত্যিই খারাপ। কোনও ছেলে তো প্রেমেই পড়ছে না। সবাই ভাবছে আমি প্রেম করি। আসলে আমি বন্ধুদের প্রেম করার উপদেশ দিই। কিন্তু আমার নিজের জীবনটাই খালি।

(হাসতে থাকলেন সৌরসেনী)

অন্য বিষয়গুলি:

Sauraseni Maitra Actress Tollywood
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE