Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪

বাবা কোনও দিন আগ বাড়িয়ে দায়িত্ব নিতে চাননি, মা আমাকে এবং দিদিকে বড় করেন: ঋতাভরী

আনন্দবাজার ডিজিটালের সঙ্গে ফোনে মাকে নিয়ে আবেগপ্রবণ নায়িকা। 

মা শতরপার সঙ্গে ঋতাভরী।

মা শতরপার সঙ্গে ঋতাভরী।

সঞ্চারী কর
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ নভেম্বর ২০২০ ১২:৩৯
Share: Save:

বোলপুরে শ্যুটিং-এ ব্যস্ত ‘ললিতা’, অর্থাৎ ঋতাভরী চক্রবর্তী। বৃহস্পতিবার সেখানেই নিজের মতো করে পালন করে ফেললেন মা শতরূপা স্যান্যালের জন্মদিন। তার আগে আনন্দবাজার ডিজিটালের সঙ্গে ফোনে মাকে নিয়ে আবেগপ্রবণ নায়িকা।

শ্যুটিঙের ব্যস্ততার মধ্যেও কী ভাবে সারপ্রাইজ দিলেন মাকে? হাসতে হাসতে জবাব এল, “আমার শরীর ভাল নেই বলে মা আমার সঙ্গে বোলপুর এসেছে। শ্যুটিং থেকে ফেরার সময় কেক, মোমবাতি সবকিছু এনে আমাদের এখানকার বাড়ির একতলাটা সাজিয়ে রেখেছিলাম। ঘড়ির কাঁটা যখন ১২টা ছুঁই ছুঁই, কোল্ড ড্রিঙ্ক আনার কথা বলে মাকে একতলায় যেতে বলি। তারপরেই এত আয়োজন দেখে মা চমকে যায়।”

তবে এটুকুতেই সেলিব্রেশন থামাতে নারাজ ঋতাভরী। তাই বৃহস্পতিবার ‘এফআইআর’ ছবির গোটা টিমকে নৈশভোজে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন নায়িকা। নায়ক অঙ্কুশ-সহ ছবির প্রত্যেকেই উপস্থিত ছিলেন সেখানে। পোলাও-মাংস সহযোগে প্রচুর হাসি-আড্ডায় জমে ওঠে ঋতাভরীর মায়ের জন্মদিন।

জন্মদিনের বিশেষ মুহূর্ত

মায়ের জন্মদিন উপলক্ষে ইনস্টাগ্রামে তাঁর সঙ্গে একটি ছবি পোস্ট করে নায়িকা। মাকে ধন্যবাদ জানান। লেখেন অনেক ‘বাধা’ স্বত্ত্বেও তাঁকে মা পৃথিবীতে এনেছেন। সেই প্রসঙ্গ তুলতেই হালফিলের দক্ষ অভিনেত্রীর মধ্যে অন্যতম ঋতাভরী বললেন, “আমার মা গার্হস্থ হিংসার বিরুদ্ধে লড়ে আমাকে এবং দিদিকে নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসেছিল। তা স্বত্ত্বেও মা আমার বাবার থেকে কিছুই চায়নি। আমার বাবাও কোনও দিন আগ বাড়িয়ে দায়িত্ব নিতে চাননি। মা আমাদের নিয়ে আমার দাদু-দিদার কাছে চলে আসে। তারপরেই পরিচালক হিসেবে কেরিয়ার শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল মা। ‘অনু’ তৈরি করে ইন্ডাস্ট্রিতে নিজের জায়গা তৈরি করে মা। তবু মাকে কোনও দিন টাকা পয়সার পিছনে দৌড়তে দেখিনি। বরাবরই মা যশ-খ্যাতির চেয়ে মনুষ্যত্বকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন।"

ঋতাভরী জানান, তিনি যখন ক্লাস ফাইভ বা সিক্সে পড়েন তাঁর মা তখন তিনটি মেয়েকে পাচার হওয়া থেকে উদ্ধার করে এনেছিলেন। এই তিনটি মেয়ের দায়িত্ব নিয়েছিলেন। তারপরেই এনজিও তৈরি করেন।

সম্প্রতি ঝাড়গ্রামের একটি গ্রাম দত্তক নিয়েছেন শতরূপা স্যান্যাল। মেয়ে ঋতাভরীও মায়ের সঙ্গেই এই গ্রামের দেখাশোনা করেন। তবে তাঁরা দু’জনেই দান-অনুদানে বিশ্বাসী নন। এই গ্রামের শিক্ষা, মানুষদের হাতের কাজ, পোলট্রি চাষের নানান পদ্ধতি এবং আরও অন্যান্য কাজ শিখিয়ে আত্মনির্ভর করে তোলার চেষ্টায় দিনরাত কাজ করেছে মা-মেয়ে জুটি। মাত্র ১৮ বছর বয়সেই ঋতাভরী একটি স্কুলের সম্পূর্ণ দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন। ‘ইনস্পিরেশন’ কিন্তু তাঁর মা।

মায়ের লড়াই ঋতাভরীকে শিখিয়েছে শক্ত হতে

ছবি তৈরি এবং লেখালেখির পাশাপাশি এ রকম অগুনতি সমাজসেবামূলক কাজের সঙ্গে জড়িয়ে শতরূপা স্যান্যাল। পশুদের অধিকার নিয়েও কাজ করে চলেছেন তিনি। এমন কী তাঁর নিজের বাড়িতেই রয়েছে ৫টি পোষ্য যাদের বিভিন্ন জায়গা থেকে উদ্ধার করে এনেছিলেন তিনি। তবে কন্যা ঋতাভরীর মন এখনও ভার হয়ে আসে যখন সমাজের কটুকথার বাণে বিদ্ধ হতে হয় মাকে। তিনি বললেন, “এত ভাল কাজের পরেও মাকে শুনতে হয় তুমি ঘর ভেঙেছ। মা এগুলো শুনে হয়তো কষ্ট পায় তবুও আজ পর্যন্ত আমার বাবার সম্পর্কে এমন কোনও কথা বলেনি যা তাঁর গরিমা নষ্ট করতে পারে। আলাদা হয়ে গেলেও মা বাবার কাজকে খুবই সম্মান করে। আমিও করি। তাই সমাজে তাঁর দুর্নাম হোক এটা আমরা কেউই চাইনি। কোনও শিশুই চায় না, তার মা-বাবা আলাদা হয়ে যাক। কিন্তু ঘরের ভিতরের অবস্থা যারা দেখে তারাই জানে। আমিই জানি আমার মাকে কী সহ্য করতে হয়েছে। সেটা বাইরের লোক কখনও জানবে না।”

আরও পড়ুন: নীলের সঙ্গে হাউজ পার্টিতেই আমার দীপাবলি: তৃণা

মায়ের লড়াই ঋতাভরীকে শিখিয়েছে শক্ত হতে, অন্যের কথা ভাবতে। ইন্ডাস্ট্রিতে মেয়েদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে চান নায়িকা, জানাতে চান ‘অন্য রাস্তা’য় না হেঁটেও সাফল্য পাওয়া সম্ভব। নায়িকা বললেন, “আমি মেয়েদের জানাতে চাই টলিউডে সুস্থ এবং স্বাভাবিকভাবে কী ভাবে কাজ পাওয়া সম্ভব। আমি জানি অনেক পুরুষই আমাকে তখন আর সহ্য করতে পারবেন না। কিন্তু তা নিয়ে আমার কোনও মাথা ব্যাথা নেই। আমার মনে হয় এখানে মেয়েদের সুরক্ষাকে যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া হয় না। তবে কিছু মানুষ আছেন যাঁরা বিষয়টি নিয়ে ওয়াকিবহাল। পরমদা, জিৎদা, রাজদার মতো মানুষরা তাঁদের মধ্যে অন্যতম।"

তা হলে কি ঋতাভরী গসিপ করেন না? নায়িকার উত্তর, “গসিপ করতে অসুবিধা নেই। কিন্তু বুঝতে হবে কী ধরনের বিষয় নিয়ে কথা হচ্ছে। রাজদা শুভশ্রীকে ভ্যালেন্টাইনস ডে তে কী উপহার দিল সেটা নিয়ে কথা হতেই পারে। এটা একটা পজিটিভ গল্প, এতে কারোর কোনও ক্ষতি হয় না। কিন্তু কোন নায়িকা কার সঙ্গে প্রেম করছেন সেটা নিয়ে কারও, মাথাব্যথা কোনও প্রয়োজন নেই। তাঁকে ‘চরিত্রহীন’ বলে দাগিয়ে দেওয়াও অনর্থক।"

ঋতাভরীর মনে হয়েছে কোথাও সকলকে ইন্ডাস্ট্রি এখনও পুরুষদের উপর নির্ভরশীল, মানুষের কাছে ভাল হতে গেলে তাঁদের উল্টোপাল্টা মন্তব্য হাসিমুখে গিলে নিতে হবে। যেমন প্রচলিত ধারণা নায়িকাদের কেরিয়ার খুব বেশিদিনের হয় না। তাই তাঁদের মধ্যে একটা প্রতিযোগিতা তৈরি হয়। ঋতাভরী বললেন, " তবে নায়িকারা প্রতিযোগী যে নয় ঋতুদি, স্বস্তিকাদি, পাওলিদি, কোয়েলদির মতো অভিনেত্রীরা এই ধারণা পুরোপুরি ভেঙে দিয়েছে।”

আরও পড়ুন: বিদেশি বান্ধবীর সঙ্গে থাকতেন পাহাড়ে, অভিনয়ের টানে চাকরি ছাড়েন পদার্থবিদ্যায় স্নাতক আসিফ

আপাতত কাজের মধ্যে ডুবে আছেন ঋতাভরী। বোলপুরে শ্যুটিং শেষ করে ১৫ তারিখ নিজের প্রোডাকশনে একটি গানের শ্যুট করবেন নায়িকা।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy