ঋতাভরী
প্র: আপনার শরীর কেমন আছে?
উ: অ্যাবসেস হয়েছিল আমার। গত বছর অগস্টে তার অপারেশন হয়। সেপ্টেম্বরে ‘এফআইআর’ ছবিটার শুটিং শুরু করলাম অল্প যন্ত্রণা আর অস্বস্তি নিয়েই। তত দিনে ইউসিএলএ (ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফর্নিয়া)-এর কোর্সটা শুরু হয়ে গিয়েছিল। ক্লাস, শুটিং সব চলতে থাকায় ব্যথাও বাড়তে থাকল। তার পর ফিশচুলা ধরা পড়ল। এ বছর মার্চ মাসে দ্বিতীয় অপারেশনটা হল। ডাক্তার বলেছিলেন, ছ’মাসের জন্য কাজ থেকে বিরতি নিতে হবে, না হলে রোগটা ফিরে আসবে। বিশ্রাম নেওয়ায় এখন আমি অনেকটা সুস্থ।
প্র: এত দিন কাজ থেকে দূরে থাকা কতটা কঠিন ছিল?
উ: আমার রেকারেন্ট ডিপ্রেশন আছে, সেটা জিনগত। স্কুলে পড়ার সময় থেকে এই রোগ আমার সঙ্গী। এই রোগে রোগী কিছু দিন ভাল থাকে, কিছু দিন খারাপ। ওয়ার্কআউট করে আমি এত দিন সুস্থ থেকেছি, যাতে শরীরে যথোপযুক্ত সেরাটোনিন তৈরি হয়। কিন্তু এই অসুস্থতার সময়ে আমার শরীরচর্চা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেল। তখন শুধু শরীরের কষ্ট নয়, মানসিক ভাবে তার চেয়েও খারাপ থাকতাম। আমাকে ঝলমলে সুন্দর তো সবাই দ্যাখে, কিন্তু সবচেয়ে অন্ধকার এবং খারাপ দিনগুলোয় যারা আমার পাশে থেকেছে তাদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ, যাদের মধ্যে একজন আমার ‘ডাক্তার বন্ধু’। যে শুধুই বাইরের সৌন্দর্যটাকে দেখেনি, বরং সেই মেয়েটাকে ভালবেসে ওষুধ খাইয়ে দিয়েছে, যে প্যানিক অ্যাটাকের কারণে মাটিতে বসে কাঁদছে, কাউকে চিনতে পারছে না।
প্র: নায়িকার এই অসুস্থতার সময়ে মন ভাল করতে নায়কের (পড়ুন হবু বরের) প্রবেশ, তাই তো?
উ: (প্রবল হেসে) হ্যাঁ সে রকমই। ওই পরিস্থিতিতে আমার পাশে কাউকে খুব দরকার ছিল। আমার আগের বয়ফ্রেন্ড মুম্বইয়ে থাকত। ও পাশে থাকলেও শারীরিক ভাবে উপস্থিত ছিল না, যেটা সে সময়ে আমার খুব প্রয়োজন ছিল।
প্র: আপনাদের আলাপ হল কী ভাবে?
উ: এ বছরই গোড়ার দিকে ওর ক্লিনিক উদ্বোধনে গিয়েছিলাম। ও পেশায় একজন মনোবিদ। সে সময়ে ওরও অন্য বান্ধবী ছিল। আমরা প্রথমেই খুব ভাল বন্ধু হয়ে গিয়েছিলাম। আই মাস্ট সে, বাঙালি ছেলেকে ডেট করার অন্য আরাম আছে। বাংলায় কথা বলা যায়। সেই সঙ্গে রুচি, শিল্পবোধ এ সবের মিল তো রয়েছেই। তবে সে অর্থে ডেট করা অর্থাৎ দেখা করা, কফি খেতে যাওয়া... এ সব আমাদের হয়নি বললেই চলে। যখন ওকে ভাল করে চিনতে শুরু করেছি, তখন আমি শয্যাশায়ী। দ্বিতীয় সার্জারির পরে ও আমার বাড়িতেই আসত দেখা করতে। ফলে খুব তাড়াতাড়ি আমরা কাছাকাছি এসেছিলাম। ধীরে ধীরে অনুভব করতে শুরু করলাম, আমিও কারও উপরে নির্ভর করতে পারি।
প্র: বিয়ের সিদ্ধান্ত কবে নিলেন?
উ: বিয়ে ব্যাপারটাকেই আমি ভয় পাই, যেহেতু একটা ভাঙা পরিবার থেকে এসেছি। আশপাশে বহু সম্পর্ক ভেঙে যেতে দেখেছি। বিয়ের পর কেউ যদি বলে এটা কোরো না, বোল্ড ছবি দিয়ো না... সে সব মেনে নিতে পারব না। সত্যি বলতে, এর আগে কাউকে দেখে মনে হয়নি, তার সঙ্গে সংসার করতে পারব। তবে আমার কিছু বলার আগেই হঠাৎ একদিন ও-ই বলল, ‘তুমি পাশে থাকলে তোমার প্রতি কেমন যেন বৌ বৌ ফিলিং আসে।’ আমার একটাই শর্ত ছিল, যাকে বিয়ে করব, বিয়ের আগে তার সঙ্গে কিছু দিন থাকতে চাই। কিন্তু দুই বাঙালি পরিবার ব্যাপারটাকে কী ভাবে নেবে জানি না। তাই ঠিক হল, এ বছর ডিসেম্বরে এনগেজমেন্ট করে আমরা একসঙ্গে থাকব আমার বাড়িতে। কোভিড পরিস্থিতি ঠিক হলে পরের বছর বা তার পরের বছর জাঁকজমক করে বিয়ে করব। বিয়ের পরে অবশ্য সল্টলেকেই নতুন একটা বাড়িতে থাকব, যেটা আমাদের দু’জনের বাড়ি থেকেই কাছে হবে। আপনারা আমার বিয়ের যে খবরটা পেয়েছিলেন, সেটা ভুল ছিল না। আমি সত্যিই জীবনের পরের পদক্ষেপটা খুব তাড়াতাড়ি নিতে চাই। ওর পরিবারে সকলে ডাক্তার। আশা করব, আমার কাজের ধারার সঙ্গে ও যেন মানিয়ে নিতে পারে।
প্র: এনগেজমেন্ট নিয়ে কোনও পরিকল্পনা রয়েছে?
উ: ওকে বলেছি, (হাতের হিরের আংটি দেখিয়ে) প্রোডাকশনের কাজ শুরু করার পরে বাইশ বছর বয়সে নিজেকে এই আংটিটা উপহার দিয়েছিলাম, তাই তোমার দেওয়া আংটিটা যেন চাঁদ থেকে দেখা যায় (হেসে)। ইচ্ছে আছে, ওকে যে আংটিটা দেব, তার ভিতরে একটা মেসেজ লেখা থাকবে। এর পরে যখন বিদেশে যাব, তখন আংটিটা তৈরি করিয়ে আনব। এনগেজমেন্টের দিন বড় অনুষ্ঠান করব না, শুধু কাছের লোকেরা থাকবে।
প্র: এত কিছু যেখানে ঠিক হয়ে গিয়েছে, সেখানে বিয়ের খবরটা অস্বীকার করে সোশ্যাল মিডিয়ায় স্টেটমেন্ট দিয়েছিলেন কেন?
উ: আমাদের সম্পর্কটা নতুন। তাই মনে একটা সংশয় ছিল। যেহেতু প্রচণ্ড শারীরিক ও মানসিক চাপের মধ্য দিয়ে আমি গিয়েছি, তাই প্রথমে সম্পূর্ণ সুস্থ হতে চেয়েছিলাম। এখন আমি আবার কাজ শুরু করেছি, ভাল আছি। কিন্তু তখন সেই অবস্থায় ছিলাম না যে, বিষয়টা নিয়ে কথা বলব। আপনারা যা লিখেছিলেন তা ঠিকই ছিল এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় আমাকেও কিছু লিখতে হত না, যদি না বিভিন্ন মিডিয়া আমাকে মিসকোট করতে শুরু করত। তখন ‘বিয়ে করছি না’ স্টেটমেন্ট দিয়ে এই আলোচনাটা বন্ধ করতে চেয়েছিলাম। সত্যিটাকে স্বীকার করার মতো জোর তখন আমার ছিল না।
প্র: পাত্রের নামটা আমরা ঠিক লিখেছিলাম তো?
উ: (খুব হেসে) পাত্র খুবই লাজুক। সে চায় না তার নাম বলা হোক। আনন্দবাজার তার পেশা আগেই লিখেছিল, এ বার নামটা ঠিক ছিল কি না, সেটা এনগেজমেন্টের ছবি থেকে বোঝা যাবে।
প্র: কাজ কেমন এগোচ্ছে?
উ: ‘এফআইআর’ মুক্তি পাচ্ছে পুজোয়। এ ছাড়াও অনুরাগ কাশ্যপের প্রযোজনায় একটি হিন্দি ছবি রয়েছে। ‘মায়া মৃগয়া’ নামে আর একটা ছবির শুটিং শুরু করব। অংশুমান প্রত্যুষের একটি ছবি করছি, মিষ্টি প্রেমের গল্প।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy