Advertisement
E-Paper

মেয়েদের বিচ্ছেদ যেন চায়ের সঙ্গে চানাচুর! ঘনিষ্ঠরাই দায়িত্ব নিয়ে সেই ‘গল্প’ ছড়িয়ে দেন

“আমার অভিজ্ঞতা বলে, মেয়ে যদি মানুষ না হয়ে বাঁদরি হয়, তাতেও বুঝি পুরুষদের কোনও সমস্যা নেই! মেয়ে হলেই হল।”

মেয়েদের হয়ে মুখ খুললেন রাতাশ্রী দত্ত।

মেয়েদের হয়ে মুখ খুললেন রাতাশ্রী দত্ত। ছবি: ফেসবুক।

রাতাশ্রী দত্ত

শেষ আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০২৫ ০৯:১৬
Share
Save

গত বছর আমার বিবাহবিচ্ছেদের গুঞ্জন ছড়িয়েছিল। কেন ছড়িয়েছিল, কী ভাবে ছড়িয়েছিল? সে সব থাক। সেই গুঞ্জনের মাশুল চলতি মাস পর্যন্ত গুনে যাচ্ছি। সেই জন্যই আনন্দবাজার ডট কমের অনুরোধে কলম ধরেছি। ইদানীং কারও বিচ্ছেদের কথা প্রকাশ্যে এলে আপনজনেরা সান্ত্বনা দেন, ‘এ সব তো এখন ঘরে ঘরে— জলভাত।’ একদম ঠিক কথা। নির্দিষ্ট সময়ের পর পরস্পরের মধ্যে বনিবনা না হলে বিচ্ছিন্ন হওয়াই শ্রেয়। কিন্তু জানেন কি, এই সান্ত্বনাবাক্য শুধুই পুরুষদের! ওঁদের ক্ষেত্রে ‘সোনার আংটি বাঁকা’— এই প্রবাদ ভীষণ ভাবে এখনও প্রচলিত।

আর মেয়েদের? সমাজ, পেশাজীবন ছেড়ে দিন, নিজের পরিবারও তাঁকে বিরক্ত করা শুরু করে দেয়। আমার বিচ্ছেদ হয়নি। কেবল গুঞ্জন ছড়িয়েছিল। তাতেই ঠিক এমন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে আমায়। আমার মা গত বছর থেকে ভীষণ অসুস্থ। তাঁর কিডনি কাজ করছে না। টানা ডায়ালিসিস চলেছে। এখনও চলবে। বাধ্য হয়ে তাই গত বছর থেকে মায়ের কাছে থাকি। আমার বোন ঘরের কাজে যতটা পটু, বাইরের কাজে তত নয়। স্বাভাবিক ভাবেই স্বামীর সঙ্গে থাকতে পারছি না। এ সব থেকেই সম্ভবত গুঞ্জন ছড়ায়।

আমি মফসস্‌লের মেয়ে। সেখানে এই গুঞ্জন দ্বিগুণ। সঙ্গে সঙ্গে মায়ের দিকে প্রশ্ন ধেয়ে এসেছিল, ‘মেয়ে বাড়ি ফিরে এল বুঝি?’ এটা সমাজ বা পড়শিদের আচরণ। আর পেশাগত পরিস্থিতি? আমাদের মেয়েদের সব কিছুতেই জ্বালা। বিয়ে হলে বিনোদন দুনিয়ায় দর কমে যায়। বিবাহবিচ্ছিন্ন হলে সব কথা হবে, কেবল কাজের কথা ছাড়া।

কেন বলুন তো? ঘুরে-বেড়ানো এবং বাকি সমস্ত কিছুই তার সঙ্গে দিব্য চলবে। অথচ, বিবাহবিচ্ছিন্ন মেয়েটির দায়িত্ব নিতে হবে না। সুযোগ বুঝে টুক করে ‘ঘাড়’ থেকে নামিয়ে দিলেই হল! তার উপরে মেয়েটির রূপ থাকলে কথাই নেই। রূপ তো নয়, যেন অভিশাপ। না থাকলেও অবশ্য সমস্যা নেই। ওই যে, মেয়ে তো!

আমার অভিজ্ঞতা বলে, মেয়েটি যদি মানুষ না হয়ে বাঁদরিও হয়, তাতেও বুঝি পুরুষদের আপত্তি নেই! মেয়ে হলেই হল।

বাকি রইল বন্ধু-বান্ধবদের কথা। একটি মেয়ের কাছে বিচ্ছেদ যে কী যন্ত্রণার, সে একমাত্র সে-ই জানে। ধরুন, আপনার খুব মনখারাপ। আপনি তো খুব কাছের কাউকে বিশ্বাস করে বলবেন? আধ ঘণ্টার মধ্যে দেখবেন, আপনার সেই বলা কথা চায়ের সঙ্গে চানাচুর হয়ে গিয়েছে! সকলের মুখে মুখে ফিরছে। এই জন্যই মেয়েরা সহজে নিজের অবস্থার কথা, বসা বা শোয়ার ঘরের গল্প কাউকে বলতে চায় না।

ভাবতে পারেন, শুধু গুঞ্জনের কারণে আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদী মিছিল থেকে পর্যন্ত ঘনিষ্ঠতার প্রস্তাব পেয়েছি!

বাড়িতে মা অসুস্থ। জলের মতো টাকা খরচ হচ্ছে। নিজেকে মানসিক দিক থেকে শক্ত রাখতে এক মেয়ের সঙ্গে ঘটে যাওয়া অন্যায়ের প্রতিবাদ জানাতে সকলের সঙ্গে পথে নেমেছিলাম। গুঞ্জন ছড়াতে দেখি, অতিপরিচিতরাই আমায় পেতে উদ্‌গ্রীব! আমার দিন কী ভাবে কাটছে, কারও তা নিয়ে মাথাব্যথা নেই। বাধ্য হয়ে একটা সময়ের পরে সেখান থেকেও নিজেকে গুটিয়ে নিই।

এখন আমি, মা, বোন আর আমার স্বামী। এই নিয়ে জীবন। ভরসা করার আর কেউ নেই। কোনও বন্ধু নেই। তাতে কোনও দুঃখও নেই। আমি খুব ভাল আছি।

Ratashree Dutta

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।