কিশোরী রত্তনের বিয়ে হয়েছিল প্রভাকর শিলোত্রীর সঙ্গে। আমেরিকার কর্নেল ইউনিভার্সিটি থেকে অর্থনীতিতে ডক্টরেট করেছিলেন প্রভাকর। দেশে ফিরে তিনি শিলোত্রী ব্যাঙ্ক প্রতিষ্ঠা করেন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে ব্যাঙ্কের শাখা প্রশাখা।
নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০২ নভেম্বর ২০২০ ১০:৫৯
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৭
কপূর, খান এবং বচ্চন। বলিউড শাসনকারী পরিবারগুলির গোড়াপত্তন পুরুষের হাত ধরে। ব্যতিক্রম সমর্থ পরিবার। বলিউডে এই পরিবার প্রতিষ্ঠিত হয় এক নারীর সুবাদে। তিনি রত্তনবাঈ। তাঁর রেখে যাওয়া ব্যাটন তুলে নিয়েছেন বংশের মেয়েরা কয়েক প্রজন্ম ধরে। ক্রমে সেই ধারা পরিচিত হয়েছে সমর্থ পরিবারের পরিচয়ে।
০২১৭
১৮৯০ খ্রিস্টাব্দের ১৫ জুলাই জন্ম রত্তনবাঈয়ের। ভজনশিল্পী রত্তন ছিলেন অসামান্য সুন্দরী। তাঁর একঢাল কালো চুল এসে থেমে ছিল গোড়ালির একটু উপরে। মাত্র একটি ছবিতে অভিনয় করেছিলেন তিনি।
০৩১৭
তিন ও চারের দশকে আরও এক রত্তনবাঈ ছিলেন বলিউডে বিখ্যাত। তিনি বেশ কিছু ছবিতে অভিনয় করেছিলেন। সেগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ‘ইহুদি কি লড়কি’ এবং ‘ভারত কি বেটি’। ‘ইহুদি কি লড়কি’ ছবিতে নায়কের ভূমিকায় ছিলেন কে এল সায়গল।
০৪১৭
অন্য দিকে আর এক রত্তনবাঈ অভিনয় করেছিলেন শুধুমাত্র মরাঠি ছবি ‘স্বরাজ্যচ্য সীমাবর’-এ। ছবিতে তিনি অভিনয় করেছিলেন ছত্রপতি শিবাজির মা জীজাবাঈয়ের চরিত্রে। এটাই তাঁর জীবনের প্রথম ও শেষ ছবি।
০৫১৭
রত্তন স্বেচ্ছায় ছবির জগতে পা রাখেননি। সে সময়ে হিন্দি ছবিতে মেয়েদের কাজ করা সুনজরে দেখাও হত না। কিন্তু পরিস্থিতি রত্তনকে বাধ্য করেছিল।
০৬১৭
কিশোরী রত্তনের বিয়ে হয়েছিল বয়সে ১৬ বছরের বড় প্রভাকর শিলোত্রীর সঙ্গে। আমেরিকার কর্নেল ইউনিভার্সিটি থেকে অর্থনীতিতে ডক্টরেট করেছিলেন প্রভাকর। দেশে ফিরে তিনি শিলোত্রী ব্যাঙ্ক প্রতিষ্ঠা করেন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে ব্যাঙ্কের শাখা প্রশাখা।
০৭১৭
মুম্বই, কল্যাণ, পুণে, ঠানে-সহ মহারাষ্ট্রের ৬ জায়গায় ছিল শিলোত্রী ব্যাঙ্কের শাখা। কিন্তু কর্মঠ প্রভাকর ছিলেন কঠোর ব্রিটিশবিরোধী। বিভিন্ন ক্ষেত্রে তিনি ব্রিটিশদের সঙ্গে সঙ্ঘাতে জড়িয়ে পড়তেন।
০৮১৭
ব্যাঙ্কের এক শাখা থেকে অন্যত্র টাকা পৌঁছে দেওয়ার কাজ তদারকি করতেন প্রভাকর নিজে। সে জন্য একটি বন্দুক রাখবেন বলে তিনি ব্রিটিশ সরকারের কাছে আবেদন করেছিলেন। কিন্তু খারিজ হয়ে যায় তাঁর আবেদন। কথা কাটাকাটির জেরে তিনি নাকি পুণের তৎকালীন কালেক্টরকে চড় মেরে বসেন।
০৯১৭
এর মাসুল তাঁকে দিতে হয়েছিল জীবন ও জীবিকা, সব দিকে দিয়ে। তাঁকে ব্রিটিশরা নিশানা করে ফেলেছিল। এক মামলায় অভিযুক্ত হয়ে ২ বছরের কারাদণ্ড হয় প্রভাকরের। জেল থেকে বাড়ি ফেরার পরে বেশি দিন বাঁচেননি তিনি। মারা যান যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়ে।
১০১৭
লোকসান চলছিলই। প্রভাকরের মৃত্যুতে ডুবে যায় তাঁর ব্যাঙ্ক। বিত্তবান থেকে রাতারাতি কপর্দকহীন হয়ে পড়েন রত্তনবাঈ। তার আগেই একমাত্র মেয়ে সরোজকে নিয়ে কিছু দিন বেঙ্গালুরুতে ছিলেন শিলোত্রি দম্পতি। পরে মেয়েকে নিয়ে আবার মুম্বই ফিরে আসেন রত্তনবাঈ। আশ্রয় নিয়েছিলেন নিজের ভাইয়ের বাড়িতে।
১১১৭
খরচ চালানোর জন্য মরাঠি স্কুলে পড়াতেন রত্তনবাঈ। প্রাইভেট টিউশন করাতেন কন্যা সরোজ-ও। যাতে কনভেন্ট স্কুলে পড়ার খরচ যোগাড় করা যায়। কিন্তু তার পরেও স্কুলের গণ্ডি পেরতে পারেননি সরোজ। তার আগেই এসে যায় হিন্দি ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ।
১২১৭
১৯৩৫ সালে ‘অরফ্যানস অব সোসাইটি’ ছবিতে প্রথম অভিনয় করেন সরোজ। অভিনয়ের সূত্রেই তাঁর সঙ্গে আলাপ কুমারসেন সমর্থের। পরে তাঁকেই বিয়ে করেন সরোজ। অভিনয় শুরু করার পরে তিনি নতুন নাম নিয়েছিলেন শোভনা। পরে শোভনা সমর্থ নামেই বিখ্যাত নায়িকা হয়ে ওঠেন তিনি।
১৩১৭
সরোজ ওরফে শোভনার হিন্দি ছবিতে অভিনয়ের সূত্রে সংসারে কিছুটা সুরাহা হয় ঠিকই। কিন্তু মাথার উপর থেকে আশ্রয় চলে যায়। রত্তনবাঈয়ের দাদা মেনে নিতে পারেননি সরোজের অভিনয় করানোর সিদ্ধান্ত। তাঁর বাড়ি থেকে মেয়েকে নিয়ে চলে যান রত্তনবাঈ। অথচ পরে তাঁর দাদার মেয়ে নলিনী জয়বন্তও নায়িকা হয়েছিলেন।
১৪১৭
মূলত মায়ের উৎসাহেই নায়িকাজীবনকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন শোভনা। তাঁর অভিনয়জীবন শুরু হওয়ার পরে একটিমাত্র ছবিতে অভিনয় করেন তাঁর মা, রত্তনবাঈ। তবে তাঁর পরিচয় ভজনশিল্পী হিসেবেই। তিনি নিজে ভজন লিখতেন এবং সুরও দিতেন।
১৫১৭
একমাত্র মেয়েকে নায়িকা হিসেবে দেখতে চেয়েছিলেন রত্তনবাঈ। তাঁর সেই ইচ্ছে পূর্ণও হয়েছিল। পরে শোভনার মেয়ে তথা রত্তনবাঈয়ের নাতনি নূতন এবং তনুজাও অভিনয়কে পেশা হিসেবে গ্রহণ করেন। শোভনার বাকি দুই সন্তান চতুরা এবং জয়দীপ কোনওদিন অভিনয় জগতে পা রাখেননি।
১৬১৭
নূতনের ছেলে মণীশ বহেল এবং তনুজার দুই মেয়ে কাজল ও তনিশাও টিনসেল টাউনের অংশ হয়ে ওঠেন। তবে জনপ্রিয়তার নিরিখে কাজলের কাছে পৌঁছতে পারেননি মণীশ এবং তনিশা।
১৭১৭
জীবনযুদ্ধের হাতিয়ার খুঁজতে বলিউডে পা রেখেছিলেন রত্তনবাঈ। এই শিল্পীর রেখে যাওয়া ব্যাটন তুলে নিয়ে কয়েক প্রজন্ম ধরে ভারতীয় বিনোদনকে সমৃদ্ধ করে চলেছেন তাঁর উত্তরসূরীরা।