সুশান্ত
আকাশের তারা দেখতে ভালবাসতেন। রিসার্চের জন্য বাড়িতেই বসিয়েছিলেন এক ভার্চুয়াল রিয়্যালিটি সিস্টেম আর এক পেল্লায় টেলিস্কোপ। সে সব পড়ে রইল যথাস্থানে। মাত্র ৩৪ বছর বয়সে ফুরিয়ে গেল অভিনেতা সুশান্ত সিংহ রাজপুতের জীবন। রবিবার দুপুরে বান্দ্রার ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার করা হয়েছে অভিনেতার ঝুলন্ত দেহ। সঙ্গে পাওয়া গিয়েছে কিছু প্রেসক্রিপশন। অনুমান করা হচ্ছে, অবসাদে ভুগছিলেন তিনি। দিন কয়েক আগেই অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে সুশান্তের প্রাক্তন ম্যানেজার দিশা সালিয়ানের। দুটো মৃত্যুর মধ্যে কি আদৌ যোগসূত্র রয়েছে? বলিউডের অন্যতম সম্ভাবনাময় এই অভিনেতার চরম পথ বেছে নেওয়ার কারণ কি অবসাদ? মুম্বই পুলিশের বয়ান অনুযায়ী, প্রাথমিক তদন্তে আত্মহত্যার সম্ভাবনাই জোরালো। তবে আজ তাঁর ময়নাতদন্তের রিপোর্ট আসার পরেই মৃত্যুর নিশ্চিত কারণ জানা যাবে। পটনা থেকে তাঁর পরিবার মুম্বই পৌঁছলে সোমবার অভিনেতার শেষকৃত্য সম্পন্ন হওয়ার কথা।
‘সুইসাইড ইজ় নট দ্য সলিউশন’... বড় পর্দায় তাঁর শেষ মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি ‘ছিছোরে’র এই সংলাপটি যেন ফিরে আসছিল এ দিন। শনিবার রাতেও ছেলের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছিলেন সুশান্তের বাবা। পরিবার, প্রতিবেশী, বন্ধু, সহকর্মীদের প্রায় কেউই আঁচ পাননি, বিগত কয়েক মাস ধরে অবসাদের সঙ্গে লড়াই এত কঠিন হয়ে গিয়েছে সুশান্তের। একতা কপূরের শেয়ার করা স্ক্রিনশটে উঠে এসেছে, এক সপ্তাহ আগেও কাজ নিয়ে কথা বলেছেন তাঁরা। এ বছর কোনও নতুন ছবিতে সই করেননি অভিনেতা। তবে অফার কম ছিল না তাঁর হাতে, বিশেষ করে শেষ ছবি ‘ছিছোরে’ হিট হওয়ার পরে। মাসকয়েক আগে ভাড়া নেওয়া নতুন ফ্ল্যাটে একাই থাকতেন সুশান্ত, মাসিক ভাড়া ছিল ৪.৫১ লক্ষ টাকা। লকডাউনে কখনও এক্সারসাইজ়, কখনও কম্পিউটার প্রোগ্রামিংয়ের নতুন কোডিং শেখা, আবার কখনও নিজের প্রিয় টেলিস্কোপে চোখ রাখার নানা পোস্টে ভরে ছিল তাঁর ইনস্টাগ্রাম। তবে গত ৩ জুনের পর থেকে আর কোনও পোস্ট করেননি সুশান্ত। সেই পোস্ট ছিল তাঁর মাকে নিয়ে। ২০০২ সালে মাকে হারানোর পরে জীবন ওলটপালট হয়ে গিয়েছিল তাঁর।
মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের এই মেধাবী ছাত্রের কেরিয়ারের মোড় ঘুরেছিল শামক দাভরের ডান্স অ্যাকাডেমিতে ভর্তির পরে। ২০০৮ সালে ‘কিস দেশ মে হ্যায় মেরা দিল’ ধারাবাহিকে পার্শ্বচরিত্র দিয়ে অভিনয়ে পথচলা শুরু। এর পরেই একতা কপূরের চোখে পড়ার ফলে ‘পবিত্র রিশতা’র হিট জার্নি। নায়িকা অঙ্কিতা লোখণ্ডের সঙ্গে প্রেমের শুরুও সেখান থেকেই। এর পরে কয়েকটি ডান্স রিয়্যালিটি শোয়ে অংশগ্রহণ ও ২০১৩য় প্রথম ছবি ‘কাই পো চে’র মুক্তি। আর পিছনে ফিরতে হয়নি সুশান্তকে।
(গ্রাফিক:শৌভিক দেবনাথ)
‘শুদ্ধ দেশি রোম্যান্স’, ‘পিকে’-র পরে দিবাকর বন্দ্যোপাধ্যায় ধুতি পরিয়ে বাঙালি ডিটেকটিভ ব্যোমকেশ বক্সীরূপে হাজির করলেন সুশান্তকে। তবে যে চরিত্রের জন্য মনে থেকে যাবেন সুশান্ত, তা এম এস ধোনি। খড়গপুর আইআইটি-র মাঠে তাঁর ‘মাহি’ হয়ে ওঠার অক্লান্ত পরিশ্রম মনে করছিলেন প্রাক্তন ক্রিকেটার কিরণ মোরে। প্র্যাকটিসে দেরি করে আসার জন্য তাঁর কাছে বকুনিও খেতেন অভিনেতা। ‘রাবতা’র শুটিং চলাকালীন কৃতী শ্যাননের সঙ্গে জড়িয়ে যায় সুশান্তের নাম। তত দিনে ভেঙে গিয়েছে অঙ্কিতার সঙ্গে পার্টনারশিপ। সম্প্রতি সম্পর্কে ছিলেন অভিনেত্রী রিয়া চক্রবর্তীর সঙ্গে। তবে সুশান্তের মৃত্যুতে এঁদের কেউই সোশ্যাল মিডিয়ায় কোনও পোস্ট করেননি। ‘রাবতা’ তেমন না চললেও ‘কেদারনাথ’-এ ফের ঘুরে দাঁড়ালেন সুশান্ত। ক্লাইম্যাক্সে বন্যার দৃশ্যে সুশান্তের পরের পর রিটেক দেওয়ার কথা উঠে এল ছবির ডিওপি তুষারকান্তি রায়ের কথায়, ‘‘জলের তোড়ে ওর হাতটা ধরে রেখেছিলাম। যদি আবার হাতটা ধরতে পারতাম...’’
ছবি সংগৃহীত।
শেষ দিকে তাঁর হাত না ধরতে পারার কথা উঠে এসেছে ইন্ডাস্ট্রির একাংশের শোকবার্তাতেও। টুইট করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং ইন্ডাস্ট্রির প্রায় সকলেই। কর্ণ জোহরের টুইটে স্পষ্ট, সুশান্তের ডিপ্রেশনের আঁচ তিনি আগেই পেয়েছিলেন। সুশান্তের মৃত্যুতে যখন সকলে অবসাদ নিয়ে পোস্ট দিচ্ছেন, তার সমালোচনা করে সেলেব্রিটি হেয়ারস্টাইলিস্ট স্বপ্না ভবনানি লিখেছেন, ‘‘যখন সুশান্ত খারাপ সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল, তখন কেউ ওর হাত ধরতে এগিয়ে আসেনি।’’ সমালোচকের প্রশংসা কুড়োলেও ‘সোনচিড়িয়া’ ব্যবসা করতে পারেনি। তবে ‘ছিছোরে’র সাফল্য ফিরিয়েছিল লাইমলাইট।
আরও পড়ুন: সুশান্তের জীবনে এই বাঙালি বান্ধবী কে?
তা হলে নিজেকে গুটিয়ে নিলেন কেন? জীবন থেকেই বা মুখ ফেরালেন কেন? উত্তরের অপেক্ষায় সকলেই। জীবনের ‘চার কদম...’ বাকি রেখেই চলে গেলেন সুশান্ত।
আরও পড়ুন: কীসের অবসাদ? সম্পর্ক? না কি কেরিয়ার? মৃত্যু রহস্যেই
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy