স্ত্রী নয়নার সঙ্গে সৌগত
আমি এখন ‘হটকেক’। বাজারে ভাল চলছি। আমি বাংলা ধারাবাহিকের সেই অভিনেতা, যাকে গত শনিবার দেশপ্রিয় পার্কের কাছে একটি ‘স্পা’ থেকে পুলিশ গ্রেফতার করেছিল। এবার নিশ্চয়ই আপনাদের আমায় মনে পড়েছে। গুটিকয়েক চ্যানেল আর কিছু খবরের কাগজের মাধ্যমে আপনারা জেনেছেন, আমি মধুচক্রের সঙ্গে যুক্ত। আপনারা জেনেছেন, আমার স্ত্রী নয়না আমায় সন্তুষ্ট করতে পারে না বলে আমি বিভিন্ন মহিলার সঙ্গে ‘স্পা’-এ গিয়ে সম্পর্ক পাতাই। পুলিশ যখন আমায় ধরেছিল, তখন নিশ্চয়ই তারা বিভিন্ন মহিলার সঙ্গে আমায় ‘আপত্তিকর’ অবস্থায় দেখে হাতেনাতে ধরেছিল। আপনারা এ সবই জানেন নিশ্চয়ই!
কিন্তু এমনও কিছু বিষয় আছে, যা আপনারা জানেন না। সেটা জানাতেই আনন্দবাজার ডিজিটালে লিখছি। কারণ, আমি এবং আমার পরিজনরা খেয়াল করে দেখেছি, আনন্দবাজার ডিজিটাল মধুচক্রের ঘটনা নিয়ে খবর করেছিল। কিন্তু সেখানে কোথাও আমার নামটা উল্লেখ করা হয়নি। সম্ভবত তারা চায়নি আমার পরিবার-পরিজনেরা সমাজে পতিত হয়ে যান। সম্ভবত তারা চায়নি আমার কাছে ঘটনার বিবরণ না জেনে একতরফা আমার নামটা লিখে দিতে। জানি না। কিন্তু এ-ও ঠিক যে, বাংলায় আনন্দবাজার ডিজিটাল প্রথম সংবাদমাধ্যম, যারা ওই ঘটনায় আমার মতামত জানতে চেয়েছে। সেই কারণেই আমি ঠিক করেছি, এই সংবাদমাধ্যমে আমার নাম না লেখা হলেও আমি স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে নিজের কলমে, নিজের জবানিতে আনন্দবাজার ডিজিটালের পাঠক-পাঠিকাদের আমার কথা বলব।
আপাতত জামিন পেয়েছি। কিন্তু লক আপ থেকে বেরিয়ে নয়না, আমার স্ত্রী না থাকলে আত্মহত্যা করা ছাড়া আর কোনও উপায় ছিল না আমার। নয়না আমাকে সামলেছে। সেই নয়না! মধুচক্রে পুলিশি হানার ঘটনা নিয়ে লিখতে গিয়ে সংবাদমাধ্যমের একাংশ যার যৌনতা থেকে চেহারার বর্ণনা নিয়ে নানা কথা লিখেছে। আমার বয়স্ক বাবা খবরের কাগজে পড়েছেন, তাঁর অভিনেতা ছেলে আসলে কেমন! কয়েকটা লাইনে আমার, আমাদের জীবন শেষ করে দিল! আমার চরিত্র নিয়ে প্রথম পাতায় খবর প্রকাশিত হল। অথচ ‘স্পা’-এর মালিকের নামটা তো কোথাও লেখা হল না? একটা সময় মনে হয়েছিল, অ্যাসাইলামে চলে যাই! আমায় কেন গ্রেফতার করা হল তা-ই বুঝিনি। আমি আর আমার স্ত্রী প্রায়ই ‘স্পা’-তে যাই। যদিও বহু বাঙালির ধারণা, ‘স্পা’ মানেই বন্ধ ঘরে, নগ্ন হয়ে অন্য মেয়ে বা ছেলের সঙ্গে কিছু একা করা হয়! কিন্তু তবুও আমরা ‘স্পা’-তে যাই। মাসাজ নিই।
আরও পড়ুন:
‘সিমা’-য় পুজোর শপিংয়ে পর্দার কাদম্বিনী, বেছে নিলেন নিজের সাজ
সে দিন (শনিবার) একটা অফার দেখে নয়নাকে বললাম, আমি ‘স্পা’-এ যাচ্ছি(তার প্রমাণও আছে)। দেশপ্রিয় পার্কের কাছে ওই ‘স্পা’-এ আগে যাইনি। সেদিনই প্রথম। ঢুকতেই একটি ছেলে আমায় ভেতরে নিয়ে গেল। আমি ওয়াশরুম যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। তার মধ্যেই হঠাৎ দেখলাম, কিছু লোক এসে ‘স্পা’-এর সব ঘরের দরজা খোলার জন্য চিৎকার শুরু করল। বুঝতেই পারিনি, এসটিএফ এবং গোয়েন্দা বিভাগ তখন ওখানে যৌথ অভিযান চালাচ্ছে। ওঁদের মধ্যে এক অফিসার আমায় চিনতেও পারলেন। নিশ্চয়ই টিভি-তে দেখে থাকবেন। পরে আমার ফোনটা কেড়ে নেওয়া হল। তখনও কিন্তু আমি অবাক! ১৪ বছর ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করার পর কিছু লোককে তো চিনেছি, যাঁদের ফোন করে সাহায্য চাইলে এত হয়রানিতে পড়তাম না। কিন্তু সেটাও মনে হয়নি। কারণ, আমি ভাবতেই পারিনি, আমার কোনও ক্ষতি হবে। হতে পারে।
এর মধ্যেই অন্যদের সঙ্গে আমায় ধরে টালিগঞ্জ থানায় নিয়ে যাওয়া হল। সেখানে ফোন হাতে পেয়ে নয়নাকে জানালাম। তখনও ভাবছি, এ বার নিশ্চয়ই ছাড়া পেয়ে যাব। কারণ, আমি তো কিছু করিনি! কোনও দোষ করিনি। সিসিটিভি ফুটেজে আছে, আমি শুধু ওই ‘স্পা’-এ গিয়ে দাঁড়িয়েছি। রাত বাড়তে লাগল। নয়না থানার বাইরে গাড়িতে। আমার সঙ্গে ওকে দেখাও করতে দেওয়া হল না। শুনলাম আমাকে গ্রেফতার করা হবে। ফোনটা হাতে দিয়ে এক পুলিশ অফিসার বললেন বাড়ির লোককে জানাতে, পরের দিন যেন আলিপুর কোর্টে উকিল নিয়ে কেউ হাজির হয়। ব্যাস! ওইটুকুই জানাতে পেরেছিলাম নয়নাকে। তার পর সব অন্ধকার!
এখনও কেমন সব গুলিয়ে যাচ্ছে। স্বাভাবিক হতে পারছি না। ‘স্পা’-এ যাওয়া নয়, আসলে অভিনেতা হওয়া পাপ। সেটা বুঝে গিয়েছি। বুঝে গিয়েছি, বিপদের দিনে কোনও ‘বন্ধু’ পাশে দাঁড়ায় না। কেউ নয়নাকে একবার ফোন করেও জানতে চায়নি, ও কেমন আছে! সে দিন মধ্যরাতে লালবাজারের লক-আপে বন্দি হলাম আমি। চোর, ডাকাত, খুনিরা যেমন হয়। ঘুটঘুটে অন্ধকারে নিজের শরীরও ঠিক করে দেখা যায় না। ওখানেই লোকে বাথরুম করছে। থু-থু ফেলছে। মধুচক্রে ধরা পড়েছি জেনেই শুরু হল অশ্রাব্য গালাগাল। গা গুলিয়ে উঠছিল। মনে হল শুধু জল খেয়ে আছি তো! তাই গা গুলোচ্ছে। এমন ভয়ঙ্কর রাত আমার জীবনে এর আগে কখনও আসেনি। মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে আমি। বন্ধুদের নিয়ে, নয়নাকে নিয়ে আনন্দে ছিলাম। কিন্তু এটা কী ঘটল আমার সঙ্গে?
আরও পড়ুন: গর্ভপাত, অন্য নায়িকার সঙ্গে বলি নায়ক স্বামীর প্রেম, বোনের বিয়ে বাঁচাতে পারেননি সলমনও
তদন্তের জন্য খুব সুনাম রয়েছে লালবাজারের পুলিশের। তাঁরা তদন্ত করে দেখুন, গত ১৪ বছরে বা তার আগে আমি কোনও পতিতালয়ে গিয়েছি কিনা। আমাদের ‘বডি কনট্যাক্টে’ কাজ করতে হয়। কেউ বলুক, তার সুযোগ নিয়ে আমি কোনও অভিনেত্রীর সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়েছি বা কারওকে নিয়ে অশালীন কোনও মন্তব্য করেছি। অভিনয় ছেড়ে দেব তা হলে! জানি পুলিশ তার কাজ করেছে। আইন তার পথে চলেছে। আর হ্যাঁ, এতকিছুর পরেও আমি সংবাদমাধ্যমকে বিশ্বাস করি। এখনও ভরসা করি। শ্যুটিং ফ্লোরে ফিরেছি। ‘জি বাংলা’ আর শিবাজী পাঁজাকে ধন্যবাদ। লীনা গঙ্গোপাধ্যায় এবং সুশান্ত দাস এই দুর্যোগেও আমার সঙ্গে ছিলেন। তবুও যা ক্ষতি হওয়ার হয়েই গেল। পুজো আসছে। কোনও প্যান্ডেলে গেলে কোনও মহিলা আমায় দেখে যদি যা খুশি বলে দেন? কী বলব তাঁকে আমি?
সেই জন্যই অনভ্যস্ত হাতে কলম ধরা। যাতে মানুষ আমার কথাটাও পড়তে পারেন। জানতে পারেন। বুঝতে পারেন। আমি অপরাধী নই। তবু পায়ের তলার মাটি সরে যাচ্ছে আমার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy