(বাঁ দিকে) বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায়। রাজ কপূর (ডান দিকে)। ছবি: আনন্দবাজার আর্কাইভ।
প্রত্যেক বছর আমার জন্মদিনে আরও এক মহান অভিনেতার কথা বেশি করে মনে পড়ে। তিনি রাজ কপূর। ১৪ ডিসেম্বর, এই দিনটার সঙ্গে তাই আমার খানিক অন্য রকম সম্পর্ক। আজকের লেখাটা তাঁকে শ্রদ্ধা জানিয়েই শুরু করতে চাই।
সময় কারও জন্য থেমে থাকে না। আজ কপূর সাহেবের জন্মশতবর্ষ। তিনি না থাকলে আজকে হয়তো মুম্বই ইন্ডাস্ট্রির চেহারাটাই অন্য রকম হত। তাঁর সঙ্গে এক সময়ে আমার খুবই হৃদ্যতা ছিল। কারণ, আমরা দু’জনেই ‘বাংলার মানুষ’। তিনি তো হিন্দি-বাংলা ডাবল ভার্সন ‘জাগতে রহো’ ছবিটি প্রযোজনা করেছিলেন। বাংলার শিল্পীরাও সেই ছবিতে অভিনয় করেছিলেন। আমার সঙ্গে কপূর সাহেব কিন্তু দেখা হলেই বাংলায় কথা বলতেন। কলকাতার খোঁজখবর নিতেন। ওঁর শ্যালক, অভিনেতা রাজেন্দ্রনাথ ছিলেন আমার বিশেষ বন্ধু।
একটা ঘটনা বলি। ‘মেরা নাম জোকার’-এর তৃতীয় পর্বের জন্য রাজ কপূর আমাকে নির্বাচন করেছিলেন। ছবি সই করেছিলাম। সেই সময় কলকাতার কাগজেও খবর বেরিয়েছিল। কিন্তু সেই ছবি আর তৈরি হল না। তাই আমাদের একই দিনে জন্মদিন হওয়া সত্ত্বেও ওঁর সঙ্গে আমার কাজ করা হল না। এটা আমার জীবনের একটা বড় আক্ষেপ। তবে অভিনয়ের বাইরে একাধিক বিষয়ে আমরা একসঙ্গে কাজ করেছি।
রাজ সাহেবের সূত্রেই কপূর পরিবারের সঙ্গে আমার খুব ভাল সম্পর্ক গড়ে ওঠে। কৃষ্ণা বৌদি (রাজ কপূরের স্ত্রী) আমাকে কত বার নিজের হাতে রান্না করে খাইয়েছেন। রাজ কপূরের বড় মেয়ে ঋতু কপূরের বিয়ের অনুষ্ঠান হয় আরকে স্টুডিয়োয়। সেই বিয়েতে আমরা দাঁড়িয়ে থেকে সব কাজ করেছিলাম। সে সব দিনের স্মৃতি আজও আমার মনে টাটকা।
রাজ সাহেবের সব কাজের মধ্যে একটা রাজকীয়তা ছিল। না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না। একদম রাজার মতো জীবনযাপন করতেন। পাশাপাশি মানুষের জন্য দু’হাত ভরে কাজও করেছেন। মনে আছে, একবার ঠাণেয় বলিউড এবং মরাঠি অভিনেতাদের মধ্যে প্রীতি ক্রিকেট ম্যাচের আয়োজন করেছিলাম। আমার অনুরোধে তিনি সেই ম্যাচে উপস্থিত ছিলেন। চেম্বুর থেকে আমি আমার গাড়িতে ঋষি কপূরকে তুলে নিয়ে গিয়েছিলাম। বালাসাহেব ঠাকরেও সেই ম্যাচ দেখতে গিয়েছিলেন।
আমার জন্মদিনে অনুরাগীরা কয়েক বছর আগে পর্যন্তও সঙ্গীতের অনুষ্ঠান করতেন। শনিবারেও একটা অনুষ্ঠান হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আয়োজকদের কোনও সমস্যায় তা বাতিল করতে হল। এখনও জন্মদিনে অনুরাগীরা কেক নিয়ে হাজির হন। ইন্ডাস্ট্রির পুরনো দিনের শিল্পীরা ফোন শুভেচ্ছা জানান। ভালই লাগে। আজ তো বাড়িতে সকালেই কেক কাটা হয়েছে। আমার স্ত্রী পায়েস রান্না করেছেন আমার জন্য। ওঁর সঙ্গে সকালে মন্দিরে গিয়েছিলাম।
জন্মদিনে কলকাতার কথাও খুব মনে পড়ে। সকালেই অর্পিতার (অর্পিতা চট্টোপাধ্যায়) সঙ্গে ফোনে অনেক ক্ষণ কথা হল। সাধারণত আমার জন্মদিনে গভীর রাতে ফোনে শুভেচ্ছা জানায় বুম্বা (প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়)। তবে এই বছর জানি, ও শুটিংয়ে ব্যস্ত। শুক্রবার আমার ফোনটাও বন্ধ ছিল। তাই জানি না, রাত্রে ও আমাকে ফোন করেছিল কি না। তবে মনে হচ্ছে, ও সময় পেলেই ফোন করবে।
জন্মদিনে আলাদা করে নিজের কাছে কোনও প্রতিজ্ঞা করি না। আমার আশপাশের সকলে এবং আমার অনুরাগীরা যাতে ভাল থাকেন, ঈশ্বরের কাছে সেই প্রার্থনা করি। আমি এই মুহূর্তে ‘অগ্নিযুগ: দ্য ফায়ার’ ছবিটার কাজে ব্যস্ত। এটাই এখন আমার একমাত্র মিশন। আমার খুব ইচ্ছে আছে ২০২৫ সালে ছবিটা রিলিজ় করানোর। সব ঠিক মতো হলে, কলকাতায় গিয়ে একটা সাংবাদিক বৈঠক করারও ইচ্ছে রয়েছে। এখন শুনেছি হিন্দি ছবি কলকাতায় বাংলায় ডাবিং করা হয়। এই ছবিটা আমি বাংলায়ও ডাব করাতে চাই। আসলে আমার কোনও ভাল কাজ আমি বাংলাকে ছাড়া ভাবতেই পারি না। আশা করছি, আগামী বছরটা আমার এই ছবি নিয়েই কেটে যাবে।
(সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে অনুলিখিত)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy