গাজি আব্দুন নূর
বাংলাদেশের নামকরণে ‘বাংলা’ মিশে আছে। মিশে আছে এ দেশের প্রত্যেকের রক্তে। তাই স্বতঃস্ফূর্ত ভাবেই ভালবাসি ‘বাংলা’কে। ২১ ফেব্রুয়ারি বড় গর্বের দিন আমার কাছে। শুধু আমি কেন? সকল বাংলাভাষীর কাছেই এটি গর্বের দিন। আমার বাবা-মা, ছোট কাকা— সকলে দেশের মুক্তির জন্য যুদ্ধ করেছেন। মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান হিসেবে বাংলা ভাষা এবং বাংলাদেশকে তাই প্রতি মুহূর্তে আগলে রাখি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায়।
অনেকেই জানতে চান, ভাষা দিবসের সকালটা কী ভাবে শুরু হয় বাংলাদেশে? প্রতি বছর ভাষা শহীদদের বেদিতে মালা, ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়ে স্মরণ করে সব সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। পুষ্পস্তবক দেন প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতিও। ঠিক রাত ১২টা ১ মিনিটে ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে বাংলাদেশ টেলিভিশন-সহ সব চ্যানেলে সরাসরি সম্প্রচার শুরু করে। এ ছাড়াও, বিশেষ অনুষ্ঠান থাকে বাংলাদেশের বিভিন্ন চ্যানেলে।
আরও একটি বৈশিষ্ট্য আছে। এই দিনটিতে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে নিডেদের পোশাকে কালো রংকে প্রাধান্য দেন। ছেলেরা গায়ে তোলেন পাঞ্জাবি। মেয়েদের শাড়িতে সাদা-কালোর সহবাস। প্রতি বছরের মতো এ বারেও, বাংলাদেশ সরকার বিভিন্ন বিষয়ে কৃতিত্বের জন্য ‘একুশে পদক’ তুলে দিয়েছেন কৃতীদের হাতে। অর্থাৎ, এ বছরও সব কিছুই পালিত হচ্ছে। তবে ছোট আকারে। কারণ, অতিমারি।
আমাদের দেশের আরও একটি গর্বের দিক আজ ভাগ করে নিই আপনাদের সঙ্গে। শুনলে অনেকেই হয়তো অবাক হবেন, একুশ শতকেও বাংলাদেশে বাংলা ভাষার ব্যবহার অনেক বেশি। গাড়ির নম্বর প্লেট থেকে শুরু করে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের নাম, সবেতেই। বাংলাদেশ সরকারের কাজকর্মও হয় বাংলা ভাষায়। শুনেছি, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরে, জাতিসংঘের অধিবেশনে এ দেশের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রথম বাংলায় ভাষণ দিয়েছিলেন। তবে উল্টোটাও যে একেবারে চোখে পড়ে না, তা নয়। ইদানীং কিছু রেস্তঁরা এবং শপিং মলে আধুনিকতার ছোঁয়া লাগাতে গিয়ে ইংরেজি এবং বিদেশি ভাষাও ব্যবহৃত হচ্ছে।
জানি, আগের প্রজন্ম এর জন্য দোষারোপ করেন এই প্রজন্মকে। এই প্রজন্ম নাকি ভুলতে বসেছে মাতৃভাষা। সত্যিই কি তাই? সামাজিক প্রেক্ষাপট বলছে, বিশ্বায়নের যুগে মুঠোফোনের মাধ্যমে সারা বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ করতে গিয়ে, ব্যবসা বা সরকারি-বেসরকারি কাজকর্মের জন্য আগের তুলনায় ইংরেজি ভাষা জায়গা দখল করে নিচ্ছে। ইংরেজিমাধ্যম স্কুলগুলোরও তাই জনপ্রিয়তা বাড়ছে। সন্তানেরা ইংরেজিতে কথা বলতে পারলে মা-বাবাও গর্ববোধ করেন। মানতেই হবে, মৌলিক মূল্যবোধেরও হয়তো কিছু পরিবর্তন হয়েছে।
তার পরেও ২১ ফেব্রুয়ারির সকালে এই প্রজন্ম শ্রদ্ধা জানায় শহীদ বেদিতে। মূল জনসংখ্যার ৯০ শতাংশেরও বেশি মানুষ ভাবের আদান-প্রদান করেন বাংলা ভাষায়। বাংলা ভাষার অপমৃত্যু হয়নি মোটেই, নিজেই বোঝাই নিজেকে। এখনও ‘মোদের গরব, মোদের আশা, আ মরি বাংলা ভাষা...’!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy