দিতিপ্রিয়া রায়।
আপনারা সবাই আমার মধ্যে রানি রাসমণিকে খোঁজেন। রানিমাকেই দেখেন। আপনাদের ভালবাসায়, আশীর্বাদে আমি হাজার এপিসোডের পরেও ছোট্ট কিশোরী থেকে প্রবীণ বয়সের রানিমাকে ফুটিয়ে তোলার শক্তি পাচ্ছি। আপনারা হয়তো পড়ে অবাক হচ্ছেন। ভাবছেনও, আরে! যে কিনা সারাক্ষণ মা ভবতারিণীর কাছে থাকে, তাঁর আশীর্বাদধন্য, সে কিনা আমাদের ভালবাসা, আশীর্বাদের কথা সবার আগে উল্লেখ করছে?
আপনাদের ভাবনাতে কোনও ভুল নেই। আমার বলাতেও। পরিচালক আমায় এই চরিত্রে বেছেছেন। তাকে মান্যতা দিয়েছেন আপনারা। আপনাদের মধ্যে দিয়েই মায়ের আশীর্বাদধন্যা আমি। চরিত্রের খাতিরে সারা বছর ধরেই মায়ের পূজোর সুযোগ পাই। দিনের ২৪ ঘণ্টার বেশির ভাগটাই কাটে সেটে। সেখানে আমার বিশাল সংসার। আর মা ভবতারিণী। হোক না সবটাই শ্যুটিংয়ের জন্য তৈরি। তবু ‘মা’ থাকেন তো!
তাই কালী পুজো নিয়ে আলাদা করে সত্যিই বলার কিচ্ছু নেই। ওই যে বললাম, গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে আমার নিঃশ্বাসে-প্রশ্বাসে ‘মা’। যতক্ষণ আমি সেটে ততক্ষণ আমিই ‘রানিমা’। প্যাক আপ ঘোষণা হলেই খোলস ছেড়ে রানিমা আবার হয়ে ওঠে দিতিপ্রিয়া।
রোজ ছোট পর্দায় আপনারা রাসমণির কালী পুজো দেখেন। এ বছর দিতিপ্রিয়ার সঙ্গে থাকবেন? সদ্য সাবালিকা হওয়া মেয়েটির কালী পুজো কেমন, জানতে? শুরুতেই আন্তরিক অনুরোধ, আমরা অভিনেতারা একটা সময় পর্যন্ত ‘চরিত্র’ থাকি। তার পর আবার আপনাদের মতোই রক্তমাংসের মানুষ। সেই রক্তমাংসের দিতিপ্রিয়া আস্তিক। কিন্তু ‘রানিমা’র মতো নয়। সেও পুজো-আচ্চা করে। তবে মাত্রা ছাড়ায় না। রাসমণি হওয়ার আগে, একদিনের জন্যেও কালীপুজো করিনি। উপোস করে থাকিনি। অথচ এখন উঠতে-বসতে দেবী মায়ের সঙ্গে মুখোমুখি!
আরও পড়ুন: শুভ্রজিতের ‘মায়ামৃগয়া’য় ‘রবীন্দ্রনাথ’ প্রিয়াংশু, ‘নেতাজি’ অভিষেক
কী বলবেন একে? অলৌকিকতা? অযাচিত আশীর্বাদ? সৌভাগ্য? আমি বলব, এটাই মায়ের লীলা। হয়তো অনেক আগেই এটুকু নির্দিষ্ট রাখা ছিল আমার জন্য। তাই আজ আমি এক আধারে ‘রানি রাসমণি’ আর সদ্য উচ্চ মাধ্যমিক উত্তীর্ণ দিতিপ্রিয়া রায়! যে আর পাঁচটা মেয়ের মতোই ছোটবেলায় বাড়িতে আলো, প্রদীপ, মোমবাতি জ্বালিয়েছে। বাজি অবশ্য কোনওদিনই পোড়াইনি। বরং আতসবাজিতে ভয়ই পাই। ধনতেরাসে মাকে দেখি, প্রতি বছর অল্পবিস্তর সোনা কিনতে। ওই পর্যন্তই। ওসবে আমার একটুও মোহ বা আসক্তি কিচ্ছু নেই!
অনেকেই কৌতূহলী, যাঁর মাধ্যমে মা ভবতারিণীকে জগৎ চিনল সে কতটা চিনল মাকে? আমার উত্তর, যতটা আপনারা চেনেন আমিও ততটাই চিনি। আরও স্পষ্ট করে বললে, চেনার চেষ্টাই করি না। কারণ, ওই পথে হাঁটলে আমি আপনাদের মতো স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারব না। আমারও তো বাড়ি আছে। সেখানে মা-বাবা, পরিজনেরা আছেন। দিনের শেষে যদি দিতিপ্রিয়া না হতে পারি তা হলে আমার পাশাপাশি ওঁরাও যে যন্ত্রণা পাবেন।
আরও পড়ুন: ‘বিয়ের অনুমতি চাইতেই মায়ের হাতের আশীর্বাদী পদ্ম আমার মাথায়’
আদতে খুব কম কথার মানুষ আমি। তাই নিজের সব অনুভূতি প্রকাশ করতে পারি না। করতে চাইও না। নিজের মধ্যেই থাকতে ভালবাসি। এই অন্তর্মুখীনতাই হয়্তো আমায় পর্দায় ‘চরিত্র’ হয়ে উঠতে সাহায্য করে। আবার এর জন্যেই হয়তো উৎসবের বাহ্যিক আড়ম্বর থেকে আমি অনেক দূরে, নিঃস্পৃহ। এই কারণেই, ভাইফোঁটা নিয়েও আমার কোনও মাতামাতি নেই। দুই দাদাকে ফোঁটা দিই, এই পর্যন্ত।
সংসারে থেকেও এই নির্লিপ্ততা কি মায়ের আশীর্বাদ? কে জানে...!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy