(বাঁ দিকে) ‘সাধক বামাখ্যাপা’ ধারাবাহিকের দৃশ্য, অরিন্দম গঙ্গোপাধ্যায় (ডান দিকে)। ছবি: সংগৃহীত।
শৈশব থেকেই ঈশ্বরে বিশ্বাসী। কিন্তু ‘সাধক বামাখ্যাপা’ ধারাবাহিকে অভিনয় করার পর থেকে জীবনে এসেছে বেশ কিছু বদল। ঈশ্বরকে অনেক কাছ থেকে উপলব্ধি করতে পেরেছেন। ক্রমশ বুঝতে পেরেছেন, জীবনের প্রতিটা পদক্ষেপই যেন মা তারার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত! হাতেনাতে তার প্রমাণও পেয়েছেন। আনন্দবাজার অনলাইনকে জানালেন অরিন্দম গঙ্গোপাধ্যায়।
দীর্ঘ দিন বামাখ্যাপার চরিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি। অভিনেতা বলেন, “ছোটবেলা থেকে ঈশ্বর দ্বারাই আমার জীবন নিয়ন্ত্রিত। কিন্তু তখন এটা বুঝতে পারতাম না। ‘সাধক বামাখ্যাপা’-তে অভিনয় করার পর আমি নিশ্চিত হই, সত্যিই তাঁর সঙ্গে কোনও যোগ রয়েছে। তাঁর দ্বারাই আমার কাজকর্ম, জীবন নিয়ন্ত্রিত। আমি বরাবরই ঈশ্বর বিশ্বাসী। যদিও আমি কোনও রকমের কুসংস্কারে বিশ্বাস করি না।”
টানা দশ বছর ধরে চলেছিল এই ধারাবাহিক। তার মধ্যে আট বছর দেখা গিয়েছিল অরিন্দমকে। তাঁর কথায়, “এই রেকর্ড আর কেউ ভাঙতে পারবে বলে মনে হয় না। এই ধারাবাহিকের সময় বিভিন্ন অদ্ভুত বিষয় উপলব্ধি করেছি। যে মুহূর্তে বামাখ্যাপার রূপে সাজগোজ সম্পন্ন হত, আমার মধ্যে যেন কী একটা পরিবর্তন ঘটে যেত। এক অদ্ভুত অনুভূতি হত, যা আমি বলে বোঝাতে পারব না। মনে আছে, শুটিং শেষে আমার দাঁড়ানোর ক্ষমতা থাকত না। আমি মাতালের মতো টলতে টলতে গাড়িতে উঠতাম। আসলে সাধকেরা শারীরিক ভাবেও শক্তিশালী হন। সেই শক্তি তো আমাদের নেই। কিন্তু ওই চরিত্রে থাকার সময়ে আমার মধ্যেও যেন অদ্ভুত শক্তি কাজ করত। তাই শুটিং শেষে মনে হত আমার উপর খুব চাপ পড়ছে।”
ধারাবাহিকে প্রায়ই থাকত মা তারাকে বামাখ্যাপার আরতি করার দৃশ্য। এই দৃশ্য বিশেষ সাড়া ফেলেছিল দর্শকের মধ্যে। অরিন্দমের কথায়, “ফ্রেমে শুধু আমি আর মা। মায়ের সঙ্গে অভিনয়ের সময়ে ভীষণ ভাবে তাঁর অস্তিত্ব উপলব্ধি করতাম। তবে তা ভাষায় বোঝানো অসম্ভব।”
জীবনে একবার লোভের বশবর্তী হয়ে হাতেনাতে ফলও পেয়েছিলেন অরিন্দম। অলৌকিক অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছিলেন তিনি। অরিন্দমের স্বীকারোক্তি, “একবারই জীবনে একটু লোভ করেছিলাম। ধারাবাহিক সফল হওয়ায় আমার কাছে বামাখ্যাপার চরিত্রে যাত্রাপালা করার প্রস্তাব আসে। উপার্জনের লোভেই আমি রাজি হয়ে যাই। তখন ধারাবাহিকটিও চলছে। এই লোভের ফল আমি পেয়েছি। যাত্রার দ্বিতীয় শো করে ফেরার সময়ে এক বিরাট দুর্ঘটনার মুখে পড়ি। যার ফলে কাজটা সেখানেই থেমে যায়।”
অভিনেতা জানান, এই দুর্ঘটনা এতটাই ভয়াবহ ছিল যে তাঁর প্রাণে বেঁচে যাওয়ার কোনও সম্ভাবনাই ছিল না। অরিন্দম বলেন, “আমাদের চালক মাদকাসক্ত ছিলেন। অন্ধকার রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা লরিতে গিয়ে ধাক্কা মারেন। ঘটনাস্থলেই চালকের মৃত্যু হয়। আমি অচৈতন্য হয়ে গিয়েছিলাম। সাধারণত দুর্ঘটনার পরে মানুষের ট্রমা ভয়ানক আকার নেয়। কিন্তু সেই অভিজ্ঞতাটাই আমার হয়নি। আমি অচেতন ছিলাম। টেরই পাইনি, কী ভয়ানক দুর্ঘটনার মধ্যে পড়েছি। জ্ঞান ফেরার পর দেখি আমার পোশাক ছিঁড়ে গিয়েছে। পাঁজরে চোট লেগেছিল। তবে যে মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটেছিল, তার তুলনায় সেই চোট সামান্যই। খবর পেয়ে বাড়ির সকলে ভেবেছিলেন আমি হয়তো শেষই হয়ে গিয়েছি। বাঁচার কথাই নয়। কিন্তু আমি সম্পূর্ণ সুস্থ ছিলাম। এমনকি দুর্ঘটনার ভয়াবহতাও আমাকে ছুঁতে পারেনি। এর চেয়ে অলৌকিক আর কী হতে পারে! বুঝতে পারি, এটা লোভেরই শাস্তি দিয়েছেন মা। যাত্রার জন্য নেওয়া অগ্রিমের বেশ কিছু অংশ ফেরত দিই।”
এই ঘটনার পর থেকেই বিশ্বাস যেন আরও অটুট হয়েছে তাঁর। নিজে কালীপুজো করেন না ঠিকই। কিন্তু বিশ্বাস করেন, এখনও ঈশ্বরই তাঁকে প্রতি পদক্ষেপে নিয়ন্ত্রণ করছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy