Advertisement
E-Paper

পৃথিবী কি কেবল মানুষের! দীপাবলিতে পোষ্য সন্তানদের সাবধানে রাখতে কী করেন টলি তারকারা?

প্রতি বছর কালীপুজো, দীপাবলির সময়ে কুকুর-বিড়াল থেকে শুরু করে পাখিরা অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে।

Tollywood personalities take extra care to keep their pets during Kali Puja and Diwali

মিমি চক্রবর্তী, তথাগত মুখোপাধ্যায়, শ্রীলেখা মিত্র, পিয়া চক্রবর্তী। গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৬ অক্টোবর ২০২৪ ১৬:১০
Share
Save

পৃথিবীর সবচেয়ে উন্নত ও প্রভাবশালী প্রাণী মানুষ। তার হাতেই এই যাবতীয় ক্ষমতা। আর ক্ষমতা থাকলে অপব্যবহার কী ভাবে করতে হয়, তা-ও মানুষের জানা। এই পৃথিবীর মালিকানা যেন তাদেরই হাতে। যখন যেখানে খুশি ঘুরে বেড়ানোর অধিকার তাদেরই রয়েছে, এমনই মনে করে মানুষ! পৃথিবীর অন্য জীবদের প্রাপ্য অধিকারে দখলদারি করেই তারা উন্নত থেকে উন্নততর হয়ে ওঠে। কখনও আবার অবোলা প্রাণীদের যন্ত্রণা দিয়েই আনন্দ খুঁজে নেয় পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষমতাশীল জীব। এমন অভিযোগও তোলে মানুষই। ঠিক যেমন প্রতি বছর কালীপুজো, দীপাবলির সময়ে কুকুর-বিড়াল থেকে শুরু করে পাখিদের অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে। শব্দবাজির ঠেলায় তাদের প্রাণ ওষ্ঠাগত।

মানুষের তুলনায় কয়েক গুণ বেশি শ্রবণ শক্তি কুকুর-বিড়ালের। অর্থাৎ যে শব্দবাজির দাপটে মানুষেরই কানে তালা লেগে যায়, তা শুনে এই পশুদের পরিণতি আন্দাজ করা যায়। তবে শুধু শব্দবাজির দাপট নয়। কুকুর-বিড়ালের লেজে আতশবাজি বেঁধে দেওয়ার মতো ‘অসভ্য’ আনন্দও করে থাকে পৃথিবীর এই সভ্য মানুষ। পশুদের উপর অত্যাচারের বিরুদ্ধে আইন রয়েছে দেশে। তবে আইনের দৌড়ে এগিয়ে যেতেও বেশ বেগ পেতে হয়। প্রতি বছরই দীপাবলিতে হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে পশুদের মৃত্যুর ঘটনা উঠে আসে খবরের শিরোনামে। এই দুঃসময়ে চারপেয়ে সন্তানদের কী ভাবে সুরক্ষিত রাখেন টলিপাড়ার পোষ্য-অভিভাবকেরা, খোঁজ নিল আনন্দবাজার অনলাইন।

কাজের বাইরে দিনের বেশির ভাগ সময় মিমি চক্রবর্তী কাটান তাঁর সারমেয়-সন্তানদের নিয়ে। মিমির বক্তব্য, “সহমর্মিতা ও দয়া— এই দুটো বিষয় অনেক রোগ সারিয়ে তুলতে পারে। এটা মানুষ যে দিন বুঝবে, পৃথিবীটা সহজ হয়ে উঠবে। এই পৃথিবীতে সকলে একসঙ্গে সুখে বাস করতে পারবে। আমরা শক্তিশালী বলে দুর্বলের গলা চেপে ধরার অধিকার আমাদের নেই। সে মানুষ হোক বা পশু। কারণ রয়েছে বলেই নিশ্চয়ই শব্দবাজি নিষিদ্ধে হয়েছে।”

শব্দহীন ও পরিবেশবান্ধব দীপাবলি উদ্‌যাপন করার পক্ষে মিমি। নিজেও সেই ভাবেই আলোর উৎসবে শামিল হবেন তিনি। অভিনেত্রীর কথায়, “এই সময় হাজার হাজার পাখির মৃত্যু হয়। পশুদের মৃত্যু হয় হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে। এই দূষিত আবহে আমরাও শ্বাস-প্রশ্বাস নিই। পরিবেশের সুরক্ষার্থে অন্তত সচেতন হওয়া উচিত মানুষের।”

দীপাবলির সময়ে দুর্বিষহ অবস্থার মধ্যে পড়েন শ্রীলেখা মিত্র। পোষ্য-সন্তানদের সামলাতে হিমশিম খান। শ্রীলেখা বলেন, “কালীপুজো এলেই মনের মধ্যে বিভীষিকা তৈরি হয়। এখন আমার বাড়িতে পাঁচ জন চারপেয়ে বাচ্চা। আমার গৃহকর্ম সহায়িকার বাড়িতে কালীপুজো হয়। তিনিও থাকেন না। একা সবটা সামাল দিতে হয়। মনে আছে, গত বার বাড়িতে সদ্য একটা বিড়ালছানা এসেছিল। কুকুরদের সঙ্গে তখন ওর সখ্য হয়নি। ওদের আলাদা ঘরে রাখতে হয়েছিল। দুই ঘর দৌড়দৌড়ি করে কাটিয়েছিলাম।”

(বাঁ দিকে) মিমি চক্রবর্তী, শ্রীলেখা মিত্র (ডান দিকে)।

(বাঁ দিকে) মিমি চক্রবর্তী, শ্রীলেখা মিত্র (ডান দিকে)। ছবি: সংগৃহীত।

অগত্যা পুলিশে খবর দিতে বাধ্য হয়েছিলেন শ্রীলেখা। কারণ, বাড়ির বাইরে চলছিল প্রতিবেশীদের শব্দবাজির দাপট। পোষ্যদের কানে তুলো গুঁজেও সামাল দিতে পারছিলেন না। ভয় সিঁটিয়ে ছিল চারপেয়ে সন্তানেরা। ঘরের দরজা-জানলা বন্ধ করে গান চালিয়ে পোষ্যদের ভয়মুক্ত রাখার চেষ্টা করছিলেন। অভিনেত্রীর কথায়, “আমার আবাসনের প্রতিবেশীরা ৬০ বাক্স শব্দবাজি ফাটিয়েছিল। পুলিশকে জানিয়েছিলাম। পুলিশ আসেও। কিন্তু নীচেই পুলিশের সঙ্গে পাড়ার লোকজন বোঝাপড়া করে নিয়েছিল।” পশুপ্রেমের জন্য নিজের আবাসনেই বহু ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে শ্রীলেখাকে। তবে অভিনেত্রীও চাঁদা দেন না বা পুজোতে যোগদান করেন না। তাঁর কথায়, “যারা পশুদের ভালবাসে না, তাদের সঙ্গে আমি কোনও যোগাযোগ রাখি না। মানুষদের আমি ত্যাগ করেছি। জানোয়াররা অনেক ভাল, আমি এই সব অনাচারের বিরুদ্ধে মুখ না খুলে পারি না। আমার আর কিচ্ছু যায় -আসে না।”

শুধু প্রাপ্তবয়স্কেরাই নয়। শব্দবাজি ফাটানো বা পশুদের বিরক্ত করার জন্য কিছু বাচ্চাকেও সমান ভাবে দোষী মনে করেন শ্রীলেখা। অভিনেত্রীর কথায়, “ছোটবেলা থেকেই বোঝা যায়। যে বাচ্চারা ছোটবেলা কুকুর-বিড়ালকে মারে, ঢিল ছোড়ে, তারা বড় হয়ে অপরাধীতে পরিণত হওয়ার ক্ষমতা রাখে।”

পশুপ্রেমী হিসাবে পরিচিত তথাগত মুখোপাধ্যায়। পশুদের অধিকারের জন্য বার বার সরব হয়েছেন তিনি। পরিচালক বলেন, “আমরা যে শব্দ শুনি, তা ১০০ গুণ জোরে শোনে কুকুরেরা। ওরাও তো আমাদের প্রতিবেশী। এই পৃথিবীর বাসিন্দা ওরাও। নিজেদের অধিকারের জন্য ওরা লড়ে না। আমাদের তাই লড়াইটা করতে হয়। আমি আমার পরিসরের মানুষের উপর বিশ্বাস রাখছি যে, তারা শব্দবাজি ফাটাবেন না। যদিও অধিকাংশ মানুষ এখনও অসচেতন।” তবে আগের থেকে পরিস্থিতি বেশ কিছুটা বদলেছে বলে মনে করেন তথাগত। তিনি বলেন, “আগে যেমন কুকুরের লেজে কালীপটকা বেঁধে দিয়ে উল্লাস হত, গত কয়েক বছরের পরিশ্রমে আমরা তা কিছুটা বন্ধ করতে পেরেছি। এই শহরে হয়তো এমন কিছু করার আগে নিষ্ঠুর মানুষ দু’বার ভাবে।”

(বাঁ দিকে) পিয়া চক্রবর্তী ও পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, তথাগত মুখোপাধ্যায় (ডান দিকে)

(বাঁ দিকে) পিয়া চক্রবর্তী ও পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, তথাগত মুখোপাধ্যায় (ডান দিকে) ছবি: সংগৃহীত।

এই সময় সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় পাখি এবং সেই সঙ্গে গাছপালা। তথাগতের কথায়, “গাছের গায় বৈদ্যুতিন আলো লাগানো থাকে। আগুনের ফুলকি গিয়ে পড়ে। এর ফলে গাছপালারও ব্যাপক ক্ষতি হয়। এই ক্ষতি যদিও প্রকারান্তে নিজেদেরই ক্ষতি। আর অন্যের ক্ষতি করে নিজে কী ভাবে আনন্দ পাওয়া যায়, এ আমি কোনও দিন বুঝিনি। এই বিকট শব্দের মধ্যেই বা কী আনন্দ বুঝি না!”

মার্জার পুত্র ও সারমেয় কন্যার জন্য এই সময়টা চিন্তায় থাকেন সমাজকর্মী তথা গায়িকা পিয়া চক্রবর্তীও। তাঁর কথায়, “শব্দবাজি মানুষের জন্যও একই ভাবে খারাপ। আমরা অনেকেই পছন্দ করি না। পোষ্য সন্তানের অভিভাবক হিসাবে জানি, এই সময়টা ওরা কতটা কষ্টে থাকে। তাই এই সময়টা যতটা সম্ভব ওদের শান্ত রাখার চেষ্টা করি। জানলা বা বারান্দা থেকে দূরে রাখি। সবচেয়ে ভিতরের দিকে কোনও ঘরে রাখি ওদের, যাতে ওরা কম শব্দ শুনতে পায়। ঘরে হালকা গান চালিয়ে রাখি যাতে খারাপ শব্দটা ওদের কানে না পৌঁছতে পারে।” এই সমাজে সকলের সমান অধিকার রয়েছে বলে মনে করেন পিয়া। তাই কালীপুজো বা দীপাবলির সময় শব্দবাজির প্রকোপ ও পশুদের উপর অত্যাচার রোধ করতে সঠিক জায়গায় অভিযোগ জানানোর পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

Kali Puja 2024 Mimi Chakraborty Sreelekha Mitra Tathagata Mukherjee piya chakraborty Pet Love

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।