Advertisement
২০ ডিসেম্বর ২০২৪
Actor

মা চাননি এত ভয়াবহতা দেখুক তাঁর পর্দার ‘বামাক্ষ্যাপা’, তাই দুর্ঘটনা থেকে বাঁচিয়ে দিলেন

অভিনয় করতে করতেই সেটের মন্দিরে প্রতিষ্ঠিত তারা মায়ের মূর্তির সঙ্গে এক অদ্ভুত সখ্য জন্মেছিল আমার।

অরিন্দম গঙ্গোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ নভেম্বর ২০২০ ১৩:২০
Share: Save:

পুজো নিয়ে আমি বেশ উৎসাহী। ওই যে সবাই মিলে হইচই হবে, মজা হবে, এ সবে বড় মজা। তা সে দুর্গা পুজোই হোক বা কালী পুজো। লক্ষ্মী বা সরস্বতী পুজো নিয়েও আমি কিন্তু সমান উৎসাহী। কিন্তু কোনও দিন নিরম্বু উপোসী থেকে সাধন ভজন করা ধাতে নেই।

তার মধ্যে কালী পুজোর প্রতি আমার যেন একটু বেশি পক্ষপাতীত্ব। কেন? ওই দিন প্রচুর বাজি পোড়ানো যায়। সারা বাড়ি ঝলমলিয়ে ওঠে আলোর রোশনাইয়ে। কোথাও প্রদীপ, কোথাও মোমবাতি। ছোটবেলার সেই শখ কিন্তু আমার যায়নি। এখনও একই ভাবে আনন্দে মেতে উঠি এই দিনে। তবে এ বছর বাজি পোড়াব না। আগে আমাদের অস্তিত্ব বাঁচুক। তার পর সব কিছু।

জানেন, এখনও হইহই করে দুই বোন, মাসতুতো বোনেরা আমায় ফোঁটা দেয়। জামাকাপড়, নানা রকমের মিষ্টি ডিশে সাজিয়ে মন্ত্র পড়ে যমের দুয়ারে কাঁটা দেন। আমি কি দিই? বরাবর ওদের টাকা দিয়ে দিই। ওদের পছন্দ মতো জিনিস যাতে কিনে নিতে পারে। তবে প্রতি বারই ওদের খরচ হয় বেশি। খাওয়া-দাওয়া, দেওয়া-থোওয়া করতে গিয়ে।

কালী পুজোয় কালী মাকে নিয়ে আমার কোনও কথা থাকবে না, কী করে সম্ভব! ৫৪ বছরের অভিনয় জীবনে ছোট পর্দায় দু’বার দুই সাধকের জীবনে অভিনয় করেছি। সাধক বামাক্ষ্যাপা আর শ্রী রামকৃষ্ণদেব। দ্বিতীয় চরিত্রে আমার অভিনয় বড়ই কম। প্রথম চরিত্রে টানা আট বছর আমি অভিনয় করেছিলাম।

অভিনয় করতে করতেই সেটের মন্দিরে প্রতিষ্ঠিত তারা মায়ের মূর্তির সঙ্গে এক অদ্ভুত সখ্য জন্মেছিল আমার। প্রতি মুহূর্তে যেন অনুভব করতে পারতাম মাকে। সংলাপহীন আরতির দৃশ্যে মায়ের সঙ্গে এতটাই একাত্ম হয়ে যেতাম যে তার প্রভাব পড়ত দৃশ্যে। দর্শকেরাও ঘুরেফিরে ওই আরতির দৃশ্য দেখতে চাইতেন পাগলের মতো। ফলে, মাঝেমধ্যেই আরতির দৃশ্য দেখাতে হত মেগায়। সামনে পেলে পা ছুঁয়ে প্রণাম তো ছিলই। মা-বাবার বয়সীরাও আমাকে ‘বাবা বামাক্ষ্যাপা’ বলে ডেকে ঝাঁপিয়ে পড়ে প্রণাম করতেন। প্রথম প্রথম ভীষণ অস্বস্তি হত। তারপর মেনে নিয়েছিলাম এই ভেবে, আমাকে নয়, ওই সাধককে সবাই ছুঁয়ে দেখতে চাইছেন। শ্রদ্ধা, সম্মান জানাচ্ছেন।

৫৪ বছরের অভিনয় জীবনে ছোট পর্দায় দু’বার দুই সাধকের জীবনে অভিনয় করেছি।

মেগার পাশাপাশি যাত্রাতেও সাধক বামার চরিত্রে অভিনয়ের ডাক পেয়েছিলাম। বাড়তি রোজগারের লোভে আমি রাজি ততক্ষণাৎ। কিন্তু মাত্র দুটো শো করতে পেরেছিলাম। তারপরেই হাতে নাতে মিলেছিল লোভের শাস্তি।

যাত্রাতেও সাধকের চরিত্রে আমি হিট। দ্বিতীয় শো করে গাড়িতে ফিরছি। আচমকাই স্পিডে ছুটে চলতে চলতে গাড়ি সোজা ধাক্কা মারে দাঁড়িয়ে থাকা একটি লরিতে। চোখের পলকে গাড়ি দুমড়ে-মুচড়ে চুরমার। চালক ঘটনাস্থলেই মৃত। আমার গায়ে সামান্য আচড় লেগেছিল!

এটাই মায়ের খেলা। নইলে ওরকম মারাত্মক গাড়ি দুর্ঘটনায় কেউ বাঁচে? পরের দিন সকালে ফোনের পর ফোন। কাগজের প্রথম পাতায় দুর্ঘটনার ছবি দেখে সবাই ধরে নিয়েছিলেন, আমিও শেষ। যদিও নাকের একটি হাড় ভেঙে যাওয়া আর পাঁজরের একটি হাড়ে আঘাত লাগার বাইরে আমার কিচ্ছু হয়নি! উপরন্তু অ্যাক্সিডেন্টের এক সেকেন্ড আগে আমি জ্ঞান হারিয়েছিলাম। যেটা হওয়ার কোনও কারণই ছিল না!

সুস্থ হওয়ার পরে বুঝেছিলাম, প্রাণে বেঁচেছি যেমন মায়ের ইচ্ছেতে, তেমনই দুর্ঘটনার আগে অজ্ঞান হয়ে পড়াটাও তাঁরই কৃপায়। মা চাননি, এত ভয়াবহতা দেখুক তাঁর পর্দার ‘বামা’।

শুধু এটুকুই শিক্ষা দিতে চেয়েছিলেন, সাধকের চরিত্রে যিনি অভিনয় করছেন তাঁর এত লোভ মানায় না!

অন্য বিষয়গুলি:

Actor Diwali Celebration Kali Puja 2020 Arindam Ganguly
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy