দেরিতে হলেও অ্যাকাডেমির বাতানুকূল যন্ত্র সারানো হলে হাঁপ ছেড়ে বাঁচবেন কলাকুশলী থেকে শুরু করে দর্শক। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
একসঙ্গে দু’টি খবর। একটি খারাপ, অন্যটি আশাপ্রদ। খারাপ খবর হল, আগামী ১২ মার্চ ‘নান্দীকার’ নাট্যদলের দু’টি শো বাতিল হচ্ছে। অনলাইনে টিকিট বিক্রি হয়ে গিয়েছিল অনেক, হতাশ হয়ে পড়বেন দর্শক। তবে ভাল খবর এই যে, অবশেষে সংস্কার হচ্ছে অ্যাকাডেমি অফ আইন আর্টস-এর। অচল বাতানুকূল যন্ত্র এবং ভেঙে পড়া প্রেক্ষাগৃহ সংস্কার করে প্রাণ ফেরানো হচ্ছে মঞ্চের। অল্প অল্প করে মেরামতি হবে। যা তহবিল রয়েছে তাতে সবটা একবারে হবে না, এমনটাই জানালেন কর্তৃপক্ষ।
আনন্দবাজার অনলাইন যোগাযোগ করেছিল অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টস-এর ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান তথা প্রাক্তন আইপিএস প্রসূন মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে। তিনি বললেন, “মেরামতি অল্পবিস্তর আমরা মাঝেমাঝেই করেছি। পুরো মেরামত করতে গেলে কোটি কোটি টাকা প্রয়োজন। কে দেবে? যা পাওয়া গিয়েছে তা থেকে আগে ছাদ মেরামত করা হয়েছে। গ্রিনরুম রং করা হয়েছে আর এ বার এসি বসানো হচ্ছে নতুন। এটাতেই সময় বেশি লাগবে।”
এ দিকে অ্যাকাডেমি সংস্কারের জন্য মাশুল দিতে হল ‘নান্দীকার’-এর মতো ঐতিহ্যবাহী নাট্যদলকেও। সোমবার সকালেই সমাজমাধ্যমে একটি বিজ্ঞপ্তি পোস্ট করেছিল ‘নান্দীকার’। তারা লিখেছে, “অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টস মঞ্চের এসি মেরামতির জন্য আগামী ১২ মার্চ ‘এক থেকে বারো’ এবং ‘মানুষ’ নাটক দুটির শো স্থগিত করা হল। এই নাটক দুটির পরিবর্তিত তারিখ শীঘ্রই ঘোষণা করা হবে।”
তবে ‘নান্দীকার’ কর্তৃপক্ষ দর্শকের অসুবিধার কথা ভেবেই যে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তা-ও স্পষ্ট করেন। বিজ্ঞপ্তিতে আরও লিখেছেন, “এই অনিচ্ছাকৃত পরিবর্তনের জন্য আমরা দুঃখিত। তীব্র গরমে দর্শকদের যাতে অসুবিধা না হয় সেই জন্যই এই সিদ্ধান্ত।”
ট্রাস্টি বোর্ডের তরফে প্রসূন জানান, বাতানুকূল যন্ত্রের মেরামতিতে ৪-৫ দিন লাগবে। এর মধ্যে ‘নান্দীকার’-এর শোয়ের তারিখ পড়ে যাওয়ায় একটু সমস্যা হয়ে যায়। যদিও তাঁরা বিকল্প রাস্তা বলেছিলেন, কিন্তু ‘নান্দীকার’ শো বাতিল করার সিদ্ধান্তই নেয়।
অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টসের ‘অব্যবস্থা’ নিয়ে এত দিন ধরে আঙুল তুলেছেন শিল্পী এবং নাট্যব্যক্তিত্বদের একাংশ। সকলেই চেয়েছিলেন সংস্কার হোক অ্যাকাডেমির। দরকারে কিছু দিন হল বন্ধ রাখা হোক। কিন্তু ট্রাস্টি বোর্ড নড়েচড়ে বসেনি— আনন্দবাজার অনলাইনকে তেমনই বলেছিলেন ‘পঞ্চম বৈদিকে’র পরিচালক অর্পিতা ঘোষ, নান্দীকারের সপ্তর্ষি মৌলিক থেকে শুরু করে অভিনেতা অনির্বাণ ভট্টাচার্য। তার পর এগিয়ে আসে আনন্দবাজার অনলাইন। সব পক্ষের সঙ্গে কথা বলে সমস্যা তুলে ধরার চেষ্টা করে।
গত বছর ১৩ নভেম্বর আনন্দবাজার অনলাইনই প্রথম অ্যাকাডেমির সামগ্রিক দুরবস্থা, বিপন্নতা এবং বর্তমান প্রতিকূলতা নিয়ে বিশদে লিখেছিল। তার পরেই প্রতিক্রিয়া শুরু হয়।
দেরিতে হলেও কয়েক মাসের মাথাতেই অ্যাকাডেমির বাতানুকূল যন্ত্র সারানো হওয়ায় হাঁপ ছেড়ে বাঁচবেন কলাকুশলী থেকে শুরু করে দর্শক।
আনন্দবাজার অনলাইন এই প্রসঙ্গে যোগাযোগ করে ‘নান্দীকার’-এর সঙ্গে। দলের তরফে পরিচালক এবং অভিনেতা সপ্তর্ষি মৌলিক বললেন, “এসি ঠিক হয়ে যাচ্ছে, এটা সত্যিই ভাল খবর। টাকা দিয়ে টিকিট কেটে দর্শক নাটক দেখবেন, সেখানে সাধারণ আরামটুকু মানুষ আশা করবেন। এসি ছাড়া বদ্ধ জায়গায় বসে কয়েক ঘণ্টা কাটানো সম্ভব নয়। তাই এক দিকে ভাল খবর। কিন্তু ওই দিনে আমাদের শো পড়ে যাওয়াটাও দুর্ভাগ্যজনক। ওঁরা আমাদের বললেন স্ট্যান্ড ফ্যানের ব্যবস্থা করে দেবেন। কিন্তু তাতে আমরা রাজি হইনি।”
সকাল থেকে অ্যাকাডেমি কর্তৃপক্ষের ফোন পাচ্ছেন ‘নান্দীকার’-এর সোহিনী সেনগুপ্তও। সোহিনী অবশ্য পুরো ব্যাপারটা ইতিবাচক ভাবেই দেখেছেন। আনন্দবাজার অনলাইনকে বললেন, “অ্যাকাডেমি তো আমার ঘরবাড়ি। ৩ বছর বয়স থেকে ওখানে শো করছি। করব সারা জীবন। কিছু দিন সংস্কার হয় হোক না।”
শো বাতিল হওয়ায় কোনও আক্ষেপ নেই তাঁর। উল্টে সোহিনী বললেন, “না আমাদের দোষ, না কর্তৃপক্ষের। শীতকালে এসি সারানোর লোক আসার কথা ছিল। তখন আসেনি, যখন ওদের সময় হল এতটা গরম পড়ে গিয়েছে। এখন তো কষ্ট হবে দর্শকের। বসে থাকবেন কী ভাবে! অভিনেতাদের জন্যও কষ্টকর। হাউসফুল শোতে এসি ছাড়া চলে না। তাই আমরা টিকিটের টাকা ফেরত দিয়ে দেব দর্শককে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy