‘অসুর’
পুরাণ আর সাইকোলজিক্যাল থ্রিলারের মিলমিশে তৈরি টানটান সিরিজ় ‘অসুর’ দেখতে দেখতে মনে পড়ে যাবে ‘সেক্রেড গেমস’, মহাভারত, সিলভিয়া প্লাথ... অনেক কিছুই। টানটান বলেই এই হুডানইট-এর শেষ অবধি দেখার ধৈর্য ধরে থাকা যায়। তবে এ যুগের সাইকোলজিক্যাল কিলারকে অসুর সাব্যস্ত করার শেষ চেষ্টাটুকু বাদ দিলে এ কাহিনি উপভোগ্য। সুতো আলগা হয়েছে মধ্যে মধ্যেই, রেফারেন্স আর ইনটিউশনের দাপটে হারিয়ে গিয়েছে যৌক্তিকতাও। তবে আরশাদ ওয়ারসিকে সম্পূর্ণ আলাদা রূপে পাওয়া এই সিরিজ়ের অন্যতম প্রাপ্তি। সঙ্গে টেলিভিশনের ‘আই ক্যান্ডি’ বরুণ সোবতির যোগ্য সঙ্গত।
বারাণসীর ঘাটে শুরু হয় কাহিনি। জন্মসূত্রে না পরিস্থিতির দায়ে ধীরে ধীরে কী ভাবে ‘অসুর’ হয়ে ওঠে এক বালক, তার ধরতাই দেওয়া আছে প্রতি এপিসোডের শুরুতে। পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন জায়গা জুড়ে চলতে থাকে নৃশংস সিরিয়াল কিলিং। সেই সব শবদেহের পাশে পড়ে থাকে কাটা তর্জনী ও একটি মুখোশ। হত্যার স্থান-কাল-পাত্রের খবর পৌঁছে যায় বিদেশে বসে থাকা ফরেন্সিক এক্সপার্ট নিখিল নায়ারের (বরুণ সোবতি) কাছে। দেশে ফিরে সে যোগ দেয় পুরনো টিমে, যার লিড ধনঞ্জয় রাজপুত (আরশাদ ওয়ারসি)। তদন্ত যত এগোতে থাকে, হত্যালীলার সুতোগুলো একে একে বেরিয়ে আসে। পরিস্থিতি এক সময়ে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয় নিখিল আর ধনঞ্জয়কেই। ফ্ল্যাশব্যাকে ফিরে ফিরে আসে সেই শীতল চাউনির বালক, যে এক সময়ে নিজের বাবাকে খুন করেছিল। দর্শকের বুঝতে অসুবিধে হয় না, কাহিনির ‘অসুর’ কে। তাকে বড় বয়সে খুঁজে বার করাই হয়ে ওঠে টিম ধনঞ্জয়ের চ্যালেঞ্জ। আর এই খোঁজার প্রক্রিয়াতেই চোনা ফেলে দিয়েছে একাধিক লুজ় এন্ড।
শুরুতেই যে বিশদ হত্যালীলা দেখানো হয়েছে, সেটি একটি ভিডিয়ো ক্যামেরায় শুট করা। অন্য কারও করা ভিডিয়োয় হত্যাকারীকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। হ্যান্ড হেল্ড ক্যামেরায় অমন মসৃণ শুট কী করে হয়, প্রশ্ন ওঠে। অদ্ভুত ভাবে এই প্রশ্নও তদন্তকারীদের মনে জাগে না যে, খুনি একা নয়, তার সঙ্গী রয়েছে।
অসুর (ওয়েব সিরিজ়)
পরিচালনা: অনি সেন
অভিনয়: আরশাদ ওয়ারসি, বরুণ সোবতি
৬/১০
ধনঞ্জয়কে যেমন আচমকা অ্যারেস্ট করা হয়, তেমনই পরবর্তী সময়ে খুব সহজেই সে জেলে থাকাকালীন তদন্ত চালিয়ে যেতে পারে, পুরোদস্তুর সেট-আপ সমেত। আদিত্য জালান নামের তরুণ বিজ়নেসম্যানকে খুনের সময়ে এত কড়া নিরাপত্তাব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও খুনি অত বড় একটা মুখোশ নিয়ে অকুস্থলে পৌঁছতে পারে, মৃতদেহের পাশে রেখেও আসে, সকলের চোখে ধুলো দিয়ে।
নিখিলকে কিডন্যাপের পর থেকেই কাহিনির টানটান ভাব উধাও হয়ে যেতে থাকে। তার জায়গায় চলে আসে জোর করে মিলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা। ডিস্টার্বড চাইল্ডহুড, মাইথোলজি, কর্ম... সব মিলেমিশে জট পাকিয়ে যায়। তার উপর সার্ভাইভাল অব দ্য ফিটেস্টের থিয়োরিও চলে আসে এক অবাস্তব উপায়ে। শেষের দিকের অহেতুক জটিলতাগুলি এড়িয়ে গল্প সরলরেখায় চললে পরিণতি উপভোগ্য হতে পারত।
এই সিরিজ়কে ‘সেক্রেড গেমস’-এর চেয়ে এগিয়ে রাখা যাবে কি না, তা নিয়েও তর্ক উঠতে পারে। তবে আরশাদ ওয়ারসিকে কমেডির বাইরে এমন ভাবে আনার জন্য পরিচালক অনি সেনকে কুর্নিশ। সাধুবাদ প্রাপ্য সিনেম্যাটোগ্রাফার সায়ক ভট্টাচার্যেরও। ছোট বয়সের শুভ ওরফে বিশেষ বনসলও আর এক প্রাপ্তি এ সিরিজ়ের।
লকডাউনের দিনযাপনে এ সিরিজ় আপনাকে বেঁধে রাখবে, এ নিশ্চয়তা রয়েছে। তবে শেষে অসুরের স্বরূপ উদ্ঘাটনের ভাবনায় অভিনবত্ব থাকলেও তা দর্শায়নে রয়েছে খামতি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy