‘এইটিথ্রি’-এ কপিল দেবের চরিত্রে রণবীর ও ‘তুফান’-এর প্রস্তুতিতে ফারহান
‘স ত্তর মিনিট। সত্তর মিনিট হ্যায় তুমহারে পাস...’ কোন ছবির সংলাপ তা প্রশ্ন করাই বাহুল্য। কিন্তু এই এক লাইনেই ম্যাজিক, যাতে বশ গোটা দেশের দর্শক। একটা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে লক্ষ্যে পৌঁছনোর কাহিনি। অনেক না পাওয়া, অপমান, হতাশা থেকে জিতে যাওয়ার গল্প। আর সেই আড়াই ঘণ্টায় খেলোয়াড়ের সঙ্গে দর্শকেরও দৌড় শুরু। অভাবের হার্ডল, পরাজয়ের গ্লানি, প্রতিযোগিতা পেরিয়ে অ্যাড্রিনালিন রাশ, জয়ের আনন্দ... ছবির শেষে দর্শকও এক অদৃশ্য ট্রোফি হাতে হল থেকে বেরোন। খেলোয়াড়ের সঙ্গেই জিতে যায় ছবিটিও।
বলিউড তৈরি ২০২০-তে একঝাঁক স্পোর্টস মুভি নিয়ে। রণবীর সিংহ, শাহিদ কপূর, অজয় দেবগণের মতো বড় বড় তারকাও রয়েছেন সে সব ছবিতে। পিছিয়ে নেই নায়িকারাও। বরং বলা যায় এগিয়ে। ইনিংস শুরু করছেন কঙ্গনা রানাউত তাঁর ‘পঙ্গা’ দিয়ে। ট্রেলার দেখেই বোঝা যাচ্ছে, ছবিতে জয়া নিগম (কঙ্গনা) বত্রিশ বছর বয়সে কবাডিতে কামব্যাক করছে। তার উপরে ছ’বছরের শিশুর মা সে। ফলে সেই গল্পে ইমোশন যে বাড়তি পয়েন্ট পাবে, তা ঝলকেই স্পষ্ট।
যখন বায়োপিকই হিরো
ক্রিকেট আর বলিউডের সম্পর্ক তো সেই কবে থেকেই জমাটি। প্রেমের ফিল্ডে তো বটেই, ছবি রিলিজ়কে কেন্দ্র করে আবার দু’পক্ষের মধ্যে লড়াইও চলে। বিশেষ করে ওয়র্ল্ড কাপের বছরগুলিতে সে টানাপড়েন এতটাই যে, ওয়র্ল্ড কাপের ম্যাচের ডেট অনুযায়ী ফিল্ম রিলিজ়ের ডেট পর্যন্ত আগে-পরে সরিয়ে নেওয়া হয়। সেখানে ছবির সঙ্গেই যদি স্বনামধন্য খেলোয়াড়দের জীবন জুড়ে দেওয়া যায়, সে ছবির হিট মন্ত্রে দর্শককে মুগ্ধ করার সুযোগ বেশি।
পরিচালক কবীর খানও পরবর্তী ছবি ‘এইটিথ্রি’-র জন্য বেছে নিয়েছেন এমনই প্লট। ১৯৮৩ সালে ভারতের প্রথম ক্রিকেট বিশ্বকাপ জয়ের গল্প। যে মুহূর্তটা সারা ভারতবাসীর কাছে গর্বের। সেটাই রিক্রিয়েট করা হবে বড় পর্দায়। ছবির মুখ রণবীর সিংহ থাকছেন কপিল দেবের চরিত্রে। ফলে একই সঙ্গে জুড়ে নেওয়া গেল দুই রাজ্যের প্রজাদের। রণবীর ভক্ত ও কপিল ভক্তদের। অন্য দিকে সাইনা নেহওয়ালকে পর্দায় ফুটিয়ে তুলতে হপ্তাদুয়েক স্পোর্টস স্টেডিয়ামেই থেকে যান পরিণীতি চোপড়া। এ ছাড়াও লিস্টে রয়েছে ভারতীয় শুটার অভিনব বিন্দ্রা, ব্যাডমিন্টন প্লেয়ার পি ভি সিন্ধুর বায়োপিকও। অভিনবের চরিত্রের জন্য প্রস্তুতিও শুরু করে দিয়েছেন হর্ষবর্ধন কপূর। অন্য দিকে দীপিকা পাড়ুকোনকে ভাবা হয়েছে পি ভি সিন্ধুর চরিত্রে।
কাল্পনিক চরিত্রেও হিট
বায়োপিকের কিছু সীমাবদ্ধতাও যে থাকে, তা অস্বীকার করার জায়গা নেই। ‘ট্রুথ’ কত দূর অবধি দেখানো যাবে বা আদৌ যাবে কি না, তাতেই বড়সড় প্রশ্নচিহ্ন। সেখানে চরিত্রটিই যদি ফিকশনাল হয়, নাটকীয়তার পারদ কতটা উঠবে, তার লাগাম থাকে পরিচালক-প্রযোজকের হাতেই। তাই এমন ছবিও আছে এ বছরের লিস্টে। এক বক্সারের চরিত্রে ফারহান আখতারকে দেখা যাবে ‘তুফান’ ছবিতে। এর আগে ফারহানের ‘ভাগ মিলখা ভাগ’ও বক্স অফিসে সফল, যদিও তা ছিল বায়োপিক। অন্য দিকে তেলুগু ছবির রিমেক ‘জার্সি’তে মুখ্য ভূমিকায় থাকছেন শাহিদ কপূর। গত বছরেই তাঁর রিমেক ছবি ‘কবীর সিং’ও বিরাট হিট।
কোচের হাত ধরে
‘ফাইট কোনি ফাইট’ ক্ষিদ্দার চরিত্রে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় যখন উৎসাহ জোগাচ্ছেন কোনিকে, ঠিক সেই মুহূর্তে কত বাঙালিই না ওই মুষ্টিবদ্ধ হাত থেকে অনুপ্রেরণা পেয়েছিল! ক্ষিদ্দা বা ‘ইকবাল’-এর মোহিত (নাসিরউদ্দিন শাহ), ‘চক দে..’র কবীর খান (শাহরুখ খান), ‘দঙ্গল’-এর মহাবীর সিংহ ফোগত (আমির খান)... শুধু কোচ নয়। প্রতিযোগিতার আগের মুহূর্তের দমচাপা উত্তেজনা, পিছিয়ে পড়া মুহূর্তে এগিয়ে দেওয়ার হাত, স্বজনবান্ধবহীন স্পোর্টস ক্যাম্পে মাথার উপরের ছাদ, একই সঙ্গে মিঠে-কড়া যাদের মন... সেই কোচরাই কিন্তু আসল হিরো। শিষ্যের জয়ের মধ্য দিয়েই যাদের জিতে যাওয়া। এ বছর অজয় দেবগণকে দেখা যাবে এমনই এক ফুটবল কোচ সৈয়দ আবদুল রহিমের চরিত্রে, ‘ময়দান’ ছবিতে, যাতে রয়েছেন টলিউডের রুদ্রনীল ঘোষ, অমর্ত্য রায়। এই ছবিতে প্রাণ পাবে বাংলার ফুটবল হিরো চুনী গোস্বামী, পি কে ব্যানার্জিরাও। ব্যাডমিন্টন কোচ পুল্লেলা গোপীচন্দের জীবনীনির্ভর ছবিও থাকছে এ বছরের স্পোর্টস মুভির তালিকায়।
সাইনার চরিত্রে পরিণীতি ও ‘তুফান’-এর প্রস্তুতিতে ফারহান
পরিশ্রম কম নয়
শুধু হিট সিনেমার মশলা হাতে থাকলেই তো হল না। সেই চরিত্র ফুটিয়ে তোলাও মুখের কথা নয়। ১৯৮৩-র কপিল দেবের মতো ছিপছিপে চেহারা পেতে রণবীরকে ছাড়তে হয়েছিল তাঁর প্রিয় চকলেট স্প্রেড। সঙ্গে চলেছে দিনরাত প্র্যাকটিস। ‘তুফান’ ছবির জন্য বক্সিংয়ের প্র্যাকটিস সেশনের ছবিও পোস্ট করেছেন ফারহান আখতার। সেখানেই তিনি স্পষ্ট লিখেছেন, ট্রেনার যতক্ষণ না বলছেন ততক্ষণ প্র্যাকটিস ওভার নয়। ‘পঙ্গা’ ছবির জন্য টানা দু’মাস কবাডি খেলা অভ্যেস করেছেন কঙ্গনা। এমনকি পছন্দের খাবার ছেড়ে হাই-প্রোটিন ডায়েটে প্রায় ১০ কিলোগ্রাম ওজন বাড়িয়েছেন। তারকারা শারীরচর্চায় অভ্যস্ত। কিন্তু বিশেষ কোনও খেলার প্র্যাকটিসে তাঁদের পেশিতেও চাপ পড়ে। আঘাতও পেয়েছেন অনেকে। ব্যাডমিন্টনের প্র্যাকটিস সেশনেই কাঁধ জখম হয় পরিণীতির। শুটিং পিছিয়ে যায় এক মাস। তার পরেও হাল ছাড়েন না অভিনেতা, পরিচালক, প্রযোজক-সহ গোটা টিম।
এই টিমস্পিরিটই তো মুখ্য। খেলার ময়দান হোক বা সিনেমার ইউনিট, টিমের পারফরম্যান্সই শেষ কথা। তাই টিমের অদম্য মনোবল ও পরিশ্রমই মিলিয়ে দেয় খেলা আর ছবির জগৎকে। জিতে যায় দুই পরিবারই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy